সাম্প্রতিক খবর

নভেম্বর ৫, ২০১৮

দক্ষিণেশ্বরে স্কাইওয়াকের উদ্বোধন করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

দক্ষিণেশ্বরে স্কাইওয়াকের উদ্বোধন করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

কালীপুজোর আগেই রাজ্যবাসীর জন্য সুখবর। দক্ষিণেশ্বরে স্কাইওয়াকের উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই অত্যাধুনিক স্কাইওয়াকটি সাড়ে ১০ মিটার চওড়া ও ৩৪০ মিটার দীর্ঘ। কাঁচ ও ইস্পাত দিয়ে নির্মিত এই স্কাইওয়াকটি দক্ষিণেশ্বর রেল ষ্টেশন থেকে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের কালীবাড়ি প্রাঙ্গন পর্যন্ত বিস্তৃত।

এলইডি আলো দ্বারা সজ্জিত, সিসিটিভি মনিটরিং সমৃদ্ধ এবং এই ক্যান্টিলিভার ব্রীজটি অগ্নি প্রতিরোধকারী ক্ষমতা বিশিষ্ট।

রেলওয়ে ও মেট্রো ষ্টেশন থেকে সরাসরি এবং পাশাপাশি রামকৃষ্ণ পরমহংস রোড ছাড়াও মন্দিরে প্রবেশ করা যাবে। এই স্কাইওয়াক বরাবর দুধারে থাকছে মোট ১৪টি চলমান সিঁড়ি, চারটি লিফট এবং আটটি সিঁড়ি। এর ফলে, সাধারণ মানুষ যে কোনও জায়গা থেকে স্কাইওয়াকে উঠতে ও নামতে পারবেন। প্রতিটি লিফটে একবারে ২০জন মানুষ ওঠানামা করতে পারবেন।

বিনামূল্যে হকারদের পুনর্বাসনের জন্য ১৩৭টি দোকান ও ইউটিলিটি রুম সমৃদ্ধ ব্রীজটি পথচারী ও যানচলাচলের রাস্তাকে পৃথক করেছে।

প্রতি বছর এই মন্দিরে আসেন ১.৪ কোটি দর্শণার্থী। যারা পায়ে হেঁটে মন্দিরে যান, তাদের জন্য এই স্কাইওয়াক খুব উপযোগী হবে। এর ফলে ওই রাস্তার ট্রাফিক সমস্যারও সমাধান হবে।

রাজ্যের অন্যান্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের মত এই স্কাইওয়াকের পরিকল্পনাও মুখ্যমন্ত্রীর মস্তিষ্কপ্রসূত।

মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের কিছু অংশ:

আজ থেকে এই স্কাইওয়াকের নাম হল দক্ষিণেশ্বর রানী রাসমণি স্কাইওয়াক। দক্ষিণেশ্বরের সঙ্গে যদি রানী রাসমনির নাম না থাকে তাহলে ইতিহাস অধরা থেকে যাবে।

দক্ষিণেশ্বর এলাকাটা খুব congested. আমার হকার ভাইবোনদেরও পুনর্বাসিত করা দরকার। তাই আমরা এই স্কাইওয়াক তৈরীর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।

এই কাজটি করার জন্য আমাদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তিনটি দল (জগাই-মাধাই-গদাই) অনেক কনভেনশন করল, হকারদের ভুল বোঝানো হল। কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছিল ব্যাপারটা, কিন্তু বিচারকরা অনুমতি দিয়েছিলেন। ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে লড়াই করতে হয়েছে আমাদের। এটা মানুষের কাজে লাগবে, পুণ্যার্থীরা এর মাধ্যমে অনেক উপকৃত হবেন।

দক্ষিনেশ্বর ও বেলুড় আন্তর্জাতিক ধর্মীয় পর্যটন কেন্দ্র।

আমি যখন রেলমন্ত্রী ছিলাম, দক্ষিনেশ্বর স্টেশনের কায়দাতে রেপ্লিকা স্টেশন বেলুড় মঠ তৈরী করে দিয়েছিলাম। তারাপীঠে, কামাক্ষাতেও রেপ্লিকা স্টেশন করে দিয়েছিলাম। দক্ষিনেশ্বরকে দমদমের সাথে সংযুক্ত করার জন্য নোয়াপাড়া পর্যন্ত মেট্রো রেল চালু করেছিলাম। বেলুড় মঠে কার পার্কিং সেন্টার তৈরী করেছিলাম।

আমরা বলেছিলাম হকার্সদের জন্য জায়গার ব্যবস্থা করে দেব, তাই ১৩৭ টি স্টল করে দেওয়া হয়েছে। আগামী ৭ দিনের মধ্যে তাদের এটা দিয়ে দেওয়া হবে।

এখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ আসবে, তাই জায়গাটা আমাদের পরিষ্কার রাখতে হবে। দক্ষিনেশ্বর ট্রাস্ট কমিটি এটা রক্ষনাবেক্ষন করবে। সাধারণ মানুষকেও অনুরোধ করব তারাও যেন এটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখবেন। দিনে দুবার করে কামারহাটি পুরসভা এটি পরিষ্কার করবে।

দক্ষিনেশ্বর ও বেলুড় মঠ আমাদের গর্ব।

আমরা কালীঘাটেও একটি স্কাইওয়াক তৈরীর পরিকল্পনা করছি। ইতিমধ্যেই কালীঘাটের জন্য আমরা একটি উন্নয়ন পরিকল্পনা করেছি।

আমরা তারাপীঠ, সতীপীঠ, কঙ্কালিতলা, বক্রেশ্বর, নলহাটেশ্বরী, ফুরফুরা শরিফ, তারকেশ্বর, গঙ্গাসাগর – সব কিছুর উন্নয়ন করেছি।

যারা ধর্ম ধর্ম করে, তারা ধর্মের জন্য এক ইঞ্চিও করে না। ধর্ম যার যার নিজের। আমি সব ধর্মকে সম্মান করি, ধর্মকে বিক্রি করি না। পুর ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে একটি উন্নয়ন কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে। কেউ কেউ বললেন মুসলিমকে কেন চেয়াম্যান করা হচ্ছে। আমি উন্নয়নের কাজ করব সেখানে হিন্দু-মুসলমান না মহিলা-পুরুষ দিয়ে কি হবে? শুধু ঝগড়া, বিরোধিতা আর ধর্মের ভেদাভেদ করে ওরা।

হিন্দু ধর্ম নিয়ে ওরা আমাদের বড় বড় কথা বলার কে? যখন হিন্দু ধর্ম চালু, বেদ-বেদান্ত যখন লেখা হয়েছিল তখন ওরা কোথায় ছিল? হিন্দু ধর্মের নিয়ম-কানুন ওরা জানে কি? গেরুয়া পড়লেই সাধু হয় না, মনটাও সাধু হয় চাই।

বিজেপির গেরুয়া হল নকল, ওরা খায়-দায়, ঘুরে বেড়ায় আর ভাষণ দেয়। আসল গেরুয়া হল ভারত সেবাশ্রম সংঘ আর রামকৃষ্ণ মিশন যারা মানুষের সেবা করে। ওদের গেরুয়া দল করার জন্য আর মিথ্যে কথা বলার জন্য।

আমাদের ভারতবর্ষ অনেক বড়। এক এক রাজ্যের এক এক রকম সংস্কৃতি। আমরা আমাদের রাজ্যে দুর্গা পুজো, কালী পুজো, ভবতারিণী, আদ্যা মা, চামুন্ডা, ছিন্নমস্তা – সবার পুজো করি। এগুলো সবই এক ভগবানের বিভিন্ন রূপ। আমাদের ধর্ম এক জায়গায় সীমাবদ্ধ নয় – এটাই হিন্দু ধর্মের বৈশিষ্টতা।

আমরা বিশ্বাস করি, ধর্ম যার যার উৎসব সবার। আমরা সকলে ঈদ, বড়দিন, গুরু নানক জয়ন্তী, দুর্গাপুজোয় অংশ গ্রহণ করি।

রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বলতেন, যত মত তত পথ। বেলুড় মঠেও একটা মাজার আছে।

মানব শরীর কি কোনও অঙ্গ ছাড়া সম্পূর্ণ হয়? একটি পরিবারেও অনেক সদস্য থাকেন। সমাজ সমস্ত মানুষকে নিয়ে তৈরী হয়।

এই স্কাইওয়াক শুধু ভারতের না সারা বিশ্বের জন্য একটা মডেল। ধর্মীয় স্থানে ভিড় এড়াতে এই স্কাইওয়াক তৈরী করে যানজট কমানো সম্ভব।

আমরা শ্মশানগুলির সংস্কার করেছি। আগে নিমতলা মহাশ্মশানে গেলে গা শিউরে উঠত, এখন দেখবেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন শ্মশান।

এখন রাস্তায় ৩০ কিলোমিটার অন্তর পথসাথী আছে।

৫০,০০০ কোটি টাকা দেনা শোধ করেও সারাক্ষণ মানুষের কাজ করতে হয়। আমরা অনেক পরিকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ করেছি। মানুষের কাজ করতে গেলে তা অন্তর দিয়ে করতে হবে।

দক্ষিনেশ্বরে একটি পুর্নাঙ্গ থানা হওয়া প্রয়োজন।

সকলকে কালী পুজো, দ্বীপাবলী ও ছট পুজোর শুভেচ্ছা জানাই। প্রশাসনকে অনুরোধ করব সব কিছুর দিকে নজর রাখতে। ভাইফোঁটার জন্য আমার সকল ভাই বোনেদের অনেক অভিনন্দন, শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।

রানী রাসমণি অনেক লড়াই করে ইতিহাস তৈরী করেছিলেন। তাঁর নামে আরও কিছু করতে চাই।