সাম্প্রতিক খবর

নভেম্বর ২৫, ২০১৮

অমিত মিত্রের একান্ত সাক্ষাৎকার

অমিত মিত্রের একান্ত সাক্ষাৎকার

বাংলার অর্থ, বাণিজ্য, শিল্প ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী অমিত মিত্রের একান্ত সাক্ষাৎকার:

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে:

রাজনৈতিক অর্থাবস্তার ক্ষেত্রে দেশ এখন মারাত্বক দুর্দিনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। আমার মতে এই কেন্দ্রীয় সরকার ভুলভ্রান্তির সরকার। মানসিক ভাবে এই সরকার সব কিছুতেই বাহাদুরি জাহির করার চেষ্টা করে। দেশের পক্ষে মারাত্বক ক্ষতিকর কিছু নীতি এরা ইতিমধ্যেই বলবৎ করে ফেলেছে। নোটবন্দির পক্ষে বলতে গিয়ে এক বর্ষিয়ান বিজেপি নেতা আমায় বলেছেন যে আরএসএস-র নীতি থেকে সরে আসার জন্যে এই নীতি নেওয়া হয়েছে যাতে দেশের গরীব-বড়লোকদের মধ্যে ভেদাভেদ বাড়ে এবং তাদের নিজেদের ভোটব্যাঙ্ক তৈরি হয়।

কিছুদিন আগে একজন উচ্চ-প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী আমাকে বলেছিলেন যে তার নামে ৩১টি মামলা চলছে অথচ তাকে আমরা স্বচ্ছ বলেই জানি। এইভাবে শুধুমাত্র এই ব্যবসায়ী নয়, ব্যবসায়িক সংস্থাগুলির মধ্যেও ভয় ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। নোটবন্দির পর অসোচ্যাম বিবৃতি দেয় যে নোটবন্দি ডাহা ফেল আর তার পরেরদিনেই সংস্থার মহাসচিব বলেন, না না নোটবন্দি ভাল পদক্ষেপ ছিল। আসলে প্রথম বিবৃতির পরে সরকারের তরফ থেকে হুমকি গিয়েছিল যে সরকারের কোনও প্রতিনিধি ওই সংস্থার সাথে কোনও কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবে না। এমনকি বিদেশী কোনও প্রতিনিধিদল এলেও তাদের সাথে সাক্ষাৎ হবে না। স্বভাবতই, সংস্থার মহাসচিব বাধ্য হন বিবৃতি পাল্টাতে। একমাসের মধ্যে তাকে সরটিয়ে দেওয়া হয়।

এরকমই আরেকটি সংস্থার অনুষ্ঠানে আমি বলেছিলাম যে জিএসটিতে যে গ্রেপ্তারী পারওয়ানা জারী করা যায়, তা নিয়ে কেউ মুখ খুলছে না কেন। কারুর সাহস হয়নি এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করার। দেশজুড়ে ভীতির পরিবেশ চলছে।

যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো প্রসঙ্গে:

রাজ্যগুলি যা কর আদায় করে সেটাই কেন্দ্র সংগ্রহ করে আর একটি অংশ রাজ্যগুলিকে ফেরত দেয়। এটাই যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো অংশ। চতুর্দশ অর্থ কমিশন সেই অংশের পরিমাণ ৩২% থেকে বাড়িয়ে ৪২% করে। কিন্তু সেই বছরেই কেন্দ্রীয় সরকার তাদের ৫৮টি প্রকল্পে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। কি সেই প্রকল্প? পুলিস ট্রেনিং, আইসিডিএস ইত্যাদি। কিছু কিছু প্রকল্পের ক্ষেত্রে রাজ্যগুলিকেও প্রকল্পের খরচের একাংশ দিতে হত। এমন ২৮টি প্রকল্পর ক্ষেত্রে রাজ্যের অংশ বাড়ানো হয়। এক দিকে বলা হচ্ছে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে, আর অন্য দিকে কেন্দ্রের অনুদান বন্ধ করা হচ্ছে।

একটা কাউন্সিল অফ স্টেটস তৈরী করা হয়েছিল। এই কাউন্সিলের দুবছর আগে পূর্ণাঙ্গ বৈঠক হয়েছিল (যদিও ছমাস আগে নামমাত্র বৈঠক হয়েছে)। আগে প্লানিং কমিশন ছিল, যেখানে আমরা রাজ্যের দাবিদাওয়া জানতাম। এখন তও নেই। যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোটাই নেই।

বাংলা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্রায় ১০,০০০ কোটি টাকা পায়। সময় মত যদি এই টাকা না পাওয়া যায় তাহলে আমাদের বাজার থেকে টাকা ধার করতে হবে এবং তার সঙ্গে ঋনের পরিমাণ বেড়ে যাবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রীকে একটি চিঠি লিখে এই সঙ্কটের কথা উল্লেখ করেছেন। ডিআইপিপি ও ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের সমীক্ষা অনুযায়ী আমাদের রাজ্য ব্যবসা করার সুবিধার ক্ষেত্রে শীর্ষে ছিল। কিন্তু পরে আমরা পিছিয়ে পড়ি, কারণ কেন্দ্রীয় সরকার আমাদের সাথে আলোচনা না করেই এই সমীক্ষার নিয়মকানুন পাল্টে দেয়।

বাংলায় শিল্প লগ্নি প্রসঙ্গে:

বাংলায় চারটে গ্লোবাল বিজনেস সামিট হয়েছে। প্রায় ৯.৫ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি আমরা পেয়েছি। যেমন সিমেন্টের ক্ষেত্রে পাঁচটি সংস্থা আগ্রহী; প্রত্যেকে প্রায় ৭০০-১০০ কোটি টাকা লগ্নি করেছেন।

টাটা হিটাচি সম্প্রতি তাদের টাটানগরের কারখানা বন্ধ করে খড়গপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে নতুন করে ব্যবসা শুরু করেছেন। একমাত্র কারণ, বাংলায় ব্যবসা করার সুবিধে। টিসিএস বাংলায় প্রায় ৪০,০০০ কর্মসংস্থান তৈরী করেছে। তাদের আরও জমি দেওয়া হয়েছে যাতে আরও ১৫,০০০ থেকে ২০,০০০ জন চাকরী পান। গত বছর আমাদের রাজ্য থেকে রপ্তানি হয়েছিল প্রায় ৯.৫ বিলিয়ন ডলার মুল্যের সামগ্রী। আমরা একটি নতুন রপ্তানি নীতি তৈরী করেছি।

কর্মসংস্কৃতি প্রসঙ্গে:

ছুটি আর কর্মসংস্কৃতি- এই দুটি আলাদা বিষয়। ইউরোপে মানুষ ৯০ দিন অবধি ছুটি পায়; তার মানে কি ওখানে কর্মসংস্কৃতি খারাপ? অন্য রাজ্যে হয়ত আমাদের মত ছুটি দেওয়া হয় না, কিন্তু আগামিদিনে সেটাই হবে। ২০১১ সালে আমরা ক্ষমতায় আসার আগের বছর স্রেফ ধর্মঘটের জন্য ৭৬ লাখ কর্মদিবস নষ্ট হয়েছিল। মমতা বন্দোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন এই রাজ্যে আর ধর্মঘট হবে না। তিনি বলেছেন কেউ কাজের ক্ষেত্রে ধর্মঘটের দোহাই দিয়ে না এলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রথম বছর আমরা ৫,৫৫২ কর্ম দিবস হারিয়েছিলাম যা আজ কিনা শুণ্যে নেমে এসেছে।

সিঙ্গুর প্রসঙ্গে:

টাটারা বর্তমানে বাংলায় প্রায় ৪০,০০০ মানুষের কর্মসংস্থান তৈরী করেছেন। ওনাদের মোটর গাড়ি তৈরীর প্রকল্পটির ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট প্রায় আট বছর পরে রায় দেন যে পূর্বতন সরকার অবৈধভাবে বলপূর্বক জমি অধিগ্রহণ করেছিল। রায়ে বলা হয়েছিল যে ৯০ দিনের মধ্যে জমি কৃষকদের ফেরত দিতে হবে।

মমতা বন্দোপাধ্যায় প্রথমে কোনও পক্ষ নেন নি। কিন্তু যখন কিছু কৃষক তাদের জমি দিতে অস্বীকার করেন তখনই তিনি তাদের সমর্থন করেন। তার মানে এই নয় যে টাটারা বাংলা ছেড়ে চলে গিয়েছেন। এ রাজ্যে তাদের ব্যবসার পরিমাণ দিনে দিনে বাড়ছে।

বাংলার জমি নীতি প্রসঙ্গে:

শিল্পের জন্য জমির প্রসঙ্গে আমাদের সরকারের কিছু কৌশল আছে। প্রথমত, আমরা আরও অনেক ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক তৈরী করব যাতে শিল্পসংস্থাগুলিকে কোনও বেসরকারি সংস্থার কাছে যেতে না হয়। খড়্গপুর পার্ক একটি মডেল। এই পার্কে ২০,০০০ স্কোয়ার ফিট কমন ফেসিলিটি সেন্টার আছে। পাশাপাশি, এখানে একটি ব্যাঙ্ক, ফুড কোর্ট, ট্রাক পার্কিংয়ের ব্যবস্থাও আছে। পাঞ্জাব থেকে বাংলা পর্যন্ত একটি ফ্রেট করিডোর তৈরী হচ্ছে। রঘুনাথপুরে এই প্রকল্পের জন্য আমরা ২,৬৬৬ একর জমি দিয়েছি।

অন্য কৌশলটি হল ল্যান্ড ব্যাঙ্ক তৈরী করা। যেমন, কল্যাণীতে পশুপালন দপ্তরের অনেক জমি আছে, যা অব্যবহৃত ছিল। সেখানে আমরা ৩০০ একর জমি পশ্চিমবঙ্গ শিল্পোন্নয়ন নিগমকে দিয়েছি। তার মধ্যে ফ্লিকাৰত ১০০ একর জমি নিয়েছে। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন দপ্তরের জমিতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক তৈরী হচ্ছে। জমির কোনও ঘাটতি নেই।

বাম-কংগ্রেসের সাথে জোটের প্রসঙ্গে:

এই প্রশ্নের উত্তর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং দিতে পারবেন। আমি আমার ব্যাখ্যাটা বলছি। কিছুদিন আগে চন্দ্রবাবু নাইডু বাংলায় এসেছিলেন। ওনারা দুজনেই বলেন যে সবাই একসাথে কাজ করবেন এবং সবাই নেতৃত্ব দেবেন। সবাইকে একসাথে আসতে হচ্ছে কারণ গণতন্ত্র সংকটে। দেশজুড়ে ভীতির পরিবেশ তৈরী হয়েছে। বিভিন্ন সংস্থাকে ধ্বংস করা হচ্ছে। সিবিআই, আরবিআইকে নিয়ে কি সার্কাস হচ্ছে দেখুন না।

তাই এখন প্রশ্নটা এই নয় যে কারা কারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে লড়বেন। প্রশ্ন হল কেন একসাথে লড়তে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাতবার সাংসদ হয়েছেন। তিনি এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।

বাংলায় বিজেপির উত্থান প্রসঙ্গে:

বিজেপি বাংলার সংস্কৃতি জানে না। আমার বাবাকে ব্রিটিশরা মৃত্যুদন্ড দিয়েছিল। জেলে বসে উনি রবীন্দ্রসংগীত যেমন গাইতেন, নজরুলগীতিও গাইতেন। নজরুল যেমন একাধারে মুসলমান ছিলেন, উনি প্রচুর শ্যামাসংগীতও লিখেছেন। বাংলায় ভাগাভাগির রাজনীতি চলে না। কিন্তু এই সরকারের এজেন্ডা সেটাই। অপরমহল থেকে নিচুতলার লুম্পেনদের বার্তা দেওয়া হচ্ছে। তারা আইন নিজেদের হাতে তুলে নিচ্ছে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রসঙ্গে:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার বলেছেন এটা যৌথ নেতৃত্ব। উনি কোনও চেয়ারের আশায় লড়ছেন, এমনটা নয়। আমি দিল্লিতে আমার সব কিছু ছেড়েছুড়ে কলকাতায় চলে এসেছিলাম কারণ আমার মনে হয়েছিল উনি ৩৪ বছর ধরে লড়ছেন। ওনার লড়াইকে আমি সমর্থন জানিয়েছি। কাউকে না কাউকে বেড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধতেই হবে, ওনার মত আত্মত্যাগ করতেই হবে। উনি ক্রমাগত বলেছেন, দেশজুড়ে যে সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়ানো হচ্ছে তা বিপজ্জনক।

সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে:

এই ব্যাপারে অতীতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনেকবার দ্বিধাহীনভাবে বলেছেন। কিছুদিন আগেও দলের একটি বৈঠকে তিনি বলেন যে তিনি জানতে পেরেছেন দলের অনেকে টাকা তুলছে। যদি তিনি বিশদে জানতে পারেন তবে তাদের রেয়াত করা হবে না। অপরমহল থেকে যদি এই বার্তা দেওয়া হয়, নীচুতলায় অবশ্যই প্রভাব পড়বে।

সিপিএমের জমানায় এই সিন্ডিকেটের জন্ম হয়েছিল। ৩৪ বছর ধরে যে ব্যবস্থা চলে এসেছে, রাতারাতি তা বদলায় না। কিন্তু তৃণমূল নেতৃত্ব আন্তরিকভাবে এই সমস্যার সমাধান করছেন।

সিপিএম জমানায় যে বীভৎস খুনোখুনির ইতিহাস আছে, সেটা ভুলে চলবে না। ২০১১য় নির্বাচনে জেতার পর অনেকেই বদলা নিতে চেয়েছিল। মারদাঙ্গা বাঁধতে পারত। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ ছিল, বদলা নয় বদল চাই।

ছাত্রজীবনে রাজনীতি প্রসঙ্গে:

আমি দক্ষিণপন্থী (রাইট উইং) ছিলাম এটা ভাবা ভুল। আমি গণতন্ত্রপন্থী ছিলাম। এমার্জেন্সির সময় আমি Indians for Democracy (East Coast) এর আহ্বায়ক ছিলাম। সেই দলে অনেক ভাবধারার মানুষ ছিলেন – আরএসএস থেকে শুরু করে সিপিআই অবধি… আমার মনে হয় না কেউ কোনোদিন আমায় জন সংঘ কিংবা বিজেপি-ঘ্যাঁসা ভেবেছে। আমি ওদের কোনও নেতাকেই চিনতাম না।

বাংলায় জন সংঘের কোনও শাখা ছিল না। বাংলায় আরএসএসের কোনও অস্তিত্ব নেই। আমি দিল্লী স্কুল অফ ইকোনমিক্স এ থাকাকালীন বামবিরোধিতা করেছি। আমার প্রফেসররা – অমর্ত্য সেন, সুখময় চক্রবর্তী, কে এন রাজ – অনেকাংশেই বাম-ঘ্যাঁসা ছিলেন। সদ্য অক্সফোর্ড ফেরত মনমোহন সিংহ বাম-ডান কোনও দিকেই ছিলেন না। জগদীশ ভগবতী বাণিজ্য উদারতায় বিশ্বাসী ছিলেন, হার্ভার্ড ফেরত সুব্রহ্মণ্যম স্বামী উদারপন্থী ছিলেন। আমি আমার প্রফেসরদের বিরুদ্ধে লড়েছি, মতাদর্শগত দিক থেকে। কিন্তু আমি আরএসএস বা জনসংঘের সাথে ছিলাম না। বাংলায় তাদের অস্তিত্ব নেই।

সংখ্যালঘু তোষণ প্রসঙ্গে:

সংখ্যালঘু তোষণতা ইস্যু নয়। পুঁজিবাদীরা মুনাফা আর ভাগীদারের মান বাড়াতে চায়। জেমস বুকানন, যিনি অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছেন, বলেন যে একটি গণতন্ত্রে রাজনীতিবিদদের লক্ষ্য হওয়া উচিত ভোট বাড়ানো। তারা যেহেতু জনগণের সেবা করবেন, তাই তাদের জনসমর্থন থাকাটা জরুরি। এটাই গণতন্ত্র। আমেরিকায় এই প্রক্রিয়াটিই হয় লাতিন কিংবা আফ্রিকান-আমেরিকানদের সাথে। ইউরোপেও অভিবাসীদের সাথে এরকম হয়। সব জায়গায় এমনটাই হচ্ছে। যদি আপনি কোনও জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ না করেন, আপনি ক্ষমতাচ্যুত হবেন। আপনি বিশেষ কিছু করছেন না। আপনি শুধু নিশ্চিত করছেন যেন গোষ্ঠীর মানুষ সরকারি পরিষেবা পায়।

কেন্দ্রে ক্ষমতায় এলে কর্মসূচি প্রসঙ্গে:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় যে সকল প্রকল্প রূপায়ণ করা হয়েছে, সেগুলি থেকে আমরা শিক্ষালাভ করেছি। বেশি বাঁচাও, বেশি পড়াও নিয়ে কত লোকে কত কথা বলছে। কিন্তু সারা দেশের জন্য এই প্রকল্পের বাজেট মাত্র ১০০ কোটি টাকা। অন্যদিকে, বাংলার কন্যাশ্রী প্রকল্পের বাজেট ১২০০ কোটি টাকা। যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো বিরুদ্ধ মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন। তাই তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফেডারেল ফ্রন্ট গড়ার ডাক দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো ভারতের সংবিধানের মুলে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এটা ধ্বংস করতে চাইছে।

আরেকটা যেটা সর্বসম্মতিক্রমে করতে হবে তা হল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলির হৃতগৌরব ফেরানো। এখন সিবিআই, আরবিআই ও সিভিসিকে নিয়ে প্রচুর সমস্যা রয়েছে। পরিচালনার অভাবে ধুঁকছে এই প্রতিষ্ঠানগুলি। সম্প্রতি গুজরাট চেম্বার অফ কমার্স বলেছে যে ৪০% ক্ষুদ্র ও মাঝারি উত্পাদন শিল্প পাততাড়ি গোটাচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ধ্বংস করে দিয়েছে। ইনফরমাল সেক্টরকেও শেষ করে দিয়েছে সরকার।

একটা উদাহরণ দিই। পূর্ত দপ্তর ২৩,০০০ হাজার কিমি রাস্তা বানিয়েছে। এর ফলে, কৃষিপণ্য খুব সহজেই কাছাকাছি বাজারে পাঠানো যাচ্ছে। এর ফলে পিরামিডের নিচু স্তরে অনেক কাজের সুযোগ তৈরী হচ্ছে।

জিএসটি কাউন্সিল প্রসঙ্গে:

যখন আমি রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের এম্পাওয়ার্ড কমিটিতে ছিলাম (তখন জিএসটি কাউন্সিল তৈরী হয়নি), বিজেপি ক্ষমতায় ছিল না। তখন দুটি বিজেপি শাসিত রাজ্য – মধ্য প্রদেশ ও গুজরাট – জিএসটি লাগা করার বিরোধিতা করেছিল। সেই দল যখন কেন্দ্রে ক্ষমতায় এল, উলটপুরাণ ঘটল। এখন তারা জিএসটির বিরাট সমর্থক। ২০০৯ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লোকসভা নির্বাচনের ইস্তাহারে জিএসটি চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কারণ ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পের সুবিধার্থে এর দরকার ছিল। সেই মতই আমি জিএসটির পক্ষে লড়ে গেছি।

আমি কাউন্সিলকে জিএসটি চালু করার দিন পেছোতে বলেছিলাম, কারণ কোনও ট্রায়াল হয়নি। ৩০০ কোটি ইনভয়েস প্রসেস করার জন্য কি জিএসটি নেটওয়ার্ক তৈরী? আমি তাদের সাথে কাজ করছিলাম বলেই জানি যে নেটওয়ার্ক তৈরী ছিল না। সরকার জিএসটি প্রসেস বুঝতেই পারে নি। এটাই তাদের ব্যর্থতা।

২০১৫ সালে দেশের জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ৮.১৬ শতাংশ। ২০১৬ নোটবন্দির পর তা কমে দাঁড়ায় ৭.১১ শতাংশে। ২০১৩-১৪ এবং ২০১৪-১৫ তে জিডিপি বৃদ্ধির গ্রাফ ছিল উর্দ্ধমুখী। কিন্তু ৮.১৬ শতাংশ থেকে ৭.১১ শতাংশে জিডিপি কমে যাওয়া মানে ১.৫ লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতি। ২০১৫ আর ২০১৭-র তথ্য তুলনা করলেই দেখা যাবে, মোট ক্ষতি ২.৫ লক্ষ কোটি টাকা। বৃদ্ধির হার এখন ৬.৬৮ শতাংশে এসে ঠেকেছে। জিএসটি ও নোটবন্দির ফলে মোট ক্ষতির পরিমাণ ৪.৭৫ লক্ষ কোটি। কাউকে তো দায় নিতেই হবে।