ডিসেম্বর ৩০, ২০১৯
দেশের স্বাধীনতা বিপদের মুখে দাঁড়িয়েঃ পুরুলিয়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

কেন্দ্রীয় সরকারের অগণতান্ত্রিক, অমানবিক এবং অসাংবিধানিক সিএএ ও এনআরসির বিরুদ্ধে প্রথম দিন থেকে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশে তাঁর দল সারা বাংলার ব্লকে ব্লকে একাধিক পথসভা ও মিছিল করেছে সাধারণ মানুষের নাগরিকত্ব রক্ষার দাবীতে। তিনি নিজেও কলকাতায় বেশ কয়েকটি মিছিলের নেতৃত্ব দেন। আজ তিনি মিছিল করেন পুরুলিয়াতে। সেখানে তিনি এই সর্বনাশা আইনের বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে সমস্ত মানুষকে এক হওয়ার নির্দেশ দেন।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের কিছু অংশঃ
উত্তরপ্রদেশে নিহত পরিবারের সাথে দেখা করতে আমরা প্রতিনিধি দলকে লখনউ পাঠিয়ে ছিলাম কিন্তু বিজেপি তাদের আটকে দেয়। অথচ কলকাতায় বিজেপি মিটিং করে চলে যাচ্ছে তাতে কোনও বাধা নেই। গণতন্ত্র এটাই
নাগরিক আইনের প্রতিবাদে আন্দোলন করতে গিয়ে উত্তরপ্রদেশে ২৩ জন ও কর্ণাটকেও ২ জনের মৃত্যু হয়েছে
বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী বলেছিল যারা মারা গেছেন তাদের পরিবারকে কোনও সাহায্য করা হবে না কারণ ওরা আন্দোলন করেছে ওরা সব ক্রিমিনাল। আমরা এর নিন্দা করছি। আমাদের দলের তরফে নাদিমুল হক ও দীনেশ ত্রিবেদিকে পাঠিয়ে নিহত পরিবারগুলোকে ৫ লক্ষ টাকা দিয়ে আমরা সাহায্য করেছি
সারা ভারতবর্ষে যারা আন্দোলন করছেন তাদেরকে আমরা সলিডারিটি জানাচ্ছি। এই আন্দোলন গনণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলন, মানুষের ঠিকানা ও আশ্রয় রক্ষার আন্দোলন
আদিবাসী ও সংখ্যালঘু ভাইবোনেরা চিন্তায় আছে তাদেরকে এই দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে বলে। আসামে এনআরসির নামে ১৪ লক্ষ বাঙালি হিন্দুর নাম বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এনআরসির নাম করে সারা ভারতের মানুষদের বিতাড়িত করার ষড়যন্ত্র চলছে।
আইনজীবি, বুদ্ধিজীবি, শিক্ষাবিদ, কৃষক-শ্রমিক, তপশিলী, আদিবাসী, সমস্ত ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সকলে জোট বাঁধুন, তৈরি হন। বিজেপিকে একা করে দিন।
ভারতে যারা অন্যকাউকে তাড়াতে চায় তাদের জায়গা ভারতে নেই। ভারতে মিলেমিশে থাকা আমাদের অধিকার। কাউকে তাড়িয়ে দেওয়ার অধিকার বিজেপির নেই।
আমাদের আন্দোলন চলছে চলবে। সকল সম্প্রদায়ের মানুষ আমরা একসাথে থাকব, একসাথে কাজ করব, একসাথে লড়াই করব। দিল্লী, উত্তরপ্রদেশ, কর্ণাটক, চেন্নাই, বিহার, রাজস্থান, ছত্রিশগড়, কেরালা সহ সব জায়গায় আন্দোলন চলছে
গোটা ছাত্র সমাজ এই আন্দোলনের সাথে যুক্ত। ওদেরকেও ভয় দেখানো হচ্ছে। ১৮ বছর হলে ছাত্ররা ভোট দিতে পারে, কিন্তু তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারেনা ? এটা কি রকম গণতন্ত্র? আজ ওরা দেশের গণতন্ত্রকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে। কারোর জীবনের নিরাপত্তা নেই। যে কোনদিন সবাইকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেবে
সকলের কাছে অনুরোধ আপনারা ভোটার তালিকায় ঠিক করে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করুন। ভোটার লিস্টের অনেক জায়গায় ভুল থাকে, ভালো করে মিলিয়ে নিন
আমরা কথা দিচ্ছি একজন মানুষকেও দেশ থেকে বিতাড়িত হতে দেব না। কেন্দ্র আইন বানায় কিন্তু আইন কার্যকর করে রাজ্য।
গুজরাট, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, কর্ণাটক ছাড়া আর কোথাও বিজেপি নেই। এর পরে ওদের দূরবীন দিয়ে দেখতে হবে
জামিয়া মিলিয়া, আইআইটির ছাত্রদের ভয় দেখানো হচ্ছে, হোস্টেল বন্ধ করে দিয়েছে। ছাত্র সম্প্রদায় তাদের আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমরা তাদের সম্পূর্ণ সাহায্য করব
ভারতে ১৩০ কোটি নাগরিকের মধ্যে যদি ১ হাজার লোকের নাগরিকত্ব দেওয়া হয় তাহলে বাকিরা কি করবে? আমরা সবাই নাগরিক। আজ স্বাধীনতার পরেও সবাইকে ভাবতে হচ্ছে আমরা নাগরিক কিনা এর থেকে লজ্জার কিছু নেই
স্বাধীনতার পরে অনেকে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তাদেরকে যারা ভোট দিয়েছে তাদেরকে আজ বিজেপি ভাগিয়ে দিচ্ছে। এই ভাবে সরকার চলতে পারে না