নভেম্বর ২৮, ২০১৮
এটা বিজেপি বনাম বাংলার লড়াই: পুরুলিয়ায় অভিষেক

আজ পুরুলিয়ার বলরামপুরে একটি জনসভায় বক্তব্য রাখেন সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির বিভেদমূলক রাজনীতির বিরুদ্ধে তোপ দাগেন তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সভাপতি ও ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। দলের কর্মীদের সংঘবদ্ধ ভাবে আগামীদিনে উন্নয়নের বার্তা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে অঙ্গীকার নিতে বলেন তিনি।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের কিছু অংশ:
- আমাদের লক্ষ্য একটাই – উন্নয়নকে তরান্বিত রেখে পুরুলিয়া জেলায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করে এই জেলাকে বাংলার ২৩টি জেলার মধ্যে সর্বপ্রথম করা।
- আমরা মানুষকে যা কথা দিয়েছি সব অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি। এই পিছিয়ে পড়া জেলায় মাওবাদীদের দমন করে সংহতি-ধর্মনিরপেক্ষতা-শান্তি প্রতিষ্ঠা করা, মানুষকে সার্বিক উন্নয়নের পথে পরিচালিত করাই ছিল আমাদের প্রধান লক্ষ্য।
- ঝাড়খণ্ডে ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি, ছত্তিসগড়, বিহার, উড়িষ্যায় অন্য রাজ্য সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। কিন্তু মাথায় রাখবেন মাওবাদী দমন করে যদি কেউ প্রকৃতপক্ষে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে থাকেন তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
- ৭-৮ বছর আগে এই বলরামপুর এলাকায় কি পরিস্থিতি ছিল – মানুষ সকালে-দুপুরে-বিকেলে বাইরে বেরোতে ভয় পেতো।এই ৭ বছরে এখানে একটা মাওবাদীও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। এই জেলায় গত ৭-৮ বছরে একটাও মাও নাশকতার ঘটনার খবর পাওয়া যায় নি। এটাই মা-মাটি-মানুষের জয়।
- যারা আচ্ছে দিনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল তাদের কি অবস্থা? গ্যাসের দাম ১০০০ টাকা, পেট্রোলের দাম ১০০ টাকা, ডলারের দাম ৭৫ টাকা, ডালের দাম ৮০ টাকা – এটাই আজকের পরিস্থিতি। মানুষ আজ খেতে পাচ্ছে না, ভারত অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে।
- টাকা বাড়িতে রাখলে বলছে কালো, আর ব্যাঙ্কে রাখলে টাকা গেল। কেন্দ্রীয় সরকার মানুষের জন্য কোন উন্নয়নমূলক কাজ করছে না। অথচ মূর্তির পিছনে খরচ করছে ৩০০০ কোটি টাকা। দেশেতে লাগিয়ে আগুন, কোটি টাকার মূর্তি… সাধারণ মানুষের সর্বনাশ আর বিজেপির ফুর্তি – এই হল ভারতীয় জনতা পার্টির নগ্ন রূপ।
- গুজরাতে বলছে বিহারী খেদাও আর আসামে বলছে বাঙালি খেদাও। অর্থাৎ ওরা বাংলা বিরোধী।
- এই ভারতীয় জনতা পার্টি আমাদের পুরুলিয়া জেলাকে অশান্ত করতে চেষ্টা করছে, প্রতিনিয়ত সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরী করছে। তাদের যোগ্য জবাব দিতে হবে।
- আগামী ১৯ জানুয়ারি ব্রিগেড। আমি অনুরোধ জানাব এই জেলা থেকে যেন সর্বোচ্চ মানুষ এই সমাবেশে আসেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা এবং অন্যান্য জাতীয় দল গুলির একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বের বার্তা শোনার জন্য।
- আগামী দিন নতুন ভারত, ধর্মনিরপেক্ষ ভারত, শান্তির ভারত, প্রগতির ভারত গড়ার লক্ষ্যে আপনারা ব্রিগেডের সমাবেশে উপস্থিত হবেন আমি এই আশা রাখি।
- জাতি দলমত নির্বিশেষে আমাদের উন্নয়ন করে যেতে হবে। আগে সিপিএমের আমলে মুখ্যমন্ত্রীরা ১-২ বারের বেশি পুরুলিয়ায় পা রাখার সাহস পাননি। পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে লাঞ্ছিত, শোষিত, নিপীড়িত মানুষকে কোনদিন অগ্রগতির পথে নিয়ে যায়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পর ১২ই জুলাই উন্নয়নের ডালি নিয়ে জঙ্গলমহল, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ায় সভা করেছিলেন।
- পুরুলিয়া আজ উন্নয়নের পথে পরিচালিত হচ্ছে; আমাদের দায়িত্ব, আমাদের কর্তব্য এই শান্তির আবহকে অক্ষুন্ন রেখে পুরুলিয়াকে যেন আমরা ১ নম্বর করতে পারি।
- বিজেপির নেতারা এমন অর্বাচীন ভাষায় কথা বলছে – পুঁতে দেব, গর্তে ঢুকিয়ে দেব, মেরে দেব, কেটে দেব। আর আমরা বলি সাজিয়ে দেব, গুছিয়ে দেব, তৈরী করে দেব – এটা শান্তি বনাম সন্ত্রাসের লড়াই, এটা সংহতি বনাম সাম্প্রদায়িকতার লড়াই, এটা ভারতীয় জনতা পার্টি বনাম বাংলার লড়াই।
- আপনাদের সকলকে এমনভাবে জবাব দিতে হবে যাতে আগামিদিন এদের অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়েও পুরুলিয়ার বুকে খুঁজে না পাওয়া যায় – আজকের এই সভায় আসুন আমরা এই শপথ করি। আমরা সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করেছি, আগামিদিনেও করব। নেত্রীর সার্বিক সংগ্রামকে পাথেয় করে আমরা এই লড়াই করব।
- একদিকে ললিত মোদী ১২০০০ কোটি টাকা আর একদিকে নীরব মোদী ১৫০০০ কোটি টাকা নিয়ে ফেরার। অন্যদিকে মেহুল চোকসি সহ একাধিক ব্যবসায়ীরা ভারতবর্ষকে সর্বশান্ত করে দিয়ে চলে গেছে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৭ বছরে বাংলাকে কেউ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে ফেলে রেখে পার পায়নি। এটাই ওদের আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে পার্থক্য।
- আমরা কিন্তু নরেন্দ্র মোদীকে কোন দিন কেটলি নিয়ে চা বেচতে দেখিনি কিন্তু আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে টালির ছাদের নিচে থাকতে দেখেছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর বিন্দুমাত্র বদলাননি। ওই টালির ছাদের নিচে থেকেই ১০ কোটি মানুষের উন্নয়ন পরিচালনা করেছেন।
- অতীতে কোন মুখ্যমন্ত্রীকে আমরা জেলায় জেলায় ডিএম, এসপিকে নিয়ে মানুষের উন্নয়নের খতিয়ান নিতে প্রশাসনিক বৈঠক করতে দেখিনি। কিন্তু আমাদের নেত্রী তা করেছেন। তিনি যা কথা দিয়েছিলেন তা করে দেখিয়েছেন।
- জন্ম থেকে মৃত্যু সরকার সারা বছর মানুষের পাশে রয়েছে। জন্মালে শিশুকে সবুজশ্রী প্রকল্পে চারাগাছ দেওয়া হচ্ছে। মৃত্যুর পর সৎকারের জন্য আর্থিক সাহায্য করা হচ্ছে। কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, গতিধারা, গীতাঞ্জলী, সবুজ সাথী, নিজ গৃহ নিজ ভূমি সহ একাধিক প্রকল্পের পরিষেবা আমরা এই এলাকার মানুষকে দিতে পেরেছি।
- কেউ কেউ আদিবাসী আর কূর্মিদের মধ্যে বিভাজন করতে চাইছে। আদিবাসীদের জমিতে যাতে কেউ হস্তক্ষেপ করতে না পারে সেই জন্য আইন প্রণয়ন করেছেন আমাদের নেত্রী। যতদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় রয়েছে হাজার চেষ্টা করেও আদিবাসীদের জমি কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।
- কুর্মিদের যোগ্য সম্মান দেওয়া হয়েছে; কুর্মি উন্নয়ন পর্ষদ তৈরী হয়েছে। এর জন্য ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। মানভুম সাংস্কৃতিক আকাদেমি তৈরী হয়েছে। সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, আইটিআই, পলিটেকনিক কলেজ, কৃষক বাজার সর্বত্র উন্নয়ন হয়েছে।
- আগামিদিনে এই উন্নয়নকেই আমাদের হাতিয়ার করতে হবে। উন্নয়নকে সামনে রেখে আমাদের কর্মীরা যাতে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে পারি আজকের সভা থেকে আমরা এই অঙ্গীকার করছি।