নভেম্বর ১১, ২০১৮
৭ বছরে উচ্চশিক্ষায় নতুন দিশা বাংলায়

গত সাত বছরে রাজ্যে উচ্চশিক্ষা এক নতুন মাত্রা পেয়েছে। সিলেবাস বদল থেকে শুরু করে পরিকাঠামো উন্নয়ন, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন থেকে কলেজে সিট বাড়ানো – প্রতিটি ক্ষেত্রেই নজির গড়েছে বাংলা।
আসুন, দেখে নেওয়া যাক গত উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে রাজ্যের কিছু সাফল্য:
পরিকল্পিত ব্যয়:
এই দপ্তরের পরিকল্পিত ব্যয় ২০১০-১১ সালে ছিল ১০৮.৭ কোটি টাকা যা ৩৭৩ শতাংশ বেড়ে ২০১৭-১৮ সালে ৫১৪.১৮ কোটি টাকা হয়েছে।
উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রসারঃ
গত সাত বছরে রাজ্যে ২২টি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় ও ৪৮টি নতুন কলেজ নির্মিত হয়েছে। এর মধ্যে ১২টি বিশ্ববিদ্যালয় সরকারি অনুমোদন প্রাপ্ত এবং ১০টি বেসরকারি। এই মুহূর্তে রাজ্যে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ২৪টি ও ১০টি বেসরকারি।
২০১৮-১৯ সালে আরও যে ৫টি প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় চালু হবে, সেগুলি হলঃ
বোলপুরে, বিশ্ব বাংলা বিশ্ববিদ্যালয় (সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত)
ঝাড়গ্রামে, ঝাড়গ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত)
হুগলীর তারকেশ্বরে গ্রীন ইউনিভার্সিটি (সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত)
পূর্ব মেদিনীপুর বিশ্ববিদ্যালয় (সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত)
কোলকাতার নিউটাউনে সিস্টার নিবেদিতা ইউনিভার্সিটি (বেসরকারি)
এছাড়া, দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ি মহকুমায় নক্সালবাড়ি ও ফাঁসিদেওয়া ব্লকে অতিরিক্ত দুটি সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত কলেজ ২০১৮-১৯ সাল থেকে চালু হবে।
রাজ্যে উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান (বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে) ২০১০-১১ সাল পর্যন্ত ছিল ৮৫৫ যা ২০১৭-১৮ সালে বেড়ে হয়েছে ১৮৪৯।
মোট ভর্তি বেড়েছে উল্লেখযোগ্য ভাবেঃ
উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২০১০-১১ সালে মোট নথিভুক্ত হয়েছিল ১৩.২৪ লক্ষ যা ২০১৬-১৭ সালে বেড়ে হয়েছে ২০.১৫ লক্ষ।
উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২০১০-১১ সালে ভর্তির অনুপাত ছিল ১২.৪ যা ২০১৬-১৭ সালে বেড়ে হয়েছে ১৮.৫।
বেসরকারি অংশীদারিত্ব: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বর্তমানে ১০ যা ২০১১ সাল পর্যন্ত ছিল শুন্য।
মানোন্নয়নঃ
রাজ্যের ১১টি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ২৯২টি কলেজ ন্যাকের স্বীকৃতি পেয়েছে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এন এ এ সি এর থেকে সর্বোচ্চ ৩.৬৮ নম্বর পেয়ে প্রথম বিভাগে স্বতন্ত্র হয়েছে।
শূন্যপদ পূরণঃ
সরকারি ও সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত কলেজে ২০১৩ সাল থেকে ৬০০০ অধ্যাপক ও ২০০ জন অধ্যক্ষ নিয়োগ করা হয়েছে।
সরকারি ও সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত কলেজে অধ্যাপক ও অধ্যক্ষ নিয়োগের দ্বিতীয় দফার কাজ শুরু করবে ওয়েস্ট বেঙ্গল পাবলিক সার্ভিস কমিশন এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল কলেজ সার্ভিস কমিশন।
শিক্ষকদের শিক্ষার মানোন্নয়নঃ
শিক্ষকদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরী করা হয়েছে। নাম দেওয়া হয়েছে ‘দি ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অফ টিচার্স’ ট্রেনিং, এডুকেশন প্ল্যানিং অ্যান্ড অ্যাডমিনিশট্রেশন’।
এনসিটিই রেগুলেশন অনুযায়ী শিক্ষকদের শিক্ষায় একইপ্রকার পাঠ্যক্রম তৈরী করা হয়েছে। শিক্ষকদের শিক্ষা গ্রহনের জন্য বিভিন্ন পাঠ্যক্রমের ভর্তির একটি নীতি তৈরী করা হয়েছে।
সরকারি ও সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত সাধারণ ডিগ্রীর কলেজে অধ্যাপক নিয়োজিত হওয়ার যোগ্যতা নির্দিষ্ট করা হয়েছে ও প্রকাশ করা হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় উচ্চতর শিক্ষা অভিযান প্রকল্পে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজের অধ্যাপকদের উন্নয়নের জন্য ১ কোটি টাকা অনুমোদন করা হয়েছে।
কারিগরি শিক্ষায় জোরঃ
পুরুলিয়া ও কোচবিহারে দুটি নতুন সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ তৈরী হয়েছে। ২০১৮ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত রাজ্যে ডিগ্রী স্তরের ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্রযুক্তিশিক্ষার প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১০৩, যার মধ্যে ১০টি সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ।
শিক্ষাদান/শিক্ষাগ্রহনের জন্য প্রযুক্তির ব্যবহারঃ
সরকারি উদ্যোগে সরকারি ও সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭৩২টি ভার্চুয়াল ক্লাসরুম তৈরী করা হয়েছে।
সমস্ত সরকারি ও সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও পড়ুয়াদের বিনামূল্যে ওয়াইফাই পরিষেবা দেওয়া হয় ই-লার্নিংএর জন্য।
সমতার নিশ্চয়তাঃ
স্বামী বিবেকানন্দ মেধা বৃত্তি প্রকল্পে কে-৩ শুরু করেছে রাজ্য। ২০১৭ সালে কে-৩ এর অন্তর্গত সুবিধাপ্রাপকের সংখ্যা ছিল ৩৮০৬।
আদিবাসীদের কাছে উচ্চশিক্ষার সুবিধা পৌঁছে দিতে ঝাড়গ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ করা হচ্ছে।
মেয়েদের নাম নথিভুক্তিকরণ ২০১০-১১ সালে ছিল ৫.৬২ লক্ষ, যা ২০১৬-১৭ তে বেড়ে হয়েছে ৯.৫৩ লক্ষ।
মেয়েদের ভর্তির অনুপাত ২০১০-১১ সালে ছিল ১০.৯ যা ২০১৬-১৭ তে বেড়ে হয়েছে ১৭.৩।
২০১০-১১ সালে উচ্চশিক্ষায় মেয়েদের শতাংশ ছিল ৪২ যা ২০১৬-১৭ সালে বেড়ে হয়েছে ৪৭.৩।
দি ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট হায়ার এডুকেশন ইন্সটিটিউশনস (রিজার্ভেশন অ্যান্ড অ্যাডমিশন) অ্যাক্ট ২০১৩ তৈরী করে অনগ্রসর শ্রেণীর জন্য ১৭ শতাংশ সংরক্ষণ করা হয়েছে (তপশিলি জাতির ২২ শতাংশ ও তপশিলি উপজাতির ৬ শতাংশ ছাড়া)।
বাংলা ছাড়াও অন্যান্য ভাষায় শিক্ষা
জলপাইগুড়ির বানরহাটে, আসানসোলে, দার্জিলিং জেলার নক্সালবাড়ি ব্লকের হাতিঘিশায় হিন্দী মাধ্যমের ডিগ্রী কলেজ নির্মাণ করা হচ্ছে।
ওয়েস্ট বেঙ্গল কলেজ সার্ভিস কমিশন পরিচালিত স্টেট এলিজিবিলিটি টেস্টে ২০১৫ সাল থেকে সাঁওতালি ও উর্দু ভাষার ব্যবহার শুরু হয়েছে।
স্নাতকস্তরে ৪২টি কলেজে এবং ১০টি স্নাতকোত্তর স্তরে আরবী ভাষা পড়ানো হয়, এবং স্টেট এলিজিবিলিটি টেস্টে আরবী ভাষার স্বীকৃতি চাওয়া হয়েছে।
১০টি কলেজে স্নাতক স্তরে, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর স্তরে নেপালি পড়ানো হয়।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি কলেজে পার্সি পড়ানো হয়।
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দার্জিলিং সরকারি কলেজে তিব্বতি ভাষা পড়ানো হয়।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর স্তরে তামিল পড়ানো হয়।
স্বামী বিবেকানন্দ মেরিট কাম মিন্স স্কলারশিপের প্রসারণ
এই প্রকল্পের বরাদ্দ ২০১৫-১৬ সালে ছিল ৪৫ কোটি টাকা, যা ২০১৭-১৮ সালে বেড়ে হয় ২০০ কোটি।
ফুল টাইম নন-নেট এমফিল ও পিএইচডি গবেষণারতদের এবং স্নাতকোত্তর স্তরে কন্যাশ্রীর মেয়েদের আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে। এই প্রকল্পে সুবিধাপ্রাপকের সংখ্যা ২০০৬-০৭ সালে ছিল ৫৪৪ যা ২০১৭-১৮তে বেড়ে হয়েছে ৫৫৪৩৫।
গবেষণা ও আবিষ্কারের ওপর জোর
গবেষণা ও আবিষ্কার ও মানোন্নয়নের জন্য রাজ্য সরকার কলকাতা ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে ১০০কোটি টাকা করে দিয়েছে।
ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট কাউন্সিল ফর হায়ার এডুকেশনের পুনর্গঠন
নতুন নীতি মেনে ২০১৫ সালে ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট কাউন্সিল ফর হায়ার এডুকেশনের পুনর্গঠন করা হয়েছে। এর ফলে কাউন্সিলের ক্ষমতাও বেড়েছে। উচ্চশিক্ষায় কোনও উন্নয়ন বা পরিকল্পনা গ্রহণ করতে এটি রাজ্যের সর্বোচ্চ কমিটি।
সিলেবাস ও পাঠ্যক্রমের উন্নতি
ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট কাউন্সিল ফর হায়ার এডুকেশন দ্বাদশ শ্রেণীর পাঠ্যক্রমের সংশোধন এবং আপডেট করেছে স্নাতকস্তরে। দেশের মধ্যে সেরা হওয়ার লক্ষ্যে এই সংশোধন করা হয়েছে।
ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট কাউন্সিল ফর হায়ার এডুকেশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিবিসিএস শুরু করার জন্য যেখানে পড়ুয়াদের ইলেক্টিভ, কোর এবং সফট স্কিলের মধ্যে সুবিধা থাকবে তাদের কোর্স বাছাই করার।
মার্চ ২০১৮ অনুসারে স্নাতক স্তরে ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিবিসিএস শুরু করা হয়েছে। গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বাকি বিশ্ববিদ্যালয়েও ২০১৮-১৯ সালের মধ্যে এটি শুরু করা হবে।
স্নাতকোত্তর স্তরে ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিবিসিএস শুরু করা হয়েছে। বাকি বিশ্ববিদ্যালয়েও ২০১৮-১৯ সালের মধ্যে এটি শুরু করা হবে।