Latest News

January 8, 2019

ডাক দিয়েছে তৃণমূল, বিজেপি হবে নির্মূল: অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

ডাক দিয়েছে তৃণমূল, বিজেপি হবে নির্মূল: অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

আসন্ন ব্রিগেড সমাবেশকে সামনে রেখে আজ কোচবিহারে রাস মেলা ময়দানে জনসভা করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

তাঁর বক্তব্যের কিছু অংশঃ

আজকের সভাকে সাফল্যমণ্ডিত, সার্থক করার জন্য যেভাবে মাঠে ময়দানে লড়াই করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, সেই তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বস্তরের কর্মী সৈনিক শুভানুধ্যায়ীদের আমি নতমস্তকে শ্রদ্ধা কৃতজ্ঞতা প্রণাম জানাচ্ছি।

আমি সবসময় আসার আগে কোচবিহার টাউনের প্রভু মদনমোহনের মন্দিরে দর্শন করে আসি। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আমি সেই প্রভুর কাছে দর্শন করে আগামীদিন কোচবিহারবাসীর সুস্থতা এবং উন্নয়নমূখর জীবন-যাপন এবং সাম্প্রদায়িক অসুর গুলোকে আমরা ঝেঁটিয়ে যেন বিদায় দিতে পারি সে প্রার্থণা আজকে আমি ভগবানের কাছে করে এসেছি। আর সেটাই আমাদেরকে আগামীদিন সুনিশ্চিত করতে হবে।

আজকে আমরা সমবেত হয়েছি এই রাসমেলার ঐতিহাসিক ময়দানে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্রিগেড সভা সফল এবং সার্থক করার লক্ষ্যে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত ২০১৮ সালে ২১শে জুলাই ধর্মতলার বুক থেকে ব্রিগেড চলোর সমাবেশের ডাক দিয়েছিলেন।

আমরা শেষ ব্রিগেড সমাবেশ ২০১৪ সালের ৩০শে জানুয়ারি করেছিলাম। পরবর্তীকালে অনেক সংগ্রাম আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বার মা-মাটি-মানুষের সরকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এখনও একনায়কতন্ত্রের চূড়ান্ত ভারতীয় জনতা পার্টির বিরুদ্ধে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বস্তরের কর্মী শুভানুধ্যায়ীদের সংগঠিত করে ধারাবাহিক লড়াই আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে মানুষকে সঙ্গে করে বাংলা তথা ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে চালিয়েছি।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটা সন্ধিক্ষণে, একটা পরিস্থিতিতে ব্রিগেড চলোর ডাক দিয়েছেন আগামী ১৯শে জানুয়ারি এই ২০১৯ সাল। এই ২০১৯ সাল হবে বিজেপির শেষ বছর। এই বছরে ব্রিগেড সমাবেশ সার্থক করার দায়িত্ব আমাদের সকলের। এই ব্রিগেড সমাবেশে শুধুমাত্র তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্ব বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত থাকবেন না। এমন একটা সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ব্রিগেড চলো সমাবেশ ডেকেছেন যেখানে শুধুমাত্র জেলা বা রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ নেতা নেত্রী নয়, শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন, ভারতবর্ষের একাধিক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলের নেতা নেত্রীরা হাজির হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্তিশালী করার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হবেন।

আমাদের গর্ব আমাদের মাননীয়া নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুধুমাত্র আর মা-মাটি-মানুষের সরকারের মুখ্যমন্ত্রী নন, শুধুমাত্র তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী নন, শুধুমাত্র আমাদের রাজ্যের জন-গণ-মন অধিনায়িকা নন, আজকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতবর্ষের গর্ব। তিনি ১৩০ কোটি মানুষের নয়নের মণি, দেশনেত্রীতে পরিণত হয়েছেন।

সেই ব্রিগেড চলোর সমাবেশে যেমন আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়াল আসবেন, আবার সমাজবাদী পার্টির উত্তরপ্রদেশের অখিলেশ যাদবেরা আসবেন। এই ব্রিগেড চলোর সমাবেশে যশোবন্ত সিনহা আসবেন, শত্রুঘ্ন সিনহা আসবেন, মহারাষ্ট্রের এনসিপি-র শরদ পাওয়ার আসবেন সুদূর জম্মু কাশ্মীরের ওমর আবদুল্লা, ফারুক আবদুল্লা আসবেন, তেমনই এই সমাবেশে তেজস্বী যাদব আসবেন, রাম জেঠমালানি আসবেন, শরদ যাদব আসবেন এবং তামিলনাড়ুর ডিএমকের এমকে স্ট্যালিনও আসবেন।

একদিকে জম্মু কাশ্মীর আর একদিকে তামিলনাড়ু – মধ্যিখানে সবাই এসে ডাক দেবে “দেশ কি নেত্রী ক্যায়সি হো, মমতা ব্যানার্জী জ্যায়সি হো” “দিদি তুম আগে বাড়ো হাম তুমহারে সাথ হ্যায়” এটাই ব্রিগেড চলোর সমাবেশের প্রাসঙ্গিকতা এবং যথার্থতা।

উত্তরবঙ্গের যে কয়েকটি জেলা রয়েছে তার মধ্যে আলিপুরদুয়ার আর জলপাইগুড়ির যৌথ উদ্যোগে একটি জনসভা হয়েছিল, আমি সেখানে গিয়েছিলাম। কিন্তু বলার অপেক্ষা রাখে না মনে হচ্ছে ১৯শে জানুয়ারী আজকে কোচবিহারের বুকে হয়ে গেল।

আমি এটা একটা মিনি ব্রিগেড চাক্ষুষ করছি, যত জনসভা হয়েছে আমার বলতে আপত্তি নেই আমার সমস্ত নেতৃবৃন্দকে একযোগে ধন্যবাদ, সালাম, কুর্নিশ জানাই। আমার নেতা, আমার ভাই, আমার যোদ্ধা, আমার সৈনিকেদের আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। কেননা আজকের সমাবেশ কোচবিহারের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে।

যারা ধর্মের ভিত্তিতে বাংলাকে ভাগ করতে চেয়েছিল, তাদের কি করুণ পরিণতি হয়েছে আমরা দেখেছি। গত ৫ই ডিসেম্বর ২০১৮ সালে কোচবিহারে রথ বার করতে চেয়েছিল। আমি মনে করি রথ যদি কোচবিহারের মাটিতে বেরোয়, তাহলে শুধু মদনমোহনের রথ বেরোবে, আর কোনও রথ কোচবিহারের মানুষ চায় না। কিসের রথ? আমি তো হিন্দু ধর্মের একজন প্রতিনিধি। আমি সকালে উঠে আমার ধর্ম করি, আমাকে ভারতীয় জনতা পার্টীর কাছ থেকে ধর্ম শিখতে হবেনা। আমি যদি মুসলমান হই,আমি আমার ধর্ম বাড়িতে পালন করবো। আমি যদি হিন্দু হই, আমি বাড়িতে আমার ধর্ম করবো, আমি যদি হিন্দু হই, আমি আমার ধর্ম আমি বাড়িতে করবো। আমি যদি খ্রীষ্টান হই, আমার ধর্ম আমি বাড়িতে করবো। আমি যদি বৌদ্ধ হই, আমার ধর্ম আমি বাড়িতে করবো। আমি যদি শিখ হই,আমার ধর্ম আমি বাড়িতে করবো। আমি যদি জৈন হই, আমার ধর্ম আমি বাড়িতে করবো।

কিন্তু যখন আমাকে মানুষ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে, আমার একটাই ধর্ম – মানব ধর্ম। কে উন্নয়ন পেয়েছে? কে গীতাঞ্জলী পেয়েছে? কে গতিধারা পেয়েছে? কে কন্যাশ্রী পেয়েছে? কোথায় রাস্তা হয়েছে? কোথায় জল যাচ্ছে? এটাই দেখা আমার একমাত্র ধর্ম। এটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের শিখিয়েছে। আমরা কোনোদিন ধর্মের ভিত্তিতে বাংলাকে ভাগ করতে দেবো না। ভারতবর্ষের অনেক রাজ্যে তারা গেরুয়া ঝড় প্রতিষ্ঠা করেছে। কিন্তু ভারতবর্ষের মাটিতে বাংলার একটা আলাদা কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য রয়েছে। বাংলা কোনোদিন অর্থের কাছে মাথানত করেনি।

ভারতবর্ষের আরো ২৮টা রাজ্য রয়েছে বাংলা ছাড়া, সেগুলি অর্থের বিনিময়ে গেরুয়া হবে, কিন্তু বাংলা কোনোদিন অর্থের বিনিময়ে গেরুয়া হবে না। আমরা প্রস্তুত আছি, আমরা প্রতিহত করবো। আগামীদিনে গন্তান্ত্রিকভাবে কড়ায়, গন্ডায় জবাব দিয়ে যে কটা আবর্জনা এই পঞ্চায়েতে রয়েছে সে কটা এই কোচবিহার থেকে আগামীদিন কি করে বের দিতে হয়, এটা আমাদের জানা আছে। আমি বারে বারে বলেছি, তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কে বড়, কে ছোট এই করলে চলবে না।

আমাদের দল একটা। আকাশে যেমন একটা সূর্য, একটাই দল, একটাই নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বড় ছোট করতে গিয়ে আমাদের দলকে কেউ যদি দুর্বল করতে চায়, এবং আমি চিহ্নিত করেছি। আমি বারে বারে সুযোগ দিয়েছিলাম, সমঝে চলো, নিজেকে সতর্ক কর। আমি বারে বারে বলেছিলাম, কেউ যদি ভাবে দলের ভিতরে থেকে দলকে দুর্বল করবো, এই জেলার পর্যবেক্ষকের নাম অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আমি ছেড়ে কথা বলবো না। নতুন পুরনোর সংমিশ্রনে আমাদের দলকে বলিষ্ঠ করার কথা আমাদের নেত্রী বারে বারে বলেছেন। কেউ যদি ভাবে আমি দিনহাটায় দলবাজি আর গোষ্ঠিবাজি করে পার পেয়ে যাবো, আমার নজর রয়েছে। কেউ যদি ভাবে আমি কোচবিহার উত্তরে পার পেয়ে যাবো, আমার নজর রয়েছে। নৌকা চিহ্ন নিয়ে, আর হ্যারিকেন চিহ্ন নিয়ে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ছবি, আর অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের ছবি নিয়ে পঞ্চায়েতে নির্দল জেতাবো! আর তৃণমূল কংগ্রেসকে আক্রমণ করবো! আমি বলে যাই, ভালো কর্মী যারা রয়েছে, প্রতিনিধি যারা রয়েছে তাদের জন্য আমাদের দলের দরজা খোলা। কিন্তু কেউ যদি ভাবে শুধুমাত্র টাকা তোলা আর পকেট ভরার জন্য তৃণমূল কংগ্রেস করবো, তাদের জন্য দলের দরজা বন্ধ। তার জন্য দলে কোনও ঠাঁই নেই। এবং সে যদি ভাবে এই দলকে আমি ব্ল্যাকমেল করে দলের লুটে
পুটে খাবো, তো আমি বলে দিয়ে যাচ্ছি, ক্ষমতা থাকলে একবার চেষ্টা করে দেখ আগামীদিনে কি পরিণতি হয়। কড়ায় গন্ডায় জবাব দেবো।

আমাদের দল মানুষের দল। খেটে খাওয়া শ্রমিক, কৃষক, এসসি, এসটি, ওবিসি, সংখ্যালঘু, সংখ্যাগুরুদের দল, এই দল আর যাই হোক কোনোদিন মাথানত করতে শেখেনি। তাই আমাদের সকলকে আরো সতর্ক হতে হবে যাতে দল আগামীদিনে আরো শক্তিশালী হয়। মাথায় রাখবেন একটা বট গাছ, তার যদি শাখা প্রশাখা কেটে নেওয়া হয়, সেই বট গাছ কোনোদিন শক্তিশালী হবেনা। আবার একই সাথে সেই বট গাছের শিকড়ের সাথে কেউ যদি লড়াই করে, তাহলেও কিন্তু বট গাছ শক্তিশালী হবেনা।

যুব যুবর কাজ করবে, মাদার মাদারের কাজ করবে, ছাত্র ছাত্রর কাজ করবে, সংখ্যলঘু সংখ্যালঘুর কাজ করবে; কিন্তু মাথায় রাখবেন আমি তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি। আমি একটা কথা বুক ঠুকে বলে যাচ্ছি, তৃণমূলের মূল সংগঠনকে বাদ দিয়ে কোনও শাখা প্রশাখা সংগঠন চলবে না। কারণ আমার যে গাছ, সেই গাছের শিকড়কেই যদি আমি দুর্বল করি, আমি শাখা প্রশাখা নিয়ে কি করব? আমার সেই শিকড়কেও শক্তিশালী বলিষ্ঠ, তেজি করতে হবে। আরো যাতে নিবিড়ভাবে মাটির সাথে ওতপ্রতভাবে যোগাযোগ থাকে।

আমাদের তৈরী থাকতে হবে আমাদের যে অন্যান্য রাজনৈতিক দল রয়েছে, যখনই নির্বাচন হোক, আমরা প্রস্তুত রয়েছি। বিজেপি বিজেপির মত প্রার্থী দেবে, সিপিএম কংগ্রেস অ্যাডজাস্টমেন্ট করে প্রার্থী দিলে দেবে, আলাদা আলাদা প্রার্থী দিলে দেবে আমাদের যায় আসেনা। আগামীকাল যদি নির্বাচন হয়, আমি কথা দিয়ে যাচ্ছি তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীকে আগামীদিন কোচবিহারের মাটি থেকে ৫ লক্ষ ভোটে জেতানোর দায়িত্বটা আমাদের। এই রেণুকা সিংহার প্রয়াণের পরে নোটবন্দির একমাসের মধ্যে প্রার্থপ্রতিম রায়ের নির্বাচন হয়েছিল, যতই লাইন দীর্ঘায়িত হয়েছে, মানুষ তত স্বতঃফুর্তভাবে ভোট দিয়েছে। ৫ লক্ষ ভোটে জিতেছে।

যে যেই বুথের দায়িত্বে রয়েছ সেই বুথকে আরো শক্তিশালী করো। সেই বুথকে আরো বলিষ্ঠ কর। প্রত্যেকটা বুথে আমাদের এমনভাবে লড়াই করে জবাব দিতে হবে যাতে এই সাম্প্রদায়িক অসুরগুলোকে মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে দেখতে পাওয়া না যায় অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে – এটা সকলকে সুনিশ্চিত করতে হবে। লক্ষ্য উন্নয়ন। আমার একটাই দিশা প্রগতি। এটাই আমাদের মাথায় রেখে আগামীদিন অবিচল থেকে কাজ করে যেতে হবে।

একটা বিলাসবহুল দিল্লী থেকে বাস নিয়ে এসেছে। নিয়ে এসে বলছে কি? রথ! গাধাকে দেখিয়ে বলছে ঘোড়া! আর বাসকে দেখিয়ে বলছে রথ। ভাই আমি তো একজন হিন্দু, আমি তো কোনোদিন বাস কে রথ বলে দেখিনি।

আজকে একটা রথ নিয়ে এসেছে। রথের নামে একটা বাস নিয়ে এসেছে। দিল্লী থেকে কেন? দিল্লী থেকে নিয়ে এসেছে এখানে তৈরিও করতে পারেনি, তারপর সেই বাসটাকে দেখিয়ে সবাইকে বলছে রথ। আমি তো আষাঢ় মাসের রথ জানি, আমি তো শ্রাবণ মাসের রথ জানি। আমি তো মদনমোহনের রথ জানি। আমি প্রভু জগন্নাথ দেবের রথ জানি। আমি তো বলরামের রথ জানি। আমি তো শুভদ্রার রথ জানি। আমি তো মহাপ্রভূ চৈতন্যের রথ জানি। শ্রী কৃষ্ণের রথ জানি, আমি তো গোপালের রথ জানি। আমাদের শরীরে যেমন ২০৬টা হাড় থাকে, ঠিক তেমন ২০৬টা কাঠের টুকরো দিয়ে রথ তৈরী হয়। সেই রথে দড়ি থাকে, কাঠ থাকে, দেব থাকে, দেবী থাকে, আমরা সেই রথের দড়ি টানি। প্রভূর কাছে প্রার্থনা করি, যাতে আগামীদিন আমাদের মনস্কামনাপূর্ন হয়।

দেব নেই, দেবী নেই, যে রথে রান্না করা যায়, যে রথে ফূর্তি করা যায়, যে রথে গল্প করা যায়, যে রথে স্নান করা যায়, যে রথে ছাইপাশ খাওয়া যায়, যাবে, যে রথে মল ত্যাগ করা যায়। যে রথে মুত্র ত্যাগ করা যায় – এ রথ কোন রথ?

আমাদের প্রশ্ন দিলীপ বাবুর কাছে রইলো। আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রদায়ীকতার আধারে বার বার বাংলাকে ভাগ করতে চাইছেন। মমতা বন্দোপাধ্যায়ের দক্ষ প্রশাসনের কারণে আজকে তারা বার বার মুখ থুবড়ে পড়েছে। আমরা দেখেছি, আমাদের নেত্রী যা কথা দিয়েছিল, কথা রেখেছেন। মাথায় রাখবেন ২০১৬-র পর ভারতীয় জনতা পার্টির কোনও নেতাকে কোচবিহারের বুকে দেখা যায় নি। আমাদের সৈনিকদের দেখা গেছে। বারে বারে ধারাবাহিকভাবে মানুষের পাশে উন্নয়েনের শরীক করে এই জেলাকে দেখা গেছে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা কথা দিয়েছিলেন তা রেখেছেন। পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয় কোচবিহারের মাটিতে তৈরী হয়েছে। নতুন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ হয়েছে, মেডিকেল কলেজ হয়েছে, একাধিক সেতু নির্মাণের কাজ চলছে, ঝকঝকে ত্কত্কে রাস্তা হয়েছে। আমরা বলেছিলাম কী? আমরা ক্ষমতায় এলে গ্রামে গ্রামে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পরিষেবা পৌঁছে দেব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার দিয়েছেন। আমরা বলেছিলাম ক্ষমতায় এলে দার্জিলিঙে পর্যটন প্রতিষ্ঠা করব, আমাদের সরকার করেছে। আমরা বলেছিলাম আমরা ক্ষমতায় এলে জঙ্গলমহলে শান্তি ফিরিয়ে আনব, আমাদের সরকার করেছে। আমরা বলেছিলাম ক্ষমতায় এলে বাড়িতে বাড়িতে পানীয় জলের সুব্যবস্থা ও সমাধান আমরা করব, আমরা করেছি।

আর ভারতীয় জনতা পার্টি কাঁচকলা। বলেছিল কী? ক্ষমতায় এলে আচ্ছে দিন আসবে, কাঁচকলা এসেছে। বলেছিল দু’কোটি বেকারের চাকরি হবে, কাঁচকলা হয়েছে। বলেছিল সবাইকে পনেরো লক্ষ করে দেব, কাঁচকলা দিয়েছে। আগামীদিন ভোটের সময় এদেরকে একটা কাঁচকলা আমাদের দিতে হবে। এরা যা দিয়েছে এদেরকে আমরা সেটাই ফিরিয়ে দেব।

এরা কী বলছে? ফসল বীমা যোজনা ৮০ শতাংশ টাকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার দেবে আর ২০ শতাংশ টাকা নরেন্দ্র মোদির সরকার দেবে। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা ৫০ শতাংশ টাকা আমাদের রাজ্য সরকার দেবে আর বাকি টাকাটা কেন্দ্রীয় সরকার দেবে। আর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কী বলছেন? আমার নামেই তোমায় প্রকল্পটা করতে হবে। আমরা বলেছি জমিদারি? তোমার টাকাও লাগবে না, তোমার নামও চাই না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই টাকা দেবে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের নামে প্রকল্পটা হবে। তাই বাংলা আজকে প্রমাণ করেছে আর যাই হোক বাংলা কারোর কাছে মাথা নত করবে না।

ফসল বীমা যোজনার টাকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিয়েছেন। আজকে বাংলা গ্র্রাম সড়ক যোজনা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার করেছে। বাংলা আবাস যোজনা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার করেছে। একটা বাচ্চা যদি জন্মায়, তাহলে সবুজশ্রীর চারা গাছ দিয়ে শুরু হচ্ছে। আর কেউ যদি দেহত্যাগ করছে দেহবসানের সময় পরলোকগমনের ক্রিয়া সমব্যাথির মাধম্যে শেষ হচ্ছে। পরবর্তীকালে আমরা কী দেখেছি? একটা শিশু জন্মানোর পরে কখনও সে কন্যাশ্রী, কখনও সে যুবশ্রী, কখনও সে গতিধারা, সেইসব থেকে কৈশোরে উপনীত হচ্ছে , কৈশোর থেকে তারুণ্যে উপনীত হচ্ছে, ধারাবাহিকভাবে উন্নয়নের আলোকে নিজের জীবনকে সমৃদ্ধ করতে পেরেছে।

আমার এখানে মা বোনেরা বসে আছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কন্যাশ্রী থেকে শুরু করে মহিলাদের জন্য ৫০ শতাংশ সংরক্ষণ করেছেন। ভারতবর্ষের কোথাও কোনও মুখ্যমন্ত্রী করে দেখাতে পারেনি। এটাই আমাদের গর্ব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের শিখিয়েছেন জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের জন্যে কাজ করে যেতে হবে।

চৌত্ৰিশ বছর এই কোচবিহারের মাটিতে স্লোগান উঠত “ইনকিলাব জিন্দাবাদ আমরা খাব, তোমরা বাদ” “ইনকিলাব জিন্দাবাদ লাল খাবে, সবুজ বাদ”, “ইনকিলাব জিন্দাবাদ হার্মাদ খাবে মানুষ বাদ”,সেই সিপিএমের হার্মাদরাই গেরুয়া জামা পরে, মাথায় ফেট্টি বেঁধে কী বলছে? জয় শ্রীরাম, মানুষের মাথার নেই কোনও দাম, জয় শ্রীরাম, দাঙ্গা লাগানোই একমাত্র কাম, জয় শ্রীরাম, রান্নার গ্যাসের এক হাজার টাকা দাম, জয় শ্রীরাম, পেট্রল-ডিজেলের একশো টাকা দাম। আর ঠেলায় না পড়লে বিড়াল গাছে ওঠে না।

আমরা কী দেখেছি? তথাকথিত হিন্দু ধর্মের ধারক আর বাহক বলে নিজেদেরকে দাবি করত, সেই হিন্দু ধর্মের জন্য কোনও কাজ তারা করেনি। আজকে সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনগুলোতে রাজস্থান, ছত্তিসগড়, মধ্যপ্রদেশ , তেলেঙ্গানা, মিজোরাম ভারতীয় জনতা পার্টি কার্যত সর্বশান্ত, নিঃস্ব হয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে। সেই রাজস্থানে ৯২ শতাংশ ভোটার হিন্দু, সেই মধ্যপ্রদেশে ৯৪ শতাংশ ভোটার হিন্দু, সেই ছত্তিসগড়ে ৯০ শতাংশ ভোটার হিন্দু। তারা আজকে ভারতীয় জনতা পার্টিকে ভোট দেয়নি। পনেরো বছর ধরে যাদেরকে ধর্ম গুলিয়ে রেখেছিল, আজকে তারা বুঝতে পেরেছে কী? আমি ধর্ম তখনই করব যখন আমার পেটে ভাত থাকবে, আমার পরনে বস্ত্র থাকবে, মাথার উপরে ছাদ থাকবে, আমার হাতে কাজ থাকবে – তখনই আমি ধর্ম করব।

আজকে মানুষকে ধর্ম গিলিয়ে ভারতীয় জনতা পার্টি দিল্লীর বুকে ১২০০ কোটি টাকা খরচা করে একটা সাত তারা পার্টি অফিস তৈরী করেছে। আর তৃণমূল কংগ্রেস ২০১১ এ ক্ষমতায় আসার আগে – আমাদের কলকাতার বুকে ৩৬, তপসিয়া রোডে যে পার্টি অফিসটি ছিল – যার নাম তৃণমূল ভবন – যে অবস্থা দশ বছর আগে ছিল আজও সেই একই অবস্থায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রধান কার্যালয় এখনও রয়েছে। এটাই প্রমান করে যে মানুষকে ভুল বুঝিয়ে, মানুষের নামে টাকা নয়ছয় করে তৃণমূল কংগ্রেস রাজনীতি করে না।

তৃণমূল সিপিএমের মত নাস্তিক নয় , আর ভারতীয় জনতা পার্টির মত ধর্ম বিক্রি করে আমাদের রাজনীতি করতে হয় না। আমি মনে করি ঈশ্বর পূজনীয়। রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার্য নয়। যে রাম ও বজরং বলী কে বিক্রি করে রাজনীতি করছে, ধর্মকে মানুষকে গেলাচ্ছে, তারাই আজকে দুটো গালে দুটো থাপ্পড় কষিয়ে এদের জামানত বাজেয়াপ্ত করেছে। এবং আগামীদিনে আমি কথা দিয়ে যাচ্ছি যে এরা দেড়শোটা সীটও পাবে না ভারতবর্ষের মাটিতে। যেটা ২৮২ আসনে নরেন্দ্র মোদী ২০১৪তে জিতেছিল , যে গরু ২০১৪ সালে দুধ দিয়েছিল সেই গরুই আগামীদিন গোবর তোমাদের মুখে লেপে দেবে। তোমাদের কোনও রাজনৈতিক অস্তিত্ব এই মাটিতে আর থাকবে না।

এসো, তথ্য পরিসংখ্যানকে সামনে রেখে লড়াই হোক। আমার দিদি আমাদের মুখ্যমন্ত্রী কী করেছে আর তোমাদের মোদী কী করেছে। পাঁচ বছরের মোদি সরকার ও পাঁচ বছরের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কী করেছে। তথ্য পরিসংখ্যান সামনে রেখে লড়াই কর।

৩১শে ডিসেম্বর ২০১৮ এ নববর্ষ শুরু হওয়ার একদিন আগে আমাদের নেত্রী ঘোষণা করলেন ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্প অর্থাৎ আমি যদি একজন কৃষক হই আমার পরিবারের কেউ কৃষির সাথে জড়িত থাকে তাহলে আমাদের সরকার একটা নতুন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যার ফলে কী হবে যে আপনার যদি আঠারো বছর থেকে ষাট বছরের মধ্যে আপনার অকাল মৃত্যু বা অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটে, তাহলে আপনার পরিবারের সদস্যদের মা-মাটি-মানুষের সরকার দু’লক্ষ টাকা চেক তুলে দেবে। দশ হাজার কোটি টাকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর জন্যে খরচ করেছেন।

আর নরেন্দ্র মোদি কী করেছেন? তিন হাজার কোটি টাকার মূর্তি গড়েছেন, ৫২৭৮ কোটি টাকা নিজের প্রচারের জন্যে খরচা করেছেন, দু’ হাজার কোটি টাকার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন, একদিকে দশ হাজার কোটি টাকা নরেন্দ্র মোদি খরচা করেছেন যার ফল শূন্য।

আর একদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করেছেন, যার ফল কুচবিহার থেকে শুরু করে কাকদ্বীপ, বাংলার যে কোনও প্রান্তে যে কোনও কৃষক যদি মারা যায় দু’ লক্ষ টাকা সরকার দেবে, এর জন্য আপনাদের কোনও বীমা দিতে হবে না। এর জন্য আপনাদের কোনও প্রিমিয়াম দিতে হবে না, বিনা পয়সায় আর বিনামূল্যে। একর প্রতি আপনার যদি এক একর জমি থাকে তাহলে দুটো খেপে দুটো ভাগে সরকার আড়াই আড়াই করে পাঁচ হাজার টাকা আপনাদের দেবে।

নরেন্দ্র মোদি সরকারের মন্ত্রী লোকসভায় লিখিত জবাব দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন যে গত পাঁচ বছরে কেন্দ্রের সরকার ৫,২৭৮ কোটি টাকার প্রচার করেছে। ৩,০০০ কোটি টাকার মূর্তি — সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল যদি আজকে জীবিত থাকতেন তিনিও লজ্জিত বোধ করতেন। ২,০০০ কোটি টাকার বিদেশ ভ্রমণ।

যখন স্মার্ট সিটি গড়ার জন্য টাকা দেওয়ার কথা আসছে তখন নরেন্দ্র মোদির কাছে টাকা নেই। যখন কন্যাশ্রীতে টাকা দেওয়ার কথা আসছে তখন তার কাছে টাকা নেই। যখন যুবশ্রীতে টাকা দেওয়ার প্রশ্ন উঠছে তখন টাকা নেই। আরআইডিএফ-এর রাস্তা হবে টাকা দেওয়ার সময় অর্থ নেই। পিএমজিএসওয়াই-এর রাস্তা তৈরী হওয়ার সময় অর্থ নেই। ফসল বীমার সময় অর্থ নেই। কিন্তু নিজের প্রচার করার জন্য ৫,২৭৮ কোটি টাকা আছে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন তোমার কোনও অর্থ দরকার নেই। তোমরা ভেবেছিলে যে , ‘আমরা কেন্দ্রীয় সরকারে এসে বাংলাকে নীপিড়িত, বঞ্চিত, শোষিত, বিতাড়িত করে রাখবো।’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেঁচে থাকতে একাজ হবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতদিন বেঁচে আছেন বাংলার মানুষ সসম্মানে এগিয়ে যাবেন। উন্নয়ন কাকে বলে আমরা করে দেখিয়েছি। আমরা আগামিদিনেও দেখাবো।

যারা ভেবেছিল পাঁচ বছর পরে ধর্মের তাস খেলে ২৫ বছর ভারতবর্ষে রাজত্ব করা যাবে, তাদের কী পরিণতি হয়েছে ইতিমধ্যেই আমরা দেখেছি। আগামিদিন আমাদের নেত্রী ডাক দিয়েছেন ‘৪২-এ ৪২ তৃণমূল কংগ্রেস’—শুধু কোচবিহার জিতলে হবে না, শুধু জলপাইগুড়ি জিতলে হবে না, শুধু আলিপুরদুয়ার জিতলে হবে না। ৪২-এ ৪২। তৃণমূল করবে বাজিমাত আর বিরোধীরা হবে কুপোকাৎ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্তিশালী করার শপথ আজকে আমাদের এই সভা থেকে নিতে হবে।

এর সাথে সাথে নেত্রীর ডাকে আগামী ১৯ শে জানুয়ারি ‘ব্রিগেড চলো’- সমাবেশ। সেই সমাবেশে উত্তরবঙ্গের যেকটি জেলা রয়েছে সবথেকে বেশি মানুষ সুদুর কোচবিহার থেকে কলকাতায় গিয়ে উপস্থিত হয়। ১৬ তারিখ থেকে আমাদের অস্থায়ী ক্যাম্পগুলো তৈরী হবে। আমাদের সীমাবদ্ধ ক্ষমতা, এক্তিয়ার অনুযায়ী আমাদের ব্যবস্থা থাকবে।

আমি আপনাদের আবেদন জানাবো প্রত্যেকটি বুথ থেকে আমাদের যোদ্ধারা, আমাদের সৈনিকরা, আমাদের কর্মীরা মুষ্ঠিবদ্ধ হাত আর একবুক আবে, আকাঙ্খা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রসের পতাকা নিয়ে ব্রিগেড চলো-র স্লোগান দিয়ে আগামী ১৪/১৫ তারিখ কোচবিহার ছাড়বে এবং চাক্ষুষ ব্রিগেড সমাবেশ উপলব্ধি করবে। এই ব্রিগেড থেকেই ‘বিজেপি হঠাও’-এর ডাক দিতে হবে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দৈনন্দিন জীবন তাঁর ধারাবাহিক সংগ্রাম, আন্দোলন, আদর্শকে পথ চলার পাথেয় এবং প্রেরণা করে আমরা লড়াই করবো। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী কী করল? নোটবদল, ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী কী করল? জিএসটি বা ট্যাক্স বদল, ২০১৮ সালে মানুষকে নজরবন্দি করতে আইন বদল। একাধিক সরকারি প্রতিষ্ঠান, সরকারি প্রকল্প, শহর স্টেশনের নাম বদল। আর ২০১৯-এ মানুষ মোদি বদল করবে। তার জন্য ‘ভারতীয় জনতা পার্টি’ যেন প্রস্তুত থাকে।

তাই, ‘ডাক দিয়েছে মমতা ব্রিগেড চলো জনতা’, ‘ছাত্র যুব আওয়াজ তোলো ১৯শে জানুয়ারি ব্রিগেড চলো’ ‘পায়ে পায়ে উড়িয়ে ধুলো, ১৯শে জানুয়ারি ব্রিগেড চলো, সাম্প্রদায়িক বিজেপিকে উপড়ে ফেলো, ১৯শে জানুয়ারি ব্রিগেড চলো’, ‘চৌকিদার বদলে ফেলো, ১৯শে জানুয়ারি ব্রিগেড চলো’।

নরেন্দ্র মোদি কী বলেছিল? ‘আমি চা বিক্রি করি’। আজকে ভারতবর্ষের মাটিতে এই মাদারিহাটে সভা করতে এসেছিলো। কী বলেছিল? ‘আমরা চায়ের বাগানগুলো অধিগ্রহণ করবো।’ তারপরে তার টিঁকিও খুঁজে পাওয়া যায়নি। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতি মাসে ছুটে এসে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। চাওয়ালা হয়ে, চায়ের বাগানের শ্রমিকের কষ্ট বোঝে না। আমি মনে করি যারা চা বিক্রি করে তারা সৎ উপায়ে, সচ্ছল ভাবে লড়াই করে জীবিকা নির্বাহ করে। তারা আমাদের সমাজের গর্ব। তারা আমাদের সমাজের অন্যতম বলিষ্ঠ বলদান স্তম্ভ। নরেন্দ্র মোদি তাদের অপমান করেছে। তাদের কলুষিত করেছেন। তাদের কালিমালিপ্ত করেছেন। আমরা কোনওদিন নরেন্দ্র মোদিকে কেটলি হাতে চা বিক্রি করতে দেখিনি কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্ষমতায় আসার ৭ বছর পর পায়ে ১০০ টাকার হাওয়াই চপ্পল, পরণে ৩০০ টাকার শাড়ি পড়ে টালির ছাদের ঘরের নিচে থেকে আজও ১০ কোটি মানুষের উন্নয়নের জীবনযাত্রা পর্যবেক্ষন এবং পরিচালনা করতে দেখেছি। এটাই হচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মাথায় রাখবেন ২০১৪ সালে আপনারা ৩৪টি আসনে তৃণমূলকে জিতিয়েছিলেন বলেই হাজার চেষ্টা করেও নরেন্দ্র মোদি এফআরডিআই বিল ভারতবর্ষের মাটিতে লাগু করতে পারেনি। নরেন্দ্র মোদি একাধিক জনবিরোধী প্রকল্প ভারতবর্ষে চালু করতে চেয়েও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাংসদদের চাপে করতে পারেনি। ভারতবর্ষের সংসদের বাইরে এবং ভিতরে যে ধারাবাহিক প্রতিবাদ আমরা করেছি তার কারণে করতে পারেনি। আর যদি ৪২-এ ৪২ হত তাহলে জিএসটিও হত না, নোটবন্দিও হত না।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আমাদের কী বলেছিলেন? ‘তুমি আমাকে রক্ত দাও আমি তোমাকে স্বাধীনতা দেবো’ দিল্লির বাবু অমিত শাহরা কী বলছে? ‘তুমি আমাকে গদি দাও আমি তোমাকে রক্তস্নাত বাংলা দেবো’। আর আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার মা-মাটি-মানুষকে কী বলছেন? ‘হে বাংলার বীর যোদ্ধা মা-মাটি-মানুষ তুমি আমাকে ৪২-এ ৪২ দাও আগামিদিন আমি তোমাকে প্রগতিশীল, শান্তির, ধর্মনিরপেক্ষ, উন্নত ভারতবর্ষ দেবো।’ এই হচ্ছে আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

আসুন আমরা সেই পথেই পরিচালিত হয়ে আগামিদিনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হই। বিজেপি হঠাও, দেশ বাঁচাও; লাল হঠাও, দেশ বাঁচাও; দুর্ণীতিগ্রস্ত কংগ্রেস হঠাও, দেশ বাঁচাও। ডাক দিয়েছে তৃণমূল, বিজেপি হবে নির্মূল। অনেক হয়েছে মোদি, এবার ছাড়ো গদি। তৃণমূল কংগ্রেস আসছে তেড়ে, পালাবে বিজেপি দিল্লি ছেড়ে।