নভেম্বর ১৪, ২০১৮
শিশু কল্যাণে বদ্ধপরিকর বাংলার সরকার

আজ শিশু দিবস। শিশুরাই দেশের ভবিষ্যৎ। এই উদ্দেশ্যে ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস সরকার রাজ্যের শিশুদের কল্যাণে নিয়েছে একাধিক কর্মসূচী।
কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রকল্প তুলে ধরা হলঃ
সবুজশ্রী: রাজ্য সরকারের আরও একটি মাইলস্টোন প্রকল্প হল – ‘সবুজ শ্রী’। এই প্রকল্পের মাধ্যমে শিশুর জন্মের পর তাঁকে একটি চারাগাছ উপহার দেওয়া হয়। শিশুটির বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই গাছগুলিও বড় হবে। শিশুটি যখন বড় হবে তখন এই গাছগুলি বিক্রী করে সে তার উচ্চশিক্ষার বা কাজকর্মের টাকা জোগাড় করতে পারবে।
শিশু সাথী: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত এই প্রকল্প শুরু হয় ২০১৩ সালের ২১শে আগস্ট। এই প্রকল্পের মুল উদ্দেশ্য, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে যে সব শিশুর হৃদপিণ্ডে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন তাদেরকে বিনামুল্যে অস্ত্রোপচার করা। বাংলায় শিশু স্বাস্থ্য রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপুর্ণ পদক্ষেপ অনুসারে রাজ্য সরকার তিনটি বেসরকারি হাসপাতাল এবং সরকারী হাসপাতালগুলিতে প্রতিবছর ১৩,০০০ শিশুকে বিনামুল্যে হৃদপিণ্ডে অস্ত্রোপচার করবে।
রাজ্য সরকার সরকার চালিত বিদ্যালয়গুলিতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি রাজ্য সরকার তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে প্রয়োজনে শিশুর হৃদপিণ্ডে অস্ত্রোপচারের ব্যয় করবে।
বিনামূল্যে শিক্ষাঃ প্রাক প্রাথমিক থেকে এখন রাজ্যে শিক্ষায় কোনও ব্যয় করতে হয়না পড়ুয়ার পরিবারকে।
বিনামূল্যে স্কুল-ব্যাগঃ রাজ্যে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণীর পড়ুয়াদের বিনামূল্যে স্কুল-ব্যাগ বিতরণ করা হয়।
বিনামূল্যে পাঠ্য পুস্তকঃ রাজ্য সরকার প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর পড়ুয়াদের বিনামূল্যে পাঠ্য পুস্তক বিতরণ করে। ৩৮৯টি বিষয়ে প্রায় ৯.৫ কোটি বই প্রতি বছর ছাপা ও বিতরণ করা হয়।
বিনামূল্যে ব্রেল পুস্তকঃ দৃষ্টিশক্তিহীনদের জন্য বিশেষ ব্রেল হরফে লেখা পুস্তকও বিনামূল্যে প্রদান করা হয়।
বিনামূল্যে স্কুলের জুতোঃ প্রাথমিক স্তরের প্রায় বিদ্যার্থীদের বিনামূল্যে স্কুলের জুতো দেওয়া হয়।
বিনামূল্যে স্কুলের পোশাকঃ প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণীর সকল পড়ুয়াদের বিনামূল্যে স্কুলের পোশাক প্রদান করে স্কুল দপ্তর।
মিড-ডে মিল প্রকল্পঃ সমস্ত সরকারি ও সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত স্কুলকে মিড-ডে মিল প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে।
পানীয় জল ও বাথরুমঃ সমস্ত স্কুলে পানীয় জল ও বাথরুমের বন্দোবস্ত করা হয়েছে।
ই-ক্লাসরুমঃ নতুন উদ্যোগের মাধ্যমে ৬৫০টি প্রাথমিক ও ২০০০টি মাধ্যমিক স্তরের স্কুলে ই-ক্লাসরুম পরিকাঠামো তৈরী করা হয়েছে।
বিনোদনের পরিকাঠামোঃ ৯৯০টি প্রাথমিক স্কুলে শিশুদের বিভিন্ন ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
অতিরিক্ত শ্রেণীকক্ষঃ শিক্ষার পরিকাঠামোর উন্নতি করতে গত সাত বছরে ৯৬,৪২৮টি অতিরিক্ত শ্রেণীকক্ষ তৈরী করা হয়েছে স্কুলে। গত সাত বছরে ৯৫,৩৭৮টি অতিরিক্ত শ্রেণীকক্ষ নির্মিত হয়েছে সর্ব শিক্ষা অভিযানের অধীনে।
নতুন ভবন: গত সাত বছরে ৫৮৬টি নতুন প্রাথমিক স্কুলের ভবন, ৪,২১১টি উচ্চ প্রাথমিক স্কুলের ভবন, ২,৭৩৩টি এসএসকে ও ১৭১টি এমএসকে তৈরী করা হয়েছে।
কম্পিউটারঃ কম্পিউটারের ব্যবহার বাড়াতে ৫,৫৯১টি মাধ্যমিক স্কুলে ৫৬,০৬০টি কম্পিউটার দেওয়া হয়েছে।
লাইব্রেরী পরিকাঠামো উন্নয়নঃ ৩,৪৪৭টি স্কুলে লাইব্রেরী পরিকাঠামো তৈরীর জন্য ১৭.৬০কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।
গবেষণাগার পরিকাঠামোঃ গত সাত বছরে ৪,২৩৮টি স্কুলে গবেষণাগার পরিকাঠামো তৈরীর জন্য ৬৮.৯৮কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে।
বালিকা বিদ্যালয় হোস্টেলঃ ৯২টি কস্তুরবা গান্ধী বালিকা বিদ্যালয় হোস্টেল চালু হয়েছে।
আবাসিক স্কুলঃ শহরাঞ্চলের দুঃস্থ শিশুদের জন্য আবাসিক স্কুল চালু করা হয়েছে।
বিশেষ চাহিদাযুক্ত শিশুদের জন্য বন্দোবস্তঃ বিশেষ চাহিদাযুক্ত শিশুদের জন্য ১,৩৮২টি স্কুলে ৯৩,৬৪৪জন শিশুকে কম্পিউটার নির্ভর শিক্ষা প্রদান করা হচ্ছে।
মডেল স্কুলঃ গত সাত বছরে ৬৭টি মডেল স্কুল অনুমোদন পেয়েছে যার মধ্যে ৫৪টি স্কুল তৈরী হয়ে গেছে ও ৫১টি স্কুল চালু হয়ে গেছে।
মেয়েদের হোস্টেলঃ ১৩৯টি সরকার অনুমোদিত এবং ৩৯টি বিআরজিএফ স্কুলের জন্য ৫০ শয্যা বিশিষ্ট মেয়েদের হোস্টেলের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
স্কলারশিপঃ ২০১৬-১৭ সালে স্বামী বিবেকানন্দ মেরিট কাম মিন্স স্কলারশিপে যেসকল পড়ুয়া ৭৫ শতাংশের বেশী নম্বর পেয়েছে ও যাদের পরিবারের বার্ষিক অ্যায় ২,৫০,০০০ এর নীচে, তাদের বছরে ১২,০০০ টাকা করে স্কলারশিপ দেওয়া হয়।
খাতা বিতরণঃ পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণীর পড়ুয়াকে ৩টি করে; নবম ও দশন শ্রেণীর পড়ুয়াদের ৪টি করে; একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর পড়ুয়াদের ৫টি করে খাতা বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়।
গরিব মেধাবীদের আর্থিক সাহায্যঃ মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকসহ বিভিন্ন পরীক্ষায় কৃতী ছাত্রছাত্রীদের সংবর্ধনার দেওয়া শুরু করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার গরীব ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের পাশেও দাঁড়াচ্ছে রাজ্য সরকার।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে গরীব কিন্তু মেধাবী ছাত্রছাত্রীদেরও আর্থিকভাবে সাহায্য করা হবে। তার জন্য তালিকা তৈরীর কাজ শুরু হয়েছে। গরিব পরিবারের প্রত্যেক মেধাবী ছাত্রছাত্রীকে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। সেই টাকায় ছাত্রছাত্রীদের পড়াশুনায় অনেক সুবিধা হবে। দরিদ্র পরিবারের যেসব ছেলেমেয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৬৫ শতাংশের বেশি এবং উচ্চ মাধ্যমিকে ৬০ শতাংশের বেশি নম্বর পাবেন, তাঁরাই ওই টাকা পাবেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চান, পয়সার অভাবে যেন কারও পড়াশুনা বন্ধ না হয়। সে কারণেই স্বামী বিবেকানন্দের নামে স্কলারশিপ চালু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
কন্যাশ্রীঃ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় কন্যাশ্রী প্রকল্পের সূচনা হয় ২০১৩ সালের ১লা অক্টোবর। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য নাবালিকা বিবাহের অবসান ঘটানো ও মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার করা। এই প্রকল্পের তিনটি ধাপ আছে, স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত ব্যাপ্তী এই প্রকল্পের।
কন্যাশ্রী প্রকল্পে প্রতি বছর ১০০০ টাকা করে দেওয়া হয় এবং ১৮ বছর বয়স হলে উচ্চশিক্ষার জন্য এককালীন ২৫০০০ টাকা পাওয়া যায়।
রাজ্যের ১৫,৫০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫০ লক্ষেরও বেশী কিশোরী ছাত্রী এখনও পর্যন্ত কন্যাশ্রীর আওতায় এসেছে। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে আছে স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ, মুক্ত স্কুল, মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এমনকি খেলাধুলার প্রতিষ্ঠানও।
সবুজ সাথীঃ ২০১৫ সালে এক জেলা সফরের সময়, একটি বাচ্চা ছেলে মুখ্যমন্ত্রীকে খুবই শিশুসুলভ একটি প্রশ্ন করে – মেয়েদের জন্য দিদি কন্যাশ্রী প্রকল্প চালু করেছে, ছেলেরা কেন ব্রাত্য। এই প্রশ্নটি দানা বাঁধে মুখ্যমন্ত্রীর মনে।
যেমন ভাবনা, তেমনি কাজ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পত্রপাঠ সিদ্ধান্ত নেন নবম থেকে দ্বাদশশ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের জন্য চালু করবেন একটি নতুন প্রকল্প। তাদের দেওয়া হবে একটি করে সাইকেল যাতে রাজ্যের যে কোনও প্রান্তে বাচ্চাদের স্কুলে যেতে অসুবিধা না হয়।
এই প্রকল্পের নামও মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া। দার্জিলিং থেকে বাগডোগরা যাওয়ার পথে বাচ্চাদের জন্য কবিতা লেখার সময় নামটি মাথায় আসে তাঁর। সবুজ সাথী – যার মানে দাঁড়ায় প্রকৃতি-বান্ধব সাথী। লোগোটিও মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা – সাইকেলের দুই চাকায় ভর করে ছুটে চলেছে একটি বালক।
২০১৮ সালের মে মাস অবধি প্রায় ৭০ লক্ষ সাইকেল বিলি করেছে রাজ্য সরকার। ইতিমধ্যেই ই-গভর্নেন্সের জন্য কেন্দ্রের কাছে পুরস্কার পেয়েছে এই প্রকল্পটি। এছাড়াও, সাইকেল পাওয়ার ফলে ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে যাওয়াটাও অনেক সহজ হয়েছে। ফলে, কমেছে স্কুলছুটের সংখ্যাও।