ডিসেম্বর ১৩, ২০১৯
বাংলায় ক্যাব-এনআরসি হবে না: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ দীঘায় সাংবাদিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আরও একবার কেন্দ্রকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন ‘বাংলায় এনআরসি-ক্যাব কার্যকর করা হবে না।
পাশাপাশি, তিনি ক্যাব বিরোধী কর্মসূচিও ঘোষণা করেন। আগামী সোমবার (১৬ই ডিসেম্বর) কলকাতার রেড রোডে বাবাসাহেব আম্বেডকরের মূর্তির পাদদেশ থেকে গান্ধী মূর্তি হয়ে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি অবধি একটি মহামিছিল হবে। বেলা একটায় শুরু হবে এই মিছিল। অংশগ্রহণ করবেন স্বয়ং দিদি।
এরপর, মঙ্গলবার (১৭ই ডিসেম্বর) যাদবপুর ৮বি বাস স্ট্যান্ড থেকে গান্ধী মূর্তি পর্যন্ত একটি মিছিল হবে। আগামী রবিবার (১৫ই ডিসেম্বর) জেলায় জেলায় তৃণমূলের সমস্ত শাখা সংগঠন প্রতিবাদ করবেন।
তাঁর বক্তব্যের কিছু অংশঃ
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অনেক দিকে নজর রেখে সংবিধান তৈরি হয়েছিল। হঠাৎ করে একটা রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এসে গায়ের জোরে সব নিয়ম পাল্টে দিচ্ছে এটা হয় না। স্থিতিশীল পরিস্থিতি নষ্ট হচ্ছে, সাম্প্রদায়িকতার রঙ নিয়ে খেলা হচ্ছে
সরকারের কাজ সংবিধান মেনে মানুষের উন্নয়ন করা। ৫০ হাজার কোটি টাকা দেনা থাকা সত্ত্বেও আমরা মানুষের উন্নয়নে কোনরকম কার্পণ্য করিনি। দারিদ্র্যসীমা কমানোর জন্য বাংলা আজ এক নম্বরে।
নোটবন্দি, জিএসটি নিয়ে মানুষের অসুবিধা হবে আগেই বলেছিলাম। এখন গরীব মানুষ অসহায়
দেশ জুড়ে অস্থিরতা চলছে, অর্থনীতিতে কালো ছায়া নেমে এসেছে, বেকারত্ব, দারিদ্র্যতা বেড়ে গেছে
এনআরসি সিএবি একই পথে এগোচ্ছে, কেন্দ্রকে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। সব রাজ্যের আলাদা আলাদা আবেগ রয়েছে। তবু ওরা গায়ের জোরে সব কিছু চালিয়ে যাচ্ছে
এনআরসি হবে না, ক্যাব হবে না। বাংলায় আমাদের সরকার এনআরসি হবে না, ক্যাব কার্যকর করা হবে না। সকলে নাগরিক। শুধু যে বিজেপি করবে তাকে নাগরিকত্ব দেবে আর বাকিদের দেবে না?
আসামে আগুন জ্বলছে, অত্যাচার চলছে। আমি চাই জনগণ গণতান্ত্রিক কায়দায় এর প্রতিবাদ করুক। সব জায়গায় কাশ্মীর কায়দায় সকলের মুখ বন্ধ করে দেওয়া যাবে না, ৫-৬ মাস ধরে মানুষকে জেলে বন্দী করা যাবে না
জাপানের প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর বাতিল করে দিয়েছেন, এটা আমাদের দুর্ভাগ্য। আমরা ভারতীয় হিসেবে গর্বিত। এটা আমাদের অসম্মান
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আজ খারাপ হতে বসেছে। বাংলাদেশের কনভয়ে হামলা হয়েছে।মানুষ আজ চিন্তিত। দেশকে আগে ভালবাসতে হয়, দেশের মানুষকে নিয়ে চলতে হয়
এখানে রাজ্যপাল তপশিলি জাতি উপজাতির কমিশনটাই করতে দিচ্ছে না। বলছে টাকার প্রভিশন কোথায়? এটা তো সরকারের চিন্তাভাবনা, এটা লিমিটলেস ব্যাপার
আমরাও অনেক দিন বিরোধী দলে ছিলাম, কখনো কারো বিরুদ্ধে এরকম কথা বলিনি, দাঙ্গার পরিবেশ তৈরি করিনি। সব জনজাতি, বাঙালিদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে
বিজেপি সাম্প্রদায়িক লাইন অনুসরণ করলেও আমরা করব না। মাথা ঠাণ্ডা করে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই গণ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে
অবহেলিত, দুর্বল, নিপীড়িত বঞ্চিত শোষিত সব মানুষের পাশে থাকি, বাংলায় মানুষের মধ্যে কোন ভেদাভেদ নেই, এটাই বাংলার সংস্কৃতি। বাংলায় সব মানুষ ঐক্যবদ্ধ
বিজেপি হল ওয়াশিং মেশিন। ওদের কাজ কালো লোকেদের সাদা করা
মিডিয়াকেও নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে কোন কথা বলা যাবে না, পুরো পরিস্থিতিটাই অত্যাচার আর ঔদ্ধত্যের অপর দাঁড়িয়ে আছে
যেসব দল এই আন্দোলনের বিরুদ্ধে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাদের সবাইকে অভিনন্দন জানাই, আসুন সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে সারা ভারতে গণআন্দোলন গড়ে তুলি
এর জন্য ওরা আমাদের জেলে পাঠাতে পারে – আমরা সব অত্যাচার সহ্য করব কিন্তু এনআরসি সিএবি মেনে নিয়ে দেশকে খণ্ডিত হতে দেব না
আমরাও কিছু কর্মসূচী করব, কিন্তু সাম্প্রদায়িক লাইনে নয়। বিজেপির প্ল্যান বিজয় মিছিলের নাম করে দাঙ্গা লাগানো অন্য সম্প্রদায়কেও বলবো এসবে অংশ না নিতে, এটা আমার উদ্দেশ্য নয়। সব ধর্মের সব জাতির লোকেদের মানুষকে আমাদের মিছিলে স্বাগত জানালাম
বিজেপি বাংলার পাপ, ভারতের অভিশাপ। বাংলার মানুষ কখনোও বিজেপিকে ক্ষমতায় আনবে না। কোন ভয় নেই, শান্তিতে থাকুন, বিতাড়িত হয়ার কোন প্রশ্নই নেই
অসমে ওদের সরকার ছিল তাই করতে পেরেছে। এটা অপপ্রচার, এটা বিজেপির ফেকবুক, এসব দেখে ভয় পাবেন না, এসবের কোন মুল্য নেই। কোটি কোটি টাকা খরচ করে এসব করছে
৭০-৮০বছর আগের নথি মানুষ কোথায় পাবে? এসব বলার কোন মানে নেই। বিপ্লব দেব কবে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী হয়ে এসেছেন? ওনার সব নথি আছে? উনি সব ঠিক করবেন নাকি?
এর আগে অনেকে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, কিন্তু কেউ কখনো দেশ ভাঙতে চায়নি। গণজাগরন দরকার। দেশ বাঁচাতে আর একটা স্বাধীনতা আন্দোলন করতে হলে আমরা তার জন্যও প্রস্তুত