নভেম্বর ৩০, ২০১৮
সাত বছরে জেলায় ৪৩০টি প্রশাসনিক বৈঠক করেছি: মুখ্যমন্ত্রী

আজ পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনায় একটি সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঞ্চ থেকে তিনি বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করেন। নতুন জেলার মানুষদের মুখ্যমন্ত্রী বলেন এই জেলার উন্নয়নে সরকার বদ্ধপরিকর।
মুখ্যমন্ত্রী বক্তব্যের কিছু অংশ:
আমরা বিভিন্ন জেলার মানুষের কাছে সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠান ও প্রশাসনিক বৈঠক করি। কোথায় কি সমস্যা তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি। গত ৭ বছরে আমরা মোট ৪৩০টি বৈঠক করেছি। কলকাতা এখন ছুটে আসে জেলায় জেলায়।
বর্ধমান জেলা ১০০ দিনের কাজে প্রথম হয়েছে। এই মাটিতে যেমন সবুজ ফসল ফলে তেমনই আগুন ও জ্বলে।
কালনার ঐতিহ্য ওখানকার ভাস্কর্য, মন্দির। আজ এখানে একটি স্টেডিয়ামের উদ্বোধন হয়েছে যেখানে দাঁড়িয়ে আমরা এই অনুষ্ঠান করছি।
আমরা চাই কালনার মানুষ ভালো থাকুক। বর্ধমান কৃষিপ্রধান জেলা – সবচেয়ে বেশি ধান উৎপাদন করে।
আজ কেন্দ্রীয় সরকার কৃষকদের আয় দ্বিগুন করেছে অথচ বাংলায় অনেক আগেই আমরা কৃষকদের আয় তিনগুন করে দিয়েছি। কৃষক বাজার, কর্ম তীর্থ, তৈরী হয়েছে।
এই জেলায় ৬ টি নতুন কলেজ হয়েছে। কালনা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল হয়েছে। সিসিইউ, আইসিসিইউ, এইচডিইউ, ন্যায্য মূল্যের দোকান, ন্যায্য মূল্যের ডায়াগনস্টিক সেন্টার তৈরী হয়েছে।
এখানে আমরা মাটি তীর্থ তৈরী করেছি। ২০১২ সালে আমরাই প্রথম মাটি উৎসব শুরু করি। তারপর ২০১৩ সালে রাষ্ট্র সংঘ শুরু করেছে এই উৎসব; আমরাই পথ দেখিয়েছি।
এই জেলায় কাস্টম হায়ারিং সেন্টার, মিষ্টি হাব করা হয়েছে।
আগামীদিনে ২৭৬৮ কোটি টাকা খরচ করে একটা লোয়ার দামোদর স্কিম করা হচ্ছে, যেখানে এখনও যেখানে জল জমে বন্যা হয়, সেচের সমস্যা হয় সেগুলির সমাধান হয়ে যাবে। লক্ষ লক্ষ জমি কৃষিজমির আওতায় আসবে। আর জলের জন্য কষ্ট করতে হবে না।
নতুন রাস্তা তৈরী হচ্ছে যা গিয়ে উত্তরবঙ্গে যুক্ত হবে, এর জন্য খরচ হবে ৩২০০ কোটি টাকা। এটি সম্পূর্ণ হলে দক্ষিণ ও উত্তরবঙ্গ এর যোগাযোগ ব্যবস্থার আর একটি বিকল্প রাস্তা হবে।
ডানকুনি থেকে বর্ধমান ফ্রেট করিডর হচ্ছে। এর ফলে প্রচুর কর্মসংস্থান হবে।
পাশের বীরভূম জেলার দেউচা পাঁচামিতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লাখনি হয়েছে, এর ফলে লক্ষাধিক কর্মসংস্থান হবে।
কালনার ভাগীরথীর উপর দিয়ে শান্তিপুর পর্যন্ত ব্রিজ তৈরী হবে আগামী ২০২২ সালের মধ্যে। খরচ হবে ১০০ কোটি টাকা।
আমাদের সরকার জোর করে কারো জমি অধিগ্রহণ করে না, আমরা কৃষক সাধারণ মানুষের পক্ষে, যেখানে সমস্যা আছে তা সমাধান করেই আমরা কাজ করি।
৬৫০০০ কৃষক যাদের বয়স ৬০ বছরের বেশি তারা পেনশন পেতেন, আমরা সংখ্যাটা বাড়িয়ে ১ লক্ষ করে দিয়েছি। আগে তারা ৭৫০ টাকা পেতেন এখন তা বাড়িয়ে ১০০০ টাকা করা হয়েছে। কাস্টম হায়ারিং সেন্টার তৈরী করে কৃষকদের কৃষির সরঞ্জাম দিচ্ছি। বিকল্প চাষের ব্যবস্থা করেছে সরকার।
এখন সব মেয়েরা কন্যাশ্রী পায়, তারা আগে পেত ৭৫০টাকা, এখন পায় ১০০০ টাকা। ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত বিয়ে না করলে, পাবে ২৫০০০টাকা। কলেজের জন্য কে-২ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কে-৩ শুরু করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা বিভাগের জন্য পাবে ২০০০ টাকা, বিজ্ঞান বিভাগে পাবে ২৫০০ টাকা। এখন সরকারি স্কুল কলেজের সব মেয়েরাই কন্যাশ্রী।
কন্যাশ্রীরাই বিশ্ব জয় করবে। মেয়েরা এখন ঘরের বোঝা নয়, ওরা আমাদের সম্পদ। আগামীদিনের মেয়েরাই দেশ গড়বে, লড়াই করবে।
ছেলেদের জন্য সরকার বিবেকানন্দ মেরিট স্কলারশিপ চালু করেছে সরকার। তপশিলি জাতি-উপজাতিদের জন্য শিক্ষাশ্রী স্কলারশিপ চালু করেছে। ১ কোটি সংখ্যালঘু ছেলেমেয়ে, ৭০ লক্ষ তপশিলি জাতি-উপজাতি ছেলেমেয়েরা স্কলারশিপ পেয়ে পড়াশোনা করছে।
ইতিমধ্যেই ৫০লক্ষ কন্যাশ্রী আছে। এখন সব মেয়েই কন্যাশ্রী। এর ফলে সংখ্যাটা হয়ত দ্বিগুণ হয়ে যাবে। কন্যাশ্রী প্রকল্পে আমরা ৬০০০ কোটি টাকা খরচ করেছি।
সবুজ সাথী প্রকল্পে আমরা ১কোটি ছেলে মেয়েকে বিনামূল্যে সাইকেল দিয়েছি। পড়ুয়ারা যাতে আরও ভালো করে পড়াশোনা করতে পারে, তাই আমরা এই প্রকল্প নিয়েছি। আগামী দিনে রাজ্যের ছেলেমেয়েদের জন্য আমরা অনেক কর্মসুচী নেব। সবুজ সাথী প্রকল্পে আমরা ৩০০০ কোটি টাকা খরচ করেছি।
দেশের মধ্যে একমাত্র আমাদের রাজ্যে কৃষিজমির সব খাজনা মুকুব করে দেওয়া হয়েছে। কৃষি জমির মিউটেশন ফিও মুকুব করে দেওয়া হয়েছে।
সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৪৬টি মাল্টি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল তৈরী করা হয়েছে সাত বছরে।
এখনও অনেক সিপিএমএর কর্মী এসব জায়গায় আছেন। তারা সরকারকে বদনাম করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন। তাদের আমি বলব, অনেক ধর্মঘট করেছেন, অনেক মানুষের সঙ্গে অসহযোগ করেছেন, ৩৪বছর ধরে বাংলাকে পিছিয়ে দিয়েছেন, আর বাংলাকে নিয়ে ছেলেখেলা করতে দেব না।
সিপিএমএর সরকার যে দেনা করে গেছে, সেই টাকা আগে শোধ কর। আপনারা মানুষের ওপর ঋণ চাপিয়ে চলে গেছেন যা আমাদের শোধ করতে হচ্ছে। আমাদের ৪৮০০০কোটি টাকা ঋণ শোধ করতে হচ্ছে।
আমরা ২টাকা কিলো চাল দিই। চাষিদের থেকে চাল কিনি। প্রতি কিলো চালে সরকার ২৩টাকা ভর্তুকি দিই।
যেসব পরিবারের আয় বার্ষিক ১.৫ লক্ষ টাকার কম, তাদের মেয়েদের বিয়ের জন্য রুপশ্রী প্রকল্প তৈরী করা হয়েছে। তার বিয়ের জন্য সরকার ২৫০০০টাকা দেবে। যে কন্যাশ্রীর টাকা পাবে, সে রুপশ্রীর টাকাও পেতে পারে।
আমাদের সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প আছে। অসংগঠিত ক্ষেত্রের যেকোনও শ্রমজীবী মানুষ এবং লোকপ্রসার শিল্পী মাসে ২৫ টাকা দেবে ও রাজ্য সরকার ৩০ টাকা দেবে। ৬০ বছর বয়স হলে সে এককালীন ২ লক্ষ টাকা পাবে ও মাসে মাসে ১৫০০ টাকা পেনশন পাবেন। এছাড়া বছরে ৪০০০ থেকে ১০০০০ টাকা পর্যন্ত পাবেন ছেলে মেয়ের পড়াশোনার জন্য। দুর্ঘটনায় মৃত্যুতে ১.৫ লক্ষ টাকা এবং স্বাভাবিক মৃত্যুতে ৫০০০০ টাকা পাবেন। মেয়ের বিয়েতেও টাকা পাবেন। শ্রম দপ্তরেও কার্যালয়ে এর আবেদন পত্র পাবেন।
আমাদের সরকার আসার পর একজনেরও চাকরি যায়নি। আমরা চাই সবাই ভালো থাকুক।
সরকারে যারা চুক্তিভিত্তিক কর্মী বা ক্যাজুয়াল কর্মী আছেন, সকলের অবসরের বয়স বাড়িয়ে ৬০ বছর করা হয়েছে। ১ লক্ষ সিভিক ভলেন্টিয়ার নিয়োগ করা হয়েছে। আগে ৩০০০ টাকা পেত এখন ৮০০০ টাকা পায়। ভালো কাজ করলে হোমগার্ডে তাদের নেওয়া হবে।
আশা কর্মী, আইসিডিএস কর্মীদের মাইনে আমরা বাড়িয়েছি। প্রাণীমিত্ররা পেত ৪০০ টাকা, সেই টাকা বাড়িয়ে আমরা ১৫০০ টাকা করেছি। প্যারা শিক্ষক, চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকদের মাইনেও বাড়ানো হয়েছে এত আর্থিক শঙ্কটের মধ্যেও।
মানুষকে বাদ দিয়ে কিছু হয় না। বিনা পয়সায় শিশুদের হার্ট অপারেশন করা হয়, কিডনি ডায়ালিসিস করা হয়। ন্যায্য মূল্যের ডায়াগোনিস্টিক কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানে ৪০ থেকে ৬৭ শতাংশ কম দামে ওষুধ পাওয়া যায়।
৩০ লক্ষ কৃষক পরিবারকে ১২০০ কোটি টাকা সাহায্য করা হয়েছে। ক্ষরা হলেও আছি বন্যা হলেও আছি। যেকোনও বিপদে মা মাটি মানুষের সরকার আপনার পাশে আছে।
আপনি যে দলের সমর্থক হোন, সরকারি চাকুরে হলে, জনগণের কাজ করতে হবে। আন্দোলনের নাম করে বাংলাকে শেষ কড়া আপনাদের কাজ না।
সব কল কারখানা বন্ধ করে দিয়েছিলেন, স্কুল কলেজগুলোকে রাজনীতির আখড়া করে তুলেছিলেন, হাসপাতাল গুলো জীবন্ত যমালয়ে পরিণত করেছিলেন। রেশন দোকানে চাল ছিল না, শিক্ষকরা এক তারিখে মাইনে পেতেন না। আজকাল মাইনে, পেনশন সকলে এক তারিখে পেয়ে যান।
আমরা সমবায় ব্যাঙ্ককে বলছি কৃষকদের বেশী করে ঋণ দিয়ে সাহায্য করতে।
যারা সিঙ্গুরের জমি কেড়ে নিয়েছিল, নন্দীগ্রাম দখল করতে গিয়েছিল, নেতাইতে লোক খুন করেছিল, মাওবাদীর নাম করে শয়ে শয়ে লোক খুন করেছিল, তারা আজ বড় বড় কথা বলছে।
আমরা সেদিন একমাত্র বলেছিলাম সিঙ্গুরের কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দেব, আমরা ফিরিয়ে দিয়েছি। এখনও তাদের জমি যতক্ষণ না পুরোপুরি চাষযোগ্য হচ্ছে মাসে ২০০০ টাকা করে তাদের দেওয়া হচ্ছে। তাদের চালও বেশী দেওয়া হয়।
চা বাগানের শ্রমিকদের মাত্র ৪৭ পয়সায় চাল দেওয়া হয়।
সারা জীবন সংঘর্ষ করে এসেছি। সারা শরীরে মার খেয়ে খেয়ে আজ এই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছি। তাই, মানুষের কোনও ক্ষতি করে কাজ করা আমাদের স্বভাব নয়। আমার জীবনের লক্ষ্য সকলকে দাড় করিয়ে দেওয়া।
এই সরকার থাকলে, মানুষের যেকোনও প্রয়োজনে তার সাহায্য করবে। এটা দিল্লীর সরকার নয় যে, মিথ্যে কথা বলবে, দাঙ্গা লাগাবে, কুৎসা করবে, অপপ্রচার করবে, চক্রান্ত করবে, ষড়যন্ত্রের জাল বুনবে।
যখন নোটবন্দী ও জিএসটি-র জন্য সারা দেশে কাজ কমে গেছে, একমাত্র বাংলায় ৪০% বেকারত্ব কমেছে।
আমরা আর কর্মসংস্থান তৈরি করব। স্কিল ট্রেনিং-এর জন্য আমরা প্রায় ৩০০ টা আই টি আই তৈরি করেছি। এখন প্রায় ৭০,০০০ ছেলেমেয়ে ট্রেনিং পাচ্ছে। ট্রেনিং শেষ হলে প্লেসমেন্টের কথাও কোম্পানিগুলির সাথে চলছে। আগামীদিনে দু-বছরে ১২ লক্ষ ছেলেমেয়েকে আমরা ট্রেনিং দেওয়ার টার্গেট নিয়েছি।
এত কাজ আমরা করতে পারি কারণ আপনাদের বিশ্বাস, ভালোবাসা ও ভরসা আছে বলে। আগামীদিনে আমরা করে যাব।