নভেম্বর ৮, ২০১৮
নোটবাতিলে বিধ্বংস দেশের অর্থনীতি

কেন্দ্রীয় সরকারের স্বৈরাচারী, অমানবিক, অপরিকল্পিত নোটবাতিলের সিদ্ধান্তের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি আজ। এর ফলে বিধ্বস্ত হয়েছে দেশের অর্থনীতি, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাধারন মানুষ। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে প্রাণ হারিয়েছেন শতাধিক দেশবাসী।
কেন্দ্রের দাবি ছিল, কালো টাকা উদ্ধারের জন্যই এই সিদ্ধান্ত, কিন্তু, দেশের অর্থনীতিতে ফিরে এসেছে বাতিল হওয়া নোটের ৯৯ শতাংশ, হদিস মেলেনি কালো টাকার।
২০১৬–র ৮ নভেম্বর নোট বাতিলের এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা হওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে প্রথম প্রতিক্রিয়া দিয়ে দেশের মধ্যে প্রথম এর বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
একঝলকে দেখে নেওয়া যাক দেশের অর্থনীতি কি ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেঃ-
১. কালো টাকা দমনে, দুর্নীতি রুখতে, সন্ত্রাসবাদ ও জালনোট ঠেকাতে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত পুরোপুরি ব্যর্থ।
২. বাতিল নোটের ৯৯% ব্যাঙ্কে ফিরে এসেছে, তাহলে কালো টাকা কোথায় গেল?
৩. ভারতবর্ষ এই মুহূর্তে না দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্রুততম ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি। এমনকি পৃথিবীর দ্রুততম ক্রমবর্ধমান বৃহৎ অর্থনীতিও নয়।
৪. আইএমএফ ভারতের ২০১৭-২০১৮ সালের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হারের পূর্বাভাষ কমিয়ে ৬.৭% করেছে।
৫. আইএমএফ ভারতের ২০১৮-২০১৯ সালের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হারের পূর্বাভাষ কমিয়ে ৭.৮% করেছে।
৬. ২০১৭ সালের এপ্রিল-জুন মাসে জিডিপি বৃদ্ধির হার কমে হয়েছে ৫.৭%। আগের বছর একই সময় এই হার ছিল ৭.১%।
৭. বড় শিল্পে ব্যাঙ্ক ক্রেডিট গ্রোথ কমেছে ১.৭% ও মাঝারি শিল্পে ৪.১%।
৮. ২০১৭-১৮ সালের প্রথম কোয়ার্টারে মাত্র ৪৪৮টি শিল্প ও পরিকাঠামোগত প্রকল্প ঘোষিত হয়েছে, যা জুন ২০১৪-র পর সবথেকে কম।
৯. যে সকল পরিকাঠামোগত প্রকল্পের কাজ আটকে রয়েছে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, তার পরিমাণ ১৩.২২ লক্ষ কোটি টাকা, যা গত পাঁচটি কোয়ার্টারে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।
১০. কৃষিক্ষেত্রে এপ্রিল-জুন ২০১৭ তে বৃদ্ধির হার ২.৩% যা জানুয়ারি-মার্চে ছিল ৫.২%।
১১. গ্রস ফিক্সড ক্যাপিটাল ফর্মেশন (যা অর্থনীতিতে বেসরকারি বিনিয়োগের মাপকাঠি) এপ্রিল-জুন কোয়ার্টারে বেড়েছে মাত্র ১.১৬%। যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৭.৩৯%।
১২. ২০১৭ সালের এপ্রিল-জুলাইয়ের মধ্যে সার্ভিস সেক্টরের ব্যবসা নির্ভর সূচক হার (BCI) ৫.৩% কমে গেছে।
১৩. ২০১৭ সালের এপ্রিল-জুলাইয়ের মধ্যে মূলধনী পণ্য ও কনজিউমার নন-ডিউরেবল খাতের নির্ভর সূচক হার (BCI) কমে হয়েছে যথাক্রমে ১৩.৫% এবং ১০.৩%।
১৪. জুলাইয়ের শেষে রাজস্ব ঘাটতি বাজেটের প্রায় ৯২.৪% শতাংশ ছুঁয়েছে। ২০১৬-২০১৭ সালে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৭৩.৭%।
১৫. এই অর্থবর্ষে ইনক্রিমেন্টাল ব্যাঙ্ক ক্রেডিট কমেছে। এপ্রিল থেকে আগস্টে গত বছরের তুলনায় এই পরিমাণ কমেছে ১.৩৭ লক্ষ কোটি টাকা। এটি আগের বছরের তুলনায় ১.৮% হ্রাস পেয়েছে, যা অভূতপূর্ব।
১৬. ৮ই অক্টোবর শেষ হওয়া সপ্তাহের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভারতের শহরাঞ্চলে
বেকারত্বের হার ছিল ৮.২%। গত ১১ মাসে ভারতের শহরাঞ্চলে বেকারত্বের ক্ষেত্রে এই হার সর্বাধিক।
১৭. ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কনজিউমার কনফিডেন্স সমীক্ষা অনুসারে দেখা গেছে কারেন্ট সিচুয়েসন ইন্ডেক্স নিরাশাজনক। এর ফলে কর্মসংস্থান, দ্রব্যমূল্য ও আয়ের অবনতি ঘটেছে।
১৮. গত ১ বছরে ভারতের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় নিরাশ দেশের গৃহস্থরা।
১৯. নোট বাতিলের ফলে প্রায় ১৫০ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
২০. নোট বাতিলের পর বেকারত্ব প্রায় ৭% বেড়ে গেছে। প্রায় ২৫ কোটি শ্রমিক-মজদুর কর্মহীন হয়েছেন।
২১. নোট বাতিলের ফলে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প ও বস্ত্র শিল্পের ক্ষেত্রে রাজস্বের ক্ষতি হয়েছে ৫০% এবং কর্মহীন হয়েছে ৩০%।
২২. নোট বাতিল যদি সার্জিকাল স্ট্রাইক হয় তাহলে তার শিকার হয়েছে ভারতীয় অর্থনীতি।