জানুয়ারী ২৮, ২০১৯
বিজেপির সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতির বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী

আজ খেলাশ্রী সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন মানুষের মধ্যে ভয় ঢুকে গেছে। বিজেপি বিরোধিতা করলেই সিবিআই লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন যে টাকা দিয়ে স্টিং অপারেশন হচ্ছে। কম্পিউরটার, ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন, ব্যাঙ্কের টাকা থেকে শুরু করে মানুষের জীবন-সম্পত্তি এমনকি অধিকারও নিরাপদ নয়, মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর।
ওনার বক্তব্যের কিছু অংশঃ
নোটবন্দী, জিএসটি চালু হওয়ার পর সব শিল্পে সংকট হচ্ছে, বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছে।
নির্বাচনের সময় কিছু লোক এসে স্পনসর করে ১ বছরের জন্য, কিন্তু তারপর তাঁকে ঝুলিয়ে দিয়ে চলে গেল, সে জানলোও না।
একটা ক্লাব জগৎ , একটা কালচারাল জগৎ যারা স্পন্সরশিপ করে চালায়, সে জানে না যে স্পন্সর করছে তারা জানে না যে তাঁকে স্পন্সর করছে সে ভাল না খারাপ, অথচ আজ এই সেক্টরগুলিরই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে।
খেতে দেওয়ার ক্ষমতা নেই, কিল মারার গোঁসাই। এখন ক্লাবকে কেউ সাহায্য করতে গিয়ে ভয় পায় যদি তাদের পেছনে সিবিআই লাগিয়ে দেওয়া হয় এই ভেবে। আজ মানুষের মধ্যে ভয় ঢুকে গেছে।
সকলকে সতর্ক করা প্রয়োজন। প্ররোচনায় পা দেবেন না। আইন আইনের কাজ করবে।
রাজনৈতিক স্বার্থে যদি কেউ অন্যায় করে ভাবে যে গায়ের জোরে সব মেশিনারিকে কন্ট্রোল করবে তাহলে সেটা হবে না।
সব মানুষের একটা নিজস্বতা আছে, ঐতিহ্য আছে।
মানুষ বাড়িতে বসে কথা বললে টাকা দিয়ে তার স্টিং অপারেশন হচ্ছে। দুই বন্ধু কথা বললে ফোনে রেকর্ড হচ্ছে, স্বামী-স্ত্রী কথা বললে ফোনে রেকর্ড হচ্ছে, সাংবাদিকরা, বিচারকরা, শিল্পপতিরা কার সাথে কথা বলছে ফোন রেকর্ড হচ্ছে।
কম্পিউরটার, ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন, ব্যাঙ্কের টাকা থেকে শুরু করে মানুষের জীবন-সম্পত্তি এমনকি অধিকারও নিরাপদ নয়।
আগে জানতাম প্রাইভেসি, গণতন্ত্র, গোপনীয়তা, সম্পত্তি এগুলো মানুষের অধিকার। অথচ এখন মানুষের সব অধিকার চলে যাচ্ছে। দেশের এমন সর্বনাশ হয়ে গেছে তা কল্পনার অতীত।
শুধু খেলার সময় মনে রাখব, সারা বছর নয় তা হয় না। অনেককে দেখেছি যখন কেউ খেলায় জেতে তখন একটা করে টুইট করে দেয়, কিন্তু সারা বছর কি হচ্ছে কেউ খবর রাখে না।
অনেক কৃতী খেলোয়াড় আছে, যারা সম্মান তো দূরের কথা , দু মুঠো খেতে পায় না। অনেকের জীবন দুর্বিষহ হয়ে যায়, কেউ নজর রাখে না।
সব কিছু পাবলিটির জন্য নয়, আন্তরিকতার কখনও পাবলিসিটি হয় না , আন্তরিকতা ৩৬৫ দিন হয়, ৫ বছরে একবার হয় না।
আমরা সকলে মিলে দুর্গা পুজো করি। আমরা সকলে একসঙ্গে বড়দিন পালন করি। সকলে একসঙ্গে ঈদের সময় রোজা পালন করি। বুদ্ধ পূর্ণিমাও পালন করি। এটা আমাদের বাংলার গর্ব, দেশের গর্ব। আগামী দিন আমাদের ছেলে মেয়েরা দেশ ও বিশ্ব জয় করুক।
বাংলার মানুষদের অনুভূতিতে সুড়সুড়ি দিয়ে একে তাড়াব, ওকে তাড়াব, বলার কোনও কারণ নেই। বাংলার মানুষ যতদিন বাঁচবে, প্রয়োজনে আধখানা রুটি ভাগ করে খাব, কিন্তু, কারোকে তাড়ানোর মানুষ আমরা নই। আমরা সকলকে নিয়ে চলি।
আমরা চাই না দেশকে কেউ বিকৃত করুক, দেশকে ভালবাসতে হবে। ভারতবর্ষ মহান দেশ যে সবাইকে নিয়ে একসাথে চলে। এখানে কেউ কারো ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন করে না।
আমি তো অনেক সময়ই আমার পদবী না লিখে সই করি, ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে করতে হয় তাই করি। একটা পদবী কি মানুষের পরিচয়? মানুষের পরিচয় তাদের কার্যকলাপে।
স্বামী বিবেকানন্দর আদর্শে আমরা দীক্ষিত, রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দের হিন্দু ধর্মের স্বত্তায় আমরা দীক্ষিত, নেতাজীর চিন্তাধারায় আমরা আলোড়িত,রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিন্তাধারায় গর্বিত। আমরা নজরুলের চিন্তাধারায় ঐক্যের বার্তা নিয়ে সম্মানিত। আমরা কি করে এই মানুষগুলোকে ভুলে যেতে পারি?
গান্ধীজি গুজরাটি না বাঙালী কেউ প্রশ্ন করেনি কোনওদিন। গান্ধীজি মানে গান্ধীজি। দেশের নেতা সেই হয় যে পুরো দেশকে সঙ্গে নিয়ে চলে। নেতা কাজের মধ্যে দিয়ে তৈরী হয়।
এই দেশ আমাদের গর্ব, বাংলার মাটির থেকে পবিত্র মাটি কোথায় পাবেন? এই মাটি আমাদের স্বাধীনতার কথা শিখিয়েছে। এই মাটি নবজাগরণের কথা শিখিয়েছে। এই মাটিকে কেউ যাতে কোনওদিন কলঙ্কিত না করতে পারে, এটা সকলে খেয়াল রাখবেন। নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে বলব। স্বামীজিও বলতেন, গীতা পড়ে যত না ধর্মের কাছে পৌছনো যায়, ফুটবল খেলে তার থেকে বেশী কাছে পৌঁছনো যায়। খেলাধুলার মধ্যে দিয়ে সম্প্রীতি, সংস্কৃতি তৈরী হয়।
ক্রিকেট টীমের অধিনায়ক কখনও আজারুদ্দিন হয়েছে কখনও সৌরভ গাঙ্গুলি হয়েছে। আমরা কি কখনও জিজ্ঞেস করেছি যে ভারতের ও বাঙালী না হিন্দু না মুসলমান? আমরা সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে চলি।
যারা এদেশের নাগরিক, তাদের বিদেশী বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করবেন না। দেশের নাগরিকত্ব একবারই হয়, আমরা সকলেই এখানকার নাগরিক। আমরা ভোট দিই, আমাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আছে। আমায় যদি কেউ জিজ্ঞেস করে মায়ের জন্ম তারিখ বলতে, আমি বলতে পারব না। সেই সময় সার্টিফিকেট হত না। এতে লজ্জার বা দোষের কিছু নেই, সেই সময় তাই হত। অটল বিহারী বাজপেয়ীরও একি সমস্যা ছিল। জন্মের সার্টিফিকেট না দিতে পারলেই দেশের নাগরিক না? এসমস্ত চালাচ্ছে দেশে। নতুন নতুন তত্ব নিয়ে আসছে মানুষ তাড়ানোর।
নাগরিকত্ব পেতে হলে, প্রথম ছ’বছর বিদেশী হতে হবে, তারপর নাগরিকত্ব দেওয়া হবে, এটাই তাদের শর্ত। তাদের দুদিকই গেল। এগুলি নির্বাচনী চমক, এসবে বিশ্বাস করবেন না। আমরা যতদিন বেঁচে আছি, এই সমস্তও ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। একজনের কিছু হলে, আরেকজন রুখে দাঁড়াবে। জনগণের আদালত সবথেকে বড় আদালত। সকলকে শান্তিতে থাকতে দিতে হবে।