সাম্প্রতিক খবর

জানুয়ারী ৫, ২০১৯

আশি বছর পরে আবার এক বাঙালি "দিল্লি চলো" ডাক দিয়েছেন- অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

আশি বছর পরে আবার এক বাঙালি "দিল্লি চলো" ডাক দিয়েছেন- অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

তৃণমূল কংগ্রেসের ডাকা আগামী ১৯শে জানুয়ারির ব্রিগেড সমাবেশকে সামনে রেখে আজ সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরের রাস মাঠে এক জনসভায় বক্তব্য রাখেন। তাঁর বক্তব্যের কিছু অংশঃ-

এখানে আগত সকল মানুষকে আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা ও অভিনন্দন। এত অল্প সময়ে এই সভার আয়োজন করার জন্য সকলকে ধন্যবাদ।

এই সভাকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে যে উৎসাহ, উদ্দীপনা, ভালোবাসা দেখিয়েছেন, তা নজিরবিহীন। আপনাদের সকলকে অন্তর থেকে কৃতজ্ঞতা, প্রণাম জানাই। আপনাদের জন্যই আজ তৃণমূল কংগ্রেস দল শক্তিশালী হয়ে বটবৃক্ষে পরিণত হয়েছে। আপনাদের আশীর্বাদ ও দোয়াতে আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেশ জুড়ে জনপ্রিয়তা হিমালয়ের উচ্চতায় গিয়ে পৌঁছেছে।

আপনাদের আশীর্বাদেই ২০০৮ সালে এই জেলার মাটি থেকেই পরিবর্তনের প্রথম চাকা বাংলার মাটিতে ঘুরেছিল। আমি আমার জীবনের প্রথম যে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করি, এই জেলার মানুষই আমাকে ভালবাসা, আশীর্বাদ দিয়ে জয়ী করেছিল।

আমি বাংলার যে প্রান্তেই যাই, মানুষের থেকে যে বিপুল পরিমাণ ভালোবাসা, আশীর্বাদ পাই, তার প্রকৃত হকদার আপনারা সকলে। আপনারা না চাইলে কোনও সাংসদ, বিধায়ক, মন্ত্রী, নেতা কেউ হত না। আপনারা না চাইলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হতেন না।

আমাদের দলে দুনম্বর তিননম্বর বলে কোনও স্থান নেই। আকাশে যেমন একটাই সূর্য, আমাদেরও তেমন একজনই নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বাকি আমরা সকলে কর্মী। আপনাদের জন্যই আজ আমরা বিজেপি হোক, কংগ্রেস হোক, সিপিএম হোক, এককভাবে মানুষকে সংগঠিত করে আমরা লড়াই করতে পেরেছি।

আজকে যে কারণে আমরা সমবেত হয়েছি, গত ২১শে জুলাই ২০১৮ সালে ধর্মতলার ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে আমাদের সর্বজন শ্রদ্ধ্যেয়া নেত্রী, জন-গণ-মন-অধিনায়িকা নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, আগামী ১৯শে জানুয়ারি ২০১৯ সালে তৃণমূল কংগ্রেস ব্রিগেড চলোর ডাক দেবে। আমরা শেষ ব্রিগেড চলোর ডাক দিয়েছিলাম ২০১৪ সালের ৩০শে জানুয়ারি। সেই ব্রিগেডের একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল, প্রাসঙ্গিকতা ছিল, গুরুত্ব ছিল, যথার্থতা ছিল। কিন্তু, এই ব্রিগেডের একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য, প্রাসঙ্গিকতা, গুরুত্ব, যথার্থতা আছে। আমরা এমন একটা সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে আগামী ১৯শে জানুয়ারি কলকাতার বুকে ব্রিগেড চলো সমাবেশে শুধু তৃণমূলের সর্বস্তরের নেতা নন, ভারতবর্ষের অন্যান্য অনেক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অনেক রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে আগামী ১৯শে জানুয়ারি ব্রিগেডে উপস্থিত হবেন। কারণ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ আর শুধু তৃণমূল নেত্রী নন, শুধু বাংলার ১০ কোটি মানুষের নয়নের মণি নয়, আমাদের নেত্রী আজ ভারতবর্ষের বুকে দেশনেত্রীতে পরিণত হয়েছে।

সেই সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন দিল্লীর আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়াল, সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব, বিহারের আরজেডি দলের তেজস্বী যাদব, ডিএমকের এম কে স্ট্যালিন, টিডিপির চন্দ্রবাবু নাইডু, জম্মু কাশ্মীরের ওমর আব্দুল্লাহ, ফারুক আব্দুল্লাহ, লোকতান্ত্রিক জনতা দলের শরদ যাদব, ন্যাশানালিস্ট কংগ্রেস পার্টির শরদ পাওয়ার, শত্রুঘ্ন সিনহা, যশোবন্ত সিনহা, রাম জেটমালানি সহ অনেকেই আসবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্ত করতে। তারা বলবেন, দেশ কি নেত্রী ক্যায়সি হো? মমতা ব্যানার্জী জ্যায়সি হো। দিদি তুম আগে বাড়ো, হাম তুমহারে সাথ হ্যায়।

আমরা আমাদের নেত্রীর আদর্শ অনুসরণ করে চলি। আগামী ১৯শে জানুয়ারি আমি মনে করি, এই জেলা থেকেই ১০ লক্ষ মানুষ ব্রিগেড সমাবেশে আসবেন।

আমাদের নেত্রী ৪২ শে ৪২ ডাক দিয়েছেন। এই জেলায় চারটি সংসদীয় আসন রয়েছে, ডায়মন্ড হারবার, মথুরাপুর, যাদবপুর, জয়নগর। আজ আমাদের অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে যে প্রার্থী হোক আর যে রাজনৈতিক দল হ জ ব র ল জোট করে তৃণমূল কংগ্রেসকে যদি কুপোকাত করতে চায়, এই জেলায় ৪ এ ৪ হবে। এই জেলা বিরোধীদের কুপোকাত করে দেবে। এটা আজকের সভা থেকে আমাদের প্রথম অঙ্গীকার নিতে হবে।

যারা রাজনৈতিক ভাবে লড়াই করতে পারে না, তারাই হুমকি দেয়। আমি অনুরোধ করব, সিপিএম হোক, কংগ্রেস হোক, বিজেপি হোক, আপনারা যদি বাপের ব্যাটা হন, আসুন তথ্য পরিসঙ্খ্যান দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামুন।

নরেন্দ্র মোদী ২০১৪ সালে কাঁচকলা দেখিয়ে বলেছিল, আচ্ছে দিন আনেওয়ালে হ্যায়। সেই আচ্ছে দিন আজ ভারতবর্ষের কোনও প্রান্তে কেউ উপলব্ধি করতে পারেনি। বলেছিল আমাদের দল ক্ষমতায় এলে ২কোটি বেকারের চাকরি হবে, ১০টা বেকারের চাকরি হয়নি। বলেছিল আমাদের দল ক্ষমতায় এলে ভারতের প্রতি নাগরিককে ১৫লক্ষ টাকা করে দেবে, কেউ ১৫ পয়সাও পায়নি।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা কথা দিয়েছিলেন, তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। আমরা বলেছিলাম, আমাদের দল ক্ষমতায় এলে সিঙ্গুরের জমি আমরা কৃষকদের ফিরিয়ে দেব, আমরা দিয়েছি। আমরা বলেছিলাম, আমাদের দল ক্ষমতায় এলে গ্রামে গ্রামে ঝকঝকে তকতকে রাস্তাঘাট করে দেব, আমরা করে দিয়েছি। আমরা বলেছিলাম, আমাদের দল ক্ষমতায় এলে কন্যাশ্রী, যুবশ্রী চালু করব, আমরা করেছি। আমরা বলেছিলাম, আমাদের দল ক্ষমতায় এলে গ্রামে গ্রামে নিরবিচ্ছিন বিদ্যুৎ পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া হবে, আমরা দিয়েছি।

নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহের সরকার আজ বাংলাকে নিপীড়িত, বঞ্চিত, শোষিত করে ভেবেছিল বাংলার মানুষের পেটে আঘাত করবে। আগে ছিল প্রধান মন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা, রাজ্য সরকার দেবে ৬০শতাংশ টাকা, কেন্দ্রীয় সরকার দেবে ৪০শতাংশ টাকা, প্রকল্পটা প্রধানমন্ত্রীর নামে করতে হবে। ফসল বীমা যোজনা, রাজ্য সরকার দেবে ৮০শতাংশ টাকা আর নরেন্দ্র মোদীর সরকার দেবে ২০শতাংশ টাকা, প্রকল্পটা প্রধানমন্ত্রীর নামে করতে হবে। আমাদের নেত্রী বলেছেন, তোমাদের টাকাও লাগবে না, তোমাদের নামও লাগবে না। বাংলা নিজেই টাকা দেবে আর বাংলা নিজে নামেই প্রকল্পগুলি করবে।

প্রধানমন্ত্রী এত হুঙ্কার করেও বাংলার উন্নয়নের জন্য ৫পয়সাও দেননি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মূর্তি তৈরী করছেন ৩০০০ কোটি টাকা খরচ করে, নিজের প্রচার করছে, খরচ ৫২৭৮ কোটি টাকা। আমরা মিথ্যে কথা বলি না, পরিসংখ্যান দিয়ে কথা বলি। বিদেশ ভ্রমণ করতে খরচ করেছে ২০০০ কোটি টাকা। আমার কথা মিথ্যে প্রমাণ করতে পারলে, আমার নামে মামলা কর, আমার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে আমায় জেলে ঢোকাও। সব মিলিয়ে ১০০০০কোটি টাকা খরচ করে, নেট ফলাফল শূন্য।

আমাদের মুখ্যমন্ত্রী ৩১শে ডিসেম্বর বছর শেষ হওয়ার সময় ঘোষণা করলেন আগামী দিন ১০০০০কোটি টাকা দিয়ে কৃষক বান্ধব প্রকল্প শুরু করতে চলেছেন। সারা ভারতে এই নিদর্শন আর নেই। আপনার বাড়ির ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সের মধ্যে কেউ যদি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে চাষের সঙ্গে যুক্ত থাকে, যে কোনও কারণে যদি তার মৃত্যু ঘটে, মা মাটি মানুষের সরকার তার পরিবারের হাতে ২লক্ষ টাকা তুলে দেবে।

একের পর এক উন্নয়নমূলক প্রকল্পের জন্য আমরা সমৃদ্ধ হয়েছি। একটা বাচ্ছা জন্মালে সবুজশ্রী গাছ দিয়ে শুরু হচ্ছে। আবার কেউ মারা গেলে তাঁর পারলৌকিক ক্রীয়ার জন্য সমব্যাথী প্রকল্পে ২০০০টাকা দেওয়া হচ্ছে তাঁর পরিবারকে। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জনমুখী প্রকল্প আছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য।

সিপিএম যখন ৩৪ বছরে বাংলাকে জগদ্দল পাথরে পরিণত করেছিল, নিজের দলের লোক ছাড়া কেউ কোনও সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেত না, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, জাতি ধর্ম বর্ণ দল মত নির্বিশেষে সকলের বাড়ি সরকারি পরিষেবা পৌঁছে দিয়েছেন। তারা ৩৪ বছর ধরে বলত, ইনক্লাব জিন্দাবাদ, আমরা খাবো, তোমরা বাদ। ইনক্লাব জিন্দাবাদ, লাল খাবে, সবুজ বাদ। ইনক্লাব জিন্দাবাদ, হার্মাদ খাবে, মানুষ বাদ। আর এখন বিজেপি বলছে, জয় শ্রী রাম, মানুষের মাথার নেই কোনও দাম, জয় শ্রী রাম, দাঙ্গা লাগানোই একমাত্র কাম, জয় শ্রী রাম, পেট্রোল ডিজেলেও ১০০টাকা দাম, জয় শ্রী রাম, রান্নার গ্যাসের ১০০০টাকা দাম।

সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির করুন পরিণতি হয়েছে। যে বিজেপি নিজেদের হিন্দু ধর্মের ধারক ও বাহক বলে দাবী করত, এই তিন রাজ্যে ৯২ শতাংশের ওপর হিন্দু, তারাই বিজেপিকে কুপোকাত করে দিয়েছে। যত এরা হেরেছে, জিএসটি কমেছে, যত এরা হেরেছে, পেট্রোলের দাম কমেছে, যত এরা হেরেছে, ডিজেলের দাম কমেছে। দুমাস আগে জিএসটি ছিল ২৮ শতাংশ, আজ সেটা ১৮শতাংশ হয়েছে। দুমাস আগে পেট্রোলের দাম ছিল ৮৫টাকা, আজ দাম হয়েছে ৭২টাকা। দুমাস আগে রান্নার গ্যাসের দাম ছিল ৯৭৭টাকা, আজ রান্নার গ্যাসের দাম ৮২০টাকা। আগামীদিন বিজেপিকে নিশ্চিহ্ন করুন, রান্নার গ্যাসের দাম ৫০০টাকা হবে, পেট্রোলের দাম ৫০টাকা হবে, ডিজেল ৪০টাকা হবে। এই শপথ আজকের সভা থেকে নিতে হবে।

তৃণমূল কংগ্রেসকে হম্বি তম্বি করে, ধমকে চমকে লাভ নেই। তৃণমূল কংগ্রেস মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আদর্শের ভিত্তিতে তৈরী করেছে। তৃণমূল কংগ্রেসকে যত চোখ রাঙাবে, যত মারবে, যত আঘাত করবে, যত প্রহার করবে, যত পিছনে লাগবে, তৃণমূল কংগ্রেসের সংগঠন তত শক্তিশালী হবে। আমাদের কর্মীদের রাস্তায় নেমে প্রতিবাদের ভাষা তত তীব্রতর হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল কোনওদিন কারও বশ্যতা স্বীকার করতে রাজি না। আমরা প্রাণ দিতে রাজি, জীবন দিতে রাজি, কিন্তু, আমরা মাথা নত করব না। এটাই আমাদের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিখিয়েছেন।

আগামী ব্রিগেড চলো সমাবেশ আমাদের কাছে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। এই সমাবেশে বিজেপি ভারত ছাড়োর ডাক তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেবেনই, তাছাড়া, আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, প্রতিটি লোকসভা কেন্দ্রে আমরা জিতব। কিন্তু, একটি বুথেও যেন সাম্প্রদায়িক অসুরগুলো গণতান্ত্রিক ভাবে মাথাচাড়া দিয়ে দাঁড়াতে না পারে, এটা আমাদের সুনিশ্চিত করতে পারে। নির্বাচন যখনই হোক, তৃণমূল কংগ্রেস তৈরী আছে। আমরা যা জবাব দেব, তার পর বাংলায় আর আপনাদের অণুবীক্ষণ যন্ত্রও দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবে না।

কিছু লোক এসেছে গুজরাট থেকে, কিছু লোক এসেছে আমেদাবাদ থেকে, কিছু লোক এসেছে উত্তরপ্রদেশ থেকে —এসে এখানে হম্বিতম্বি করছে। যেদিনকে ফল বেরোবে দেখবেন আমেদাবাদ এক্সপ্রেস আর লঙ্গর এক্সপ্রেস ধরে এদেরকে আমরা আবার বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করব।

এরা বাংলার কৃষ্টি জানেনা, বাংলার সংস্কৃতি জানেনা, বাংলার ঐতিহ্য জানেনা এদের মুখে আবার বড় বড় ভাষণ। নেতা আনছে দিল্লী থেকে, কর্মী আনছে এজেন্সি থেকে, ডেকরেটর আনছে রাঁচি থেকে এসে বলছে বাংলা দখল করব। এ হাস্যকর। এর থেকে হাসির খোরাক আর কিছু হতে পারেনা।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জাতি, ধর্ম বর্ণ দল মত নির্বিশেষে মানুষের জন্য কাজ করেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার যেমন হিন্দুদের জন্য কাজ করেছে তেমন মুসলমানদের জন্য কাজ করেছে, শিখ, ঈষাই, জৈন, বৌদ্ধ, আমরা সকলের জন্য কাজ করতে বদ্ধপরিকর। আজকে মানুষের ধর্ম নিয়ে এরা কী করেছে? আপনারা দেখেছেন। ভারতবর্ষের বুকে ভারতবর্ষের রাজধানী দিল্লীর বুকে ভারতীয় জনতা পার্টি একটি পার্টি অফিস তৈরী করেছে। বলছে জয় শ্রী রাম আর নিজেদের পার্টি অফিস তৈরী করেছে। খরচ কত? ১২০০ কোটি টাকা। তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার আগে তৃণমূল কংগ্রেস পার্টি অফিস যে কলকাতার ৩৬জি তোপসিয়া রোড, সেই পার্টি অফিসে যা অবস্থা বা হাল ছিল ১০ বছর আগে, আজও সেই একই হালে পার্টি অফিস রয়েছে। আমরা মানুষের দল আমরা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে, কোনওদিন মানুষের চোখে ধুলো দিয়ে নিজেদের পকেটে অর্থ ভরে নিজেদের পার্টি বা নিজেদের দলকে সম্বৃদ্ধ করিনা। এটা বিজেপি করে এটা সিপিএম করে।

সিপিএম আগে কী বলত, “এলোমেলে করে দে মা ভোট টা যেন পাই, এলোমেলো করে দে মা লুটেপুটে খাই” আর ভারতীয় জনতা পার্টি কী বলছে? “গরীব করে রেখে দে মা ভোট যেন পাই।” এই দুটোকে কোনওদিন আর মাফ করবেন না।

মাথায় রাখবেন যারা বন্দুক নিয়ে সন্ত্রাস করেছে তারাই এখন গেরুয়া জামা পড়ে পদ্মফুল নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অর্থাৎ পাত্রটা নতুন কিন্তু খাবারটা কিন্তু পচা। যে খাবার খেলে আবার পেট খারাপ হবে। তাই বাংলার মানুষ এলাকার মানুষ এবং জেলার মানুষকে আমি অনুরোধ করছি আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ থেকে আগামীদিন এদেরকে যাতে ঝেটিয়ে যেকটা জঞ্জাল পড়ে আছে এমনিতেই আপনারা দেখেছেন পঞ্চায়েতে আমরা সাফ করে দিয়েছি। সেই পঞ্চায়েতে যেকটা জঞ্জাল পড়ে আছে, আমরা সেগুলোকে ঝেটিয়ে বিদায় করার ব্যবস্থা আগামী লোকসভা নির্বাচনে করব।

গাধাকে দেখিয়ে বলছে ঘোড়া, আর দিল্লী থেকে একটা বিলাসবহুল বাস নিয়ে এসেছে, সেই বাসকে দেখিয়ে বলছে রথ। আমরা তো আষাঢ় মাসে রথ জানি, আমরা তো শ্রাবণ মাসে রথ জানি, আমরা ছোটবেলায় রথ চালিয়েছি রথ তৈরী করা হত, সেই রথে জগন্নাথ দেব থাকত, বলরাম থাকত, শুভদ্রা থাকত। আমরা দড়ি দিয়ে রথ টানতাম। আমরা তো রথ মানে সেই রথ জানি প্রভু জগন্নাথের রথ জানি, শুভদ্রার রথ জানি, বলরাম এর রথ জানি, মদনমোহণের রথ জানি, প্রভু চৈতন্যের রথ জানি, শ্রীকৃষ্ণের রথ জানি, রামকৃষ্ণপরমহংস দেবের রথ জানি, গোপালের রথ জানি। একোন রথ যে রথে কাঠ নেই, যে রথে দড়ি নেই, যে রথে দেবতা নেই, যে রথে ঠাকুর নেই, যে রথে স্নান করা যায়, যে রথে ফূর্তি করা যায়, যে রথে রান্না করা যায়, যে রথে ছাইপাঁস খাওয়া যায়, যে রথে মলত্যাগ করা যায়, যে রথে মূত্র ত্যাগ করা যায়। এটা কোন রথ? এই প্রশ্ন আমরা দিলীপ বাবুদের জীজ্ঞাসা করতে চাই।

আবার রথের নামে বাস নিয়ে এসেছে বলছে গণবতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা। তাদের মুখে গণতন্ত্রের কথা যারা আজকে মধ্যপ্রদেশে ৭ জন কৃষককে নির্মমভাবে নৃশংসভাবে গুলিতে ঝাঁজরা করে হত্যা করেছিল, তাদের মুখে গণতন্ত্রের কথা যাদের জন্য ডিমনিটাইজেশনের কারণে ১৫০ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল।

হিন্দু ধর্মের ধারক আর বাহক? আমি প্রশ্ন করতে চাই তাদের হিন্দু ধর্মের জন্য নরেন্দ্র মোদী কী কাজ করেছে? আমি এখানে তথ্য পরিসংখ্যান দিয়ে বলতে পারি। আমরা হিন্দুদের জন্য করেছি, আমরা মুসলমানদের জন্য করেছি, আমরা শিখ, জৈন, খ্রীষ্টান সবার জন্য করেছি। আমাদের নেত্রী এটা আমদের কে শিখিয়েছেন। আমি হিন্দু হতে পারি আমি আমার ধর্ম বাড়িতে করব, আমি সকাল বেলা উঠে সূর্য নমষ্কার করি, আমি দেব-দেবী ঈশ্বরের পুজো করব, আমি গায়েত্রী মন্ত্র জপ করব, আমি যদি ইসলামধর্মে বিশ্বাস করি আমি মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে পাঁচবার নামাজ পড়ব, মসজিদে গিয়ে আল্লাহের কাছে দোয়া চাইব, আমি যদি খ্রীষ্টান হই আমি চার্চে যাব এবং প্রভু যীশুর কাছে প্রার্থনা করব, আমি যদি বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাসী হই, আমি গৌতম বুদ্ধর কাছে গিয়ে আমি প্রার্থনা করব, আমি আমার ধর্ম বাড়িতে পালন করব। আমি হিন্দু হলে আমি ধর্ম বাড়িতে পালন করব, আমি মুসলমান হলে আমার ধর্ম আমি বাড়িতে করব, আমি শিখ হলে আমার ধর্ম আমি বাড়িতে করব, আমি যদি খ্রীষ্টান হই আমার ধর্ম আমি বাড়িতে করব। কিন্তু মানুষ যখন আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে আমার তথন কোন ধর্ম নেই।

আমার একটাই ধর্ম ‘মানবধর্ম’ আমি উন্নয়ন করে যাব। কে কন্যাশ্রী পাচ্ছে, কে যুবশ্রী পাচ্ছে, কে গতিধারা পাচ্ছে, কে গীতাঞ্জলি পাচ্ছে, কে বিধবা ভাতা পাচ্ছে এটাই আগামীদিনে জাতি-ধর্ম-গণমত নির্বিশেষে আমাদের সকলকে করে যেতে হবে। এটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের শিখিয়েছেন।

আমি ধর্ম তখনই করব যখন আমার পরণে কাপড় থাকবে, আমার মাথার উপরে ছাদ থাকবে, আমার পেটে খিদে থাকবে, খাওয়ার জন্য ভাত থাকবে তখনই আমি ধর্ম করব। আমার ,মাথায় ছাদ নেই, পরণে বস্ত্র নেই, আমার পাতে ভাত নেই, আমার হাতে কাজ নেই, কর্মসংস্থান নেই আর আমি ধর্ম করে বেড়াব, এটা হতে পারেনা। বিগত ১৫ বছর ধরে ছত্তিশগড় আর মধ্যপ্রদেশের মানুষকে বোকা বানিয়েছো। এখন তারা বুঝতে পেরেছে যে আমার ধর্ম আমি তখনই করব যখন আমার পরিবারের কাজ থাকবে, হাতে কাজ থাকবে, পেটে ভাত থাকবে, পরণে বস্ত্র থাকবে, মাথায় ছাদ থাকবে, কাপড় থাকবে তখনই আমি ধর্ম করব। এটাই হচ্ছে ভারতীয় জনতা পার্টির এবং তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে পার্থক্য।

এটাই হচ্ছে ভারতীয় জনতা পার্টি ও তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে পার্থক্য। তাদের রাজনীতিটা ধর্ম নিয়ে, আমাদের রাজনীতি কর্ম নিয়ে। তাদের রাজনীতি জাত নিয়ে, আমাদের রাজনীতি ভাত নিয়ে। তাদের রাজনীতি বাবরি নিয়ে, আমাদের রাজনীতি চাকরি নিয়ে। তাদের রাজনীতি অস্ত্র নিয়ে, আমাদের রাজনীতি বস্ত্র নিয়ে। তাদের রাজনীতি কবরস্থান নিয়ে, আমাদের রাজনীতি কর্মসংস্থান নিয়ে। এটাই হচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

নরেন্দ্র মোদির সরকার বড় বড় কথা বলে বলেছিলো কী যে আমাদের প্রধানমন্ত্রী চা বিক্রি করে। আমি চাওয়ালাদের সম্মান জানাই, কেন? কারণ সৎ উপায়ে নিজেদের জীবন, নিজেদের জীবিকা অর্জন করে, অর্থ অর্জন করে কষ্ট করে সংসার চালায়, তারা আমাদের সমাজের গর্ব। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আজকে মিথ্যে কথা বলে তাদেরকেও কলুষিত-কালিমালিপ্ত করেছে। আমরা ভারতবর্ষের বুকে কোনওদিন কোনও প্রান্তে নরেন্দ্র মোদিকে হাতে কেটলি নিয়ে চা বিক্রি করতে দেখিনি। কিন্তু মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একশো টাকার চপ্পল আর তিনশো টাকার শাড়ি পরে টালির ছাদের ঘরে থেকে আজও দশ কোটি মানুষের জীবনের উন্নয়নের জয়যাত্রা পরিচালনা করতে দেখেছি।এটাই তাদের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পার্থক্য।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা ছিলেন আজও তাই আছেন। বিন্দুমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে পরিবর্তন আসেনি।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দশ বছর আগে যে গাড়িতে ঘুরতেন, সেই গাড়িটিই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রয়েছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী যে গাড়িতে ঘুরছেন সেই গাড়িটার দাম হচ্ছে ছ’কোটি টাকা। আমি যদি মিথ্যে কথা বলি আমার বিরুদ্ধেও মামলা হবে। আমি আবার বলে যাচ্ছি যে আমাদের নেত্রী এবং ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে পার্থক্য কী? নিশ্চিতভাবে আমি আমার ধর্মে বিশ্বাস করি। আমার ধর্ম কোনোদিন ভেঙে দাও, গুড়িয়ে দাও, হাঠিয়ে দাও কথা শেখায়নি। আমার ধর্ম সবসময় বৈচিত্রের মধ্যে একতার কথা শিখিয়েছে। নানা ভাষা,নানা মত, নানা পরিধান, বিভিদের মাঝে দেখ মিলন মহান। আমাদের ধর্ম নিজের ধর্মের প্রতি আস্থাশীল ও পরের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমাদের বারেবারে এই শিক্ষাই শিখিয়েছে। আমাদের ধর্মের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রচারকের নাম স্বামী বিবেকানন্দ।

আজকে মাথায় রাখবেন বাংলায় যাই হোক মাথা নত করে না। আপনারা আমাদের গলা কেটে দিতে পারেন, সিবিআই দেখাতে পারেন, ইডি দেখাতে পারেন, ইনকাম ট্যাক্স দেখাতে পারেন, অনেক ধমকাতে পারেন, আমরা মনে করি যে আত্মসমর্পণ করা আর মৃত্যুর মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। এটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের শিখিয়েছেন এবং লড়াইটা মাঠে ময়দানে হবে। লড়াইটা সিবিআই করবে না ইডি করবে না, লড়াইটা রকম ট্যাক্স করবে না, লড়াইটা অন্য কোনও এজেন্সি করবে না, লড়াইটা করবে বাংলার খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। লড়াইটা করবে মা-মাটি-মানুষের সৈনিক। লড়াইটা করবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিনিধি। লড়াইটা করবে তৃণমূল কংগ্রেসের সহকর্মীরা। এই লড়াইয়ে আগামীদিনে আমাদের সকলকে প্রস্তুত থাকতে হবে। ওরা যত কুৎসা করেছে তত ওরা গোল্লায় গেছে। যত কুৎসা করবি তত গোল্লায় যাবি। দেখবি আর জ্বলবি লুচির মত ফুলবি। আগামীদিন বাংলার মাটিতে ওদের কোনও অস্তিত্ব থাকবেনা। আর ২০১৯ বিজেপি ফিনিশ, অনেক হয়েছে মোদি এবার ছাড়ো গদি, আগামীদিন তৃণমূল আসছে তেড়ে পালাবি তোরা দিল্লি ছেড়ে, ২০১৯ বিজেপি ফিনিশ, বিজেপি হাটাও দেশ বাঁচাও। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত আগামীদিন শক্তিশালী করার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বলেছিলেন, “তোমরা আমাকে রক্ত দাও আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব।” দিলীপ বাবুরা বলছেন,”তুমি আমাকে গদি দাও আমি তোমাকে রক্তস্নাত বাংলা দেব”, “তুমি আমাকে গদি দাও ,আমি তোমাকে দাঙ্গা দেব”, “তুমি আমাকে গদি দাও , আমি তোমাকে খুন করে দেব”, “তুমি আমাকে গদি দাও, আমি রক্তের নদী বইয়ে দেব।”

আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী বলছেন? “হে বাংলা বীরযোদ্ধা মা মাটি মানুষ, আমার মা ভাই বোনেরা তুমি আমাকে ৪২শে ৪২ দাও, আগামীদিন দিল্লির বুকে নতুন প্রগতিশীল শান্তিপ্রিয় ধর্মনিরপেক্ষ ভারতবর্ষ দেব”, এই হচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আশি বছর আগে একজন বাংলায় সন্তান বলেছিলেন “দিল্লি চলো”। আশি বছর পরে আবার এক বাঙালি “দিল্লি চলো” ডাক দিয়েছেন। আশি বছর আগের বাঙালির বাসভবন ছিল দক্ষিণ কলকাতা , আশি বছর পরের বাঙালির বাসভবনও দক্ষিণ কলকাতা। আশি বছর আগের বাঙালি কোনওদিন আত্মসমর্পণ করেননি। আশি বছর পরের বাঙালিও কোনওদিন আত্মসমর্পণ করেননি। আশি বছর আগের বাঙালি কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন, আশি বছর পরের বাঙালিও কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস তৈরী করেছেন। আসুন আমরা সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধ হই আমাদের দেশনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে দিল্লিতে একটা ধর্মনিরপেক্ষ সরকার তৈরী করে বাংলাকে এগিয়ে দি। বাংলাকে আগামীদিন চালকের পথে বসিয়ে সসম্মানিত করে আগামীদিন একটা প্রগতিশীল সরকার বাংলার মাটিতে দেশের মাটিতে প্রতিষ্ঠা করব।

আপনাদের সকলকে আরেকবার ধন্যবাদ জানিয়ে, প্রণাম জানিয়ে, কৃতজ্ঞতা জানিয়ে, আমি আপনাদের থেকে আজ এখানেই বিদায় নেব এবং আগামী ১৯শে জানুয়ারি ব্রিগেড চলো প্যারেড গ্রাউন্ডে আমাদের সকলের দেখা হবে। “ডাক দিয়েছে দিদি মমতা, ব্রিগেড চলো জনতা”, “ছাত্র-যুব আওয়াজ তোলো পায়ে পায়ে ব্রিগেড চলো’, “পায়ে পায়ে উড়িয়ে ধুলো,শ্রমিক-কৃষক ব্রিগেড চলো”, “ডাক দিয়েছে তৃণমূল, ব্রিগেড চলো সাধারণ মানুষ”

আমি আপনাদের সকলকে আরেকবার ধন্যবাদ জানিয়ে প্রণাম জানিয়ে, কৃতজ্ঞতা জানিয়ে, অভিনন্দন জানিয়ে আমার নতমস্তকে কৃতজ্ঞতা-প্রণাম জানিয়ে আমি সকলের কাছে এখানেই বিদায় নেব।