জানুয়ারী ২৩, ২০২০
নেতাজি অক্ষন্ড ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের জন্য লড়াই করেছিলেন : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

প্রতি বছরের মতন এবছরও দার্জিলিঙে পালিত হল নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৩তম জন্মদিবস। আজ দার্জিলিঙের ম্যালে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নেতাজির ছবিতে মাল্যদান করে তাঁকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তাঁর বক্তব্যের কিছু বিষয়ঃ
কার্শিয়াঙে নেতাজি অনেক দিন ছিলেন তাই পাহাড়েও ওনার জন্মদিন পালন করা উচিত। তাই ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম পাহাড়ে ৪ বছর আর কলকাতায় এক বছর এইভাবে ভাগ করে আমি নেতাজির জন্মদিন পালন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবো
নেতাজির তৈরি ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি আমাদের দেশের গৌরব, অনেক গোর্খা আর্মি নেতাজির সঙ্গে সাথ দিয়েছিলেন স্বাধীনতা আন্দোলনে। আমি বারবার পাহাড়ে আসি। এরকম ঠাণ্ডা আমি আগে কখনো অনুভব করিন, এবার একটু বেশিই ঠাণ্ডা পড়েছে, এটাই পাহাড়ের ভালবাসা – কখনো রোদ কখনো ঠাণ্ডা কখনো বৃষ্টি
আজ আমরা নেতাজির বলা কিছু কথা স্মরণ করব। উনি সেক্যুলারিজমের কথা বলেছিলেন, উনি কিন্তু কোন একজনের কথা বলেননি, উনি সব ধর্মের মানুষের কথা বলেছিলেন
১৯৪০ সালের ১২ই মে বাংলার ঝাড়গ্রামে এক ভাষণে তিনি তখনকার বিজেপির এক সংগঠন হিন্দু মহাসভার বিরোধিতা করেছিলেন, তীব্র নিন্দা করেছিলেন
হিন্দু ধর্ম কারো একার নয়। হিন্দু ধর্ম সার্বজনীন। এখন যা দেশে চলছে, হিন্দু ধর্মের নামে বাকি সব ধর্মের মানুষকে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, এভাবে ওরা হিন্দু ধর্মের অপমান করছে। আমরা হিন্দু বলে কি অন্য ধর্মকে পছন্দ করব না? তাদের উৎসব পালন করব না?
এভাবে দেশনেতা তৈরি হয় না, যে দেশকে চালিত করতে পারে সেই দেশের নেতা হয়, যে নেতা সব ধর্ম সব জাতির মানুষের সাথে কাঁধে কাধ মিলিয়ে চলে সে দেশনেতা, যে গরিবকে ভালবাসে আর ধনীকে বলে গরিবের জন্য কাজ করতে সেই দেশনেতা
ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি নেতাজি শুরু করেছিলেন, প্ল্যানিং কমিশন উনি বানিয়েছিলেন আর এখন বিজেপি সরকার এসে তা তুলে দিয়েছে। এখন রাজ্যের কথা বলার কোন জায়গা নেই
আমরা আমাদের রাজ্যে নেতাজির জন্মদিন জাতীয় ছুটি ঘোষণা করেছি।অনেকদিন ধরে আমরা কেন্দ্রকে অনুরোধ করেছি ওনার জন্মদিন জাতীয় ছুটি ঘোষণা করার কথা কিন্তু কেন্দ্র আজও করেনি
ক্ষমতায় আসার পর নেতাজির ফাইল নিয়ে এদিক ওদিক ঘুরল, অনেক ভাষণ দিল, অথচ নেতাজির মৃত্যু এখনও রহস্য, সেদিকে ওদের কোন হুঁশ নেই। নেতাজির মৃত্যু কবে হয়েছিল আজও আমরা জানি না এটা লজ্জার কথা
স্বাধীনতা, সেক্যুলারিজম আর লোকতন্ত্রের লড়াইয়ে নেতাজি বলেছিলেন – তোমরা আমায় রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব, আর এখন এরা মানুষের রক্ত নিয়ে নিচ্ছে, মানুষকে মেরে ফেলছে
বর্তমানে যে ইস্যু নিয়ে দেশ উত্তাল সেই সি এ এ, এনআরসি, এনপিআর চালু করে মানুষের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হবে
কিন্তু আমরা নেতাজি, গান্ধিজি, ভানু ভক্ত, ভগত সিং, আম্বেদকর, রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের পথেই চলব। যতই ঝড় আসুক তা জয় করার সাহস আমাদের আছে। এই মাটি আমাদের খুব প্রিয়
আমরা চাই পাহাড়ের উন্নয়ন, আমরা চাই পাহাড়ের মানুষ ভালো থাকুক, আরও এগিয়ে যান, আপনাদের জয় হোক। আমরা যতদিন বেঁচে আছি আমরা পাহাড় ভাগ হতে দেব না, কাউকে দেশ থেকে বিতাড়িত হতে দেব না। আপনি যদি পাহাড়ে থাকেন, বাংলায় থাকেন এটা আপনার গর্ব। আমরা এই মাটিতে সবাইকে নিয়ে একসাথে থাকবো
নেতাজি বলেছিলেন, হিন্দু ধর্ম অনেক বড় ধর্ম যারা ধর্মের নামে ভেদাভেদ করতে চান তাদের আমি নিন্দা করি, তিনি বলেছিলেন সবাইকে নিয়ে একসাথে থাকতে হবে তবেই দেশ গঠন হবে
সর্বধর্ম সমন্বয়ের জয় হক আজ এটাই নেতাজির প্রতি আমাদের সবচেয়ে বড় শ্রদ্ধাঞ্জলি