সাম্প্রতিক খবর

ডিসেম্বর ২০, ২০১৮

মাওবাদীরা যখন জঙ্গলমহলে মানুষ খুন করছিল, তখন কোথায় ছিল বিজেপি: পুরুলিয়ায় অভিষেক

মাওবাদীরা যখন জঙ্গলমহলে মানুষ খুন করছিল, তখন কোথায় ছিল বিজেপি: পুরুলিয়ায় অভিষেক

আজ পুরুলিয়া জেলার রঘুনাথপুরে এক জনসভায় বক্তব্য রাখেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

তাঁর বক্তব্যের কিছু অংশ:

যারা নিরলস পরিশ্রম, জনসংযোগ ও প্রচার করে আজকের এই জনসভাকে সফল করেছেন তাদের সকলকে ধন্যবাদ। এখানে উপস্থিত সকলকে অভিনন্দন ও প্রণাম জানাই। আজকের এই জনসমাবেশ প্রমাণ করেছে, আগামী দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ব্রিগেড সমাবেশের ডাক দিয়েছেন সেখানে পুরুলিয়া একাই ভরিয়ে দিতে পারে।

আমি আপনাদের স্নেহ ভালোবাসার জন্য চিরজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। মানুষের সমাগমের তুলনায় আমাদের আজকের এই সভাস্থল ছোট হয়ে গিয়েছে। আজ একটা ছোট্ট শক্তি প্রদর্শন করে দেখানো হল। অল্প সময়ে এই সভায় পুরো জেলা থেকে মানুষ আসতে পারেননি। শুধু রুঘুনাথপুর মহকুমার চার-পাঁচটি ব্লক থেকেই এই বিপুল মানুষ এসেছেন।

বিজেপি মাস ছয়েক ধরে একটা রব তুলেছিল, তৃণমূল কংগ্রেস পুরুলিয়া থেকে পায়ের জমি হারাতে শুরু করেছে। তারা যেখানে জমি তৈরী করেছিল, সেই বলরামপুর তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেছে। যেই বলরামপুর নিয়ে অমিত শাহের হুঙ্কার, বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর হুঙ্কার, দিলীপ ঘোষের হুঙ্কার, আজকে সেই বলরামপুর পঞ্চায়েত সমিতি তৃণমূল কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। ইতিমধ্যেই ন’জন যোগদান করেছে, বাকি আটজন আগামী দিনে যোগদান করবে।

যারা ভাবছে আবর্জনার মত ছড়িয়ে ছিটিয়ে দু একটা আসনে জিতে পুরুলিয়া জেলা অশান্ত করবে, আমি তাদের সতর্ক করে দিয়ে যাচ্ছি, আগুন নিয়ে ছেলেখেলা করবেন না। যদি ভাবেন তৃণমূলের ১০টা ভোট কেটে, তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে বিভাজনের রাজনীতি করে, আপনি এই জেলার দখল নেবেন, আমি তাকে চ্যালেঞ্জ করে যাচ্ছি আগামী দিন আপনাদের পায়ের তলার মাটি আমরা কেড়ে নেব গণতান্ত্রিক ভাবে। আপনার যদি কৌশল জানা থাকে ১০টা ভোট কাটার, আপনার দলের ১০০০ কর্মীকে তৃণমূল কংগ্রেসে টানার কৌশলও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জানা আছে।

বিজেপি যদি তথ্য পরিসংখ্যানকে সামনে রেখে লড়াই করতে প্রস্তুত থাকেন, আসুন লড়াই করুন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার পাঁচ বছরে কি করেছে আর দিল্লীর নরেন্দ্র মোদীর সরকার পাঁচ বছরে কি করেছে। ২০১৪তে ক্ষমতায় এসে তারা মানুষকে বলল, ‘আচ্ছে দিন আনে ওয়ালে হ্যায়’। এত বড় একটা গ্যাস বেলুন ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে মানুষের সামনে পরিবেশণ করল। বলল, বছরে ২কোটি বেকারের চাকরি হবে, সবার ব্যাঙ্কে ১৫লক্ষ টাকা করে ঢুকবে, ঝকঝকে তকতকে রাস্তা হবে, কিন্তু, কাঁচকলা দিল।

এই জেলার মানুষকে আমি জিজ্ঞেস করতে চাই, আমায় চোখে আঙুল দিয়ে দেখান এই জেলায় একটা হাসপাতাল দেখান, যেটা নরেন্দ্র মোদীর সরকার তৈরী করেছে, আমায় চোখে আঙুল দিয়ে দেখান একটা রাস্তা যেটা এককভাবে নরেন্দ্র মোদীর সরকার করেছে, আমায় চোখে আঙুল দিয়ে দেখান একটা বেকারকে যুবশ্রী ভাতা নরেন্দ্র মোদীর সরকার দিয়েছে, আমায় চোখে আঙুল দিয়ে দেখান একটা গরীবকে গীতাঞ্জলী প্রকল্পে নরেন্দ্র মোদীর সরকার বাড়ি দিয়েছে, আমায় চোখে আঙুল দিয়ে দেখান একটা বাড়িতে নরেন্দ্র মোদীর সরকার বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে, আমায় চোখে আঙুল দিয়ে দেখান একটা কৃষককে নরেন্দ্র মোদীর সরকার কিষাণ ক্রেডিট কার্ড দিয়েছে। কেউ দেখাতে পারবে না। যা উন্নয়ন হয়েছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করেছে।

আমরা বলেছিলাম, আমরা ক্ষমতায় এলে জঙ্গলমহলে শান্তি প্রতিষ্ঠা করব, আমাদের সরকার করেছে। আমরা বলেছিলাম, আমরা ক্ষমতায় আসার পর সকলের পানীয় জলের সমস্যার সমাধান করব, আমাদের সরকার করেছে। ইতিমধ্যেই আমাদের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী উন্নয়নের ডালি নিয়ে পুরুলিয়ায় একাধিকবার আপনাদের সামনে এসে উপস্থিত হয়েছেন। জিকা প্রকল্প ১৬০০ কোটি টাকা ঘোষণা করেছে। এই প্রকল্প কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে এবং ১৬ লক্ষ মানুষ জাতি-ধর্ম-বর্ণ-রাজনৈতিক মতামত নির্বিশেষে পানীয় জলের সুবিধা পাবেন। এটাই হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানুষকে যা কথা দেন, সেই কথা রাখেন।

আজ আমরা সমবেত, ঐক্যবদ্ধ, সংগঠিত হয়েছি ব্রিগেড চলো সমাবেশকে সামনে রেখে। এই ব্রিগেড চলো সমাবেশ যা ২০১৯ সালের ১৯শে জানুয়ারি কলকাতার ব্রিগেড প্যারাড গ্রাউন্ডে হতে চলেছে, তাঁর সঙ্গে অন্যান্য ব্রিগেড সমাবেশের আকাশ পাতাল তফাৎ আছে গুরুত্ব এবং তাৎপর্যের দিক থেকে। এই সমাবেশ এমন পরিস্থিতিতে আমাদের জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডাক দিয়েছেন, যেখানে শুধু তৃণমূলের সর্বস্তরের নেতা নন, ভারতবর্ষের অন্যান্য অনেক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অনেক রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব এসে ব্রিগেডে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্তিশালী করার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হবেন। আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজ্রিওয়াল আসবেন, সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব আসবেন, বিহারের আরজেডি দলের তেজস্বী যাদব আসবেন, ডিএমকের এম কে স্ট্যালিন আসবেন, টীডিপির চন্দ্রবাবু নাইডু আসবেন, শত্রুঘ্ন সিনহা, যশোবন্ত সিনহা অনেকেই আসবেন। আমাদেরও সেই পথে নিজেদের পরিচালিত করতে হবে।

যদি কেউ ভাবে হিন্দু মুসলমানের মধ্যে বিভাজন করে, সাম্প্রদায়িকতার নিরিখে, বাংলাকে দ্বিখন্ডিত করে রাজনৈতিক জমি আমরা পাব, আমি তাদের বলে যাই, তোমাদের লক্ষ্য বাংলা আর তৃণমূল কংগ্রেসের লক্ষ্য লালকেল্লা। তুমি আকাশের দিকে তাকাবে আর আমরা তোমাদের পায়ের তলার জমি কেড়ে নেব। আগামী দিন দিল্লীও থাকবে না।

সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে কি ভয়ানক পরিনতি হয়েছে, আপনারা দেখেছেন। যে মধ্যপ্রদেশ, যে রাজস্থান, যে ছত্তিশগড়কে সামনে রেখে, মোদী মডেলকে সামনে রেখে বিজেপি সারা দেশে প্রচার চালিয়েছিল, ক্ষমতায় আসব বলে গলা ফাটিয়েছিল, আজকে সেই মধ্যপ্রদেশে মাথায় রাখবেন মধ্যপ্রদেশে যেখানে ৯১.৭ শতাংশ ভোটার হিন্দু, ছত্তিশগড়ে যেখানে ৯২ শতাংশ ভোটার হিন্দু,, রাজস্থানে যেখানে ৯১ শতাংশ ভোটার হিন্দু, সেই রাজস্থানে মুখ থুবড়ে পড়েছে, সেই মধ্যপ্রদেশে মুখ থুবড়ে পড়েছে, সেই ছত্তিশগড়েও মুখ থুবড়ে পড়েছে।

আমি বলেছিলাম, ২০১৯ বিজেপি ফিনিশ। কিন্তু, মানুষ প্রমাণ করছে ২০১৯ আসার আগেই ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে নরেন্দ্র মোদী অমিত শাহের দল বিজেপি ভোকাট্টা হয়ে গেছে। মুখ থুবড়ে পড়ে রাজনৈতিক জমি হারিয়েছে।

বিজেপি আজ সারা ভারতবর্ষে এমন এক পরিস্থিতি তৈরী করতে চাইছে, আগুন জ্বালানোর পরিস্থিতি তৈরী করতে চাইছে। জয় শ্রী রামের নামে নারা দিচ্ছে, কিন্তু, উন্নয়ন নিয়ে কথা নেই, গণতন্ত্র নিয়ে কথা নেই, প্রগতি নিয়ে কথা নেই, রাস্তাঘাট নিয়ে কথা নেই, পরিষেবা নিয়ে কথা নেই। গলায় গামছা মুখে রাম আর পেট্রোলের ১০০ টাকা দাম। সিপিএম বল, ইঙ্কলাব জিন্দাবাদ, আমরা খাবো তোমরা বাদ। আর বিজেপি বলে, জয় শ্রী রাম মানুষের মাথার নেই কোনও দাম, জয় শ্রী রাম রান্নার গ্যাসের ১০০০টাকা দাম, জয় শ্রী রাম আগুন জ্বালানোই একমাত্র কাম, জয় শ্রী রাম দাঙ্গা লাগানোই আমার একমাত্র কাম, জয় শ্রী রাম পেট্রোলের ১০০ টাকা দাম। এই হয়েছে তাদের পরিনতি।

তারা যা করছে, ভারতের মানুষ তার জবাব দিয়েছে, আমাদের নেত্রী বলেছেন, আমরা বদলা নয়, বদলের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। আমরা ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও এর রাজনীতিতে বিশ্বাস করিনা। আমরা সাজিয়ে দাও, গুছিয়ে দাও এর রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। কিন্তু বিজেপি আমাদের সৌজন্যতাকে আমাদের দূর্বলতা ভাবছে। আমরা এদেরকে ওয়ার্নিং দিয়ে যাচ্ছি। এই পুরুলিয়া জেলাকে তারা অশান্ত করবার চেষ্টা করছে। আমরা এদেরকে বলে যাই, আপনারা রাজনৈতিকভাবে লড়তে পারলে লড়ুন, করতে পারলে করুন, ধরতে পারলে ধরুন নইলে বাড়িতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন।

আপনাদের কোনও জায়গা এই জেলার বুকে নেই। আপনাদের রাজনৈতিকভাবে লড়াই করার ক্ষমতা নেই। আপনারা মানুষ মারার রাজনীতি শুরু করেছেন। এই পুরুলিয়াতে আদ্রায় শ্যুটআউট করেছেন, একের পর এক। একটা শিক্ষককে রঘুনাথপুরে নির্মমভাবে হত্যা করেছেন। একমাস আগে আমাদের এক কর্মীকে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছেন। এর জবাব মানুষ দেবে।

কিন্তু আমি বলে যাই এই আদ্রার খুন এই জেলার শেষ খুন হবে। আগামীদিন যদি একটা খুন হয় তাহলে বিদ্যাসাগর বাবুর বাড়ি ঘেরাও হবে। আমাদের কর্মী, সমর্থকদের আমি বলে দিচ্ছি যেখানেই হত্যা হবে বিজেপির আঞ্চলিক আর ব্লক স্তরের নেতাদের বাড়ি ঘেরাও করবে, কলকাতা থেকে আমি এসে তার নেতৃত্ব দেব। এটা শেষ ঘটনা, এরপর তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী সমর্থকের গায়ে যদি একটা আঁচড় লাগে কত ধানে কত চাল আমরা মাঠে ময়দানে লড়াই করে বুঝিয়ে দেব। এটা শেষ বার আপনাদের বলে যাই। রাজনৈতিকভাবে লড়াই করতে পারলে লড়ুন। আপনাদের ক্ষমতা নেই, আপনারা কাপুরুষ, ভীত, সন্ত্রস্ত।

গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা? দিল্লী থেকে একটা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস নিয়ে এসেছে। সেই বাসটা দেখিয়ে বলছে এটা রথ। গাধাকে দেখিয়ে ঘোড়া আর বাসকে দেখিয়ে বলছে রথ। এটা কোন রথ? এই জঙ্গলমহল, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুরের বিস্তির্ণ এলাকা জুড়ে আমরা আষাঢ় মাসে রথযাত্রা পালন করি। প্রভু জগন্নাথের আরাধনা, বন্দনা করি। এ রথ কোন রথ? আমি দিলীপ বাবুদের কাছে জানতে চাই। আমি নরেন্দ্র মোদি অমিত শাহের কাছে জানতে চাই।

আমরা তো রথ মানে প্রভু জগন্নাথের রথ জানি। আমরা তো রথ মানে বলরামের রথ জানি। আমরা তো রথ মানে সুভদ্রার রথ জানি। আমরা তো রথ মানে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের রথ জানি। আমরা তো রথ মানে মদনমহনের রথ জানি। শ্রীকৃষ্ণের রথ জানি। গোপালের রথ জানি। এ রথ কোন রথ? যে রথে রান্না করা যায়, যে রথে ছাইপাস খাওয়া যায়, যে রথে ফূর্তি করা যায়, যে রথে স্নান করা যায়, যে রথে মল ত্যাগ করা যায়, যে রথে মূত্র ত্যাগ করা যায়, এ রথ কোন রথ? বাংলার মানুষ আজ আপনাদের কাছে এই প্রশ্নটা রাখছে।

আপনারা প্রথমে বললেন রথযাত্রা, তারপর বললেন গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা। গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা? বাংলার বুকে যখন গণতন্ত্র বিপন্ন ছিল তখন দিলীপ ঘোষ, আরএসএস, বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী, নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ – এদের খুঁজে পাওয়া যায়নি, এদের টিকিটাও পুরুলিয়ার মানুষ দেখতে পারেনি। যখন মাওবাদীদের হাতে মানুষ নিহত হত; সকাল, বিকেল, দুপুর মানুষ বেরোতে ভয় পেত, তখন কিন্তু এদের দেশপ্রেম, গণতন্ত্রবোধ জাগেনি। আজকে হঠাৎ জঙ্গলমহলে এসে বড় বড় হুঙ্কার হয়েছে।

এই জঙ্গলমহলে যে রাস্তা দিয়ে ঢুকছ সেই রাস্তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৈরী, যেখানে দাঁড়িয়ে কথা বলছ সেই মাঠটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংস্কার করা, যে বাড়ির বাইরে পদ্ম ফুল চিহ্ন আঁকছ, সেই বাড়িটাও গীতাঞ্জলি প্রকল্পে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেওয়া। যেখানে বলছ মেরে হাসপাতালে পাঠাবো, সেই হাসপাতালটাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৈরী করা। সুতরাং এসব বলে লাভ নেই।

গণতন্ত্র যদি না থাকত পুরুলিয়া জেলায় তাহলে তোমরা পুরুলিয়ায় ৪০টা পঞ্চায়েত পেতে? ৬টা গ্রাম পরিষদ পেতে? তৃণমূল কংগ্রেস যদি গণতন্ত্র না রাখত তাহলে দুটো পঞ্চায়েত সমিতি পেতে? গণতন্ত্র যদি না থাকত কেউ পদ্ম চিহ্নে ভোট দিতে পারত না। আজকে গণতন্ত্র আছে বলেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানুষ ভোট দিতে পেরেছে, এবং ভোট দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর আস্থা, আশীর্বাদের হাত আরও বাড়িয়ে আরও শক্তিশালী করেছে।

পুরুলিয়ার ওপারেই ঝাড়খণ্ড রাজ্য; সিংভূম জেলা। সেখানে আজকে একটা মাওবাদীদের আঁতুরঘর হয়ে রয়েছে। সেখানে পাকুড়ের এসপিকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আর গত সাত বছরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের নেতৃত্বে জঙ্গলমহলে একটা খুন সন্ত্রাসের ঘটনা কেউ দেখাতে পারবে না। আজকে ওড়িশায় বিজেডি এমএলএকে অপহরণ করে শুভশ্রী পান্ডাকে ছাড়িয়ে নিয়ে গেছে। কিন্তু বাংলায় তারা সাহস করেনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন এবং সরকার ওদের সেটা করতে দেয় নি।

পুরুলিয়া,মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রামে এমন পরিস্থিতি ছিল যে সরকার থেকেও ছিল না, প্রশাসন থেকেও ছিল না, সাংসদ থেকেও ছিল না, বিধায়ক থেকেও ছিল না, পঞ্চায়েত থেকেও কাজ ওদের ছিল না। মানুষ সকালে, বিকালে, দুপুরে ঘর থেকে বেরোতে ভয় পেত। আজকে হাজার হাজার মা-বোনেরা স্বতঃর্ফুর্তভাবে আমাদের সভায় উপস্থিত হয়েছেন এবং নারী শক্তি যাদের সাথে থাকে তাদের কেউ পরাজিত করতে পারে না। আমি এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সভ্যতার লড়াই-এর ব্যাটনটা মা বোনেদের হাতেই তুলে দিয়ে যাবো

আশা করব এই পুরুলিয়া জেলায় সংগঠনকে আপনারা শক্তিশালী করবেন এবং আগামীদিন মা-মাটি-মানুষের হাত শক্ত করে, এই জেলায় শান্তি আবার আমরা ফিরিয়ে আনবো। তার জন্য যদি জীবন যায় যাবে, প্রাণ যায় যাবে, রক্ত যায় যাবে। তবুও আমরা মাথা নত করব না। আমরা মনে করি আত্বসমর্পণ আর মৃত্যুবরণ দুটোই এক। সসম্মানে হাতে জোড়া ফুলের ঝান্ডাটা আমরা রাখবো। ওরা নেবে তরোয়াল আর আমরা নেবো তৃণমূল কংগ্রেসের ঝান্ডা। হোক মাঠে লড়াই , কতো ধানে কতো চাল, আমরা বুঝে নেবো।

আপনাদের হাতে জোড়াফুলের ঝান্ডা আর দিল্লীতে হবে ভারতীয় জনতা পার্টি ঠান্ডা। আপনাদের চোখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শ, দিল্লিতে হবে ভারতীয় জনতা পার্টী নিঃস্ব। আগামীদিন ২০১৯ বিজেপি ফিনিশ। আগামীদিন ২০১৯-এ রায় দেবে জনতা, উড়ে যাবে ভাঁওতা। ফিরবে সমতা, এগিয়ে যাবে মমতা।

বিজেপি হঠাও, দেশ বাঁচাও, আরএসএস হঠাও, দেশ বাঁচাও। সাম্প্রদায়িকতা হঠাও, দেশ বাঁচাও। দড়ি ধরে মারো টান, বিজেপি হবে খান, খান।