ডিসেম্বর ১৬, ২০১৯
শান্তিপূর্ণভাবে, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সিএবি ও এনআরসির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চলবেঃ দিদি

অসাংবিধানিক নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ও জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকার বিরুদ্ধে আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এক বিশাল মিছিল হয় কলকাতায়।
এই মিছিল শুরু হয় দুপুর ১টায় ডাঃ বাবা সাহেব আম্বেদকরের মূর্তির পাদদেশ থেকে। ওখানে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে আম্বেদকরের আবক্ষ মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে দিদি শপথ নেন – আমর সবাই নাগরিক। সর্বধর্ম সমন্বয় আমাদের জীবন আদর্শ। কাউকে বাংলা ছাড়তে দেব না। নিশ্চিন্তে থাকব। শান্তিতে থাকব। বাংলায় এনআরসি ও ক্যাব করতে দিচ্ছি না ও দেব না। শান্তি রাখতে হবে।
সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ হয়ে মিছিল শেষ হয় জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে।এই মিছিলের শেষে বক্তব্য রাখতে গিয়ে দিদি বলেন, বাংলায় সিএবি ও এনআরসি হবেনা। তিনি সকলকে আবেদন করেন প্রতিবাদের সময় হিংসা অবলম্বন না করতে।
তাঁর বক্তব্যের বিশেষ অংশঃ
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের প্রতিবাদ জানিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হিন্দু-মুসলমানের হাতে রাখি পরিয়ে দিয়ে “বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল” গান গেয়েছিলেন, যা চিরস্মরণীয়।
আমাদের মধ্যে কোনও ভেদাভেদ নেই। আমাদের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। ধর্ম যার যার আপনার, এই দেশটা সবার। ধর্ম যার যার আপনার, এই বাংলাটা সবার। ধর্ম যার যার আপনার, এই সংবিধানটা সবার। ধর্ম যার যার আপনার, এই মাটিটা সবার। ধর্ম যার যার আপনার, এই সম্প্রীতি ও সঙ্ঘতি সবার। “সারে জাঁহা সে আচ্ছা হিন্দুস্তান হামারা” এটাই আমার দেশ।
ভারতের স্বাধীনতা যাঁরা নিয়ে এসছিলেন, তাঁরা সংবিধান তৈরী করেছিলেন সবাইকে এক রাখার জন্য।
হঠাৎ আজ বিজেপি ক্ষমতায় এসে আকাশের থেকেও বড় বলে মনে করছে। এরা ভাবে এই দেশে বিজেপি শুধু থাকবে আর সবাইকে তাড়ানো হবে। এটাই ওদের রাজনীতি।
হিন্দুস্থান আমাদের। যদি সবাই একসাথে না থাকে তাহলে সবকা বিকাশ কি করে হবে?
কাদের জন্য ক্যাব? আমরা কি ভোট দিই নি? আপনাদের কি ভোটার লিস্টে নাম নেই? আপনি কি ভোট দেন নি? আপনার কি রেশন কার্ড, ঘরবাড়ি নেই? মনে রাখবেন আমরা সবাই নাগরিক।
কে ওরা যে ঠিক করে দেবে কে নাগরিক আর কে নাগরিক নয়? আমি হিংসা পছন্দ করিনা।
বিজেপির উদ্দেশ্য হিন্দু-মুসলীম দাঙ্গার মাধ্যমে লাভের রাস্তা বের করা। কেউ কেউ আছে টাকার বিনিময়ে বিজেপির সাথে হাত মিলিয়ে আগুন জ্বালাচ্ছে। আমরা এটা সমর্থন করি না।
গণতন্ত্রে এগিয়ে যাওয়ার জন্য শান্তিতে কাজ করতে হবে, আর শান্তিতে কাজ করতে হলে রাস্তায় আমাদের রাস্তা দেখাবে। মানুষই বড় তার থেকে বড় কেউ নয়।
আজ সব ধর্মের মানুষ এখানে সমবেত হয়েছেন। আমরা চাই কোনও মুসলিম বিপদে পড়লে হিন্দুরা ওদের সাহায্য করবে। আর বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা বিপদে পড়লে হিন্দুরা ওদের সাহায্য করবে, আর খ্রীষ্টানরা বিপদে পড়লে হিন্দুরা ওদের সাহায্য করবে। সবাইকে সাহায্য করাই আমাদের কর্তব্য।
বিহার, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, দিল্লী, আসাম, নর্থ ইস্ট আমাদের বন্ধু। পুরো দেশ বন্ধুত্ব, সম্প্রীতি, শান্তিতে কাজ করুক এটাই আমরা চাই।
সবাইকে অনুরোধ করব কেউ দয়া করে ট্রেনে আগুন জ্বালাবেন না। বেশিরভাগ ট্রেন ভারত সরকার বন্ধ করে দিয়েছে। এরজন্য সাধারণ মানুষ ভুক্তভোগী হচ্ছে। তাই বার বার বলছি পোষ্ট অফিসে আগুন দেবেন না। রাস্তা অবরোধ করবেন না। এতে সাধারণ মানুষের অসুবিধে হয়। শান্তিতে কাজ করতে হবে। গনতান্ত্রিক পদ্ধুতিতে কাজ করতে হবে। ক্যাব আর এনআরসি যতদিন প্রত্যাহার না হবে ততদিন আমরা রাস্তায় আন্দোলন চালিয়ে যাব।
আমার উপর ভরসা থাকে তবে জেনে রাখুন ক্যাব করতে হলে আমার মৃত দেহের উপর দিয়ে ওদের ক্যাব আর এনআরসি করতে হবে, তা না হলে করা যাবে না। আমরা সম্মান ও সততার জন্য লড়াই করি, বিজেপির কাছে কোনোদিন আত্মসমর্পন করব না।
সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে একটা বিল পাশ করিয়ে দিলে আইন হয়ে যায় যদি, তবে যেকোনও দল ক্ষমতায় আসতে পারে, যে কেউ আইন বানাতে পারে, কিন্তু যদি সেই আইনটা বেআইনি হয়, অসাংবিধানিক হয় সেটা মানা যায় না।
এনআরসির বিরুদ্ধে আমি এর আগে একা প্রতিবাদ করেছিলাম। আর এখন পাঞ্জাব, মধ্যপ্রদেশ, কেরালা, দিল্লীসহ সব রাজ্য ক্যাব আর এনআরসির বিরোধিতা করছে। আস্তে আস্তে সব রাজ্যকেই বলতে হবে। আন্দোলন যদি সঠিক হয়, আর সেই আন্দোলনের মধ্যে যদি স্বচ্ছতা আর সততা থাকে।
এই লড়াই কোনও একটা ধর্ম বা বর্ণ বা জাতির নয়। এই লড়াই দেশমাতৃকা, মানবিকতা, সভ্যতা, সংস্কৃতি, সর্বধর্ম সমন্বয়ের লড়াই।
পড়ুয়াদের ওপর অত্যাচারের তীব্র নিন্দা করছি।
কয়েকজন নেতা বলছেন- ‘এখানে রাষ্ট্রপতি শাসন কেন হবে না? সিআইএসএফ, আর্মি, বিএসএফ পাঠাব।’ এদের প্ররোচনায় পা দেবেন না।
কয়েকটা লোক চায় না আপনাদের আন্দোলনে আপনারা জিতুন। তারা আগুন লাগিয়ে লোককে ক্ষেপিয়ে দেবে আর দ্বিতীয়ত ওরাই আবার বলেবে যাও আর্মি নিয়ে এসো। আর আসাম দিল্লীর মতন গুলি চালিয়ে মারবে। আমাদের আস্থা আছে পুলিশের উপর ওদের সহযোগিতা করুন। কেউ গন্ডগোলে যেতে চাইলে পুলিশকে আগাম খবর দিন।
বাংলাকে দখল করার জন্য ওদের প্ল্যান আমরা ভেস্তে দেব। গণ আন্দোলন করুন। মিছিল করুন। গণ সাক্ষর করুন। দরকার পড়লে কালো কাপড় কিনে সবাই সই করুন। রক্ত দিয়ে নাম লিখুন। সবাই রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি পাঠান। লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি চিঠি পাঠান। বার বার করে রাজ্যপালের কাছে যান। বলুন আমাদের সময় দিন আমরা বলতে চাই। আমরা নাগরিক কেন আমাদের অধিকার খর্ব হবে?
বিজেপির থেকেও বিজেপির দালালরা আরও বেশী খারাপ।
বাজারে আগুন দাম। সব জিনিসের দাম আকাশ ছোঁয়া। বিজেপি পড়ে আছে ভাগাভাগি করতে।
সবাই দেশদ্রোহী আর শুধু ওরাই দেশপ্রেমিক? অদ্ভুত ব্যাপার। এভাবে দেশ চালানো যায় না।