সাম্প্রতিক খবর

জানুয়ারী ১৩, ২০১৯

আপনাদের সরকারটা মজবুত না মজবুর? : অভিষেক

আপনাদের সরকারটা মজবুত না মজবুর? : অভিষেক

আজ দক্ষিণ কলকাতার হাজরা মোড়ে এক জনসভায় বক্তব্য রাখেন সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

অভিষেকের বক্তব্যের কিছু অংশ:

আমরা তাই আজ সভা থেকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে চাই, অঙ্গীকারবদ্ধ হতে চাই।  আমরা যখনই কোনও আন্দোলনে নামি সবসময় আমরা মিছিল করি হাজরা মোড়ের মাটিতে শেষ করি।  একাধিক গণ আন্দোলনের সাক্ষীএই ঐতিহাসিক হাজরা মোড় রয়েছে। এবং আপনারা জানলে খুশি হবেন এফআরডিআই আন্দোলন হয়েছিল, এটাও আমরা যাদবপুর ৮বি থেকে শুরু করে হাজরা মোড়ে শেষ করেছিলাম।  আমরা কথা দিয়েছিলাম যে আমাদের জীবনের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত আমরা এই আইন-বিল লোকসভার সংসদে পাশ করতে দেব না। আপনারা জানলে খুশি হবেন নরেন্দ্র মোদী সরকার আজ পর্যন্ত  এফআরডিআই আইন গায়ের জোরে লাগু করতে পারেনি। সুতরাং আমি এই হাজরা মোড়ের মাটিকে আমি সন্মান জানাই, কুর্ণিশ জানাই, আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাই।

আজকে সভার যে বিষয়বস্তু আগামী ১৯শে জানুয়ারি অর্থাৎ আগামী শনিবার ব্রিগেড চলো সমাবেশকে সামনে রেখে আমরা সমবেত হয়েছি, আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছি। এই ব্রিগেড সমাবেশে বাংলার তেইশটা জেলা রয়েছে, উত্তরবঙ্গ-দক্ষিণবঙ্গ মিলিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে  দিকনির্দেশিকা নেবে এবং নেত্রীর বক্তব্য শোনার জন্যে সশরীরে এসে পৌঁছবেন অনেক বাধা, বিপত্তি, প্রতিকূলতা পেরিয়ে। আমি গত দুদিন আগে উত্তর কলকাতায় সভা করেছিলাম শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে। আমি দায়িত্বের সাথে বলতে পারি সকলেই আসবেন, সকলের স্থান আমরা ব্রিগেডে করব। কিন্তু তৃণমূল যুব কংগ্রেস ও শাখা সংগঠনে যা সংগঠন আমরা তৈরী করেছি আমি আমাদের রাজ্য সভাপতি সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক-  আমি আপনাকে দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি, আপনি নেত্রীকে বলতে পারেন যে অন্যান্য জেলার প্রয়োজন হবে না, দক্ষিণ কলকাতা তৃণমূল যুব কংগ্রেস, তৃণমূল ছাত্র পরিষদ, উত্তর কলকাতা তৃণমূল যুব কংগ্রেস একাই ব্রিগেড ভরিয়ে দেবে-  এই নিয়ে কোনও সংশয় নেই।

যারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কুৎসা করছে, অপপ্রচার করছে, হম্বি-তম্বি আর হুঙ্কার করছে-আমি বলব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দূরহস্ত, মাঠে ময়দানে নেমে আগে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ও তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সাথে লড়, কত ধানে কত চাল আমরা বুঝিয়ে দেব। এই ব্রিগেড সমাবেশে যা বৈশিষ্ট্য, যে গুরুত্ব আমাদের মাথায় রাখতে হবে যে এমন একটা পরিবেশ, এমন একটা সময়কালে, এমন একটা সন্ধিক্ষণে আমাদের নেত্রী ব্রিগেডে চলো ডাক দিয়েছেন যেখানে ভারতবর্ষের স্বৈরাচারী কিছু শক্তি আজকে ধ্বংসস্তূপে আমাদের দেশটাকে পরিণত করেছে।

আমাদের নেত্রী গত ২১শে জুলাই ২০১৮ সালে ধর্মতলার সমাবেশ থেকে ব্রিগেড চলো-এর ডাক দিয়ে কর্মসূচির ঘোষণা করেছিলেন। তার পরবর্তীকালে আমরা প্রস্তুতি শুরু করেছি একমাস ধরে সর্বস্তরে নেতা-কর্মীরা তাদের সীমাবদ্ধ ক্ষমতার এক্তিয়ার অনুযায়ী সামর্থ্য অনুযায়ী বাংলার সর্বস্থরের মানুষকে সংগঠিত করে সর্বকালীন নজির ব্রিগের ময়দানে তৈরী করার চেষ্টা করেছে। আমরা যে শেষ ব্রিগেডটি করেছিলাম অর্থাৎ ২০১৪ সালের ৩০শে জানুয়ারি আমাদের  নেত্রী ডাক  দিয়েছিলেন ব্রিগেড চলো সমাবেশের আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত কংগ্রেস,সাম্প্রদায়িক বিজেপি, আর  ব্যর্থ-অপদার্থ সিপিএমকে ভারতছাড়া ও বাংলা ছাড়া করতে। ফলস্বরূপ আমরা দেখেছিলাম বাংলার ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে আমরা ৩৪টি আসনে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের আশীর্বাদধন্য ও স্নেহধন্য প্রার্থীরা বাংলার মানুষ জয়যুক্ত করেছিল। আমরা এমন এক সন্ধিক্ষণে এবার ব্রিগেড ডেকেছি যেখানে ভারতবর্ষের সব রাজনৈতিক দলকে চোখ দেখিয়ে, আঙ্গুল দেখিয়ে, চমকিয়ে-ধমকিয়ে, আজকে বশ্যতা স্বীকার করিয়ে বাড়িতে ঢুকিয়ে রেখেছে। কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও মমতা বন্দোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসকে বশ্যতা  বা আত্মসমর্পণ করাতে পারেনি। আমাদের দলটা বিশুদ্ধ লোহার মতো হয়েছে। তাকে যত আঘাত করেছে, প্রহার করেছে সেই দল  তত শক্তিশালী হয়েছে।

ওরা কুৎসা করেছিল, আমরা ২০০৯ সালে ৪২ শে ৩৪ হয়েছিলাম। আমাদের নেত্রী ৪২ শে ৪২ এর ডাক দিয়েছেন, আগামীদিন তৃণমূল কংগ্রেস  ৪২ শে ৪২ করবে, বাজিমাত হবে আর বিরোধীরা কুপোকাত হবে।

আজকে এই সভা থেকে মুলুত এই অঙ্গীকার নিতে হবে। আমাদের নেত্রী আমাদের উন্নয়নের নিরিখে মানুষের পাশে  দাঁড়ানোর কথা  শিখিয়েছেন, বারেবারে বলে এসেছেন। আমরা সিপিএমের মতো নাস্তিক নই, ভারতীয় জনতা পার্টির মতো ধর্মকে বিক্রি করে বজরংবলী আর রাম দেখিয়ে রাজনীতি করতে হয় না। আমরা ধর্মেও নেই, ধর্মঘটেও নেই। আমরা উন্নয়নে আছি, আমরা মানুষেরটা পাশে আছি। আমরা নিশ্চিতভাবে ধর্ম করব।  আমি একজন হিন্দু ধর্মের প্রতিনিধি। আমি সকালে উঠে সূর্য নমস্কার করি, আমি ব্রাহ্মণের ছেলে গায়ত্রী মন্ত্র জপ করি।   আমি শিবশম্ভুর পুজো-আরাধনা করি, আমি মা দুর্গার পুজো করি, মা কালির পুজো করি, মা লক্ষ্মীর পুজো করি। আমি নিশ্চিতভাবে আমার ধর্ম বাড়িতে করব, মন্দিরে করব। আমি যদি ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করি আমি মসজিদে যাব, মাটিতে মাথা পেতে পাঁচবার নওয়াজ পড়ব। আমি আল্লাহের কাছে দোয়া করব, প্রার্থনা করব।  আমি যদি খৃস্টান হই, তাহলে বড়দিন পালন করব, আমি গির্জায় যাব, প্রভু যীশুর কাছে প্রার্থনা করব। আমার শিখ ভাইয়েরা এখানে আছে। আমি যদি শিখ ধর্মে বিশ্বাস করি তাহলে গুরুদুয়ারায় যাব। আমি বহে গুরুজী কি খালসা, বহে গুরুজী কি ফাতেহ বলব। আমি যদি বৌদ্ধ  ধর্মে বিশ্বাস করি তাহলে বৌদ্ধ ধর্মের প্রথম প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধর কাছে প্রার্থনা করব, সাধনা করব , বন্দনা করব, উপাসনা করব। কিন্তু আমাকে যখন মানবশ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে আমার কোনও ধর্ম নেই, আমার একটাই ধর্ম- মানবধর্ম, কে কন্যাশ্রী পাচ্ছে, কে যুবশ্রী পাচ্ছে, কে সবুজসাথী পাচ্ছে , কে শিক্ষাশ্রী পাচ্ছে, কে সবুজশ্রী পাচ্ছে, কে বৈতরণী পাচ্ছে, কোথায় রাস্তা হচ্ছে, কোথায় লাইট লাগছে, কে বিধবা ভাতা পাচ্ছে- এটাই আমাকে কার্যত সুনিশ্চিত করতে হবে।

সিপিএম আজ বিজেপির কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। আজকে একাধিক জনবিরোধী সিদ্ধান্ত ভারতীয় জনতা পার্টি ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পরও নিয়েছে।একদিনের জন্যেও বাংলার মানুষ, কলকাতার মানুষ সিপিএম বা কংগ্রেসকে রাজপথে নেমে মানুষের বৃহত্তর স্বার্থে একটা আন্দোলন, মিছিল বা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে দেখেনি। পেট্রোলের দাম বেড়েছে, রাস্তায় নেমেছে তৃণমূল কংগ্রেস, জিএসটির ফলে অর্থনৈতিক বিপর্যয় হয়েছে, রাস্তায় নেমেছে তৃণমূল কংগ্রেস, ডিজেলের দাম বেড়েছে , রাস্তায় নেমেছে তৃণমূল কংগ্রেস , গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম বেড়েছে, রাস্তায় নেমেছে তৃণমূল কংগ্রেস, এফআরডিআই বিলের বিরুদ্ধে নেমেছে তৃণমূল কংগ্রেস, মধ্যবিত্তদের জন্য নেমেছে তৃণমূল কংগ্রেস, শ্রমিকের হয়ে রাস্তায় নেমেছে তৃণমূল কংগ্রেস, কৃষকের  হয়ে রাস্তায় নেমেছে তৃণমূল কংগ্রেস, এনআরসির বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছে তৃণমূল কংগ্রেস।

আজ ভারতবর্ষ উপলব্ধি করেছে নরেন্দ্র মোদী ভারতবর্ষের মানুষকে যেভাবে সর্বশান্ত করে, নিজের একটা আধিপত্য, জোর করে দেশের মাটিতে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে তাঁর প্রধান বিরোধী আজ কংগ্রেস নয়, তাঁর প্রধান বিরোধী টালির ছাদে থাকা আমাদের সর্বজন শ্রদ্ধেয়া নেত্রী ও জনগণমন অধিনায়িকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

আমরা ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রীকে কেটলি হাতে চা বিক্রি করতে দেখিনি কিন্তু আমরা আমাদের রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে আজও সাত-সাড়ে সাত বছরে হতে চলল তিনি মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। আজও তাঁর পায়ে একশো টাকার হাওয়াই চপ্পল ও তিনশো  টাকার  পরনের শাড়ি  পরে আজও  ঘরের ছাদের তলায় থেকে আজও দশ কোটি মানুষের জীবনের উন্নয়নের জয়যাত্রা পরিচালনা করছেন দক্ষতার সাথে।

এটাই তাদের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পার্থক্য। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর পার্থক্য হল আমরা যা বলি আমরা তাই করি।  আমাদের নেত্রী আজকে কৃষকদের জমির খাজনা মুকুব করেছেন আর ভারতবর্ষের  প্রধানমন্ত্রী বারোটা শিল্পপতিদের ঋণ মুকুব করেছেন। আমাদের নেত্রী সিঙ্গুরে জমি ফিরিয়ে দিয়েছে আর  প্রধানমন্ত্রী জোর করে মানুষের উপর জিএসটি ও নোটবন্দি চাপিয়ে দিয়েছে।  আজকে তথাকথিত যারা হিন্দু ধর্মের ধারক ও বাহক বলে দাবি করে, আমি দায়িত্বের সাথে বলতে পারি আমার ধর্ম কোনোদিন ভেঙে দাও, গুড়িয়ে দাও, হাঠিয়ে দাও কথা শেখায়নি। আমার ধর্ম সবসময় সাজিয়ে দাও গুছিয়ে দাও, নিজের ধর্মের প্রতি আস্থাশীল ও পরের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমাদের বারেবারে এই শিক্ষাই শিখিয়েছে।

গতকাল স্বামী বিবেকানন্দ এর ১৫৭তম জন্মদিবস গেছে, আমরা স্বামীজী কে মানি, সন্মান করি বাণী, শিক্ষা, দীক্ষা,আজও অত্যন্ত দার্শনিক ও গুরুত্বপূর্ণ। যে স্বামীজিকে সামনে রেখে ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী ব্যবহার করে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে ব্যবহার করেছিল, তাদের নূন্যতম স্বীকৃতি, মর্যাদাটুকু বিজেপি দেয়নি।

তথ্য পরিসংখ্যান দিয়ে বলে যাচ্ছি আমরা ক্ষমতায় আসার পর হিন্দু ধর্মের জন্যে যা করেছেন অন্য রাজ্যের রাজনৈতিক দল  মুখ্যমন্ত্রী বা রাজ্যসরকার করে দেখতে পারেনি। স্বামী বিবেকানন্দের বেলুড় মাঠে জাহাজ সার্ভিস থেকে শুরু করে ভগিনী  নিবেদিতার বাড়ি সংরক্ষণ করে হেরিটেজ ঘোষণা করার কাজ   আমাদের সরকার করেছে। তারাপীঠের উন্নয়ন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার করেছে, দক্ষিনেশ্বরের মন্দিরে মমতা বন্দোপাধ্যায় কালিয়াজোঁর আগে ৫ই নভেম্বর ভারতবর্ষ তথা বাংলার মানুষকে আন্তর্জাতিক মানের  র স্কাইওয়াক উপহার দিয়েছেন। আমাদের কালীঘাটে এসপি মুখার্জী রোড থেকে শুরু করে কালীমন্দিরের গর্ভগৃহ পর্যন্ত ১২৫ কোটি টাকা খরচা করে আগামীদিন আন্তর্জাতিক মানেরর  আরেকটি স্কাইওয়াক হতে চলেছে।  আমরা অন্য ধমের জন্যেও করেছি আমরা ইসলাম ধর্মের জন্য করেছি, আমরা ফুরফুরা শরীফের জন্যে করেছি।  আমরা চার্চের উন্নয়ন ও সৌন্দর্যায়ন করেছি। আমরা একাধিক ধর্মস্থানগুলোকে আমরা নতুন ভাবে সজ্জিত  করেছি, সাজিয়েছি,এটাই আমাদের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারেবারে শিখিয়েছেন যারা বাংলাকে ধর্মের ভিত্তিতে দ্বিখণ্ডিত করতে চায়, চোখে কর্মসূচি নেই, উদ্দেশ্য নেই,উন্নয়ন নিয়ে কথা বলতে পারে না তাদের ধিক্কার জানাই বাংলা তাদের কোনওদিন গ্রহণ করবে না ।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বলেছিলেন, “তোমরা আমাকে রক্ত দাও আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব।”রাহুল সিনহা, দিলীপ  ঘোষ,মুকুল রায়রা কি বলছে? বলছে-তুমি আমাকে গদি দাও আমি তোমাকে রক্তস্নাত বাংলা দেব”

আজকে পিযূষ গোয়ালের বাবা কি ছিল? কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিল? এই প্রশ্নগুলো আজকে সাধারণ মানুষের মনে আসছে। তারা এর উপযুক্ত জবাব দেবে।  যারা পরিবারতন্ত্র নিয়ে কথা বলছে তাদেরকে বলি আমাদের দল পরিবারতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। আমাদের দল যাদেরকে মনে করে যোগ্য, তাদেরকে মানুষের কাছে ছেড়ে দেয়। মানুষ চাইলে সে লড়বে, মানুষ চাইলে সে জিতবে, মানুষ চাইলে সে মানুষের জন্য কাজ করবে। তোমাদের কথায় বাংলার মানুষের কিছু এসে যায় না। মানুষের কাছে আমরা পরীক্ষা দিতে প্রস্তুত কিন্তু সাম্প্রদায়িক অসুরদের চোখ রাঙানি আমরা মেনে নেব না।

গতকাল প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী বিজেপির ন্যাশনাল কনভেনশনে বলেছেন “২০১৯ এ আমাদের সরকার অর্থাৎ ভারতীয় জনতা পার্টিকে আবার আপনারা ভোট দিতে জেতান। আমাদের সরকার যদি তৈরী হয় তাহলে মজবুত সরকার তৈরী হবে। আর বিরোধীদের সরকার যদি তৈরী হয় তাহলে মজবুর সরকার তৈরী হবে। অর্থাৎ উনি যদি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় তাহলে মজবুত আর আঞ্চলিক দল গুলি মিলে যদি সরকার তৈরী করে তাহলে মজবুর সরকার। আমি আজকে ভারতীয় জনতা পার্টির কাছে প্রশ্ন করতে চাই এই সভা থেকে আপনি যে অটল বিহারী বাজপেয়ীর ছবি দিয়ে প্রচার করছেন তাহলে ১৯৯৯ সালে অটল বিহারী বাজপেয়ীর সরকার মজবুত সরকার ছিল না মজবুর সরকার ছিল? জন্মু কাশ্মীরে পিডিপির সঙ্গে আপনারা হাত মিলিয়ে সরকার গড়েছিলেন সেই সরকার মজবুত ছিল না মজবুর ছিল? বিহারে নিতীশ কুমারের দলের সঙ্গে আপনারা হাত মিলিয়ে অনৈতিকভাবে সরকার গড়েছেন এটা কি মজবুত ছিল না মজবুর ছিল? মিজোরামে আপনাদের সরকারটা মজবুত না মজবুর? নাগাল্যান্ডে আপনাদের সরকারটা মজবুত না মজবুর? মহারাষ্ট্রে শিবসেনার সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার করেছেন আপনাদের সরকারটা মজবুত না মজবুর? আগে সেই সরকার গুলো নিয়ে ভাবুন বাংলার মানুষকে জবাব দিন তারপরে বাংলার মানুষের থেকে উত্তর আশা করবেন।

ভুলভাল কথা বলে মানুষের চোখে ধূলো দিয়ে আর যাই হোক বাংলা দখল করা যায় না। বাংলা ভাষা জানেনা, বাংলা লিখতে জানেনা, বাংলা পড়তে জানেনা শুধু বড় বড় হুঙ্কার। গত ২০১৪ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত এই সাড়ে চার বছরে মে মাসের পর থেকে ছয়টা রাজনৈতিক দল বিজেপি ছেড়ে বেড়িয়ে এসেছে অর্থাৎ বলাবাহুল্য অমিত শাহের খাটালে আর কেউ থাকতে চাইছেনা। এটা সকলের কাছে প্রমাণিত হয়ে গিয়েছে। আসাম গণ পরিষদ, টিডিপি, তেলেগু দেশম পার্টি, শিবসেনা ও একাধিক রাজনৈতিক দল বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে কেউ কেউ আবার বেরিয়ে গিয়েছে। আমরা সেটা সংবাদ মাধ্যমে পড়েছি এবং দেখেছি। দুটো দল মিলে সরকার চালাবে আমি যা বলব তাই হবে?  এ ভারতের জনতা পার্টি আমাদের দরকার নেই। আমরা দেখেছি বিজেপি যা কথা দিয়েছিল তার একটাও কথা রাখেননি।

ভারতীয় জনতা পার্টির প্রধানমন্ত্রী ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার আগে বলেছিল আচ্ছে দিন আনেওয়ালে হ্যায়। বলেছিল, ভারতবর্ষের বুকে ২কোটি বেকারের চাকরি হবে, রাস্তাঘাট তৈরী হবে, সকলের অ্যাকাউন্টে ১৫লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে, কাঁচকলা লবডঙ্কা দিয়েছে, কিচ্ছু দেয়নি।

আমাদের মুখ্যমন্ত্রী যে প্রকল্পগুলো মস্তিস্কপ্রসূত করে বাস্তবায়িত করছে আর  প্রধানমন্ত্রী বলছে তার নামে প্রকল্পগুলো করতে হবে। ফসলবীমা প্রকল্পে ৮০ শতাংশ টাকা রাজ্য সরকার দেবে, কিন্তু, প্রধানমন্ত্রীর নামে নামকরণ করতে হবে। গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্পে ৫০ শতাংশ টাকা রাজ্য সরকার দেয়, কিন্তু, প্রধানমন্ত্রীর নামে নামকরণ করতে হবে। আমাদের নেত্রী বলেছেন, তোমাদের টাকাও লাগবে না, তোমাদের নামও হবে না। বাংলাকে কোনওদিন আমরা আত্মসমর্পণের পথে নিয়ে যাব না। বাংলার আর বাকি ২৮ টি রাজ্য টাকার বিনময়ে গেরুয়া হতে পারে কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাংলার মানুষ কখনও টাকার বিনিময়ে গেরুয়া হবেনা।

আমি বিশ্বাস করি নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু আমাদের যে কথা শিখিয়েছে, স্বামী বিবাকনন্দ আমাদের যে দীক্ষা দিয়েছে আমাদের সে দীক্ষায় নিজেদের পরিচালিত ও নিয়োজিত করে আমাদের আগামীদিন এক নতুন ভারত গড়ার স্বপ্ন দেখতে হবে।

ভারতীয় জনতা পার্টি অনেক বড় রাজনৈতিক দল। অনেক অর্থ তাদের কাছে রয়েছে। আমাদের কাছে অর্থ নেই, কিন্তু মানুষের সমর্থন রয়েছে। আমাদের কাছে মানুষের বুকভরা ভালোবাসা আবেগ আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। ইতিহাস সাক্ষী আছে আবেগ আর অর্থের মধ্যে যখনই লড়াই হয়েছে তখন আবেগের কাছে অর্থ পরাজিত হয়েছে। কোনওদিন আবেগকে ছাড়িয়ে অর্থ জিততে পারেনি। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে আগামীদিন দিল্লীর বুকে এক নতুন সূর্যদয় হতে চলেছে তা বলার কোনও অবকাশ নেই।

আমাদের নেত্রী আমাদের গর্বও হয় আবার দুঃখও হয়। দুঃখ হয় কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর আগে শুধু আমাদের অধিকার ছিল। কিন্তু এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুধুমাত্র বাংলার দশ কোটি মানুষের মুক্তিসূর্য নয়, এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুধুমাত্র বাংলার দশ কোটি মানুষের নয়নের মণি নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন ভারতবর্ষের ১৩০ কোটি মানুষের নয়নের মণি, দেশনেত্রীতে পরিণত হয়েছে। সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা শুনতে সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত কে শক্ত করতে কাশ্মীরের ওমর আবদুল্লা, ফারুক আবদুল্লা যেমন ব্রিগেড সমাবেশে আসবেন, দিল্লীর আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়াল আসবেন, তামিলনাডুর এম কে স্ট্যালিন আসবেন, এছাড়া, শরদ পাওয়ার, শরদ যাদব আসবেন, শত্রুঘ্ন সিনহা আসবেন, যশোবন্ত সিনহা আসবেন, রাম জেটমালানি আসবেন, বিহারের তেজস্বী যাদব আসবেন, উত্তর প্রদেশ থেকে অখিলেশ যাদব আসবেন। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকা আগামী দিন একটাই হুমকার উঠতে চলেছে মমতাদি তুম আগে বাড়ো হাম তুমহারে সাথ হ্যায়।

ভোটটা সিবিআই করবেনা, ভোটটা ইডি করবেনা, ভোটটা করবে বাংলার সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ এবং রাজনৈতিক দলের কর্মীরা। সারাবছর ধরে যারা মানুষের পাশে থাকে, যারা বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্যে মানুষের বিপদে-আপদে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদেরকে ভোটের সময় রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠা করতে হয়না। তৃণমূল কংগ্রেস শুধু সকাল সকাল ভোট দিন, জোড়াফুলে ভোট দিনের রাজনীতি করেনা। তৃণমূল সারাবছর মানুষের পাশে থাকে। তৃণমূল কংগ্রেস খেলায় আছে, তৃণমূল কংগ্রেস মেলায় আছে। তৃণমূল কংগ্রেস ছটে আছে, তৃণমূল কংগ্রেস ঘাটে আছে, তৃণমূল কংগ্রেস মানুষের পাশে আছে, তৃণমূল কংগ্রেস সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আছে, তৃণমূল কংগ্রেস রক্তদান শিবিরে আছে, তৃণমূল কংগ্রেস বস্ত্রদানে আছে, তৃণমূল কংগ্রেস সংবর্ধনা আছে। আমরা বস্ত্র বিতরন করি, ওরা বস্ত্র হরণ করে। ওদের সাথে আমাদের এটাই পার্থক্য।

ভারতীয় জনতা পার্টির রাজনীতি বাবরি নিয়ে, তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনীতি চাকরি নিয়ে। ভারতীয় জনতা পার্টির রাজনীতি অস্ত্র নিয়ে, আমাদের রাজনীতি বস্ত্র নিয়ে। ভারতীয় জনতা পার্টির রাজনীতি জাত নিয়ে, আমাদের রাজনীতি ভাত নিয়ে। ভারতীয় জনতা পার্টির রাজনীতি কবরস্থান নিয়ে, আমাদের রাজনীতি কর্মসংস্থান নিয়ে। এটাই তাদের আর আমাদের মধ্যে পার্থক্য।

আমাদের নেত্রী আগামীদিন যে নির্দেশিকা দেবে আমরা সেই নির্দেশিকা পালন করবার জন্য তৈরী। একজন আবর্জনা যাকে আমরা বার করে দিচ্ছি, ভারতীয় জনতা পার্টি তাকে মাথায় নিয়ে প্রতিষ্ঠা করছে। যারা ভাবছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া তারা বিশাল নেতা, মাথার পাশ থেকে যদি ছবিটা যায় তাহলে আর কোনও অস্তিত্ব থাকবেনা। মানুষ এই ছবি আর জোড়াফুল চিহ্ন দেখে ভোট দেয় আর অন্য কোনও মুখ দেখেনা।

যারা বড় বড় কথা বলছে তাদের বলি নারদার প্রধান অভিযুক্ত ভারতীয় জনতা পার্টির রাজ্যনেতা। সারদায় অভিযুক্ত ভারতীয় জনতা পার্টির রাজ্যনেতা। আমরা যাদেরকে ফেলে দিচ্ছি চোর, চিটিংবাজ সব আবর্জনা জড় হচ্ছে বিজেপির কাছে। বাড়ির কাছের আবর্জনা সব জড় হয় ভ্যাটে ওটাকে বলে ভারতীয় জনতা পার্টি। যেখানে ভ্যাট দেখবে সেই ভ্যাটের মধ্যে স্টিকার লাগাও ভারতীয় জনতা পার্টি। সিপিএমের জঞ্জাল ওখানে, কংগ্রেসের জঞ্জাল ওখানে, তৃনমূলের জঞ্জাল ওখানে। জঞ্জাল, জুমলা আর যাত্রা পার্টিতে এই ভারতীয় জনতা পার্টি পরিণত হয়েছে।

যারা বলে আমরা ১৫ টা রাজ্যে রয়েছি তাদের বলি আমরা একটি মাত্র রাজ্যে রয়েছি এবং পার্শ্ববর্তী রাজ্য গুলিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিস্কপ্রসূত প্রকল্প গুলো দিয়ে তাদেরকে সাহায্য করতে পেরেছি।

মাথায় রাখবেন মাটির নিচে পায়ের তলায় থাকা দূর্বা ঘাস দিয়েই কিন্তু পুজো হয় আকাশের উপর উঁকি মারা তাল গাছ টার কোনও গুরুত্ব থাকেনা। সুতরাং আমরা ঘাসের দল যত কাটবি তত গজাব। কেটে কোনওদিন শেষ করতে পারবে না তৃণমূল কংগ্রেসকে। আগামীদিন আমরা সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ভারতবর্ষের বুকে আমরা তৃণমূল কংগ্রেসকে প্রতিষ্ঠিত করব। আগামীকাল মকরসংক্রান্তির আগাম শুভেচ্ছা জানাই সকলকে। যারা গঙ্গাসাগর যাবেন তাদেরকেও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। সকলে ভাল থাকবেন।

আগামী ১৯শে জানুয়ারী পায়ে পায়ে উড়িয়ে ধূলো, ব্রিগেড গ্রাউন্ড ভরিয়ে তোলো। ডাক দিয়েছে মমতা, ব্রিগেড চলো জনতা। ডাক দিয়েছে মমতা, ব্রিগেড ভরাবে জনতা। বিজেপির সাম্প্রদায়িক সরকারকে উপরে ফেলো, ১৯শে জানুয়ারী ব্রিগেড চলো। কন্যাশ্রী তুমিও বলো, ১৯শে জানুয়ারী ব্রিগেড চলো। সবুজ সাথী তুমিও বলো, ১৯শে জানুয়ারী ব্রিগেড চলো। শিশুসাথী তুমিও বলো, ১৯শে জানুয়ারী ব্রিগেড চলো। গীতাঞ্জলী তুমিও বলো, ১৯শে জানুয়ারী ব্রিগেড চলো। মোদীকে উপরে ফেলো, ১৯শে জানুয়ারী ব্রিগেড চলো।