সাম্প্রতিক খবর

ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৯

মাথায় ফেট্টি বাঁধলেই হিন্দু হওয়া যায় না: মুখ্যমন্ত্রী

মাথায় ফেট্টি বাঁধলেই হিন্দু হওয়া যায় না: মুখ্যমন্ত্রী

আজ তারকেশ্বরে এক পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠান করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তিনি বিভিন্ন প্রকল্পের সূচনা, পরিষেবা প্রদানের পাশাপাশি হুগলীতে আলো হাবের উদ্বোধন করেন। তাছাড়া তিনি গ্রীন ইউনিভার্সিটির উদ্বোধন এবং মাটি উৎসবের সূচনা করেন।

বিজেপির সাম্প্রদায়িক ও দাঙ্গার রাজনীতির বিরুদ্ধে বরাবর সোচ্চার হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সম্প্রতি কাশ্মীরের দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারা দেশে যে দাঙ্গার বাতাবরণ তৈরী করতে চাইছে বিজেপি, সেটার বিরুদ্ধে আবারও তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আমি যত উন্নয়নের কাজ আছে করে দেব কিন্তু দাঙ্গা লাগাতে দেব না। মানুষের কল্যানে যা যা করার দরকার সব করব, কিন্তু মানুষে মানুষে ভেদাভেদ করতে দেব না। আগুন জ্বালাতে দেব না। বন্দ্যোপাধ্যায় হোক কিংবা মজুমদার, হিন্দু হোক কিংবা মুসলমান, রক্ত এক, চোখ দুটো এক, ভাষা এক, তাহলে কিসের বিরোধ? হিন্দু ধর্ম আগে ছিল না?

“বিজেপি-আরএসএস পার্টি থেকে মিথ্যা খবর রটানো হচ্ছে। আমরা হিন্দু ধর্মকে সম্মান করি। কিন্তু, যে হিন্দু ধর্মের নাম করে ডান্ডা দিয়ে মানুষ খুন করে, তাঁরা হিন্দু প্রেমিক হতে পারে না, তারা মুসলমান প্রেমিক হতে পারে না, তারা শিখ হতে পারে না, তারা খৃস্টান হতে পারে না। কিছু রাজনৈতিক দল নোংরামি করছে। বলছে বাংলায় নাকি দুর্গাপুজো, সরস্বতী পুজো হয়না। আমরাও গরুকে সম্মান করি। কিন্তু, গোরক্ষার নামে মানুষ হত্যা করি না। কে কি খাবে, কে কি পরবে, সব ঠিক করে দিচ্ছে দিল্লীর সরকার।”

বিজেপির ভেদাভেদের রাজনীতি নিয়ে তিনি বলেন, আমি হিন্দু পরিবারের মেয়ে, আমার মাতৃমন্দির আছে। আমি তোমাদের মত হুলিগানদের বাড়িতে জন্মাইনি। আমি আমার বাবা মাকে ধর্মীয় আচার করতে দেখেছি। কিন্তু, কোনোদিন তারা আমায় বলেনি কোনও লোককে ঘৃণা করতে, কোনোদিন তারা আমায় বলেনি কোনও নতুন করে যদি কেউ এসে বিভেদ লাগায় তাহলে বিভেদ শুরু করতে। আমি

বাংলায় জন্মেছি, এসব কিকরে শিখব? এতদিন আমরা বাংলায় কাটিয়েছি। আমরা কোনও মন্দিরে হাত দিইনি, কোনও মসজিদে হাত দিইনি, কোনও গুরুদ্বারে হাত দিইনি, কোনও গির্জায় হাত দিইনি। উপরন্তু, আমরা মন্দির গড়ে দিয়েছি। মা তারা মন্দির, দক্ষিণেশ্বর স্কাইওয়াক দেখে আসুন। তারকেশ্বর মন্দিরের উন্নয়ন করেছি। নলহাটি, কঙ্কালিতলার মন্দির, পাথরচাপড়ির দর্গা, ফুরফুরা শরীফ আমরা সব ধর্মস্থানের সংস্কার করেছি, ভাঙতে যাইনি।

তিনি বলেন, মাথায় ফেট্টি বাঁধলেই হিন্দু হওয়া যায় না। রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘকে দেখে শেখ। ওরাও গেরুয়া পরে কিন্তু, গেরুয়ার অমর্যাদা করেনা। ওনারা গেরুয়া পরে ত্যাগ করতে, স্বামী বিবেকানন্দের কথা মাথায় রেখে, সমাজ সেবা করবে বলে। কত স্কুলকে ওনারা পরিষেবা দেন। বিজেপির কোনও কাজ নেই, একটা তিলক কেটে, রাস্তা থেকে গেরুয়া ফেট্টি কিনে, রোরক্ষকের নামে রাস্তায় বেরোয়। একেবারে গর্ধ সংস্কৃতি, অর্ধ সংস্কৃতি, অন্ধ সংস্কৃতি, পাশবিক সংস্কৃতি নিয়ে এসেছে। হঠাত রাত্রিবেলা পাড়ায় পাড়ায় ডান্ডা নিয়ে বেরিয়ে পড়ছে।

সাম্প্রতিক কালে রাজ্যে যে কয়েকটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উত্তেজনা ছড়ানোর ঘটনা ঘটেছে, সেই বিষয়ে তিনি বলেন, সকলকে আবেদন সচেতন থাকুন। সঠিক সময় সঠিক ব্যবস্থা নিলে আমাদের ৪০ জন জওয়ান প্রাণ হারাত না, রাজনীতি হয়েছে। যেদিন এই দুর্ঘটনা হয়েছে, সেদিন থেকে সুক্ষ ভাবে ভাবে এলাকায় এলাকায় রটিয়ে দেওয়া হচ্ছে ঐ ছেলেধরা আসছে। আমি সরকার চালাই, আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, নিজেরাই দশটা বোর্খা কিনেছে, কিনে বোর্খা পরিয়ে কারোকে টাকা দিয়ে রাস্তায় ছেড়ে দিচ্ছে। দিয়ে বলছে ঐ দেখ ছেলেধরা আসছে। পারার ছেলেমেয়েরা সেই কথা সত্যি ভেবে ঐ বোর্খা পড়া লোকটাকে পিটিয়ে মেরে দিল। তারপর বলছে হিন্দু মুসলমান আলাদা হতে। এই সুযোগে লন্ডভন্ডকারী দানবরা তাদের রাজনীতির স্বার্থ চরিতার্থ করছে।

রাজ্যবাসীদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আপনাদের ওপর সরকার আছে। দিল্লীর সরকার এখানে চলে না। এখানে মা মাটি মানুষের সরকার চলে। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে পুলিশকে জানান। আইন নিজের হাতে নেবেন না। এগুলো মিথ্যা, কুৎসা, অপপ্রচার, চক্রান্ত, রাজনীতির ভাঁওতা। সারা বছর এদের পাবেন না। এরা বসন্তের কোকিলের মত নির্বাচনী কোকিল। নির্বাচন এলে এরা হিন্দু মুসলমানে ভাগাভাগি করে। সারা বছর মানুষকে খেতে দেয়না।

বিজেপির জুমলা নিয়ে তিনি বলেন, ২০১৪ সালে বলেছিল বিদেশী ব্যাঙ্ক থেকে ফেরত এনে ১৫ লক্ষ টাকা করে সকলকে দেব। কিচ্ছু হয়নি। যদি হত, তাহলে দেশের এত কৃষক মারা যেতনা। ১২ হাজার কৃষক সারা দেশে আত্মহত্যা করেছে। আমরা কৃষকদের আয় তিনগুণ করে দিয়েছি।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দেশনেতা সেই হয় যে সকলকে নিয়ে চলে। যে নেতা একা চলে, দেশকে ধ্বংস করে, সে দেশনেতা হতে পারে না।