নভেম্বর ১৫, ২০১৮
বড়'মার জন্মশতবার্ষিকীতে ঠাকুরনগরকে বিশ্ববিদ্যালয় উপহার দিলেন মুখ্যমন্ত্রী

আজ মতুয়া সম্প্রদায়ের নেত্রী বীণাপাণি ঠাকুর যিনি সকলের বড়মা হিসেবে পরিচিত, তাঁর শতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী। বড়’মার জন্মশতবার্ষিকীতে ঠাকুরনগরকে বিশ্ববিদ্যালয় উপহার দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুরনগর যা মতুয়া সম্প্রদায়ের পারম্পরিক আসন, সেখানেই এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন তিনি। মতুয়া সম্প্রদায়ের অনেকেই তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক ও সাংসদ।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের কিছু অংশ:
বাংলা, মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড় থেকে আগত সকলকে ধন্যবাদ। আজ বড় মা-র শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে মতুয়া সংঘ যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন এবং এখানে আমার আসার সুযোগ করে দিয়েছেন, সেজন্য সকলকে ধন্যবাদ। আমি আগেও এখানে এসেছি। আমি ওনাকে আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই, আরো দীর্ঘজীবী হন, সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন, সকলকে আশার আলো জোগান।
এই মতুয়া সংঘ একটা আন্দোলন, গরীব-বঞ্চিত-নমশূদ্র-অবহেলিতদের কথা বলার জন্যই গুরুচাঁদ ঠাকুর, প্রমোদ ঠাকুর, হরিচাঁদ ঠাকুর এই সংঘের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই ঠাকুর নগর প্রথম উদ্বাস্তু কলোনি, যা পি আর ঠাকুরের নেতৃত্বে হয়েছিল। বড় মা সেই সংঘের উত্তরসূরি।
আগেই পি আর ঠাকুরের নাম কলেজ তৈরী করেছি। মতুয়া সংঘ বিকাশ পর্ষদ করেছি, নমশূদ্র উন্নয়ন পর্ষদ তৈরী করেছি।
গুরুচাঁদ ঠাকুর, হরিচাঁদ ঠাকুরের নাম আমরা একটা বিশ্ববিদ্যালয় গঠন করব। এই বিশ্ববিদ্যালয় তৈরীর জন্য ৮.৮ একর জমি নির্বাচিত হয়েছে চাঁদপাড়ায়। এভাবে আমরা মতুয়া সংঘকে প্রাপ্য সম্মান জানাবো।
পর্যটন বিভাগ থেকে আমরা মতুয়া বাড়ির জন্য ২টি গেট তৈরী করে দেওয়া হবে ও সমগ্র এলাকা লাইট দিয়ে সাজিয়ে দেওয়া হবে।
এই আন্দোলনের সাথে অনেক মানুষের অনেক আবেগ জড়িয়ে আছে। যখনই গরীবদের ওপর অত্যাচার হয়েছে মতুয়া সংঘ একটা বড় ভূমিকা পালন করেছে। তারা কারো সাথে কোনোদিন বিভেদ করেনি। সবাইকে নিয়ে একসাথে চলেছে, মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। বিভেদ নয়, ঐক্য চাই এটা মতুয়া সংঘের কথা, এটাই তাদের আন্দোলন। সমাজ-শিক্ষা-সভ্যতার সংস্কার তাদের লক্ষ্য।
আমাদের সরকার প্রায় ১০ লক্ষ ৫৭ হাজার জাতি শংসাপত্র দিয়েছে। মহারাষ্ট্রে তপশিলি মতুয়াদের জন্য নাকি অনেক ফেসিলিটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, তাদের সার্টিফিকেট দেওয়াও বন্ধ – আমি খোঁজখবর নেবো।
বাংলায় আদিবাসী-তপশিলি-সংখ্যালঘু-সাধারণ ভাইবোনেরা সবাই একসাথে আনন্দের সাথে থাকে, ভালোভাবে থাকে, তাদের মধ্যে কোন ভেদাভেদ নেই।
নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের ১ লক্ষ ৬৮ হাজার ছাত্রছাত্রীকে শিক্ষাশ্রী দেওয়া হয়েছে এই বছর।
ছেলেমেয়েরা উচ্চশিক্ষার জন্য রাজ্য সরকারের উদ্যোগে ব্যাঙ্ক থেকে ১০ লক্ষ টাকা ঋণ পায় এবং বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ পায়।
এরাজ্যে কন্যাশ্রী আছে, শিক্ষাশ্রী আছে, সবুজশ্রী আছে, সবুজ সাথী আছে, গরীব মানুষের জন্য সম্মানের জায়গা আছে।
কয়েকদিন আগে অসমে মমতা বালা ঠাকুর সহ তৃণমূলের প্রতিনিধিদল গেছিল, তাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি, অত্যাচার করা হয়েছে। এনআরসি’র নাম করে অসমে বাঙালী খেদাও করছে। গুজরাটে বিহারী খেদাও চলছে। এরাজ্যে এসব হয় না। আমরা তাদের পাশে আছি।
অসমে বাঙালী খেঁদাও হলে, তারা যেন মনে রাখে বাংলা তাদের ঘর, বাংলা তাদের সাহায্য করবে। আমরা অসমের বিরোধী নই। কিন্তু, এনআরসি’র নাম করে লক্ষ লক্ষ মানুষের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
বাংলায় কথা বলা অপরাধ নয়। অনেকেই এককালে বাংলাদেশে থাকতেন, উদ্বাস্তু হয়ে এদেশে এসেছেন। ১৯৭১ সালে একটা চুক্তি হয়েছিল, তারও আগে আরেকটা চুক্তি ছিল, নেহেরু লিয়াকত চুক্তি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭১ সাল পর্যন্ত যারা বাংলাদেশ থেকে এখানে এসেছেন, তারা ভারতীয় নাগরিক। তাদের ভোটার তালিকায় নাম আছে। রেশন কার্ড আছে, জাতি শংসাপত্র আছে।
কারও নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া যায় না। যারা কেড়ে নিচ্ছে, তারা ভুল করছে। এনআরসির নাম করে আসল ভোটারদের বাদ দিয়ে যে নিম্নমানের রাজনীতি হচ্ছে, আমরা তা সমর্থন করি না।
মতুয়া সঙ্ঘের আন্দোলনকে আমরা সমর্থন করি। তারা সবসময় উদ্বাস্তু মানুষের পক্ষে, গরীব মানুষের পক্ষে, সাধারন মানুষের পক্ষে। আমাদের সরকারও মা মাটি মানুষের সরকার। তাই আমরাও আপনাদের পক্ষে।
আগামীদিন আরও সাজানো হবে এই অঞ্চল। আগামী দিন ঠাকুরনগর মতুয়া সঙ্ঘের একটা নাম হবে। মাথা উঁচু করে গর্বের সঙ্গে বাস করুন। আমিও আপনাদের একজন সদস্যা। আমরা সকলের সঙ্গে, সকলের জন্য কাজ করতে চাই।
এর আগেও বড়মা যতবার অসুস্থ হয়েছে, আমি তাঁর পাশে থেকে চিকিৎসার সমস্ত দেখভাল করেছি। অনেক ভালো কাজ করে অনার মতো মানুষদের পাওয়া যায়। উনি ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, এটাই আমরা চাই।
জেলাশাসককে অনুরোধ করব, একটা সৌন্দর্য্যায়ন প্রকল্প ঠিক করে যার মধ্যে পুকুর পাড় বাধানো, আলোর ব্যবস্থা, পর্যটনের দ্বার থেকে শুরু করে সব থাকবে, তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরকে জমা দিতে। আমি তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর ও পর্যটন দপ্তরের মাধ্যমে অগুলো করিয়ে দেব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যে জায়গা দেখা হয়েছে, আজই সেখানে বোর্ড লাগানো হবে। এরপর আইনি প্রক্রিয়া চালানো হবে। রাজ্য সরকারের সর্ব্বোচ্চ পুরষ্কার, বঙ্গ বিভূষণ পুরস্কারে আজ বড় মাকে ভূষিত করা হল। এর চেয়ে বেশী ভাবে সম্মানিত করার ক্ষমতা হয়ত আমার কাছে নেই।