জানুয়ারী ১০, ২০১৯
তৃণমূলের আবর্জনা বিজেপির রত্ন: অভিষেক

আজ উলুবেড়িয়ার কুলগাছিয়া গ্রামীণ মেলা ময়দানে আসন্ন ব্রিগেড সমাবেশের প্রস্তুতি সভা করেন তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
তাঁর বক্তব্যের কিছু অংশ:
আজকে আমরা মূলত সমবেত হয়েছি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকনির্দেশিকা নেব, আগামী ১৯শে জানুয়ারি কলকাতার রাজপথে ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে এবং বলার অপেক্ষা রাখে না, যে সংখ্যায় মানুষ আমাদের মাঠে রয়েছে তার থেকে চার থেকে পাঁচগুণ মানুষ রাস্তায় রয়েছে এবং তারা হয়ত জায়গা দিতে পারেনি মাঠে। তৃণমূল কংগ্রেসের এটাই বৈশিষ্ট কারণ আমরা যখন একটা সভা ডাকি সেটা জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
আর বিরোধীরা যখন জনসভা ডাকে সেটা পথসভায় পরিণত হয়। মানুষের উৎসাহ উদ্দীপনার মাধ্যমেই তৃণমূল কংগ্রেস আজকে বটবৃক্ষে পরিণত হয়ে হিমালয়ের উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। এই দলটাই মানুষের দল। আমি মনে করি, কুলগাছিয়া ময়দানে আজকে মিনি ব্রিগেডে পরিণত করেছি। অন্য কোনও জেলার প্রয়োজন হবে না। হাওড়া গ্রামীণ ও হাওড়া সদর একাই আগামীদিনে ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড কলকতার বুকে ভরিয়ে দেবে- এই নিয়ে কোনও সংশয় নেই।
এই ব্রিগেড সমাবেশের আলাদা যথার্থতা, বৈশিষ্টতা এবং প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস যে শেষ ব্রিগেডটি রেখেছিল ২০১৪ সালের ৩০শে জানুয়ারি সেখানে আমাদের সর্বজন শ্রদ্ধেয়া নেত্রী বলেছিলেন দুর্নীতিগ্রস্ত কংগ্রেস, সাম্প্রদায়িক বিজেপি ও অপদার্থ সিপিএমের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই করে বাংলার সম্মান, বাংলার কৃষ্টি-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি আমরা দিল্লীর বুক থেকে আগামীদিন ছিনিয়ে নিয়ে আসব। ফলস্বরূপ আমরা দেখেছিলাম ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৩৪টি আসনে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের আশীর্বাদধন্য ও স্নেহধন্য প্রার্থীরা জয়যুক্ত হয়েছিল, জয়লাভ করেছিল।
এই ব্রিগেড সমাবেশে শুধুমাত্র হাওড়া জেলা বা অন্য জেলার নেতৃবৃন্দ নয় শুধুমাত্র রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেসের সুব্রত বক্সী, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ই নয়, শুধুমাত্র মমতা বন্দোপাধ্যায় নয়, আজকে আমাদের নেত্রী দশ কোটি মানুষের নয়নের মণি শুধুমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নয়, আজকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমগ্র ভারতবর্ষের ১৩০ কোটি মানুষের আগামীদিনের মুক্তিসূর্য এবং দেশনেত্রীতে পরিণত হয়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা শুনতে আজকে আমরা যেমন পৌছাবো দেশের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, মুখ্যমন্ত্রীর এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্তশালী করার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হবে।
ভারতীয় জনতা পার্টি একদিকে কুৎসা করছে, মিথ্যাচার করছে আরেকদিকে তৃণমূল কংগ্রেসে মানুষের সমাগম, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তা তত বাড়ছে।
এই ব্রিগেড চলোর সমাবেশে যেমন আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়াল আসবেন, আবার সমাজবাদী পার্টির উত্তরপ্রদেশের অখিলেশ যাদবেরা আসবেন। এই ব্রিগেড চলোর সমাবেশে যশবন্ত সিনহা আসবেন, শত্রুগণ সিনহা আসবেন, মহারাষ্ট্রের এন সি পি র শরদ পাওয়ার আসবেন, সুদূর জন্মু কাশ্মীরের ওমর আবদুল্লা, ফারুক আবদুল্লা আসবেন, তেমনি এই সমাবেশে তেজস্বী যাদব আসবেন, রাম জেঠ মালানি আসবেন, শরদ যাদব আসবেন, এবং তামিলনাড়ুর ডিএমকের এমকে স্ট্যালিনও আসবেন। তারা হাজির হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্তিশালী করার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হবেন। আমাদের নেত্রী ডাক দিয়েছে ৪২ শে ৪২। ২১শে জুলাই ধর্মতলার বুকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৪২ শে ৪২ এর ডাক দিয়েছেন।
আমরা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আন্দোলন সংগ্রাম সম্পর্কে জানি। সেই নেতাজি বলেছিলেন “তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব”। ভারতীয় জনতা পার্টির সাম্প্রদায়িক অসুরেরা বলছে “তোমরা আমাকে গদি দাও, আমি তোমাদের রক্তস্নাত নদী দেব। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন “হে বাংলার বীরযোদ্ধা মা-মাটি-মানুষ তুমি আমাকে ৪২-এ ৪২ দাও, আমি তোমাকে আগামীদিন দিল্লীর বুকে এক শান্তিপ্রিয়, প্রগতিশীল, ধর্মনিরপেক্ষ ভারতবর্ষ দেব”। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগামীদিন দেশ পরিচালনা করবেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা কথা দিয়েছেন তা অক্ষরে অক্ষরে পূর্ণ করেছেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাত বছর ধরে রাজ্যে সরকার চালাচ্ছেন গরীব, খেটে-খাওয়া, শ্রমিক, কৃষকের উপর এক পয়সা বাড়তি কর চাপাননি। আর কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদীর সরকার মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়ে বলেছিল, আচ্ছে দিন আসবে, বছরে দু’কোটি বেকারের চাকরি হবে, সবাই ১৫ লক্ষ টাকা করে পাবে। কাঁচকলা, লবডঙ্কা দিয়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “আমাদের বাংলাকে অনেকদিন ধরে সিপিএম আমলে আপনারা নিপীড়িত, লাঞ্ছিত, বঞ্চিত বিতাড়িত, অত্যাচারিত করে রেখেছিলেন। কিন্তু বাংলায় যতদিন আমি আছি, আমার সাথে দশ কোটি মা, ভাইবোনেরা আছে; বাংলাকে কেউ অসম্মানিত করতে পারবে না।’’ কেন্দ্রের সরকার ২০ শতাংশ টাকা দেবে ফসল বীমা যোজনায় আর ৮০ শতাংশ টাকা দেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। আর বলছে ওনার নামে প্রকল্প করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় ৫০ শতাংশ টাকা দেবে আমাদের সরকার আর ৫০ শতাংশ টাকা দেবে কেন্দ্র সরকার। কিন্তু বলছে এই প্রকল্পটা কেন্দ্র আর নরেন্দ্র মোদীর নামে করতে হবে। আমরা বলেছি লবডঙ্কা, তোমাদের টাকাও লাগবে না, তোমাদের নামও আমরা দেব না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার টাকা দেবে, তাই বাংলার নামে হবে।
তাই বাংলা আবাস যজনা হয়েছে। বাংলা গ্রাম সড়ক যোজনা হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিস্কপ্রসূত কন্যাশ্রী হয়েছে, যুবশ্রী হয়েছে, গতিধারা হয়েছে, সবুজসাথী হয়েছে, স্বামী বিবাকানন্দ মেরিট স্কলারশিপ হয়েছে, সংখ্যালঘু স্কলারশিপ হয়েছে, গীতাঞ্জলি হয়েছে। একাধিক উন্নয়নে আমরা বিভিন্নভাবে মানুষকে আলোকিত ও সমৃদ্ধ করেছি।
৩৪ বছর ধরে যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা বলত, “ইনকিলাব জিন্দাবাদ, আমরা খাব তোমরা বাদ। ইনকিলাব জিন্দাবাদ, লাল খাবে সবুজ বাদ। ইনকিলাব জিন্দাবাদ, হার্মাদ খাবে মানুষ বাদ।’’ সেই দূর্নীতিগ্রস্ত মানুষগুলোই জার্সি বদল করে পদ্মফুল নিয়ে মানুষকে প্রেম নিবেদন করছে। এখন বলছে, “জয় শ্রী রাম, মানুষের মাথার নেই কোনও দাম। জয় শ্রী রাম, রান্নার গ্যাসের হাজার টাকা দাম। জয় শ্রী রাম, বাংলাকে দ্বিখন্ডিত করাই আমাদের একমাত্র কাম। জয় শ্রী রাম, পেট্রোল ডিজেলের একশো টাকা দাম।’’
গত দু মাস আগে পেট্রোলের দাম ছিল ৮৮ টাকা। ঠেলায় না পড়লে বেড়াল গাছে ওঠে না। তিনটি নির্বাচনে বিজেপি ভোকাট্টা হয়ে গিয়েছে এবং বিজেপি যত হেরেছে পেট্রোলের দাম কমেছে, রান্নার গ্যাসের দাম কমেছে, ডিজেলের দাম কমেছে, এবং দৈনিন্দিন জীবনের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমেছে। আগামীদিনও বিজেপিকে শূন্য করুন পেট্রোল, ডিজেল, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের কাছে এসে পৌঁছাবে।
যারা হিন্দু ধর্মের ধারক আর বাহক বলে নিজেদের দাবী করেছিল সেই হিন্দুরাই ভারতীয় জনতা পার্টিকে কুপোকাত করে দিয়েছে। আজকে রাজস্থানে ৯২ শতাংশ ভোটার হিন্দু। ছত্তিসগড়ে ৯৪ শতাংশ ভোটার হিন্দু। মধ্যপ্রদেশে ৯২ শতাংশ ভোটার হিন্দু।
বহু বছর ধরে মানুষকে ধর্ম গিলিয়ে নিজেদের পকেট ভরিয়েছে আর ভারতবর্ষকে একটা ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। ভারতীয় জনতা পার্টি হিন্দু ধর্মের জন্য কিছুই করেনি। নিজেদের জন্য দিল্লীর বুকে ১২০০ কোটি টাকায় একটা পার্টি অফিস করেছে। আমাদেরও পার্টি অফিস আছে ৩৬, তপসিয়া রোডে। আমাদের সেন্ট্রাল পার্টি অফিস ৩০, বি হরিশ চ্যাট্যার্জী স্ট্রীট। দশ বছর আগে যে অবস্থায় ছিল আজও সেই অবস্থায় রয়েছে। আমরা মানুষের দল কখনও মানুষকে ভুল বুঝিয়ে তাদের টাকা নিয়ে নয়ছয় করে নিজেদের দপ্তর আর পার্টি অফিস ঠিক করিনা। এটাই আমাদের তৃণমূল কংগ্রেস।
আমাদের নেত্রী আমাদের শিখিয়েছেন নিজের ধর্মের প্রতি আস্থাশীল, পরের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে। আমি নিশ্চিতভাবে ধর্ম পালন করব যখন বাড়িতে বাড়িতে উন্নয়ন পৌঁছে দিতে পারব। আমার পেটে ভাত থাকবে, আমার মাথার উপর ছাদ থাকবে, আমার পরনে বস্ত্র থাকবে, আমার হাতে কাজ থাকবে তখনই আমি ধর্ম করব। আমার পেটে ভাত নেই, আমার মাথার উপর ছাদ নেই, আমার পরনে বস্ত্র নেই, আমার হাতে কাজ নেই, আমি ধর্ম করব না। আর আমি যদি ধর্মে বিশ্বাসী হই, আমি যদি ধর্মপ্রাণ মুসলিম হই, আমি যদি ধর্মপ্রাণ হিন্দু হই, যদি ধর্মপ্রাণ খ্রীষ্টান হই, আমি আমার ধর্ম বাড়িতে পালন করব।
আমি একজন হিন্দু ধর্মের প্রতিনিধি আমি সকালে উঠে সূর্য নমস্কার করি। আমি সকালে উঠে গায়ত্রী মন্ত্র জপ করি। আমি দেব-দেবীর পুজো করি, আরাধনা করি। আমি হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস করলে স্বামী বিবেকানন্দের হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস করি। আমি অমিত শাহ আর যোগী আদিত্যনাথের হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস করি না। আমি বিশ্বাস করি আমার ধর্ম কখনও ভেঙ্গে দাও, গুঁড়িয়ে দাও-এর কথা শেখায়নি।
আমি হিন্দু হলে বাড়িতে পুজো করব। আমি ইসলামে বিশ্বাসী হলে মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে পাঁচবার নামাজ পড়ব। আমি যদি খ্রীষ্টান হই তাহলে প্রভুর কাছে প্রার্থনা করব। আমি যদি বৌদ্ধ হই তাহলে বৌদ্ধ ধর্মের প্রধান গৌতম বুদ্ধের কাছে আরাধনা করব। আমি যদি শিখ হই তাহলে গুরুদ্বারে যাব। আমি যখন মানুষের ভোটে নির্বাচিত তখন আমার একটাই ধর্ম – মানব ধর্ম। কে উন্নয়ন পাচ্ছে, কে গীতাঞ্জলি পাচ্ছে, কে কন্যাশ্রী পাচ্ছে, কে যুবশ্রী পাচ্ছে, আমাকে সেটাই লক্ষ্য রাখতে হবে।
ভারতবর্ষ দু’বার লুঠ হয়েছে – একবার ইংরেজদের আমলে ১৯৪৭ সালের আগে। আরেকবার ২০১৪ থেকে ২০১৯ অবধি নরেন্দ্র মোদীর সরকারের জমানায়। আগামীদিন এদের কড়ায় গন্ডায় জবাব দিয়ে এদের ঝেঁটিয়ে ভারত ছাড়া করতে হবে। আর যে কয়েকটা আবর্জনা বাংলার বুকে পড়ে রয়েছে আগামীদিন ভোট হবে মানুষ তার উপযুক্ত জবাব দেবে।
মানুষ তার উপযুক্ত জবাব দেবে। গতকাল আমাদের দল একজনকে বার করে দিয়েছে, গিয়ে বিজেপিতে নাম লিখিয়েছে। তৃণমূলের আবর্জনা বিজেপির রত্ন। বিজেপি খুঁজে খুঁজে কুড়িয়ে তাদের মাথায় রাখছে; এই হচ্ছে ভারতীয় জনতা পার্টি। আমরা যাদের বর্জন করছি, ওরা তাদেরকে গ্রহণ করছে। যে গেছে যাক, যে থাকবে থাক। সাধারণ মানুষ যদি চায় আগামীদিন ৪২-এ ৪২ কেউ আটকাতে পারবে না। যত ক্ষমতা আছে তা প্রয়োগ করে দেখাও। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগামীদিন ৪২-এ ৪২ করবেন, মানুষ করবে, এটা মানুষের দল।
ধমকানি চমকানি অনেক হয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে সিবিআই, ইডি… মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাথা নত করতে জানেন না। তৃণমূল আর যাই হোক বাংলার সম্মান নষ্ট করেনি। বাংলার কৃষ্টি সংস্কৃতি কলুষিত করেনি। আমরা মৃত্যুবরণ করতে তৈরী কিন্তু বাংলার মাটিকে কখনো দ্বিখন্ডিত করতে দেব না। ৮০ বছর আগে এক বাঙালি বীরযোদ্ধা সন্তান নেতাজি সুভাষচন্দ্র বলেছিলেন, দিল্লী চলো, ৮০ বছর পরে আবার এক বাঙালি কন্যা বলছেন দিল্লী চলো। সেই বাঙালির বাসভবন হল দক্ষিণ কলকাতা, এই বাঙালির বাসভবনও হল দক্ষিণ কলকাতা। সেই বাঙালিও কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলন, এই বাঙালিও কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন। সেই বাঙালিও ইংরেজদের কাছে আত্বসমর্পন করতে শেখেননি, আর এই বাঙালিও সিপিএমের বোমা আর বন্দুকের কাছে আত্বসমর্পন করেননি। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন ডাক দিয়েছেন, ৪২-এ ৪২।
আমাদের বাজিমাত করে, বিরোধীদের কুপোকাত করে আমাদের প্রমাণ করতে হবে যে, আগামীদিন তৃণমূল কংগ্রেস আসছে তেড়ে, ভারতীয় জনতা পার্টী পালাবে দিল্লী ছেড়ে। অনেক হয়েছে মোদি, ছাড়ো এবার গদি, ২০১৯ বিজেপি ফিনিস। ডাক দিয়েছে মমতা ব্রিগেড চলো, জনতা, এটাই আমাদের সকলকে প্রমাণ করতে হবে।
গাধাকে দেখিয়ে বলছে ঘোড়া, একটা সেভেন স্টার বিলাসবহুল বাস নিয়ে এসে বলছে এটাই হচ্ছে রথ। আমি হিন্দু ধর্মের প্রতিনীধি আমি ধর্ম করছি, আমার বাবা হিন্দু, আমার মা হিন্দু, আমি তো শ্রাবণ মাসের রথ জানি। ২০৬টা কাঠের টুকরো দিয়ে রথ তৈরী হয়। সেই রথে দড়ি থাকে, কাঠ থাকে, দেব থাকে, দেবী থাকে, আমরা সেই রথের দড়ি টানি। আমি তো বলরামের রথ জানি। আমি তো শুভদ্রার রথ জানি। আমি তো মহাপ্রভূ চৈতন্যের রথ জানি। শ্রী কৃষ্ণের রথ জানি, আমি তো গোপালের রথ জানি। এ রথ কোন রথ? যে রথে রান্না করা যায়, যে রথে ফূর্তি করা যায়, যে রথে গল্প করা যায়, যে রথে স্নান করা যায়, যে রথে ছাইপাশ খাওয়া যায়, যাবে, যে রথে মল ত্যাগ করা যায়। যে রথে মুত্র ত্যাগ করা যায়, দিলীপ বাবুর কাছে আমাদের এই প্রশ্ন থাকল।
আগামীদিন আমরা মমতা বন্দোপাধ্যায়ের হাত আরো শক্তিশালী করে প্রমাণ করব, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা, বাংলার মাটিতে মমতা ব্যানার্জীই ভরসা। খরা হোক বা বন্যা, ভরসা সেই অগ্নিকন্যা। মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বিকল্প আগামী ১০০ বছরেও কেউ তৈরী করতে পারবে না।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাইলে ২ লক্ষ মুকুল রায় আর ৫ লক্ষ সৌমিত্র খাঁ হবে। কিন্তু সৌমিত্র খাঁ আর মুকুল রায় চাইলে একটা শতাব্দীতেও একটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৈরি করতে পারবে না। আমরা নরেন্দ্র মোদিকে কেটলি হাতে চা বিক্রি করতে দেখিনি। কিন্তু মমতা বন্দোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেও ১০০ টাকার হাওয়াই, আর ৩০০ টাকার শাড়ি পরে টালির ছাদের ঘরে বাস করে উন্নয়নের জয়গান পরিচালনা করতে দেখিছি এটাই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিন্দুমাত্র বদলায়নি।
সবাই যদি চুপ করে থাকত, ভারতবর্ষ কোনওদিন স্বাধীন হত না, আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি চুপ করে থাকতেন, বাংলায় কোনওদিন পরিবর্তন হত না। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু যদি চুপ করে থাকতেন আজাদ হিন্দ ফৌজ তৈরী করে ব্রিটিশদের ভিতকে নড়িয়ে দেওয়ার মত একজন উজ্জ্বল ব্যক্তিকে আমরা খুঁজে পেতাম না। স্বামী বিবেকানন্দ যদি চুপ করে থাকতেন ভারতবর্ষে হিন্দু ধর্মের নাম উচ্চারণ করার মত একজন নাগরিক আমরা খুঁজে পেতাম না। ক্ষুদিরাম বসু যদি চুপ করে থাকতেন তো আজও আমাদের ব্রিটীশদের স্তাবকতা আর দাসত্ব করে যেতে হত। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর যদি চুপ করে থাকতেন, ছোটবেলায় যদি কোনও কন্যা তার স্বামী হারাত তার কোনও ভবিষ্যৎ ভারতবর্ষের মাটিতে থাকত না। রামমোহন রায় যদি চুপ করে থাকতেন আজকে আমার বাবা বা আপনার বাবা মারা গেলে সেই চিতাতে আমাদের মাকে পুড়ে ঝলসে মরতে হত। সতীদাহ প্রথা রোধ করেছিলেন একজন বাঙালি, আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি চুপ করে থাকতেন আজও সিপিএমের বন্দুকের নলের নীচে আমাদের দাসত্ব করে থাকতে হত। হাজার চেষ্টা করো মমতা বন্দোপাধ্যায়কে ধমকে চমকে লাভ নেই।
আগামীদিন ব্রিগেড আমরা ভরিয়ে দেব। ডাক দিয়েছে মমতা, ব্রিগেড চলো জনতা। পায়ে পায়ে উড়িয়ে ধুলো, ১৯শে জানুয়ারি ব্রিগেড চলো। শ্রমিক কৃষক আওয়াজ তোলো ১৯শে জানুয়ারি ব্রিগেড চলো। ভারতীয় জনতা পার্টঈকে উপড়ে ফেলো, ১৯শে জানুয়ারি ব্রিগেড চলো। মোদিকে উপড়ে ফেলো, ১৯শে জানুয়ারি ব্রিগেড চলো। আমি আশা করবো আগামী ১৯শে জানুয়ারি কলকাতার রাজপথে ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে আপনাদের সকলের সাথে দেখা হবে। এবং ভারতবর্ষের একাধিক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যারা থাকবে তাদের কাছ থেকে নির্দেশিকা, অঙ্গীকার নিয়ে আমরা আগামীদিন ভারতীয় জনতা পার্টি, সিপিএম, এবং কংগ্রেসকে কুপোকাত করার ডাক আমরা দেব। আমরা ধর্মতেও নেই, আমরা ধর্ম ভাগেও নেই। আমরা সিপিএম-এর মতো নাস্তিকও নই, আর ভারতীয় জনতা পার্টীর মতো আমাদের ধর্ম বিক্রী করে রাজনীতি করতে হয় না, উন্নয়নই আমাদের হাতিয়ার, আর জোড়া ফুলের ঝান্ডাটাই আমাদের অস্ত্র।
মমতা বন্দোপাধ্যায়ের হাত, তৃণমূল কংগ্রেসের হাত আরো শক্তিশালী করে দিল্লীর বুকে প্রতিষ্ঠা করে মমতা বন্দোপাধ্যায়কে একটা নতুন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রধাণ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে ভারতবর্ষের সত্যিকারের সুদিন যাতে ফিরিয়ে আনা যায় আমরা এই অঙ্গীকার আজকে এই সভা থেকে নেব। আপনারা সকলে ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, নতুন বছরের অনেক অনেক শুভেচ্ছা, আগামীদিনগুলো মঙ্গলময়হোক, আনন্দময়হোক সর্বপরী শান্তিপূর্ণ এবং উন্নয়নমুখর হোক। আগামীদিনগুলো আপনাদের পরিবার পরিজন আত্বীয়স্বজন, সমৃদ্ধশালী হোক, আমি ঈশ্বরের কাছে, আল্লার কাছে সর্বশক্তিমানের কাছে এই পার্থনা করছি। ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। জয় হিন্দ, বন্দে মাতরম। তৃণমুল কংগ্রেস জিন্দাবাদ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিন্দাবাদ, তৃণমূল কংগ্রেস জিন্দাবাদ, তৃণমূল যুব কংগ্রেস জিন্দাবাদ।