ডিসেম্বর ২৪, ২০১৯
বিজেপি দেশভাগ করতে চাইছে: দিদি

অসাংবিধানিক নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ও জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকার বিরুদ্ধে আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এক বিশাল মিছিল হয় কলকাতায়।
এই মিছিল শুরু হয় দুপুর ১টায় বিধান সরণিতে স্বামী বিবেকানন্দের বাড়ির কাছ থেকে। সেখানে দাঁড়িয়ে দিদি শপথ নেন – আমর সবাই নাগরিক। সর্বধর্ম সমন্বয় আমাদের জীবন আদর্শ। কাউকে বাংলা ছাড়তে দেব না। নিশ্চিন্তে থাকব। শান্তিতে থাকব। বাংলায় এনআরসি ও ক্যাব করতে দিচ্ছি না ও দেব না। শান্তি রাখতে হবে।
মিছিল শেষ হয় বেলেঘাটার গান্ধী ভবনে।এই মিছিলের শুরুতে এবং শেষে বক্তব্য রাখতে গিয়ে দিদি বলেন, বাংলায় সিএবি ও এনআরসি হবেনা।
দিদির বক্তব্যের কিছু অংশ:
সমস্ত ধর্মের মানুষ, সমস্ত জীবিকার মানুষ, ছাত্র-ছাত্রীরা এই আন্দোলনে যোগদান করেছেন।
বিজেপি পার্টি এটাকে হিন্দু-মুসলমানের আন্দোলন করতে চায়। আর আমরা এটাকে হিন্দুস্তানের আন্দোলন করতে চাই।
এই আন্দোলন কোনও ধর্মীয় আন্দোলন নয়, এই আন্দোলন সারা পৃথিবীর মুক্তিকামী মানুষের আন্দোলন। এই আন্দোলন ভারতবর্ষের মানুষের গনতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার আন্দোলন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পার্লামেন্টে বলেছেন ভারতবর্ষে ক্যাব হবে এনআরসি হবেই। আর প্রধানমন্ত্রী বলছেন আমরা বলিনি। কে সত্যি কথা বলছেন?
কালকে ঝাড়খন্ডের মানুষ যোগ্য জবাব দিয়েছেন। ঝাড়-খন্ড বিজেপি হয়েছে লন্ডভন্ড।
ওরা মতুয়াদের অসম্মান করছে। মতুয়ারা সকলে ইতিমধ্যেই এদেশের নাগরিক। কেন তারা আবার নাগরিকত্বের জন্য রাস্তায় দাঁড়াতে যাবে?
মতুয়া ডেভেলপমেন্ট বোর্ড তৈরি করেছি। বড়মার ৩০ বছর চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছিলাম। হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ ঠাকুরের নামে মতুয়া বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করেছি। মতুয়া কলেজ তৈরি করেছি।
মতুয়ারা সকলে এদেশের নাগরিক। কোনও মতুয়া চায় না আবার রাস্তায় দাঁড়িয়ে ৫বছরের জন্য আবার বিদেশী হয়ে যেতে। তারাতো ইতিমধ্যেই নাগরিক। কেন মতুয়াদের অসম্মান করছেন? কেন হিন্দুদের অসম্মান করছেন?
উত্তরপ্রদেশে অনেকে পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন। লক্ষ্নৌতে আমরা দলের একটা টিম পাঠিয়েছিলাম। সেই টিমে দীনেশ ত্রিবেদি, নাদিম, আর প্রতিমা মন্ডল ছিলেন। এয়ারপোর্ট থেকে ওরা নামতেই দিল না। আর এখানে মিছিল করতে দিল্লী থেকে এসে এখানে আমাকে গাল দিয়ে চলে যাচ্ছে। একসেকেন্ডে আমরা আটকে দিতে পারতাম কিন্তু দিই নি। এটাই বাংলার গনতন্ত্র।
দিল্লী, কর্ণাটক, ইউপি জ্বলছে। সেখানে বিজেপি পুলিশদের কন্ট্রোল করছেন । আমাদের এখানে আমরা এসব করতে দিই না। আগে দিল্লী সামলা তারপরে ভাবিস বাংলা।
ওরা সব জায়গায় তীর্থস্থান করছে স্বামীবিবেকান্দের বাড়িটা বাদ দিল কেন?
দক্ষিণেশ্বর স্কাইওয়াক আমরা করেছি। ওরা একটাও পয়সা দেয়নি।
আমরা বহু তীর্থস্থানের উন্নতি করেছি। কালীঘাটের স্কাইওয়াক আমরা করছি।
আমরা সব ধর্মকে সম্মান করি, ভারতবর্ষ সব ধর্মের মানুষের জন্য। ওরা ভাগ করার চেষ্টা চলছে। এটা আমরা করতে দেব না।
আমরা মানুষের গনতান্ত্রিক অধিকারের দাবিতে লড়াই করি। আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলবে।
আমরা ধর্ম বা জাতির ভিত্তিতে বাংলা বা দেশ ভাগ হতে দেব না। এই বাংলা আমাদের জন্মভূমি। আমরা এখানে সবাই শান্তিতে ঐক্যবদ্ধভাবে বাস করব।
স্বাধীনতার ৭৩ বছর পর ওরা আবার সবাইকে লাইনে দাঁড় করাবে। ওরা মানুষের অধিকার কেড়ে নিতে চায়।
বাংলায় এন আর সি হবে না। অসমে ডিটেনশন ক্যাম্প করেছে বিজেপি সরকার। বাংলায় কোনও ডিটেনশন ক্যাম্প নেই। আর হবেও না।
উদ্বাস্তুদের জমির দলিল আমি করেদিয়েছি। বিজেপি তাদের রেল-এর জমির উদ্বাস্তুদের স্বীকৃতি দেয়নি।
ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এর জন্য, টেলিফোনের জন্য, নাগরিকত্ব প্রমাণে আধারকার্ড, প্যানকার্ড-এর কথা ওরা বলেছিল। আর এখন বলছে এসবে হবে না।
জনগণ শান্তি চায়। হিংসা চায় না। বিজেপিকে কেউ চায় না।
সব জাতির মানুষ সব রকম পোষাক পরেন। পোষাক দেখে সব চেনা যায়!– ভাষা দেখে চেনা যায় না?