নভেম্বর ২, ২০১৮
অসমে জঙ্গি হামলায় নিহত ৫ বাঙালি, পথে নামল তৃণমূল

অসমের তিনসুকিয়ায় জঙ্গি হামলায় নিহত ৫। তিনসুকিয়ার বিসনোইমুখ গ্রামে ঢুকে হামলা চালায় জঙ্গিরা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যে ৭টা নাগাদ নিরীহ গ্রামবাসীদের গুলি করে খুন করে জঙ্গিরা। জঙ্গি হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এই ঘটনার প্রতিবাদে আজ রাজ্যজুড়ে জেলায় জেলায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করে তৃণমূল। তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এক প্রতিবাদ মিছিল হয় যাদবপুর থেকে হাজরা মোড় পর্যন্ত। এই মিছিলে রাজ্যের অনেক শীর্ষ স্থানীয় নেতা, সাংসদ, মন্ত্রী ও বিধায়ক। সকলে কালো পতাকা হাতে মুখে কালো কাপড় বেধে এই প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হন। সঙ্গে ছিল অগণিত সাধারন মানুষ।
গতকাল জঙ্গী হামলার খবর পেতেই নিন্দায় সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। টুইট করে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, “অসম থেকে ভয়ঙ্কর খবর এসেছে। এই নারকীয় হত্যার তীব্র প্রতিবাদ করছি। শ্যামলাল বিশ্বাস, অনন্ত বিশ্বাস, অবিনাশ বিশ্বাস, সুবোধ দাস, ধনঞ্জয় নমঃশূদ্রকে খুন করা হয়েছে। এটাই কী নাগরিকপঞ্জি নিয়ে সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর পরিণাম?”
অভিষেকের বক্তব্যের কিছু অংশ:
- গতকাল অসমের তিনসুকিয়ায় যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে তা আমরা রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ জানতে পেরেছি। এই ঘটনায় আমরা দুঃখিত, মর্মাহত। আমরা সিঙ্গুর নন্দীগ্রামে সিপিএমের গণহত্যা দেখেছি। এই ঘটনা সেই দিনের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।
- গতকাল রাত্রে শিলিগুড়ি থেকে আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছেন দক্ষিণ, উত্তর কলকাতা সহ সব জায়গায় প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করতে হবে একই সময়ে। আজ সকালে আমাদের কর্মীরা এই খবর পাওয়ার ২-৩ ঘন্টার মধ্যে কলকাতার রাজপথে এই দুই মিছিল সংগঠিত করেছে, যা অভূতপূর্ব – কোনোদিন কেউ করে দেখতে পারেনি।
- রাজস্থানে যখন আফরাজুলকে যখন কুপিয়ে খুন করা হয়েছিল, আমাদের নেত্রী আমাদের নিদের্শ দিয়েছিলেন প্রতিবাদ মিছিল করার। মানুষের স্বার্থে বৃহত্তর আন্দোলনে থাকতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে পথে নামতে হবে. তাঁর নির্দেশমতো আজ আবার ও আমরা পথে নেমেছি।
- আজ আমাদের এই লড়াইয়ে ছাত্র যুব থেকে সকলে পা মিলিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই জনপ্রিয়তা প্রমাণ করছে, এই লড়াই শুধুমাত্র তৃণমূল বনাম বিজেপি নয়, তৃণমূল বনাম সিপিএম নয়। এই লড়াই বাঙালিদের ঐতিহ্য ও সম্মানের বিরুদ্ধে বিজেপির জুলুমবাজি ও জবরদখলের লড়াই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেখানো পথেই আমাদের চলতে হবে।
- ছোটবেলায় ৭০-৮০-৯০ এর দশকে আমরা জানতাম মানুষ মেরে মানুষ প্রেম/সিপিএম শেম শেম, কৃষক মেরে কৃষক প্রেম/সিপিএম শেম শেম, আর এখন হয়েছে হিন্দু মেরে হিন্দু প্রেম/ বিজেপি শেম শেম, বাঙালি মেরে বাঙালি প্রেম/ বিজেপি শেম শেম।
- সিপিএমের আমলে শুনতাম ইনকিলাব জিন্দাবাদ/আমরা খাব তোমরা বাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ/লাল খাবে সবুজ বাদ। এখন শুনছি জয় শ্রীরাম/ মানুষের নেই কোন দাম, জয় শ্রীরাম/ পেট্রোলের ১০০ টাকা দাম, জয় শ্রীরাম/গ্যাসের ১০০০ টাকা দাম। এই হয়েছে তাদের পরিস্থিতি।
- এদেশে কত মানুষ খেতে পায় না, তাদের না দেখে, প্রধানমন্ত্রী ৩০০০কোটি টাকার মূর্তি তৈরী করেছেন। কন্যাশ্রী দেওয়ার ক্ষমতা নেই, দুটাকা কিলো চাল দেওয়ার ক্ষমতা নেই, নিজ ভূমি নিজ গৃহতে টাকা দিতে পারেনা। শুধু নিজের প্রচার করছে।
- বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও এর বাজেট ২০০ কোটি আর সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের মূর্তি ৩০০০ কোটি। একদিকে ৩০০০ কোটি টাকার মূর্তি আর পরের দিন অসমে বাঙালী মেরে ফুর্তি।
- যারা বাঙালীদের খুন করেছে, তারা যদি হাতজোড় করে ক্ষমা না চায়, ওদের রথের চাকা এখানে ঘুরতে দেওয়া হবে না।
- আমাদের সৌজন্যতা আমাদের দুর্বলতা নয়। বাংলায় অনেক ভিন রাজ্যের লোকেরা আসে, আমরা তাদের অতিথি ভাবি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর গত সাত বছরে কোনও ভিন রাজ্যের মানুষকে আঘাত করা হয়নি। তারা যতদিন ইচ্ছে এখানে থাকুক। এটাই বাংলা ও অন্য রাজ্যের মধ্যে তফাৎ।
- অসমে ৫জন হিন্দুকে হত্যা করা হয়েছে তাই এখানে সংখ্যালঘুরা পথে নেমেছে। এটাই বাংলার কৃষ্টি। এটাই বাংলার ঐতিহ্য। যেদিন আমরা আফরাজুলের হত্যার বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিলাম, সেদিনও সকলে আমরা পা মিলিয়েছিলাম যাদবপুর থেকে গান্ধীমূর্তি পর্যন্ত। এটাই বাংলার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, ধর্মনিরপেক্ষতা, সংহতি। ভারতের আর অন্য কোনও রাজ্যে এই সৌজন্যতা দেখাতে পারবেন না।
- কাল বলা হচ্ছিল আলফার হাত আছে, আজ দেখলাম আলফা প্রেস বিবৃতিতে জানিয়েছে তারা এই নৃশংস ঘটনার জন্য তারা দায়ী নয়। কারা পুলিশের পোশাক পরে তিনসুকিয়ায় বাড়ি থেকে ৫ জনকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করল? এর পুর্নাঙ্গ তদন্ত হওয়া দরকার। যতদিন পর্যন্ত এই তদন্ত না হয়, তৃণমূলের এই আন্দোলন জারি থাকবে।
- তদন্ত মানেই সিবিআই নয়, তদন্ত মানেই ইডি নয়। সিবিআই এর কি অবস্থা, তা আপনারা সকলেই জানেন। সুপ্রিম কোর্টের আধিকারিক দিয়ে এর পুর্নাঙ্গ তদন্ত হওয়া উচিত।
- আমি মনে করি এর মধ্যে বিজেপির হাত রয়েছে। আমাদের দল মনে করে এই মুহূর্তে অসমের মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত।
- ৪০ লক্ষ মানুষকে এনআরসি থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেন বাঙালী আত্মহত্যা করছে অসমে? মুম্বইয়ের স্বনামধন্য গায়ককে অসমে বলা হয়েছে, অসমে বাঙালী গান চলবে না।
আমাদের মিছিলে হিন্দু ভাইরা এসেছে, শিখ ভাইরা এসেছে, মুসলমান ভাইরা এসেছে, এটাই হচ্ছে আমাদের বাংলা। এটাই আমাদের সংস্কৃতি। - আমাদের নেত্রী বলে দিয়েছেন যে বাংলায় নাগরিকপঞ্জি লাগু হবে না। শুরুটা ওরা করেছে, শেষটা আমরা করে ছাড়ব।
- দুর্গা পুজোর সময় উত্তর ও দক্ষিন কলকাতা মিলিয়ে প্রায় ১০০ পুজো উদ্বোধন করেছেন আমাদের মুখ্যমন্ত্রী। অথচ সারা কলকাতায় কোথাও বিজেপি শারোদৎসবের একটাও ফ্লেক্স পর্যন্ত লাগায়নি। কারণ ওরা উত্তর ভারতের সংস্কৃতি নিয়ে পড়ে থাকে এবং সেটা আমাদের মাথার ওপর চাপিয়ে দিতে চায়। ওরা যে রামের পুজো করে, সেই রামও দুর্গা পুজো করত।একটা শুভেচ্ছা বার্তাও বাংলার মানুষকে বিজেপির নেতারা জানায়নি।
- নোটবন্দির সময় ১৬২-জন লোক মারা গেছেন লাইনে দাড়িঁয়ে। মধ্য প্রদেশে কৃষকদের মারা হয়েছে। উত্তর প্রদেশে বিনা অক্সিজেনে মারা গেছেন ৮০ জনের বেশি শিশু মারা গেছে। কি করেছে বিজেপি তাদের রাজ্যে। এই তাদের সরকারের নমুনা।
- বিভিন্ন জায়গা থেকে লোক নিয়ে এসে ওরা বলছে বাংলা দখল করবে। যারা বাংলার সংস্কৃতি জানেনা, কৃষ্টি জানে না।
- আমাদের নেত্রী আমাদের শিখিয়েছে, বদলা নয় আমরা বদলের রাজনীতি করি। আমরা চাই, আপনারা সুস্থ ভাবে রাজনীতির ময়দানে থাকুন। কিন্তু আপনারা যদি বাংলাকে অশান্ত করেন আমরা ছেড়ে কথা বলব না।
- বিজেপির নেতাদের বলছি যদি ক্ষমতা থাকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজনীতির ময়দানে লড়ে দেখান। আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নের খতিয়ান দেখুন আর দেখুন কেন্দ্রীয় সরকারের। দেখান কেন্দ্রীয় সরকার বাংলার জন্য কি করেছে? হিসাব দিতে পারবেন?
- ‘বেটি বাঁচাও-বেটি পড়াও’ প্রকল্পে ২০০ কোটি টাকা খরছ করেছে আর নিজের মার্কেটিং-এ খরছ করেছে ৫০০০ কোটি টাকা।
- আপনার ন্যুনতম ব্যালান্স যদি না থেকে, তাহলে ব্যাঙ্ক থেকে আপনার টাকা কেটে নেওয়া হবে অথচ বিজয় মালিয়া, নীরভ মোদীরা হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। কেউ ৮ হাজার, কেউ ১২ হাজার তো কেউ ১৫ হাজার কোটি টাকা নিয়ে চলে গেছে।
- আগামী দিনে আমাদের অঙ্গিকার হোক ‘ দু হাজার উনিশ, বিজেপি ফিনিশ’, ‘বিজেপি তাড়াও, দেশ বাঁচাও।