সাম্প্রতিক খবর

জানুয়ারী ৯, ২০২০

সবাই নিজের ধর্ম নিয়ে গর্ব করে বাঁচুক, এটাই আমরা চাই: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

সবাই নিজের ধর্ম নিয়ে গর্ব করে বাঁচুক, এটাই আমরা চাই: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ বারাসাতে যাত্রা উৎসবের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সেখানে উপস্থিত হয়ে যাত্রা শিল্পীদের আর্থিক সাহায্য ১৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করার ঘোষণা করেন। পাশাপাশি যাত্রা শিল্পীদের স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের আওতায় আনার কথাও বলেন।

 তাঁর বক্তব্যের কিছু অংশঃ

যেসব যাত্রা শিল্পীকে আজ সম্মাননা জ্ঞ্যাপন করলাম, তাদের অভিনন্দন জানাই। আগের বছর পর্যন্ত প্রত্যেককে ১৫ হাজার টাকা করে অর্থসাহায্য করা হত। এবার সেটা বাড়িয়ে ২৫ হাজার করা হবে। যাত্রা শিল্পীদের স্বাস্থ্য সাথীতে নথিভুক্ত করা হবে। বুলবুলের সময় সাধারণ মানুষকে সহায়তা করার জন্য প্রশাসনকে ধন্যবাদ। সরকারের তরফে প্রত্যেককে সাহায্য করা হয়েছে। ৬লক্ষ কিটে সমস্ত প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আছে। বাড়ি যাদের ভেঙেছে, প্রত্যেককে বাড়ি করে দেওয়া হবে বাংলা আবাস যোজনায়। সকলে ভালো থাকুন সরকার এটাই চায়।

আজ নৈহাটিতে বোম নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে যাদের বাড়ির ক্ষতি হয়েছে, সরকারি আধিকারিক পরীক্ষা করবে কাল থেকে, তাদের সরকার ক্ষতিপূরণ দেবে। আজ প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার প্রকল্প উদ্বোধন হল এখানে এবং ২৫০ কোটি টাকার নতুন প্রকল্প দেওয়া হল।

বসিরহাট এবং সুন্দরবন নতুন জেলা করার কথা ভাবা হচ্ছে। সেই অনুসারে কাজও চলছে। বারাসাত পুলিশ জেলা, বসিরহাট পুলিশ জেলা, বারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট করেছি মানুষের সাহায্যে। 

যাত্রা উৎসব আমরা বারাসাতেই করি। যেসব হলে যাত্রা উৎসব হয়, সেখানেও যাত্রা উৎসব চলবে। এবছর পাড়ায় পাড়ায় যাত্রা উৎসব হচ্ছে। এখন যাত্রা আধুনিক হয়েছে। যাত্রা সামাজিক ভাবনা তুলে ধরে। যাত্রা শিল্পীদের উৎসাহিত করুন সকলে। শিল্পীরা যোগ্য সম্মান পাক, এটাই চাই। 

গঙ্গাসাগরে একজন ছেলে বালি দিয়ে মনিষীদের মূর্তি করে নো এনআরসি লিখেছে। আজ আমাকে শিল্পীরা নো এনআরসি লেখা ট্যাবোলো দিয়েছে। আমি আপনাদের বলব আপনারা এনআরসি ও ক্যাবের ভয়বহতা নিয়ে যাত্রা তৈরী করুন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে বোঝান। 

উত্তর ২৪ পরগনায় অনেক উদ্বাস্তু কলোনি আছে। আমি যখন যাদবপুরে সাংসদ ছিলেন, সেই উদ্বাস্তুরা আমায় অনুরোধ করেছিলেন আমি জিতলে তাদের জমির দলিল করে দিতে। আমি সেটা করে দিয়েছি। আমি আপনাদের সমর্থক। বাংলার ৯৪টি কলোনিকে আইনত স্বীকৃতি দিয়ে দিয়েছি। আমরা মন্ত্রীসভার বৈঠক করে সমস্ত উদ্বাস্তু কলোনিকে স্বীকৃতি দিয়ে দিয়েছি। 

আপনার নাগরিক হওয়ার কিসের চিন্তা। ক্যাতে আপনাকে পাঁচ বছর বিদেশী করে তারপর নাগরিকত্ব দেবে। যারা অপার বাংলা থেকে এসেছেন, যারা এখানে আছেন, এতো বছর থাকার পর আপনাকে নতুন করে নাগরিকত্ব কি দেবে? আপনার তো সব নথি আছে। 

প্রথমে বলল আধার কার্ড কর, এখন বলছে আধার কার্ড চলবে না। বলল প্যান কার্ড কর, এখন বলছে প্যান কার্ড চলবে না। বলল রেশন কার্ড কর, এখন বলছে রেশন কার্ড চলবে না। কিচ্ছু দরকার নেই। শুধু ভোটার লিস্টে নামতা ঠিক করে তুলে রাখুন। আপনারাই তো পঞ্চায়েত, মুখ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী তৈরী করেন। আমরা মানুষের নাগরিকত্ব কাড়তে দেবনা। সেপ্টেম্বর মাসে আমরা বিধানসভায় রেজোলিউশান পাস করেছিলাম ধর্মীয় ভিত্তিতে আমরা এনআরসি করতে দেবনা। 

আজ কয়েকটা রাজনৈতিক দল ধর্মের জিগির জাগাতে চাইছে। আমিজিবনেও সাম্প্রদায়িকতা মাথাচাড়া দিতে দিই নি। আমার কাছে হিন্দু মুসলমান শিখ খৃস্টান সব সমান। আমি বড়লোক গরীবে ভেদাভেদ করিনা। কাউকে বাংলা থেকে সরে যেতে দেবনা। 

বড়মাকে কে দেখাশোনা করত? মতুয়াদের আমি সম্মান দিয়েছি। ওনাদের নামে কলেজ করে দিয়েছি, বিশ্ববিদ্যালয় তৈরী করছি। আমরা রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের সর্বধর্ম সমন্বয়ে বিশ্বাসী। আদিবাসীদের জহর থানের পাট্টা দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমরা ভেদাভেদ করিনা। 

আমরা আপনাদের পাহারা দেব, কাউকে বাংলা থেকে চলে যেতে হবেনা। বাংলা মানবিকতা, সংস্কৃতির পুণ্যভূমি। আমরা প্রথম থেকে ক্যার বিরোধীতা করেছি স্ট্যান্ডিং কমিটি থেকে। 

সারা ভারতে যে আন্দোলন চলছে, সেটার উৎপত্তি বাংলা থেকে। সবাই নিজের ধর্ম নিয়ে গর্ব করে বাঁচুক, এটাই আমরা চাই। আজকের এই আন্দোলন কোনও দলের না, মানুষের আন্দোলন।