সাম্প্রতিক খবর

নভেম্বর ৮, ২০১৮

নোটবাতিলের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে কি বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? দেখে নিন

নোটবাতিলের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে কি বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? দেখে নিন

আজ ৮ই নভেম্বর। দু বছর আগে এই দিনেই সন্ধ্যা ৮টার সময় নোটবাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়। এই সিদ্ধান্ত ভারতের অর্থনীতিতে এনেছে বিপর্যয়। বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, লক্ষ লক্ষ মানুষ কর্মহীন হয়েছেন। সংগঠিত এবং অসংগঠিত দুই ক্ষেত্রের ব্যাবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

নোটবাতিলের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফেসবুক লাইভে টেলেফোনের মাধ্যমে বার্তা দেন। তিনি আবারও বলেন যে এই সিদ্ধান্ত বিপর্যয় দেকে এনেছিল এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নেওয়া হয়েছিল এই সিদ্ধান্ত।

নোটবাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণার এক ঘন্টার মধ্যে কি করে তিনি প্রতিবাদ করলেন

আমি তৃণমূল স্তরের মানুষ। আমি ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি শুরু করেছি। আমি তৃণমূল স্তরের মানুষকে জানি, বুঝি। নোটবাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা হওয়ার পর আমি সাধারন মানুষের কাছে তাদের প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছি। তারা কান্নায় ভেঙে পড়ে।

মহিলারাই কিন্তু সংসার চালান। তারা নিজেদের সঞ্চয়ের টাকা বাড়িতে লক্ষ্মীর ভাঁড়ে জমিয়ে রাখেন। রাতারাতি সেই টাকা বাতিল করে দেওয়া হল।

আমি সেদিন এক পরিচারিকার সঙ্গে কথা বলেছিলাম।  সে আমার কাছে ২০০ টাকা চাইল। আমি তাঁকে প্রশ্ন করলাম, সে এই টাকা নিয়ে কি করবে? উত্তরে সে বলে, তার সমস্ত সঞ্চিত টাকা বাতিল করা হয়েছে, তার কাছে পরের দিন বাজার করার মতও টাকা নেই।

এই শ্রমজীবী শ্রেণীর মানুষকে বাদ দিয়ে কিন্তু সমাজ অচল। তারা দিন আনে, দিন খায়। খেটে সংসার চালায়। তারা যদি এই সিদ্ধান্তের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হন, তাহলে এই সিদ্ধান্তটি মারাত্মক ভুল। তখনই আমি উপলব্ধি করলাম, এটা দেশের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের অন্যান্য অংশঃ

আমি আগেও বলেছিলাম, আবারও বলছি। নোটবাতিলের সিদ্ধান্তটি একটি বিরাট বিপর্যয় ছিল। ৮ই নভেম্বর ভারতের জন্য অন্ধকার দিবস। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নেওয়া হয়েছিল এই সিদ্ধান্ত।

নোটবাতিলের ফলে সবথেকে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষিক্ষেত্র, ছোট ব্যাবসায়ী, শ্রমিক, কৃষক, বেকার, বাড়ির কাজের লোক, গরীব দোকানদার ও অন্যান্যরা।

এই সিদ্ধান্তে কার উপকার হয়েছিল? কেন এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল? কাকে খুশি করতে? আমার সন্দেহ যে এই সিদ্ধান্ত কিছু মুষ্টিমেয় মানুষকে খুশি করতেই নেওয়া হয়েছিল।

দেশের অর্থনীতি এখন মন্দায়। ব্যাবসা পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত। সাধারণ মানুষ নিপীড়িত। টাকার মূল্যও ক্রমশ নিম্নমুখী।

দেশের (অর্থনৈতিক) অবস্থা বিপর্যয়ের আকার নিয়েছে। আমি জানি না কীভাবে এই বিপর্যয় থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। আর পারলেও, কত সময় লাগবে।

এই বিপর্যয় থেকে ঘুরে দাঁড়ানো খুব কঠিন। অনেক সময় লাগবে। আমাদের দেশ উন্নতীশীল দেশ। আমরা এখন বিপর্যয়ের সম্মুখীন।

জ্বালানির দাম বাড়ছে। বেকারত্ব বাড়ছে। কৃষকরা হাহাকার করছে। তপশিলি জাতি/উপজাতির মানুষ, খৃস্টানরা, অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল শ্রেণীর মানুষ, সাধারণ মানুষ – সবাই ভুগছেন।

মানুষ (সরকারের বিরুদ্ধে) মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছে। তারা মুখ খুললেই কেন্দ্রীয় সংস্থা তাদের ধরছে।

দেশের বিভিন্ন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থার প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু, বর্তমানে এই সংস্থাগুলি কেন্দ্রের শাসক দল (বিজেপি) এবং আরএসএসের খেলার পুতুলে পরিণত হয়েছে।

শুধুমাত্র মেরুকরণের উদ্দেশ্যে এই সংস্থাগুলি পার্টি অফিস থেকে পাওয়া নির্দেশ মেনে চলছে।

উন্নয়নের সুচকগুলি সব নিম্নমুখী। বিনিয়োগ কমছে। ছোট শিল্প – যা আমাদের দেশের অন্যতম মূল ভিত্তি, যেখানে দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হয় – সেটাই ক্ষতিগ্রস্ত।