সাম্প্রতিক খবর

ডিসেম্বর ১১, ২০১৯

আপনারা আমাদের ব্যবসা দিন আমরা আপনাদের হাসিমুখে সাহায্য করবঃ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আপনারা আমাদের ব্যবসা দিন আমরা আপনাদের হাসিমুখে সাহায্য করবঃ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ দীঘায় বাণিজ্য কনক্লেভের সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি তাঁর উদ্বোধনী বক্তৃতায় বলেন, কলকাতায় একটি বিশাল কনভেনশন সেন্টার তৈরি করা হয়েছে। বিশ্বের এক অন্যতম বৃহৎ কনভেনশন সেন্টার এটি। দীঘা কলকাতা থেকেও দুরে হলেও সড়ক পথে যুক্ত। এখানে পর্যটন শিল্প আছে। তাই, আমরা ঠিক করলাম এখানে বাণিজ্য কনক্লেভ করার। এই কনভেনশন সেন্টারের সঙ্গে হোটেলও আছে যেখানে ৭০টি ঘর আছে। এই কনভেনশন সেন্টারে যেকোনো বাণিজ্যিক সংস্থা তাদের মিটিং, সম্মেলন আয়োজন করতে পারে।

তিনি বলেন, আমাদের সরকার গত আট বছরে দীঘার যা উন্নতি করেছে, তা দেখে সকলে খুশী। কিছুদিনের মধ্যেই এখানে মেরিন ড্রাইভ তৈরি হচ্ছে। দুটি সেতু তৈরি হয়ে গেছে। এই কনভেনশন সেন্টার উড়িষ্যার একদম পাশে। আমরা সকলেই পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের কথা জানি। আমরা এখানেও মাসীর বাড়ি মন্দির তৈরি করছি। তাজপুরে বন্দর তৈরী করা হচ্ছে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০টি দেশের পাশাপাশি রাষ্ট্রসঙ্ঘের দল, বিশ্বব্যাঙ্কের প্রতিনিধি দল এখানে উপস্থিত। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক আমাদের একটি প্রকল্প করতে ১৫ কোটি দিয়েছে। শিল্প অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল। এই মুহূর্তে অর্থনীতি খুব গুরুত্বপূর্ণ।

দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বিষয়ে বলেন, আমাদের রাজ্য ৩৪ বছরের বাম অপশাসন কাটিয়ে মাত্র আট বছরে এই জায়গায় এসে পৌঁছেছি। এবার আমাদের দেশের জিডিপি বৃদ্ধি দেখুন, ২০১৬-১৭ সালের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ৮.৮৭ শতাংশ। ২০১৯-২০ সালের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে জিডিপি বৃদ্ধির হার হয়েছে ৪.৫৫ শতাংশ। এই বৃদ্ধির হার খুব খারাপ। দেশের শিল্পের বৃদ্ধিও কমেছে। ২০১৫-১৬ সালে এই হার ছিল ৯.৫৮ শতাংশ, ২০১৮-১৯ সালে তা কমে হয় ৬.৮৬ শতাংশ। উৎপাদন শিল্পের বৃদ্ধির হার ২০১৫-১৬ সালে ছিল ১৩.০৬ শতাংশ যা ২০১৮-১৯ সালে কমে হয়েছে ৬.৯৪ শতাংশ। শিল্প বৃদ্ধির হারের সূচকও নেমে গেছে বর্তমানে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যা ছিল ৪.৬৩ শতাংশ তা এখন কমে হয়েছে -৪.২৭ শতাংশ। বিদেশী বিনিয়োগ কমেছে। ২০১৪-১৫ সালে যা ছিল ২২ শতাংশ সেটা ২০১৫-১৬ সালে বেড়ে হয় ৩৫ শতাংশ। এই বিনিয়োগ ২০১৮-১৯ সালে কমে হয়েছে ১ শতাংশ। বেকারত্বের হার ৪৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর পাশাপাশি বাংলায় বেকারত্ব কমেছে ৪৪ শতাংশ।

সম্মেলনে আগত বিনিয়োগকারীদের তিনি বলেন, আপনারা কেন বাংলায় বিনিয়োগ করবেন? আমি আপনাদের সামনে তা তুলে ধরব। ২০১৮-১৯ সালে শিল্পের উৎপাদন ছিল ৩০.৬ শতাংশ। এ রাজ্যে দারিদ্য সব থেকে বেশী কমেছে। নানারকম সামাজিক প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যে দারিদ্র্য কমেছে ৬ শতাংশ। আমরা সকলে মিলে এই সাফল্য আনতে সক্ষম হয়েছি। রাজ্যে পরিকল্পিত ব্যয় বেড়েছে ছগুণ। সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যয় বেড়েছে সাড়ে চার গুণ। ফিজিক্যাল পরিকাঠামোতে ব্যয় বেড়েছে পাঁচ গুণ।

বাংলার বিভিন্ন সাফল্যের পরিসংখ্যান তুলে তিনি বলেন, ব্যাবসার সহজীকরণে দেশের মধ্যে সেরা বাংলা। ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পে ঋণ প্রদানে আমাদের রাজ্য দেশের সেরা। গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা, গ্রামীণ আবাসনে আমরা দেশের সেরা। ১০০ দিনের কাজে আমরা দেশের সেরা রাজ্য। আমরা চাই আপনারা বাংলায় বিনিয়োগ করুন। আপনারা ঠিক করুন আপনারা কোন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে চান। আমাদের রাজ্যের মানুষ কাজ পাবে। আমরা শুধু এ রাজ্যে বাস করি বলেই রাজ্যকে নিয়ে গর্ব করিনা। বাংলা হল বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান ও উত্তর-পূর্বের দেশগুলির প্রবেশদ্বার। বাংলায় বাণিজ্যের অনেক সম্ভবনা আছে। বাংলায় সমুদ্র আছে, পাহাড় আছে, বনভূমি আছে। বাংলার সৌন্দর্য বৈচিত্র্যময়।

বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের কুৎসার বিরুদ্ধে তিনি বলেন, কেউ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কিছু বলতেই পারে। কিন্তু, এই খতিয়ানকে কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। শিল্পের উন্নয়নে দেশের মধ্যে বাংলা উল্লেখযোগ্য।

আমরা ভাগাভাগির রাজনীতি করিনা। আমরা কোনও জাতির, ধর্মের বিরুদ্ধে কোনও বিদ্বেষমূলক কথা বলিনা। আমরা একতায় বিশ্বাস করি। বাংলায় কেউ বলতে পারেনা তারা তাদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত। বাংলা সকলকে নিয়ে বাস করে। শুধু আজ না, বাংলা সবসময় দেশের সামাজিক কারণে দেশের পাশে দাঁড়ায়।

তিনি আরও বলেন, ১৩ লক্ষের বেশী মানুষ এখন পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত। যুবরা কাজ পাচ্ছে। বাংলায় হোটেল শিল্পে বিনিয়োগ হয়েছে ৩৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। প্রতি বছর ১৬ লক্ষ পর্যটক আসে বাংলায়। এর পাশাপাশি ৮ কোটি দেশীয় পর্যটক আসেন বাংলায়। বাংলায় বিমানবন্দর বেড়েছে ১৭৮ শতাংশ, আন্তর্জাতিক যাত্রী বেড়েছে ১৩৫ শতাংশ। বাগডোগ্রায় বেড়েছে সবথেকে বেশী।

বাংলার উন্নয়নের আরেক খতিয়ান তুলে ধরে তিনি বলেন, গত আট বছরে রাজ্যে ৩০০ পলিটেকনিক ও আইটিআই কলেজ হয়েছে। আমাদের জমির ব্যাঙ্ক আছে। জমি নীতিও আছে রাজ্যের। আমাদের এখানে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পও আছে, চা শিল্পও আছে। আমাদের রাজ্যের পড়ুয়ারা প্রতিভাবান। আমি আপনাদের বাংলায় বিনিয়োগ করতে অনুরোধ করব। সরকার আপনাদের সব বিষয়ে সহযোগিতা করবে। সিলিকন ভ্যালিকে ২০০ একর জমি দেওয়া হয়েছে। আমাদের পরিবহণ ক্ষেত্রের অনেক সম্ভবনা আছে। একদিন বাংলা বিশ্বসেরা হবেই।

আকাশপথের যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, রাজ্যে এই মুহূর্তে ২৬টি হেলিপ্যাড আছে। ইউকের অতিথিদের অনুরোধ করব এখানে সরাসরি বিমান দিতে। আমরা জ্বালানীতেও ভর্তুকি দিচ্ছি। বালুরঘাট, মালদা, কোচবিহারে বিমানবন্দর তৈরী হচ্ছে। দুর্গাপুরের বিমানবন্দরের কাজ প্রায় শেষ। এখানে অনেক ক্ষেত্রেই আপনারা বিনিয়োগ করতে পারেন। আপনারা আমাদের আতিথেয়তা ও বন্ধুত্ব বুঝতে পারবেন। বাংলা সংস্কৃতির রাজধানী। আপনারা আমাদের ব্যাবসা দিন আমরা আপনাদের হাসিমুখে সাহায্য করব। আমার দেশ আপনার দেশ।

সকলকে আসন্ন বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানিয়ে তিনি বলেন, নতুন বছরের ১৫-১৬ই জানুয়ারী কলকাতায় আবার আপনাদের সঙ্গে দেখা হবে। সকলকে আমন্ত্রণ জানালাম।