জানুয়ারী ৬, ২০১৯
আমরা বাক স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি, মিথ্যা কথা বলার স্বাধীনতায় নয়: অভিষেক

নব্য বনাম আদি তৃণমূল বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে দলের যুবনেতা ও সাংসদ জানালেন যে ওনার প্রধান লক্ষ্য যারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে বামেদের ক্ষমতাচ্যুত করতে লড়েছিলেন তারা যেন দলে সম্মান ও মর্যাদা পান, তা নিশ্চিত করা।
অভিষেক বলেন, আমি তৃণমূলের সৈনিক। আমার লক্ষ্য দলের সংগঠন আরও মজবুত করা। আমি চাই যেন আদি ও নব্য তৃণমূল একযোগে কাজ করেন বাংলা তথা দেশের মানুষের জন্য। আমরা বিজেপি নই যে কেন্দ্রে ক্ষমতায় এসেই লালকৃষ্ণ আডবাণী কিংবা মুরলি মনোহর যোশীর প্রবীণ নেতাদের ভুলে যাব। তৃণমূল একটি ঐক্যবদ্ধ ও শৃংখলাপরায়ণ দল।
দি টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অভিষেক সব প্রশ্নের খোলামেলা উত্তর দিয়েছেন। তিনি জানান, যদিও বিজেপি নেতৃত্ব তার বিরুদ্ধে কুৎসার রাজনীতি করে, তিনি কখনো ব্যক্তিগত আক্রমণ বা কুৎসা করবেন না।
সাংসদ বলেন মানুষের আস্থা তৃণমূলের ওপর আছে, তাই বিরোধীরা দলের কোনও ক্ষতি করতে পারবে না। “বাংলার মানুষ বাং জমানার কালো অধ্যায়ের কথা ভুলে যাননি। আর বর্তমানে চারিদিকে যে বিভেদের রাজনীতি করছে বিজেপি, সেটাও তারা চাক্ষুষ করছেন। তাই সাধারণ মানুষ চান তৃণমূলই ক্ষমতায় থাকুক। আমাদের লক্ষ্য বাংলার ১০ কোটি মানুষের উন্নয়ন, তাদের জন্য কর্মসংস্থা, বাংলার ঐক্য বজায় রাখা এবং বিভেদ সৃষ্টিকারী বিজেপিকে হারানো।
বাংলায় বিজেপি ২৩টি আসনে জিতবে, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির এহেন দাবিকে নস্যাৎ করে সাংসদ বলেন উনি দিবাস্বপ্ন দেখছেন। ওনার বিরুদ্ধে বিজেপি নেতারা যে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন, সেই প্রসঙ্গে অভিষেক বলেন, আমরা বাক স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি, মিথ্যা কথা বলার স্বাধীনতায় নয়। এটা বিজেপির বিশেষত্ব। আমি ব্যক্তি আক্রমণ কিংবা কুৎসা করি না। কেন্দ্রের নীতির সমালোচনা মানে কখনোই ব্যক্তিগত আক্রমণ হতে পারে না।
স্টুয়ার্ট স্ট্যাফোর্ডের এক উক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দেন তিনি – “Never listen to destructive criticism — it’s only meant to silence you” (কখনোই ধ্বংসাত্মক সমালোচনা শুনবে না – এর একমাত্র উদ্দেশ্য তোমাকে নীরব করা)। তিনি আরও বলেন, “জননেতা হওয়ার ফলে আমায় সমালোচনার সম্মুখীন হতেই হবে। কিন্তু কুৎসা মানব না। হাজার মিথ্যা ও কুৎসা সত্ত্বেও বাংলার মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছেন। বিভিন্ন আদালতেও তাদের পরাজয় হয়েছে।”
ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কেও এই সাক্ষাৎকারে মুখ খোলেন অভিষেক। তিনি বলেন, “আমি যতটুকু অবসর সময় পাই, আমার পরিবারের সঙ্গে কাটাই। বিশেষ করে আমার মেয়ের সাথে। আমি পড়তে ভালোবাসি। চারিদিকে কি ঘটছে সেই সম্বন্ধে খবর রাখতে ভালোবাসি। আজকের এই ডিজিটাল যুগে সোশ্যাল মিডিয়ার থেকে দূরে থাকা যায় না। আমিও ব্যতিক্রম নই। বিশেষ করে আমার দলের যারা যুব কর্মী, তাদের বিভিন্ন অনুরোধ-অনুযোগের নিরসন খুব সহজেই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে করা যায়।” রাজনীতিতে না এলে তিনি তার দ্বিতীয় ‘প্রেম’ খেলাকেই বেছে নিতেন, জানালেন এই তরুণ নেতা।
জঙ্গলমহলে পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলের ফল সুম্পর্কে তিনি বলেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচনে মূলত ব্যক্তিকেন্দ্রিক ভোট হয়। উদাহরণস্বরূপ, একজন ভোটার তার গ্রামের পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন কিন্তু একই ব্যক্তি গ্রামসভা ও জেলা পরিষদের জন্য তৃণমূলের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। আপনি দেখতে পাবেন যে ২৩টি জেলা পরিষদ এবং ৯৫% এরও বেশি পঞ্চায়েত সমিতিতে তৃণমূল জয়ী হয়েছে, কারণ মানুষ জানে যে তৃণমূল একমাত্র দল যারা সমাজের উন্নয়নের জন্য কাজ করে। কোনও ব্যক্তিবিশেষের দলমত নির্বিশেষে বেশিরভাগ মানুষ তৃণমূলের পক্ষে ভোট দিয়েছেন, যা মানুষের জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনছে।”
বিজেপিকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন তিনি। অভিষেক বলেন “২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার আগে মোদির নেতৃত্বে বিজেপি অনেক বড় বড় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। পাঁচ বছর পরে আমরা দেখতে পাচ্ছি আমাদের দেশের হাল কি। বিমুদ্রাকরণ ও তাড়াহুড়ো করে জিএসটি বাস্তবায়িত করতে গিয়ে দুবার আমরা অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন হয়েছি। এর ফলে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রায় অচল হয়ে যাবার সম্মুখীন হয়। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ছোট এবং মাঝারি উদ্যোগ, কৃষকরা এবং কৃষি ব্যবস্থা, যেখানে কিনা দেশের ৫০% লোক নিযুক্ত। তার উপরে, ধর্মীয় মেরুকরণের সংস্কৃতি আমাদের দেশের সামাজিক চরিত্রকে ধ্বংস করছে। আমরা চিরকালই বহুতত্ববাদে বিশ্বাস করি”।
শৈবাল সেনকে দেওয়া সাক্ষাৎকার, প্রকাশিত হয়েছে দি টাইমস অফ ইন্ডিয়াতে