সাম্প্রতিক খবর

নভেম্বর ২৭, ২০১৮

মানুষের ভরসা চাই, দিল্লীর গদি না: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

মানুষের ভরসা চাই, দিল্লীর গদি না: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ পুরুলিয়ায় একটি ‘হিন্দিভাষী সম্মেলনে’ অংশগ্রহণ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি তাদের আস্বস্ত করেন যে ভাষা, বর্ণ, ধর্ম, জাতি নির্বিশেষে বাংলায় সকলকে এক গণ্য করা হয়।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আগামী দিনে দিল্লীতে ক্ষমতা বদল হলে মানুষের মুখে হাসি ফুটবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, মানুষের ভরসা পাওয়াটাই তার কাছে মুখ্য, দিল্লীর গদি নয়।

মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের কিছু অংশ:

আপনারা আমাদের এখানে আমন্ত্রণ জানিয়ে যে সম্মান জানিয়েছেন, তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।

আমরা বাংলা, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, পাঞ্জাব যেখানকার মানুষই হই না কেন, আমরা সবাই ভারতীয়। আমরা সব প্রদেশের মানুষকে ভালোবাসি।

আমরা কোনওদিন ভাবতেই পারি না যে আমি বাংলা বলি, তাই, রাজস্থান আমার বন্ধু নয়। আমি কখনও ভাবি না বিহারের মানুষ, উত্তর প্রদেশের মানুষ, ঝাড়খণ্ডের মানুষ আমার কাছের মানুষ নয়।

আমি অল্প বয়স থেকে রাজনীতি শুরু করি। তখন আমি সাংসদ ছিলাম। আমি সাতবার সাংসদ ছিলাম। দুবার রেলমন্ত্রী ছিলাম, একবার কয়লামন্ত্রী এবং একবার যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী ছিলাম, একবার নারী ও শিশু কল্যাণ দপ্তরও সামলেছি। আমি যখন কোনও কাজ করি, সারা দেশের কথা মাথায় রেখে করি। রাজ্যের যেখানেই আপনি থাকুন, সেটা আপনার জায়গা।

ঝাড়খণ্ড একটি সমৃদ্ধ রাজ্য। ওখানে অনেক খনি আছে, কিন্তু, ওখানকার নেতাদের কোনও বুদ্ধি নেই। তাই, যে ঝাড়খণ্ডের আজ এগিয়ে চলার কথা, এগোতে পারেনি। আমি চাই ঝাড়খণ্ডে তৃণমূলের শাখা খুলুক, আমরা ওখানকার জন্য কাজ করতে চাই। ভবিষ্যতে ঝাড়খণ্ড ও বাংলা একসঙ্গে কাজ করুক, আমি চাই। বিহারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো। স্বাধীনতার আগে একসময় বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা একসঙ্গে ছিল।

রাজস্থানের মাড়োয়ারি সম্প্রদায়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালো। আমি যখন রেলমন্ত্রী ছিলাম, রাজস্থানের পুষ্করে, আজমীর শরীফে নতুন রেল লাইন বসিয়েছিলাম। পাঞ্জাবে নতুন ট্রেন দিয়েছিলাম। আগামী দিন সুযোগ পেলেও আবার আপনাদের জন্য কাজ করব।

আমি যা করব বলে কথা দিই, জীবন দিয়ে হলেও সেই কথা রাখি। যারা ভোটের আগে একরকম, পরে আরেকরকম কথা বলে, তাদের সঙ্গে আমি নেই। আমার মন এক আদর্শ ভারতীয়র মন।

ঝাড়খণ্ড, ছত্তিসগড়ে এখনও অনেক মাওবাদী আছে, মানুষকে ভয় দেখায়। কিন্তু, আমি গর্বিত, আমাদের রাজ্যে কোনও মাওবাদী নেই।

জঙ্গলমহলে একসময় শুধু কান্না ও রক্ত দেখেছি। সে সময় কেউ আসতো না, আমি আসতাম। সেই কান্না ও রক্ত আজ বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রামে উন্নয়নে পরিবর্তিত হয়েছে। আজ ওখানকার মানুষ খুশি।

সারা ভারতে আজ ব্যাবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত। ব্যাবসায়ীরা সন্ত্রস্ত। তারা ভয় পায় কখনও তাদের বাড়িতে সিবিআই বা ইডি বা আয়কর দপ্তর তো হামলা করবে না? এর আগে কখনও তারা এত ভয় পেত না।

ব্যাঙ্কে টাকা রেখে আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন না ব্যাঙ্ক সেই টাকা আপনাকে ফেরত দেবে কিনা? নোটবাতিলের ফলে ব্যাবসা পুরো ক্ষতিগ্রস্ত, বেকারত্ব বেড়েছে। ছোট ব্যাবসা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। মাঝারি ও বড় ব্যাবসাও অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক মানুষ দেশ ছেড়ে চলে গেছেন।

রাজস্থানের মানুষ বিজেপিকে সমর্থন করেনা। রাজস্থানে বিজেপি হারবে। মধ্যপ্রদেশেও বিজেপির অবস্থা খারাপ। আমার কাছে যতটুকু তথ্য আছে, তার ভিত্তিতে বলতে পারি, এই বিজেপি সরকার হারবে।

দেশের নেতাকে মানুষ সম্মান করে। যাকে পছন্দ না, মুখে কিছু বলে না, ভোটে তার জবাব দিয়ে দেয়। যাকে মানুষ ভয় পায়, সে দেশের নেতা হতে পারেনা।

বাড়ির মা বোনেরা সংসারের টাকা বাঁচিয়ে সঞ্চয় করত বিপদে আপদে কাজে লাগবে বলে। এটাকে লক্ষ্মীর ভাঁড় বলত। আজ সেটাও লুঠ করে নেওয়া হয়েছে।

মুখে বলছে বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও। কিন্তু, শুধু বিজ্ঞাপনে খরচা করছে। সারা দেশের জন্য বাজেট ১০০কোটি টাকা। আমরা রাজ্যে কন্যাশ্রী প্রকল্পে ৬০০০কোটি টাকা ইতিমধ্যে খরচা করে ফেলেছি। এখন আমাদের রাজ্যের সকল কন্যাই কন্যাশ্রী। ওরা শুধু মুখে বড় বড় কথা বলে।

আমাদের সরকার কৃষকের সঙ্গেও যতটা আছে, শিল্পের সঙ্গেও ততটা আছে। আমাদের সরকার বেকারদের সঙ্গেও আছে, মহিলাদের সঙ্গেও আছে। আপনারা এগিয়ে চলুন, আমি আপনাদের সঙ্গে আছি।

রাজনীতির লোক তো আসবে আর যাবে, কিন্তু রাজনীতির জন্য দেশকে বিকিয়ে দেওয়ার জন্যে নয়, দেশের রক্ষা করার জন্যে। মানুষকে কষ্ট দেওয়ার জন্য রাজনীতি নয়, মানুষের মন ভালোবাসা দিয়ে জয় করাটাই রাজনীতি।

আমাদের যে হিন্দিভাষী ভাই-বোনেরা আছেন, তাদের আমি আশ্বস্ত করতে চাই, আমি অনেক হিন্দি কলেজ বানিয়ে দিয়েছি, হিন্দি বিশ্ববিদ্যালয়-ও আমি করব, হিন্দি আমাদের এখানে দ্বিতীয় ভাষার সম্মানে ভূষিত, যেমন গুরুমুখি ও আরও অনেক ভাষা আছে।

সাত-আটদিন আগে ছট পুজা ছিল, তাতেও আমরা দু-দিন ছুটি দিয়েছি। কেন্দ্রীয় সরকার কিন্তু ছুটি দেয়নি। আমি ছট পুজায় যাই, যেমন আমি দুর্গা পুজা করি, কালী পুজা করি, ইদ পালন করি, বড়দিন পালন করি, তেমন ছট পুজাও করি। আমাদের আদিবাসিদের যা অনুষ্ঠান হয়, তাতেও আমি যাই।

বিহার, রাজস্থান, ইউপি, তামিল নাডু, পাঞ্জাব, ঝাড়খন্ড এরা আলাদা রাজ্য হতে পারে কিন্তু কি জানেন, আমাদের শরীরের আনেক অংশ আছে,আমাদের চোখ যেমন চাই, কানও তেমন চাই নাখ যেমন চাই তেমন হার্টও চাই- এরকমই আমাদের শরীরের মতো আমাদের দেশেরও দরকার প্রত্যেকটা সম্প্রদায়, প্রত্যেকটা রাজ্য, প্রত্যেকটি শহর, গ্রাম , প্রত্যেকটি মানুষের হাসি। আর ভারতের মানুষ যখন এগিয়ে যেতে পারে, তখনই দেশ এগিয়ে যেতে পারে।

এত ভাষা, এত রকমের মানুষ, এত ধর্ম, কিন্তু আমরা সবাই এক, আর আমরা একই থাকব, এতেই আমাদের একতা বজায় থাকবে, আপনাদের উন্নতি হোক।

আগামীদিনে যদি দিল্লীতে বদল আসে, তাহলে আপনাদের মুখে হাসি ফুটবে। তাই আমি চাই, আগামীদিনে আপনারা মনের জোর নিয়ে কাজ করুন, ভাল করে কাজ করুন। ভয় পেলে কিছু হবে না, আমাকেও নানারকম উত্যক্ত করে দিল্লীর সরকার, কিন্তু আমিও ওদের ছাড়িনা।

আমি বলি, যদি লড়তে পারো, তো লড়। নাহলে পেছন ছাড়ো। আমি সারাজীবন সংগ্রাম করে এসেছি, বাকী জীবনও সংগ্রাম করে যাব। মানুষের মনুষ্যত্বের খাতিরে যা যা করার দরকার তা আমি করে যাব, আমার দিল্লীর কুর্শির লোভ নেই, আমার জনতার ভরসা চাই। জনতার বিশ্বাস আমার চাই।

আমরা একসাথে লড়ব, আর আপনাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যাব, এটাই আমার ইচ্ছে। আপনাদের অনেক শুভেচ্ছা, জয় হিন্দ, বন্দে মাতরম।