জানুয়ারী ১৪, ২০২০
মোদী সরকার ‘ভাগ করো, শাসন করো’ নীতি চালাচ্ছেঃ দিদি

বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ সিএএ, এনআরসি, এনপিআর তথা কাশ্মীরের পরিস্থিতি ও বিজেপির বিভ্রান্তিকর প্রচার নিয়ে মুখ খোলেন।
ওনার সাক্ষাৎকারের কিছু উল্লেখযোগ্য অংশঃ
প্রশ্নঃ প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি বেলুড় মঠে এসেছিলেন যেখানে তিনি দাবি করেন যে বিরোধীরা সিএএ নিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে
দিদিঃ প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে বেলুড় মঠে গেছিলেন। আমরা রামকৃষ্ণ মিশনকে শ্রদ্ধা করি। এর আগে কাউকে দেখিনি ওখানকার মঞ্চকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে। স্বামী বিবেকানন্দকে শ্রদ্ধা না জানিয়ে তিনি এইসব ভুলভাল রাজনৈতিক কাজ করেছেন। ওনার সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক মতাদর্শের পার্থক্য আছে। উনি নিজের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধন করতে চাইছেন। সংসদীয় কমিটি থেকেই আমরা এটার বিরোধীতা করেছি।
যাদের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, বাড়ির দলিল আছে, তারা সবাই নাগরিক। যদি বিরোধীরা মানুষকে বিভ্রান্ত করে, তাহলে কেন বিজেপি শাসিত রাজ্য অসমে এই আইন লাগু হচ্ছে না? আমরা ওনাদের প্রতিবাদ সমর্থন করি। বিজেপিই মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন।
ওনারা সিএএর মাধ্যমে ‘ভাগ করো, শাসন করো’ নীতি অবলম্বন করছেন। ওনারা ক্ষমতায় আছেন, ওনাদের উচিৎ সকলের খাদ্য, বস্ত্র বাসস্থান নিশ্চিত করা, ঘৃণার রাজনীতি নয়। সিএএ সারা বিশ্বে সমালোচিত হচ্ছে। আমরা সকলে দেশকে ভালোবাসি। বিজেপি দেশভাগ করছে।
দেশের অর্থনীতির ভয়াবহ অবস্থা। দ্রব্যমূল্য আকাশছোঁয়া। বেকারত্ব বাড়ছে। সব শিল্প বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ওয়ালমার্ট ভারতে তাঁদের ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে। এইসব সমস্যার সমাধান না করে ওনারা মানুষকে বঞ্চনা করছেন।
স্বামী বিবেকানন্দ কখনও দেশভাগ করতে বলেননি। তিনি সমাজের দুঃস্থ মানুষের জন্য কাজ করেছিলেন। তিনি বলতেন একতাই শক্তি এবং দুর্বলতা মানে মৃত্যু। ভাগাভাগি বিজেপির ইস্তেহার, ওদের এজেন্ডা। এখন ওরা জোর করে সকলকে মানাতে চাইছে। ওরা দেশের ধর্মনিরপেক্ষতায় আঘাত হানছে।
প্রশ্নঃ তাহলে আপনি সিএএ, এনআরসি ও এনপিআরের বিরোধীতা করছেন?
দিদিঃ আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম এনপিআর জনগণনার একটি অংশ। পরে আমরা বুঝলাম ওটা এনআরসির আরেক স্বরূপ মাত্র।
সংবিধানে কোনও ধারা নেই যেখানে শরণার্থীদের মধ্যে বিভেদ করা যায়। ভারতবর্ষ সুবিশাল দেশ। এখানে বহু ভাষা, সংস্কৃতি আছে। আমরা একে অপরের ভাষা না বুঝলেও সকলকে ভালোবাসি। এমনকি বাংলা ভাষাও বিভিন্ন জেলায় বিভিন্নভাবে বলা হয়। এটাই এই দেশের সৌন্দর্য।
প্রশ্নঃ আপনি বলছেন শরণার্থীদের মধ্যে ভাগাভাগি না করতে?
দিদিঃ এটা শুধু শরণার্থীদের বিষয় না। মানুষকে তাঁদের নাগরিকত্ব পাঁচ বছরের জন্য ছাড়তে হবে। সব অধিকার চলে যাবে। অনেক খামতি আছে। আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা থেকে কেন তামিল শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া হবে না?
প্রশ্নঃ তাহলে আপনি বলছেন এনআরসি বাঙালি বিরোধী?
দিদিঃ নিঃসন্দেহে। এটা শুধু বাঙালি বিরোধী না, ভারত বিরোধীও বটে। আপনারা দেখুন কিভাবে বিভিন্ন রাজ্যে বাঙালি শ্রমিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হচ্ছে। কয়েকজনকে কাশ্মীরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। বাংলাতেও ভিন রাজ্যের অনেক মানুষ কাজ করেন। আমরা তো তাদের মধ্যে ভেদাভেদ করি না। আপনারা কি করে সেটা করেন?
প্রশ্নঃ কেন্দ্র বলছে কাশ্মীরে পরিস্থিতিটি স্বাভাবিক
দিদিঃ কাশ্মীরের স্থান আমাদের হৃদয়ে। আমরা কাশ্মীরকে ভালোবাসি। যদি সবকিছু স্বাভাবিক থাকে তাহলে কেন এতদিন ধরে এতজন নেতা-নেত্রীকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে? কেন সেখানকার ইন্টারনেট এত মাস ধরে বন্ধ? মানুষ সেখানে কষ্টে আছে। মানুষকে সঙ্গে নিয়ে সমস্যার সমাধান করা যায়। আপনারা তাঁদের চিন্তাকে পদদমিত করলে অনেক সমস্যা হবে।
শব্দচয়ন ও দুরদৃষ্টি একজন নেতার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণ করে। আপনার চরিত্র আপনার বিশ্বাসযোগ্যতা। আপনার চরিত্র আপনার পরিচয়।
কাশ্মীরিদের সঙ্গে নিয়ে চলা উচিৎ। কেন সব দলকে বৈঠকে ডাকা হল না? আমি কাশ্মীর গিয়ে ফারুখ জি, মেহেবুবা, ওমর আবদুল্লার সঙ্গে দেখা করতে চাই। মুখ্যমন্ত্রী নয়, একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আমি কাশ্মীর যেতে চাই, সাধারণ মানুষের সাথে দেখা করতে চাই। তৃণমূলের নেত্রী হিসেবে দেখা করতে চাই। কাশ্মীরে বিদেশীদের স্বাগত জানানো হচ্ছে কিন্তু ভারতীয়রা যেতে পারছে না। এটাই সমস্যা। আমি গিয়ে দেখতে চাই কাশ্মীরি ভাই বোনেরা কি রকম আছেন।
আমাদের দলের প্রতিনিধিদলকে অসম, লখনৌ, কাশ্মীর – কোথাও যেতে দেওয়া হয়নি। এই হচ্ছে অবস্থা।
প্রশ্নঃ রাজনীতির সমীকরণ পাল্টে গেছে। তৃণমূল, ডিএমকে, শিবসেনা, এসপি, বিএসপি দিল্লীর বৈঠকে যায়নি। বার্তা স্পষ্ট – আঞ্চলিক দলগুলি নিজেদের মত করে লড়তে চায়
দিদিঃ আঞ্চলিক দলগুলি নিজেদের কোনঠাসা মনে করছে। কেন তামিলনাড়ুর স্থানীয় নেতারা স্ট্যালিনকে দোষারোপ করছে? শিবসেনা কংগ্রেসের সঙ্গে সরকার গড়েছে, তাও তাদের কোনঠাসা করা হয়েছে। একই ঘটনা ঘটেছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সঙ্গে। শুধু বৈঠক করে কিছু হবে না। এটা গণ আন্দোলন। সকলকে নিজের মত করে প্রতিবাদ করতে দিন।
আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ।
প্রশ্নঃ আপনি কি মনে করেন কংগ্রেস বিশ্বাসযোগ্য না?
দিদিঃ আমি এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করবো না। ওয়ার্ডস আর সিলভার, সাইলেন্স ইজ গোল্ডেন।
প্রশ্নঃ বিজেপির দাবি তৃণমূল তোষণের রাজনীতি করে। ২০০৫ সালে আপনি অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন আর এখন আপনি অবস্থান বদল করেছেন।
দিদিঃ এটা সম্পূর্ণ ভুল, বিভ্রান্তিমূলক দাবি। মানুষকে ভুল বোঝানো হচ্ছে। আমার আন্দোলন ছিল ‘নো আইডি কার্ড, নো ভোট’। ভোটার লিস্ট থেকে ভুয়ো নাম বাদ দেওয়ার জন্য আন্দোলন। কেন একই নাম ৫০ জায়গায় থাকতো? এদিকে বৈধ ভোটারদের নাম থাকতো না। আমি বৈধ ভোটারদের অধিকারের জন্য লড়ছিলাম। এই আন্দোলনের জন্য ১৩ জন কর্মীকে বামফ্রন্ট সরকার গুলি করে হত্যা করে। কেন আমাকে লোকসভায় বলতে দেওয়া হয়নি? বিজেপি যা বলছে তা বিভ্রান্তিমূলক। আমাদের আন্দোলন শুরু হয় ১৯৯১ সালে।