জানুয়ারী ১০, ২০১৯
আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প থেকে বেরিয়ে এল বাংলা, ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর

আজ নদিয়া জেলায় কৃষ্ণনগরে একটি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফসল বীমা থেকে শুরু করে সংরক্ষণ কিংবা দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো – বিভিন্ন ইস্যুতে কেন্দ্রকে বিঁধলেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন যে বাংলা আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প থেকে বেরিয়ে আসবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন বিজেপি সরকারের টাকায় দলের প্রচার করছে। যদি কেন্দ্র কোনও প্রকল্পের ১০০% টাকা না দেয়, তাহলে প্রধানমন্ত্রীর ছবি ব্যবহার করা বন্ধ হোক, এই দাবি জানান তিনি।
তাঁর বক্তব্যের কিছু অংশ:
আমি সরকারি চ্যানেলের মাধ্যমে বিজেপির মত নিজের প্রচার করি না। রাজ্যে সরকারি হাসপাতালে বিনা পয়সায় চিকিৎসা, ওষুধ পাওয়া যায়। ঝাড়খণ্ড, বিহার এমনকি নেপাল, বাংলাদেশ থেকে মানুষ আসেন এখানে বিনা পয়সায় চিকিৎসা নিতে।
শস্য বীমায় যে টাকা আপনার নামে ব্যাঙ্কে জমা হচ্ছে, তার ৮০ শতাংশ দেয় রাজ্য সরকার। আমি বিজেপির মত লোক ঠকানো রাজনীতি করি না। ২০১৮ সালে রাজয়কে এই বাবদ ৬২৫কোটি টাকা দিতে হয়েছে। বিজেপির রাজনীতিকে ধিক্কার জানাই।
ভোটের আগে বিজেপি বলেছিল বিদেশ থেকে কালো টাকা এনে প্রত্যেককে ১৫ লক্ষ টাকা করে দেব, কিছু দেয় নি। উপরন্তু নোটবন্দীর নাম করে সব লুটে নিয়ে গেছে। পোস্ট অফিসের মাধ্যমে চিঠি পাঠাচ্ছে তোমার স্বাস্থ্যবীমা করে দিলাম। সেটার ৪০ শতাংশও রাজ্যকে দিতে হয়। আজ থেকে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে রাজ্য সরকার টাকা দেবে না। রাজ্য সরকারকে টপকে মানুষকে মিথ্যে কথা বলার নিজের মিথ্যে প্রচার করার কোনও অধিকার কেন্দ্রের নেই। মানুষ জানে বিজেপির জন্য এক বছরে ২কোটি মানুষ বেকার হয়ে গেছে। একমাত্র বাংলায় ৪০ শতাংশ বেকারত্ব কমেছে।
কেন্দ্র যখন রাফাল চুক্তি করে, তখন কি রাজ্য সরকারকে জিজ্ঞেস করতে আসে? তাহলে রাজ্যের বিষয়ে না কেন গলায়? কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য থেকে করের মাধ্যমে ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়ে যায়। সেই টাকার খুব অল্প শতাংশ রাজ্যকে দেয়। এটা বিজেপি দল দেয় না। সব খরচ করবে রাজ্য সরকার কিন্তু দালালি করবে নরেন্দ্র মোদী।
সিপিএম ৩৪ বছর বাংলাকে অত্যাচার করে, দেনা করে গেছে। গত দুদিনে ধর্মঘটের নামে স্কুল ছাত্রছাত্রীদের স্কুলবাসে বোমা মেরেছে। এই হল সিপিএমএর রাজনীতি। যারা ছাত্রছাত্রীদের বোমা মারে, তাঁদের নাম বলতে লজ্জা হয়।
উনি নাকি সব করছেন। উনি নাকি ঘর বানিয়ে দিচ্ছেন, উনি নাকি স্বাস্থ্য করে দিচ্ছেন, উনি নাকি শিক্ষা করে দিচ্ছেন, উনি নাকি কন্যাশ্রী করে দিচ্ছেন। তা সবই যদি আপনি করে দেন, তো রাজ্যগুলোর প্রয়োজন নেই। তার মানে কি আপনি রাজ্যগুলোতে সমান্তরাল সরকার চালাচ্ছেন? কখনও এ জিনিস ভারতবর্ষে হয়নি।
ভারতবর্ষে মোদি সরকার রাজ্যগুলোতে সমান্তরাল সরকার চালাচ্ছে। সমান্তরাল প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছে। সমান্তরাল প্রশাসন চালাচ্ছে। এরকম জঘন্য সরকার, এরকম নগন্য সরকার কখনো আমরা দেখিনি। আমার কাছে ডকুমেন্ট আছে, আমি চিঠি নিজে দেখেছি। আমি লোগো দেখেছি এবং দেখেছি বলেই এই কথাগুলো বলছি। যে কেউ আমার সাথে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন, আমার কাছে ডকুমেন্ট আছে।
আমি পরিস্কার আপনাদের বলছি, আগুন নিয়ে খেলবেন না। আপনার কেন্দ্রীয় সরকারের যে কাজ আপনি তা করুন। ব্যাঙ্ক লুটেছেন, নোটবন্দির নামে মানুষের টাকা লুটেছেন, ব্যাঙ্কগুলোর বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন। রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন। সিবিআই-এর বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানগুলোকে নষ্ট করে দিয়েছেন। আজকে ইতিহাস বদলে দিচ্ছেন। সবার নাম বদলে দিচ্ছেন। কি ভাবেন নিজেদের? যা ইচ্ছা তাই করে যাবেন? আর মমতা ব্যানার্জী বললে সিবিআই পাঠিয়ে দেবেন? কত সিবিআই আছে, কত ইডি আছে আমি দেখতে চাই।
আমাদের মুখ বন্ধ করে দেওয়া যাবে না। তপশীলিদের উপর আপনারা যে অত্যাচার করেছেন, তা তপশীলিরা কড়ায়-গন্ডায় আদায় করে নেবে। আজকে আদিবাসীদের উপর যে অত্যাচার করেছেন লোকে তা কড়ায়-গন্ডায় জবাব দেবে। আজকে সংখ্যালঘুদের উপর যে অত্যাচার করেছেন তা কড়ায়-গন্ডায় জবাব দেবে।
সুপ্রীম কোর্টে বলা আছে ৫০% এর বেশী রিজার্ভেশন করা যাবে না। আমি যখন সংখ্যালঘুদের জন্য করতে পারিনি, আমি বুদ্ধি খরচ করে ওবিসি রিজার্ভেশনের মধ্যে ৯৭% সংখ্যালঘুদের ঢুকিয়ে দিয়েছে, ১৭% রিজার্ভেশন, ৫০% এর মধ্যে। এরা কি করলো? ৫০ থেকে ওরা ৬০-এ নিয়ে গেল। কোনও হোমওয়ার্ক করেনি। সর্বনাশটা কোথায় হল? একে তো জেনারেল কাস্টদের কোনও সুযোগ নেই, যেটুকু সুযোগ আছে, তার মধ্য ১০% সিল করে দেওয়া হল। সেই ১০% কি? ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত ইনকাম।
ফলে সর্বনাশটা কি করল জানেন? চাষীর ছেলে পাবে না। একে তো চাকরী নেই, কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরী নেই। ২ কোটি চাকরী ১ বছরে নষ্ট হয়েছে। আর তারপরে কি করলো? সিল লাগিয়ে দিয়ে বলল চাষীর ছেলে চাকরী পাবে না। শ্রমিকের ছেলে চাকরী পাবে না। ক্ষেত মজদুরের ছেলে চাকরী পাবে না। কন্যাশ্রী চাকরী পাবে না। সবুজসাথী চাকরী পাবে না। যুবশ্রী চাকরী পাবে না। শিক্ষকের ছেলে পাবে না।
একটা শিক্ষক কত মাইনে পায়? ২০-৩০ হাজার টাকা পায়। আর ৮ লাখ টাকা সিলিং মানে কি? মাসে ৬০ হাজার টাকা! তার প্রয়োজন আছে চাকরী করার! চাকরীও করবে না, আর ঐ ১০% অন্য কেউও পাবেনা। যার সব আছে সে কেন ১০ হাজার টাকার চাকরী করতে যাবে? সে কেন ২০ হাজার টাকার চাকরী করতে যাবে? যার ৮ লক্ষ টাকা বছরে ইনকাম! চাকরীতো খোজে সাধারণ মানুষ,সাধারণ ঘরের ছেলে-মেয়েরা।
সাধারণ ঘরের ছেলেমেয়েদের মুখের আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেল। চাকরী সংকুচিত করে দিল। সংখ্যালঘুদের বঞ্চিত করল, দলিতদের বঞ্চিত করল, আদিবাসীদের বঞ্চিত করল, অন্যান্য অর্থনৈতিক পিছিয়ে পড়া শ্রেণীদের যেটুকু কোটা ছিল, তা থেকে আরো ১০% কেটে নিল।
দেশটা যুক্তরাষ্ট্রীয়, সেটাকে তছনছ করে দেওয়া হয়েছে। আমি প্রত্যেকটা রাজ্য সরকারকে বলব ভাল করে নজর রাখুন। সরকারী ক্ষমতার সম্পূর্ণ দুর্ব্যবহার করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের বিষয়গুলির উপর নাক গলাচ্ছে। রাজ্যের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে নিচ্ছে। আর মোদি বাবুর প্রচার চলছে, সারাক্ষণ শুধু বকে যাচ্ছে বক বক বক। আগামীদিন নির্বাচন হলে দেখবেন এটাই হবে থামো, থামো, থামো অনেক হয়েছে।
ভোট চলে এসেছে। এখন যদি বলে কিছু করে দেবে সেটা আরও একটা ভাঁওতা হবে। বলবে এখন আপনাদের ব্যাঙ্কে ১৫,০০০ টাকা করে কৃষকদের দিয়ে দিলাম। ঐ টাকা কোনওদিনও পাবেননা। ঐ টাকার নাম করে আপনার সুদ বাড়বে আর একদিন আপনাকে জমি বিক্রী করে সেই টাকা আপনাকে শোধ করতে করতে আপনার জমি-বাড়ি বিক্রী হয়ে যাবে। নির্বাচনের আগে চলছে ভাঁওতা, লুঠ, দূর্নীতি, ধোকাবাজি, প্রতারণা, প্রহসন এবং গায়ের জোরে যা ইচ্ছে তাই করা।
স্বাস্থ্য বিনা পয়সায় আমরা দিই, কত তোমরা দাও? আর তুমি তোমার নিজের টাকা দাও নাকি? আমাদের টাকা তুলে নিয়ে যাও। আজ যদি আমি বলি তর্কের খাতিরে আয়কর কেউ দেবেন না, আজ যদি আমি বলি কাস্টম ডিউটি কেউ দেবেন না, আজ যদি আমি বলি সেসের টাকা কেউ দেবেন না সেটা কি যুক্তিযুক্ত হবে বন্ধু?
ক্ষমতা থাকলে ১০০ শতাংশ টাকা দাও। আর তা নাহলে নিজের ছবি তুলে নাও। মিথ্যা কথা বলা বন্ধ করো। আমি ফসল বীমা যদি চাষী ভাইদের টাকা না দিই তাহলে তোমাকে ৮০ টাকা দিতে হবে ১০০ টাকায়। আমি টাকা না দিলে চাষী ভাইরা ভুগবে আর তুমি তোমার ছবি লাগাবে? ঐ ছবির কলঙ্ক তোমায় ঘোঁচাতে হবে। আর আমায় যদি করতে হয় আমি চাষী ভাইকে ৮০ টাকা দিতে পারলে পুরো ১০০ টাকাই দেব আগামীদিন। আমরা ওদের কাছে থেকে কোনও ভিক্ষা নেবনা। আমরা ভিক্ষা চাইনা।
কিন্তু প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা রাজ্য থেকে যেটা তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেই টাকা রাজ্যকে দিতে হবে। রাজ্য থেকে আয়কর তুললে সেই টাকার ভাগ রাজ্যকে দিতে হবে। রাজ্য থেকে সেসের টাকা তুললে সেই ভাগ রাজ্যকে দিতে হবে। রাজ্য থেকে কাস্টম ডিউটি তুলবে সেই টাকার ভাগ রাজ্যকে দিতে হবে।