সাম্প্রতিক খবর

নভেম্বর ২৮, ২০১৮

অনেক ত্যাগের মধ্যে দিয়ে তৈরী হয়েছে তৃণমূল: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

অনেক ত্যাগের মধ্যে দিয়ে তৈরী হয়েছে তৃণমূল: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ পুরুলিয়ার বলরামপুর একটি জনসভা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্যে উনি বলেন যে আগামী দিনে সংঘবদ্ধ হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে হবে। তিনি আরও বলেন আগামী ১৯শে জানুয়ারী ঐতিহাসিক ব্রিগেড সমাবেশের প্রস্তুতি হিসেবে ব্লকে ব্লকে সভা করতে হবে।

মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের কিছু অংশ:

আজ পর্যন্ত প্রায় ৪৩০ টি প্রশাসনিক বৈঠক ও পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠান করেছি যা কেউ করতে পারেনি। কারণ আমাদের মা-মাটি-মানুষের সরকার, মানুষের কাছে যাওয়া দরকার।

এক সময় এই জেলায় রাস্তাঘাট দিয়ে হাঁটাচলা করা যেত না, বিকেলের পর রাস্তায় কেউ বেরোতো না, দোকান গাড়ি সব বন্ধ হয়ে যেত, সারাক্ষণ মানুষ ভয়ে থাকতো। সারা বাংলা জুড়ে শুধু অত্যাচার ছিল।

আজ এই অযোধ্যা পাহাড়ে মানুষ ঘুরতে আসে, ওখানে আমাদের সরকার ট্যুরিজম সেন্টার তৈরী করে দিয়েছে এই ৭ বছরে যা ওরা ৬৬ বছরে করতে পারেনি। আইটিআই, পলিটেকনিক কলেজ, মানভূম আকাদেমি, কুর্মি আকাদেমি, লোকশিল্পীদের সাহায্য করেছে আমাদের সরকার।

একদিকে দার্জিলিং, অন্যদিকে জঙ্গলমহল রক্তাক্ত হয়ে জ্বলছিল। পুরুলিয়ায় সভা করতে এলে লোকের চোখে মুখে ভয় দেখতাম, তারা ভাবতো কবে মাওবাদীরা এখন থেকে যাবে, কবে শশ্মানের রাজত্ব শেষ হবে? আজ মানুষ হেসে হাসে রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে পারে, ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করতে পারে, হাসপাতাল যেতে পারে, কর্মস্থলে যেতে পারেন, রাতে নিশ্চিন্তে বাড়ি ফিরতে পারেন।

রঘুনাথপুরে ফ্রেট করিডোর হচ্ছে; এর ফলে লক্ষ লক্ষ কর্মসংস্থান হবে।

কেউ কেউ ঝাড়খন্ড থেকে এখানে আসছে, এসে গেরুয়া ফেট্টি বাঁধছে। ভাত দেওয়ার ক্ষমতা নেই, কিল মারা গোসাই। আর যারা আগে লাল জামা পরতো এখন গেরুয়া জামা পরে।

একদিকে রাম আর এক দিকে বাম – একদিকে জগাই আর একদিকে মাধাই আর অন্যদিকে বিজেপি হল বিদাই।

ওদের একটাই কাজ তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মানুষকে বলা, হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে দাঙ্গা লাগানো, আদিবাসী-মাহাতোদের আলাদা করে দেওয়া, শিখ-খ্রিস্টান আলাদা করে দেওয়া, অসমে বাঙালি খেদাও, গুজরাটে বিহারী খেদাও।

বাংলায় এখন সব মেয়েরা কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায়, কোন ভাগাভাগি নেই, তপশিলি আদিবাসীদের জন্য শিক্ষাশ্রী, সবাই সবুজ সাথী সাইকেল পায়, বিনামূল্যে চিকিৎসা পায়, ২ টাকা কেজি চাল পায়, জন্মের পর চারাগাছ পায়, মৃত্যুর পর সৎকারের জন্য আর্থিক সাহায্য পায়। সব শশ্মান ও জহরখান তৈরী করা হয়েছে, সংস্কার করা হয়েছে, পাট্টা দেওয়া হচ্ছে।

ওরা আদিবাসীদের জমি দখল করে নিচ্ছে, আমরা বাংলায় আইন করেছি-যে কেউ যখন তখন আদিবাসীদের জমি জোর করে কেড়ে নিতে পারে না। এই আইন আর কোথাও নেই।

মাহাতোদের উন্নয়নের জন্য আকাদেমি তৈরী হয়েছে।

বান্দোয়ানে একটি বিদ্যুৎ কারখানা হচ্ছে ৯০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন, ৪৫০০ কোটি টাকা খরচ হবে।

জলের জন্য ১১০০ কোটি টাকার প্রকল্প হচ্ছে। পুরুলিয়ায় আর পানীয় জলের সংকট থাকবেনা।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩০ লক্ষ কৃষক পরিবারকে ১২০০ কোটি টাকা আর্থিক সাহায্য করেছে আমাদের সরকার।

এখানে আমরা লাক্ষা চাষ শুরু করেছি, হোম ট্যুরিজম চালু করেছি। স্বনির্ভর প্রকল্পের মেয়েরা যাতে কাজ পায় সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে।

একমাত্র বাংলায় কৃষকদের খাজনা মুকুব করে দিয়েছে আমাদের সরকার। কৃষিজমির মিউটেশন ফি দিতে হয়না।

আমাদের রাজ্যে কারোর চিকিৎসার দরকার হলে, সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিনা পয়সায় চিকিৎসা হয়। ঝাড়খণ্ডের মানুষ, বিহারের মানুষ, অসমের মানুষ, ত্রিপুরার মানুষ তাদের নিজের রাজ্যে বিনা পয়সায় চিকিৎসা পায়না বলে, বাংলায় আসে চিকিৎসা করাতে। এমনকি বাংলাদেশ থেকেও এখানে চিকিৎসা করাতে মানুষ আসেন।

আমরা ঝাড়খণ্ডকে ভালোবাসি। বাংলা ও ঝাড়খণ্ড সীমান্তে যেসব তৃণমূল কর্মীরা আছেন, তারা জেনে রাখুন, ঝাড়খণ্ড থেকে বিজেপি ভাড়াটে গুন্ডা পাঠিয়ে পুরুলিয়াকে অশান্ত করার চেষ্টা করে। আগামী দিনে আমরা ঝাড়খণ্ড থেকে অনেকগুলো লোকসভা আসনে ও বিধানসভা আসনে প্রতিদ্বন্দিতা করব। আমরা ওড়িশাতেও কিছু আসনে লড়াই করব। আমরা অসমেও কিছু আসনে লড়াই করব।

অসমে বাঙালী খেদাও, বিহারী খেদাও চলছে। আমরা অসমে লড়াই করব কারণ আমরা চাই, আমাদের প্রতিবেশী রাজ্যগুলোর সঙ্গে আমাদের রাজ্যের সম্পর্ক আরও ভালো হোক। ঝাড়খণ্ডে আদিবাসীদের ওপর অত্যাচার হলে, আমরা বাংলা থেকে গিয়ে ওখানকার আদিবাসীদের সুরক্ষা করব।

কিছুদিন আগে ঝাড়খণ্ডে আদিবাসীদের জমি দখল হয়ে যাচ্ছিল। আমি নিজে তিন চারটে দল পাঠিয়ে ওখানকার আদিবাসীদের জন্য লড়াই করেছি। আগামী দিনেও তাদের জন্য লড়ব।

মধ্যপ্রদেশ মহারাষ্ট্র সহ বিভিন্ন জায়গায় ১২হাজার কৃষক আত্মহত্যা করেছে। সেখানে বাংলায় কৃষকদের বন্যা হলে আমরা দেখি, খরা হলে দেখি, দাম কমে গেলে দেখি, খাজনা মুকুব করে দিই, কৃষি যন্ত্রপাতি দিই। আমাদের সরকার কৃষকদের ভালোবাসে। বাংলাটা একটু অন্যরকম জায়গা।

নির্বাচন এলে সিপিএম একটু বেশী ঘেউ ঘেউ করে, কারণ, কিছু ক্ষমতা নেই। সব সাইনবোর্ড গুটিয়ে গেছে। এখন বিজেপির সাইনবোর্ড লিখছে। দুদিন পর সেটাও গুটিয়ে যাবে। তৃণমূল কংগ্রেস ছিল, আছে ও থাকবে। আগামী দিন ভারতের সরকার গড়তে তৃণমূল কংগ্রেস বৃহত্তর ভূমিকা পালন করবে। সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে ভারতের মানুষকে রক্ষা করবে।

আমাদের এখানে গ্রামসভা, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ ও পৌরসভায় ৫০ শতাংশের বেশী মহিলা আছে। ছাত্র যুবদের বলব, বাড়ি না বসে থেকে মানুষের কাছে যান। এটাই আমাদের আগামী দিনের বার্তা।

১৯শে জানুয়ারি ব্রিগেড প্যারাড গ্রাউন্ডে আমাদের সভা আছে। দুটি রাজনৈতিক দল ছাড়া দেশের প্রায় ১৮ থেকে ২০টি রাজনৈতিক দল ওই সভায় আসবে। এটি ঐতিহাসিক সভা হবে। ওই সভায় যাওয়ার জন্য এখন থেকে তৈরী হন, বুথে বুথে কর্মী সভা করুন।

তৃণমূল কংগ্রেস অনেক কষ্ট করে অনেক দিন ধরে তৈরী হয়েছে। আমরা একসময় কংগ্রেস করতাম। কংগ্রেস সিপিএমের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছিল। আমাদের হাজার হাজার কর্মীরা মারা গিয়েছিল। তখন আমরা কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এসে তৃণমূল কংগ্রেস তৈরী করেছিলাম। ১৯৯৮ সালের ১লা জানুয়ারি তৃণমূল কংগ্রেসের জন্মদিন।

তৃণমূল কংগ্রেস করতে গিয়ে পুরনো কর্মী এমন কেউ নেই যে মার খায়নি। আমরা অনেক মার খেয়েছি। আমার মাথা থেকে পা পর্যন্ত মেরেছে। আমার শরীরে অনেক অপারেশন হয়েছে। এত মার খেয়ে আমরা আজ এই জায়গায় পৌঁছেছি। এই জায়গাটা সংগ্রামের জায়গা, ত্যাগের জায়গা, তিতিক্ষার জায়গা।

বাংলার মানুষ টাকার কাছে মাথা নত করেনা। বাংলার মানুষ ক্রীতদাসত্ব করেনা। বাংলার মানুষ শিখেছে মাথা উঁচু করে চলা। বাংলার মানুষ এটা শিখেছে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের কাছে, স্বামী বিবেকানন্দের কাছে, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোসের কাছে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে, নজরুল ইসলামের কাছে, আম্বেদকরের কাছে, বিরসা মুন্ডার কাছে পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মুর কাছে, গান্ধীজির কাছে, মৌলনা আবুল কালাম আজাদের কাছে।

তৃণমূল কংগ্রেস দলটা মানুষের দল, সভ্যতার দল, সংস্কৃতির দল, শিক্ষার দল, রুচিশীলতার দল। যারা এই দল করবেন, তৃণমূল কংগ্রেসের ইতিহাস জেনে আসবেন।

আজ এত কষ্টের পর ক্ষমতায় এসেও আমাদের লড়াই চলছে। কেন্দ্র আমাদের পয়সা দেয় না। দিল্লী বাংলাকে বঞ্চনা করে। কথায় কথায় কেন্দ্র বাংলাকে গালিগালাজ করে। বিজেপির নেতারা রাজভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ভবন সব জায়গায় বিজেপির সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিয়েছে।

বাংলার মানুষ আমায় বলুক কবে তারা দুর্গাপুজো করত না? কবে তারা কালীপুজো করত না? কবে হনুমান জয়ন্তী পালন করেন নি? কবে শিবপুজো করেননি? কবে করম পুজো করেননি? কবে হুল উৎসব করেননি? আজ নতুন এক রাজনৈতিক দল সিপিএমের হাত ধরে এসে বলছে বাংলা আমরা দেখে নেব। আমরা বলি, আগে দিল্লী সামলান, তারপর বাংলার দিকে তাকান।

মধ্যপ্রদেশে নির্বাচনে সকাল থেকে ইভিএম যন্ত্রে গণ্ডগোল। এসব চালাকি আমরা বুঝি। ইভিএম ভিভিপ্যাট চালু হলে, তার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনকে নিতে হবে। যাতে কোনও ইভিএম যন্ত্র ভিভিপ্যাট যন্ত্রও খারাপ না হয়। আগামী দিনে দিল্লীতে আমাদের সমস্ত বিরোধী দলের যে বৈঠক আছে, সেখানে এই প্রস্তাব সবাইকে দেব।

নানারকম ভাবে চক্রান্ত চলছে, নানা জায়গায় দাঙ্গা লাগাচ্ছে। আমরা জগন্নাথের রথ দেখেছি, আমরা শ্রীকৃষ্ণের রথ দেখেছি। বিজেপির রাবণ রথ দেখেছেন? বড় বড় বিলাসবহুল গাড়ি, ভেতরে পুরো ফাইভ স্টার হোটেল, সেখান থেকে নেতারা মাঝে মাঝে বেরোবেন আর ভাষণ দিয়ে দাঙ্গা লাগাবেন। ওনারা রাবণ যাত্রা করুন, রাবণ বধ আমরা করব রাজনৈতিক ভাবে।

ওরা চাইবে গণ্ডগোল করতে, কোনও প্ররোচনায় পা দেবেন না। ওদের যাত্রার পরের দিন আপনারা যাত্রা করুন ‘পবিত্র যাত্রা’। কারণ, রাবণ যাত্রায় আগের দিন রাস্তাগুলো ওরা অপবিত্র করে দিয়ে যাবে। পরের দিন রাস্তাগুলো আমরা পবিত্র করব। ওরা থেকবে রাবণ রথে, আমরা থাকব মানুষের পথে। একই রুট দিয়ে আপনারা যাত্রা করবেন।

রাজনৈতিক ভাবে বিজেপি এবার ভারত থেকে বিদায় নেবে। ঝাড়খণ্ডেও আগামী দিনের নির্বাচনে সরকার গড়তে পারবে না। যারা ঝাড়খণ্ড থেকে এসে বাড়াবাড়ি করছেন, তারা আগে নিজের রাজ্যের মানুষকে পরিষেবা দিন। ওখানকার মানুষ খুব দুঃখে আছে। বিহারেও বিজেপি জিতবে না। উত্তরপ্রদেশেও জিতবে না, রাজস্থানেও জিতবে না। তামিলনাড়ুতেও আসন পাবে না, কর্ণাটকেও আসন পাবে না, কেরালায়ও আসন পাবে না। বাংলায় ছিল দুটো, এবার হবে জিরো।

বাংলায় বিজেপিকে হাতে ধরে নিয়ে এসেছে সিপিএম ও কংগ্রেস। তিন ভাই মিলে পঞ্চায়েত ভোট করল। দেশে বিজেপি যত না থাকে, তত মঙ্গল। আগামী দিন একটাই ডাক, বিজেপি ভারত ছাড়ো, বিজেপি দেশ ছাড়ো।

কেন্দ্রীয় সরকারে বিজেপি থাকবে না; কেন্দ্রে যদি বিজেপি থাকে, আপনি ব্যাঙ্কের ঋণ পাবেন না। কেন্দ্রে যদি বিজেপি থাকে, আপনার ব্যাঙ্কের টাকা লুঠ হয়ে যাবে। কেন্দ্রে যদি বিজেপি থাকে, কৃষকরা আরও আত্মহত্যা করবে।

তৃণমূল কংগ্রেস কোনো সমঝোতা করবে না, যারা বিজেপি-র হাত ধরে থাকে তাদের সাথে সমঝোতা করবে না, যারা মানুষে মানুষে ভেদাভাদ করে, আদিবাসীদের ওপর অত্যাচার করে, তাদের সাথে সমঝোতা করবে না, তৃণমূল কংগ্রেস মানুষকে সাথে নিয়ে চলবে, দেশকে সাথে নিয়ে চলবে, সবাইকে নিয়ে চলবে। এটাই তৃণমূল কংগ্রেসের সবচেয়ে বড় কাজ।

আমি নতুন ছেলেমেয়েদের চাই, দরকার নেই পদ। আমার ব্লকের কর্মীরা আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সবাই একসাথে সম্মিলিত ভাবে কাজ করবেন, সমস্ত কাজ ভালো ভাবে, সুন্দর ভাবে করবেন।