সাম্প্রতিক খবর

নভেম্বর ২৯, ২০১৮

বাংলায় কোনও ভেদাভেদ নেই: মুখ্যমন্ত্রী

বাংলায় কোনও ভেদাভেদ নেই: মুখ্যমন্ত্রী

আজ পশ্চিম বর্ধমান জেলার জামুড়িয়ায় একটি সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঞ্চ থেকে তিনি বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করেন। নতুন জেলার মানুষদের মুখ্যমন্ত্রী বলেন এই জেলার উন্নয়নে সরকার বদ্ধপরিকর।

মুখ্যমন্ত্রী বক্তব্যের কিছু অংশ:

  • প্রথমেই সকলকে বিভিন্ন উৎসবের আগাম শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।
  • বিহারে আপনারা ছট পুজোর জন্য একদিন ছুটি পান আর বাংলায় ২ দিন ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
  • আমরা সব ধর্মের উৎসব সমানভাবে পালন করি। আমরা দুর্গা পুজো-কালী পুজো-দিওয়ালি-নবী দিবস-গুরু নানকের জন্মদিন সব পালন করি। আদিবাসী উৎসব, ছাত্র-যুব উৎসব করি। বাংলা সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের স্থল। এখানে কোনও পার্থক্য নেই।
  • সারা দেশে বাংলায় একমাত্র জায়গা যেখানে বাঙালি ও হিন্দিভাষী মানুষ একসাথে থাকে। শুধু নির্বাচনের সময় এসে ভাগাভাগি করা – এসব আমরা করি না। আমরা সবাই মিলে থাকি; এটাই আমাদের পরম্পরা।
  • তৃণমূলের আমলে আসানসোল নতুন জেলা হয়েছে। আগে কেউ করেনি, এখানে মাল্টি সুপার হাসপাতাল, স্টেডিয়াম হয়েছে। আসানসোলে প্রথম রাজ্য সরকারের হোটেল ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট তৈরী করা হয়েছে। এছাড়া জেলা আদালত, আইটিআই, পলিটেকনিক কলেজ, কৃষক তীর্থ, কর্ম তীর্থ, আইসিসিইউ, এইচডিইউ, ন্যায্য মূল্যের ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কোল্ড স্টোরেজ, হিন্দি কলেজ তৈরী হয়েছে।
  • এখানে উর্দু ও হিন্দি ভাষাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। বানারহাট ও নক্সালবাড়িতে হিন্দি কলেজ তৈরী হয়েছে। উর্দু আকাদেমি হয়েছে।
  • এই জেলায় অন্ডালে বিমানবন্দর হয়েছে; বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামের নাম হয়েছে। নতুন কর্পোরেশন, রাস্তা, ফ্লাইওভার হয়েছে। আমাদের সরকার অনেক কাজ করেছে।
  • পাশেই ধানবাদ রয়েছে, গিয়ে দেখুন কি কাজ হয়েছে। ওরা শুধু দাঙ্গা লাগে আর গুন্ডাগিরি করে। কোন কাজ করতেই পারে না। এখানে ঝামেলা হলে সাধারণ মানুষ কিভাবে থাকবে?
  • কটা ইন্ডাস্ট্রি করেছে ওরা? ডিভিসি কে ৪০০০ একর জমি দেওয়া হয়েছে ইন্ডাস্ট্রি বাড়ানোর জন্য। বার্নপুরে নতুন বিমানবন্দর হচ্ছে।
  • বীরভূমের দেউচা পাঁচামিতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লাখনি হয়েছে, এর ফলে অনেক কর্মসংস্থান হবে। পানাগড়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক হয়েছে, দুর্গাপুরে অনেক এমএসএমই হয়েছে। আগামীদিনেও আরো অনেক কাজ হবে।
  • যে যা বলছে বলুক। আমাদের সরকারের ওপর বিশ্বাস রাখুন, আমাদের সরকারই আপনাদের কাজ করবে, আর কেউ করবে না।
  • রানীগঞ্জ ধ্বসপ্রবন এলাকা, ওখানে আমরা ৪৫০০০ বাড়ি করছি। রাতে মানুষ যাতে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পায় সেইজন্য আশ্রয়ের ব্যবস্থা করছে সরকার। আমার কাছে খবর আছে বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস এর নাম করে কেউ কেউ বলে আমাদের সাহায্য না নিতে। ওদের কথা শুনবেন না। আমরা আপনাদের সাথে আছি, কেউ আপনাদের সাথে জবরদস্তি করবে না।
  • আজকেও দুটো প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্বোধন করা হল। এছাড়াও আমাদের সরকার অনেক প্রকল্প করেছে।
  • রানীগঞ্জের জন্য নতুন প্রকল্প তৈরী করা হচ্ছে। নতুন রানীগঞ্জ তৈরী করা হচ্ছে। কুলটি, জামুরিয়া এবং অন্য কিছু অঞ্চলের জলের সমস্যা আছে। সেই সমস্যা ধীরে ধীরে মেটানো হচ্ছে।
  • পানাগড়ে অনেক শিল্প তৈরী হয়েছে। আসানসোল, রানীগঞ্জের বণিক গোষ্ঠীদের শুভেচ্ছা জানাই সকলে মিলে আমাদের সঙ্গে কাজ করার জন্য।
  • বর্ধমান জেলা কৃষিনির্ভর জেলা। কৃষি জমির খাজনা আমাদের সরকার মুকুব করে দিয়েছে। কৃষি জমির মিউটেশন ফিও আমাদের সরকার প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
  • আমাদের সরকার ১ কোটি ৭০ লক্ষ সংখ্যালঘু পড়ুয়াকে স্কলারশিপ দিয়েছে। সংখ্যালঘু উন্নয়নে আমরা সারা দেশে সেরা।
  • আমাকে একটা সরকার দেখান যারা ২ টাকা কিলো চাল দেয়। আমাদের রাজ্যে প্রায় ৮ কোটি মানুষ ২ টাকা কিলো চাল পায়। প্রতি কিলোতে সরকারকে প্রায় ২৩ টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। আমরা চাই আপনারা ভালো থাকুন।
  • আগে কন্যাশ্রীর মেয়েরা পেত ৭৫০টাকা, এখন পায় ১০০০ টাকা। ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত বিয়ে না করলে, পাবে ২৫০০০টাকা। কলেজের জন্য কে-২ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কে-৩ শুরু করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা বিভাগের জন্য পাবে ২০০০ টাকা, বিজ্ঞান বিভাগে পাবে ২৫০০ টাকা। এখন সরকারি স্কুল কলেজের সব মেয়েরাই কন্যাশ্রী।
  • যে সব মেয়ের পারিবারিক আয় বছরে ১.৫লক্ষ টাকার কম, তারা যদি পঞ্চায়েত, বিডিও বা পুরসভাকে দরখাস্ত করে জানায় সে মেয়ের বিয়ে দিতে পারছে না, সরকার সেই পরিবারকে রুপশ্রী প্রকল্পে ২৫০০০ টাকা দেবে।
  • সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে যে কোনও শ্রমজীবী মানুষ প্রতি মাসে ২৫ টাকা দেবে, সরকার ৩০ টাকা দেবে। ৬০ বছর বয়েস হলে সরকার পেনশন দেবে এবং এককালীন ২ লক্ষ টাকা দেবে। ৬০ বছরের আগে কারোর স্বাভাবিক মৃত্যু হলে তার পরিবারকে ৫০০০০ টাকা এবং দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। লোকপ্রসার শিল্পীরাও এই প্রকল্পের আওতায় আসতে পারেন।
  • ক্যাজুয়াল কর্মী, চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের অবসরের বয়স ৬০বছর করা হয়েছে।
  • চা বাগানে আমরা ৪৭পয়সায় চাল দিই। বন্ধ চা বাগানের শ্রমিকদের প্রতি তিন মাসে ১৫০০টাকা করে দেওয়া হয়।
  • লোকপ্রসার শিল্পীদের মাসে ১০০০ টাকা করে ভাতা দেওয়া হয়। এছাড়া, সরকারি সব প্রকল্পের বিজ্ঞাপনে তাঁদের কাজে লাগানো হয়। সেখানেও টাকা দেওয়া হয়।
  • আশার কর্মীদের বেতন কেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছিল। এখন রাজ্য সরকার তাদের মাসে ৩০০০টাকা করে পায়। তারা বাইরেও কাজ করে আরও কিছু রোজগার করতে পারেন।
  • আইসিডিএস কর্মীদের আগে কেন্দ্র সরকার ৯০ শতাংশ বেতন দিত। এখন সেটাও মাত্র ৩০ শতাংশ দেয়। তার জন্যেও রাজ্য সরকারকে ১০০০টাকা করে বেশী দিতে হয়।
  • সিভিক ভলেন্টিয়াররা আগে ৩০০০ টাকা পেত, এখন ৮০০০ টাকা পায়। প্যারাটিচারদেরও বেতন বাড়ানো হয়েছে। চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকদেরও বেতন বাড়ানো হয়েছে।
  • প্রাণীমিত্ররা বামফ্রন্ট আমলে মাসে ৪০০ টাকা পেত, এখন ১৫০০ টাকা দেওয়া হয়।
  • আসানসোল নতুন জেলা। সসম্মানে কাজ করুন। আগামীদিনে আসানসোলের সঙ্গে আমরা ঝাড়খণ্ডের সম্পর্ক ভালো করব। লোকসভা ভোটে ঝাড়খণ্ড থেকে তৃণমূল কংগ্রেস লড়াই করবে। ঝাড়খণ্ড ভালো থাকলে আমরাও ভালো থাকব। আমরা ভালো থাকলে ঝাড়খণ্ডও ভালো থাকবে।
  • বিজেপি মাঝে মাঝে মাথায় ফেট্টি বেঁধে সীমান্ত থেকে এসে এক হাতে ঝান্ডা ও এক হাতে ডান্ডা নিয়ে এসে গুন্ডামি করে। এরাই আবার যখন দিল্লীর সরকারে থাকে, জনতার সবকিছু লুঠ করে নেয়। ব্যাক থেকে ঋণ পাওয়া যায়না। বেকারত্ব বেড়ে চলেছে।
  • আমি নিজেও হিন্দু কিন্তু আমি বিজেপির মত হিন্দু নই। ভারত আমাদের মাতৃভূমি। আমরা দুর্গাপুজো করি, কালীপুজো করি। আমাদের মুসলিম ভাইয়েরা কি আমাদের কালীপুজোর সময় আসেন না? দুর্গাপুজোতে আসেন না? আমরা হিন্দু বলে কি আমাদের এখানে মুসলমানদের থাকতে দেব না?
  • বাংলায় ৩০% সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বসবাস করে এটা মনে রাখতে হবে। ওদের রমজান পরবে আমরা যেমন যাই তেমন ওরা আমাদের দুর্গাপুজোতে আসে। আমরা কি বড়দিন পালন করি না? আমরা কি কেক খাই না? আমরা কি গুরুদ্বারে যাই না? সেখানকার হালুয়া খাইনা? এর মানে সব ধর্মের জন্য সব ধর্ম। আমি যদি ছট পুজো উপলক্ষে গঙ্গা মায়ের পুজো করি তাহলে রমজানের জন্য রোজার উপবাসও পালন করি। এসব কিছুর পার্থক্য কোথায়?
  • ছট পুজোর সময় যদি ঠেকুয়া না আসে তাহলে আমার ভাল লাগে না। ঠিক একই ভাবে গুরুনানকের জন্মদিনে যদি হালুয়া না আসে তাহলেও আমার ভাল লাগেনা। ঈদ হবে আর যদি সিমুইয়ের পায়েস না আসে আমার কি ভাল লাগবে? দুর্গাপুজো হবে আর যদি ভোগ না আসে তাহলে আমার কি ভাল লাগবে? আমি সর্ব ধর্মকে সমান ভাবে পছন্দ করি।
  • সমাজ যদি টুকরো টুকরো হয়ে যায় তাহলে কি হবে? হিন্দু মুসলমানের সঙ্গে ঝগড়া শুরু হয়ে যাবে, পাঞ্জাবী-ইসাইয়ের সঙ্গে ঝগরা করবে। ভাই ভাই ঝগড়া করবে। তাহলে কি হবে? শুধু রক্ত ঝরবে, অশ্রু ঝরবে আর কিছু হবে না। তাই জীবনে যদি সফল হতে হয় তাহলে একতা, সম্প্রীতি, ভালোবাসা বজায় রাখতে হবে।
  • কেউ হিন্দি বলে, কেউ বাংলা বলে, কেউ অলচিকি বলে। এর মধ্যে কোন ফারাক নেই সকলকে এক হয়ে থাকতে হবে।
  • আমি বিশ্বাস করি কন্যাশ্রীই বিশ্ব শ্রী। আমি বিশ্বাস করি সবুজশ্রী একদিন বিশ্ব শ্রী হবে। বাংলা পথ দেখাবে।
  • আমাদের মনে রাখতে হবে অবিভক্ত ভারতে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা সব এক ছিল। কলকাতা তার রাজধানী ছিল। এই কারণে এই সব রাজ্যের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বরাবর ভাল ছিল, ভাল থাকবে।
  • আপনাদের খারাপ দিন যেন না আসে সেটাই আমি চাই । যদি কোনদিন কারও বিপদ হয় মনে রাখবেন আমরা আপনার পাশে আছি। মা-মাটি-মানুষের সরকার আপনাদের সরকার।
  • আমরা আসানসোল সহ বাংলার জন্য যা করেছি তা কেউ করতে পারবে না।
  • বাংলায় থেকে গর্ব বোধ করুন। মনে রাখবেন কোন হিন্দি ভাষী ভাই বোনেদের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য নেই। আমরা আপনাদের ভালবাসি আপনারাও আমাদের ভালবাসেন।
  • অসমে বাঙালী খেদাও, আর গুজরাট থেকে বিহারী খেদাও আমরা চাই না। আমরা এসব করার সময় রুখে দাঁড়াবো। আমরা সব সময় মনুষ্যত্বের সঙ্গে আছি, মানুষের সঙ্গে আছি।