সাম্প্রতিক খবর

জানুয়ারী ৩, ২০২০

মোদী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নাকি পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত, শিলিগুড়িতে বললেন দিদি

মোদী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নাকি পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত, শিলিগুড়িতে বললেন দিদি

অসাংবিধানিক নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ও জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকার বিরুদ্ধে আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এক বিশাল মিছিল হয় শিলিগুড়িতে।

এই মিছিল শুরু হয় দুপুর ১টায় প্রধান নগরে। সেখানে দাঁড়িয়ে দিদি শপথ নেন – আমর সবাই নাগরিক। সর্বধর্ম সমন্বয় আমাদের জীবন আদর্শ। কাউকে বাংলা ছাড়তে দেব না। নিশ্চিন্তে থাকব। শান্তিতে থাকব। বাংলায় এনআরসি ও ক্যাব করতে দিচ্ছি না ও দেব না। শান্তি রাখতে হবে।

মিছিল শেষ হয় বাঘাযতীন পার্কে। বক্তব্য রাখতে গিয়ে দিদি বলেন, প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হয়ে গিয়েছেন। কথায় কথায় শুধু পাকিস্তানের কথা বলছেন। ওনার উচিত ভারতের কথা বলা।

ওনার বক্তব্যের কিছু অংশ:

আমাদের এখন একটাই প্রশ্ন আমাদের ভবিষ্যতের ঠিকানা থাকবে কি থাকবে না? সব মানুষ জোট বাঁধুন, CAA NPR NRC-র নামে মানুষের অধকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে বিজেপি। আমরা সবাই নাগরিক। এতগুলো সরকার হয়েছে কেউ এরকম করেনি। এই সরকারের কাছে নতুন করে প্রমাণ করতে হবে, আপনি দেশের নাগরিক কিনা? এটা আমাদের সভ্যতা, মানবিকতা, মনুষ্যত্বের লজ্জা। 

ভারত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গণতন্ত্র। এই দেশের জন্য আমরা গর্ব করি। কিন্তু দুঃখ হয় আমরা প্রতিবাদ করলেই  বিজেপির A থেকে Z পর্যন্ত নেতারা বলে সব পাকিস্তানের ভাষায় কথা বলছে।

আমি নরেন্দ্র মোদীকে একটা প্রশ্ন করেতে চাই। যদি ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ হয়, তবে আপনি কেন পাকিস্তানের সাথে আমাদের দেশের তুলনা করেন?  আপনার লজ্জা লাগে না? আপনি কি পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হয়ে গিয়েছেন। আপনি ভারতের কথা বলুন। পাকিস্তানের চর্চা পাকিস্তান করবে। আমরা ভারত নিয়ে চর্চা করব।  আমরা পাকিস্তানের কথা শুনতে চাই না। আমরা পাকিস্তানকে সমর্থন করি না। আমরা ভারতকে সমর্থন করি। 

ভারতবর্ষ আমাদের দেশ, আমাদের জন্মভূমি, এটা আমাদের মাটি। আপনার বাবা, ঠাকুরদা এই মাটিতেই জন্মেছেন। এখন যদি বলা হয় আপনি ভারতীয় নন, ৫০ বছর আগের সার্টিফিকেট দেখাতে বললে আপনি কি এটা মেনে নেবেন? 

বিজেপি বলছে মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেবে। মতুয়ারা কি নাগরিক ছিল না? আদিবাসী তপশিলী থেকে শুরু করে সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষ ভারতের নাগরিক। আমি সবচেয়ে বেশি আন্দোলন উদ্বাস্তু ভাইবোনেদের নিয়ে করেছি। নিঃশর্ত জমির দলিল আমি করিয়েছিলাম। বাংলার সমস্ত উদ্বাস্তু কলোনিকে আইনত স্বীকৃতি দিয়ে দিয়েছি।   

শুধু ভোটার লিস্টে নামটা তুলুন আর কিছু করার দরকার নেই। বিজেপি কায়দা করে ভোটার লিস্টে বাবা মা, বউ  ভাই বোনেদের নাম ভুল করে দিচ্ছে। আগামী ১৫ তারিখ পর্যন্ত ভোটার লিস্টের কাজ হবে। 

  প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত করেছেন আপনারা। আজকে আপনাদের ঠিকানা ওরা ঠিক করে দেব? আপনাদের কোনও আশ্রয় নেই?

বিজেপি সকালে একরকম কথা বলে দুপুরে একরকম কথা বলে, বিকেলে একরকম কথা বলে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন NRC হবেই হবে। প্রধানমন্ত্রী বলছেন আমরাতো জানা নেই। রবিশঙ্কর প্রসাদ বলছেন, NRC হবেই হবে। চার মন্ত্রী চার রকম কথা বলছেন। মানুষকে প্রথমে ওরা CONFUSE করে, তারপর CONTRADICTION, তারপর CLARIFICATION। 

আমাদের এখানে NPR করতে দেওয়া হবেনা। আগে আমরা শুনেছিলাম সেন্সাসের কথা। এখন ওরা ঘরে ঘরে গিয়ে আপনার বাবা, ঠাকুরদার জন্ম সার্টিফিকেট চাইছে। 

আগে বলছিল রেশন কার্ড, প্যান কার্ড, আধার কার্ড করতে হবে। মানুষ করেছিল। এখন বলছে রেশন কার্ড, প্যান কার্ড, আধার কার্ড চলবে না, শুধু বিজেপির মাদুলি চলবে। আমাদের পাকিস্তানের মাদুলির দরকার নেই। আমাদের ভারতের ঠিকানাটা জরুরী। আমরা স্বাধীন ভারতে থাকি।   আমাদের ঠিকানা আমাদের নিজস্বতা। আমাদের এই অধিকার কেড়ে নিতে দেব না। 

ছাত্ররা আন্দোলন করলে থ্রেট করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে গিয়ে ছাত্রদের পিটিয়েছে।  তাদের ব্লক করা হয়েছে। হোস্টেল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ইউপিতে ২৩জনকে গুলি করে বিজেপি মেরেছে। কর্ণাটকে ২জনকে গুলি করে মেরেছে। আমরা মৃত পরিবারের জন্য সাহায্য পাঠালে কর্ণাটকের সরকার নেয় নি। আমাদের দলের প্রতিনিধি ঐ ২ পরিবারকে ৫লাখ টাকা করে অর্থ সাহায্য করেছে। 

তৃণমূল কংগ্রেস গরিব দল হলেও আমাদের দলের মানবিকতা আছে। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বিরোধিদের যেতে দেয় না। আন্দোলন করতে দেওয়া হয় না। আর আমাদের রাজ্যে বিরোধিরা র‍্যালি করছে, গালাগালিও করছে। 

আপনারা যত খুশি গালাগালি দিন, কিন্তু আমরা এই আন্দোলন থেকে সরে আসব না। যতদিন এই ক্যা ফিরিয়ে না নেবে ততদিন এই আন্দোলন চলবে। আমরা ২২ তারিখ পাহাড়ে আন্দোলন করব, ৯তারিখ বারাসাত থেকে মধ্যমগ্রাম পর্যন্ত মিছিল করব।

বিজেপি শুধু ধর্মের নামে দেশকে টুকরো করছে। ভারতের স্বাধীনতাকে রক্ষা করুন। ধর্মান্ধতা, ভাগাভাগি, নাগিরকত্বের অধিকার কেড়ে নেওয়ার হাত থেকে দেশকে বাঁচানোর জন্য এটা ভারতের দ্বিতীয় স্বাধীনতার লড়াই।