সাম্প্রতিক খবর

ডিসেম্বর ১৭, ২০১৯

'পোশাকে বিক্ষোভকারীর পরিচয় ঠিক হয় না', মোদীকে তীব্র তোপ মমতার

'পোশাকে বিক্ষোভকারীর পরিচয় ঠিক হয় না', মোদীকে তীব্র তোপ মমতার

তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ এনআরসি ও ক্যাবের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় মিছিলের নেতৃত্ব দেন। আজকের মিছিল যাদবপুর ৮বি বাস স্ট্যান্ডে শুরু হয়ে ভবানীপুরের যদুবাবুর বাজারে শেষ হয়। আজকের মিছিল শুরু হয় মহিলাদের শঙ্খনাদের মাধ্যমে। মিছিলের আগে তৃণমূল নেত্রী সকলকে আবেদন জানান সকলকে শপথ নিতে- ‘আমরা সবাই নাগরিক’। সর্ব ধর্ম সমন্বয় আমাদের জীবন ও আদর্শ। কাউকে বাংলা ছাড়তে দেব না। নিশ্চিন্তে থাকব, শান্তিতে থাকব। বাংলায় এনআরসি ও ক্যাব হতে দিচ্ছিনা ও দেব না। দেশ ভাগ হতে দিচ্ছি না, দেব না। আমরা ঐক্যবদ্ধ ভারত চাই।

তাঁর বক্তব্যের কিছু অংশঃ

যখন সারা আকাশ অন্ধকার হয়ে থাকে তখন মানুষ একটু আলো দেখার চেষ্টা করে। যখন দেশের গণতন্ত্র, দেশের সংবিধান বিপন্ন হয়ে পড়ে তখন রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করতে হয়।

মিছিল শান্তিপূর্ণভাবে করব। সবাইকে শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালনা করার আহ্বান জানাচ্ছি। সবার কাছে আবেদন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখবেন, কোনও হিংসাত্মক কাজ করবেন না। রেল, রাস্তা বন্ধ করব না।

আমাদের স্লোগানঃ- ক্যাব মানছি না মানব না, এনআরসি মানছি না মানব না, ক্যাব এনআরসি বাতিল করো, দেশের উপর জোর জুলুম চলবে না, দেশের মধ্যে বিভাজন চলবে না, বাংলা ভাগ চলবে না।

ভারতের স্বাধীনতা লাভ হয়েছে ১৯৪৭সালে। তার ৭২ বছর পর আমাদের নতুন করে পরীক্ষা দিতে হবে? আমরা এদেশের নাগরিক না নাগরিক নই! আজকে নতুন করে ক্যারেকটার সার্টিফিকেট দিতে হবে ধর্ম বর্ণ জন্মের পরিচয় দিতে হবে। না এটা আমাদের কর্ম নয়। আমাদের পরিচয় মনুষ্যত্ব, আমাদের পরিচয় মানবিকতা। মানবিকতার পরিচয় সভ্যতা, সভ্যতার পরিচয় সংস্কৃতি।

খুব কায়দা করে নির্বাচনে জিতে ওরা ভাবছে দেশটাকে দখল করে নিলাম। কেউ ক্ষমতায় আসে চলে চায়। একটা বিল সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে পাশ করানো যায় কিন্তু মানুষের সমর্থন যেটাতে থাকেনা সেটা কার্যকরী হয়না। সংবিধান মেনে তবেই করতে হয়, সংবিধান ওরা মানে নি।

গণতান্ত্রিক, সার্বভৌমত্ব, ধর্মনিরপেক্ষ আমাদের দেশ। সংবিধানের খসড়া কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন ডঃ বাবা সাহেব আম্বেদকর। আমাদের মনিষীরা গান্ধীজি হোক বা নেতাজী, রাজেন্দ্রপ্রসাদ, রবীন্দ্রনাথ বা নজরুল হোক সবাই ঐক্যবদ্ধ ভারতের কথা বলছেন।

দুপুরবেলা বিল এনে মধ্যরাতে পাশ! গায়ের জোরে ঔদ্ধত্বের জোরে সবকিছু হয়না। এই আন্দোলন জয় লাভ করবে, সেই জন্য শান্তি রক্ষা করতে হবে। শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রেখে গনতান্ত্রিক চরিত্রে রূপ দিলেই তবে এই আন্দোলন জয়লাভ করবে।

লোকসভায় কাউকে জানানোই হয়নি কবে বিল আনা হবে, রাজ্যসভায় আমাদের সাংসদরা প্রস্তুত ছিল।

১৯০৫ সালে ডিভাইড অ্যান্ড রুল পলিসির বিরুদ্ধে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথকে ডান্ডা নিয়ে মাঠে নামতে হয়নি, একটা রাখি নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্যে বলেছিলেন বাংলা ভাগ হবে না, হবে না, হবে না। রবীন্দ্রনাথের পথ অবলম্বন করবেন, দরকার হলে এলাকায় এলাকায় রাখি বন্ধন করবেন। দরকার হলে এলাকায় এলাকায় সংস্কৃতির জাগরণের প্রোগ্রাম করবেন।

দেশে ব্যার্থতার ঝড় আসলে ডিমোনিটাইজেশন, ইউপি ইলেকসনের জন্য নোটবন্দী। তারপর লোকসভায় জেতার জন্য কি বন্দী, কি ফন্দি ছিল সেটা আপনারা জানেন।

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বলছে ১লাখের বেশী টাকা দিতে পারব না। আপনার প্রয়োজনেও টাকা তুলতে পারবেন না। আপনি কোথায় যাবেন? ঘরে রাখলে নোটবন্দী আর ব্যাঙ্কে রাখলে তুলে নেওয়া ফন্দি। ব্যাঙ্কে রাখলে ঝুট বন্দি।

৫০ বছর আগের জন্মের সার্টিফিকেট দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। ছোট্টবেলা থেকে এখানে বড় হয়ে এখানে জন্মে, ৭বার এমপি, ২বার এমএলএ হয়ে রাস্তায় মার খেয়ে, এখন আমি পরিচয় দেব এখানকার নাগরিক কি নাগরিক নয়।

নাগরিকদের কথা মানা হচ্ছে না। অধিকারের সীমা পরিসীমা সব হারিয়ে যাচ্ছে। তখন আমরা যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি তাদের একটাই পথ রাস্তায় নামা। রাস্তাই আমাদের পথ দেখাবে।

বাংলায় হৃদয়ে হৃদয় মিলিয়ে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে থাকি। আমরা এখানে ভাগাভাগি করি না। আমরা সবাই সবাইকে ভালোবাসি। এই ভালোবাসাই আমাদের ধর্ম, মানবিকতা। ভালোবাসাই আমাদের সভ্যতা, শিক্ষা, সম্প্রীতি, সংস্কৃতি।

নির্বাচনের সময় বলেছিল সবকা বিকাশ, সবকা সাথ। বাংলায় যদি বলে বিহারি হঠাও, বিহারি গিয়ে যদি বলে বাঙালি হঠাও, হিন্দুস্তানে যদি বলে মুসলীম হঠাও, পাঞ্জাবে গিয়ে যদি বলে বিহারি হঠাও, রাজস্থানে গিয়ে যদি বলে মাড়োয়ারি হঠাও তাহলে কি হবে?

রোটি কাপড়া মকান, এটাই আমাদের বাসস্থান আমাদের হিন্দুস্থান। রোটি কাপড়া মকান কিছু নেই। শুধু ডিভাইড অ্যান্ড রুল পলিসি। মানুষকে ভয় দেখাচ্ছে ভাত দিচ্ছে না। পিঁয়াজের দাম ২০০ টাকা, আলুর দাম কতো? এখন সিএবি বাজারে বিক্রি করছে। এরপর এনআরসি বাজারে বিক্রি করবে। এরপরে হিন্দুত্ব বিক্রি করবে। এরপর মুসলীমত্ব বিক্রি করবে। কখনও শিখকে তাড়াবে, কখনও বাঙালিকে তাড়াবে।

কেউ না শুনলেই অত্যাচার করা হচ্ছে। জামিয়া ইউনিভার্সিটিতে আপনারা সেটা দেখেছেন।

সাবধান থাকবেন বিজেপি এই আন্দোলন ভাঙার জন্য নানা ছলনা চালাতে পারে, চক্রান্ত চালাতে পারে। লোক ঢুকিয়ে আগুন জ্বালিয়ে পালাতে পারে, যে করবে তাকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেবেন।

আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য শান্তি ও সম্প্রীতি নিয়ে আন্দোলন করা। আজকে মানবিকতার উপর যে অত্যাচার হচ্ছে তার বিরুদ্ধে আমদের আন্দোলন।

আবার বলি নো সিএবি, নো এনআরসি। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের সবাই নিজের মতো ব্যাজ তৈরী করে নো সিএবি, নো এনআরসি প্রচার করুন।

দূর পাল্লার সব ট্রেন বন্ধ করে দিয়েছে। রেল পুলিশের দায়িত্ব রেল রক্ষা করা এটা তোমাদের দায়িত্ব, আমাদের দায়িত্ব নয়। ইতিমধ্যেই প্রায় ৬০০-৭০০ লোক গ্রেফতার হয়েছে যারা আগুন জ্বালিয়েছিল, যারা বিভিন্ন হিংসাত্বক কাজ করেছিল।

দিল্লী, পাঞ্জাব, ছত্রিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী বলেদিয়েছেন আমরা এনআরসি, ক্যাব করব না। আসতে আসতে বিজেপি শাসিত রাজ্যেও সব মুখ্যমন্ত্রী বলবেন এনআরসি, ক্যাব করব না।

আসামে একটা চুক্তি হয়েছিল আজ থেকে ৩০ বছর আগে। হিন্দুদের বাদ দেব না বলে ১৩ লক্ষ হিন্দুদের বাদ দিয়েছে। ওখানে প্রায় ১০০ জনের উপর লোক আত্মহত্যা করেছে। বাংলায় এনআরসি-র ভয়ে ৩০জন মানুষ আত্মহত্যা করেছে। এর দায় কে নেবে?