জানুয়ারী ২৮, ২০২০
জিএসটি পরিকাঠামো সম্পূর্ণ ঢেলে সাজাতে সমস্ত রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা প্রয়োজনঃ অমিত মিত্র

বাংলার অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বর্তমানের ত্রুটিযুক্ত জিএসটি পরিকাঠামো ঢেলে সাজানোর জন্য সমস্ত রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের সঙ্গে একটি তিনদিনের আলোচনাসভার ডাক দিয়েছেন। এই ত্রুটির কারণেই বর্তমানে দেশের অর্থনৈতিক মন্দা চলছে।
বেসরকারি একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অমিত মিত্র যিনি অর্থমন্ত্রীদের দ্বারা গঠিত এমপাওয়ারডঃ কমিটির চেয়ারম্যান, বলেন, চারটি কারণের জন্য বর্তমানের জিএসটি পরিকাঠামো ব্যর্থ হয়েছে লাগু হওয়ার পর থেকে তিন বছর ধরে।
প্রথম কারণ, এই কর ব্যবস্থার নকশায় ত্রুটি আছে। কোনও পাইলট পদ্ধতি, তথ্যের পরীক্ষা, ট্রায়াল করা হয়নি এবং সেটাও বিশ্বের সবথেকে বড় কর ব্যবস্থার সংস্কারের মত ক্ষেত্রে।
আইন ও নিয়মগুলোতে অনেক ত্রুটি ছিল এবং ঘনঘন তা বদলানো হয়েছে। এতে সকলের ক্ষতি হয়েছে, ব্যবসায়ী এবং আয়কর দপ্তরের।
দ্বিতীয় কারণ হল, যা ঘটছে সেটার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখার কোনও ক্ষমতা ছিলনা।
তৃতীয় কারণ, বিভিন্ন দ্রব্যের ওপর করের হার বারবার পরিবর্তন করা হয়েছে। আয়কর দপ্তরের ক্ষতি হয়েছে এবং বারংবার তাদের কম্পিউটারে অ্যাডজাস্ট করতে হয়েছে।
চতুর্থ কারণ, এতে কেন্দ্র ও রাজ্যের কোনও সমন্বয় ছিলনা।
কেন জিএসটি ব্যর্থ হল খুঁজতে গেলে দেখা যাবে ২০১৮-১৯ সালে আনুমানিক ৩০ হাজার কোটি টাকা আদায় করতে হত জিএসটি বাবদ কেন্দ্র ও রাজ্য মিলিয়ে। কিন্তু, আদায় হয়েছে ২৪ হাজার কোটি টাকা। এই ৬ হাজার কোটি টাকার তফাৎ বিশাল। কারণ, এটি মোট অঙ্কের ২০ শতাংশ।
এই ব্যর্থতা সামলানোর একটি রাস্তা হল, সমস্ত জিএসটি পদ্ধতির আমূল পরিবর্তন, যা করা হচ্ছে না। প্রতি জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকে সকলে লড়াই করে কোন কোন হার কমানো বা বাড়ানো উচিৎ তাই নিয়ে যেখানে তাদের রাজ্যের স্বার্থ জড়িত। শেষ কেন্দ্রীয় সরকারের জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠক এই বলে শেষ করা হয় যে তাদের কাছে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের পর রাজ্যগুলিকে জিএসটি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার মত অর্থ নেই।
রাজ্যগুলি সব কর ছেড়ে দিয়েছে – ভ্যাট, বিনোদন কর, লাক্সারি ট্যাক্স, সেন্ট্রাল সেলস ট্যাক্স। রাজ্যগুলি তাদের আয়ের ৭০ শতাংশ ছেড়েছে জিএসটির জন্য। যখন ভ্যাট পরিকাঠামো ছিল, প্রথম দুবছর ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু, এখানে আন্তঃরাজ্য পদ্ধতি চলছে সব জায়গায়। তাই, এখন সম্পূর্ণ ঢেলে সাজানো প্রয়োজন।
২০১৯ সালের আগস্ট মাসে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সিতারমনকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছিল জিএসটি কারচুপির বেড়ে চলা সংখ্যা নিয়ে। তাই সময় হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর কথা মাথায় রেখে সকলকে এগিয়ে আসতে এই পরিকাঠামোর পরিবর্তন করতে। এর ফলে যাতে ছোট ও মাঝারি শিল্প এবং দেশের ব্যবসায়ীরা উপকৃত হয়। কেন্দ্রীয় সরকার বহুদিন ধরে আর্থিক মন্দার কথা স্বীকার করেনি। এখন করছে। একইরকমভাবে তারা বলবে জিএসটি ব্যর্থ হয়েছে।
কর আদায় বেড়েছে মাত্র ৭ শতাংশ। এই বৃদ্ধি হওয়ার কথা ছিল ১৪ শতাংশ। ওরা আমাদের ক্ষতিপূরণ দিতে পারছেনা। তিনদিনের আলোচনায় একটাই উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ দেশের মানুষের স্বার্থে একে অপরকে বিশ্বাস করে পরিকাঠামো পরিবর্তন করা।