ডিসেম্বর ১১, ২০১৮
বিজেপির শেষের শুরু: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ দিল্লীতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল সম্বন্ধে তিনি বলেন এটা মানুষের জয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বিজেপির শেষের শুরু হল।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের কিছু অংশ:
আমি ইতিমধ্যেই সকালে টুইট করেছি, সেখানে আমি আমার বক্তব্য জানিয়েছি। এই জয় গণতন্ত্রের জয়, মানুষ এই জয়ের মূলে।
আমাদের মনে রাখতে হবে, যেদিন প্রথম নোটবন্দী হয়েছিল, সেদিনই বলেছিলাম, মানুষ এটা ভালোভাবে নেবে না। কারণ, এতে দেশের খুব ক্ষতি হয়ে গেছে। কৃষকদের ওপর যে অত্যাচার হয়েছে, তার ফলে কত কৃষক আত্মহত্যা করেছে। আজ তপশিলি জাতির মানুষকে শুরু করে বানরের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে, ঐতিহাসিক স্থানগুলির নাম পরিবর্তন করে দেওয়া হচ্ছে।
সিবিআই থেকে শুরু করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক – প্রতিটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। সারা দেশে একটা ভীতির পরিবেশ তৈরী হয়েছে। অনেক দিন ধরে রাজনৈতিক জরুরী অবস্থা চলছে। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় একটা সরকার আসে, একটা সরকার চলে যায়, গণতন্ত্রের এটাই নিয়ম। কিন্তু, ভীতির পরিবেশ কখনও থাকে না।
অর্থনৈতিক জরুরী অবস্থা, রাজনৈতিক জরুরী অবস্থা, প্রাতিষ্ঠানিক এমার্জেন্সি, সাংবিধানিক জরুরী অবস্থা। সংবিধান হল ভারতবর্ষের সবথেকে বড় রক্ষক। ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, প্রজাতন্ত্র – সংবিধানের প্রতিটি জায়গায় এত বেশী নাক গলানো হচ্ছে এবং সংবিধানকেই প্রায় সূর্যাস্ত করার চেষ্টা হয়েছে। মানুষ এগুলিকে ভালো চোখে দেখেনি।
এটা ফাইনাল ম্যাচের সেমিফাইনাল ম্যাচ ছিল। ২০১৯ সালে যে নির্বাচন আছে, তার মাত্র দু-তিন মাস বাকি আছে। মে মাসে নির্বাচন হবে। সারা দেশে নির্বাচন করতে মাস দুয়েক লাগে। সুতরাং জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি থেকে নির্বাচনের বাজনা বেজে যাবে। এই সরকার চলে যাওয়ার সময় হয়েছে। যত তাড়াতাড়ি নির্বাচন হয়, জনগণের রায় নিয়ে যত তাড়াতাড়ি নতুন সরকার আসে, ততই ভালো।
এই ফল ওদের পক্ষে একটা বিপর্যয়। ক্ষমতায় থেকে ওদের যে অহঙ্কার, যে ঔধত্য, এজেন্সিগুলিকে যে ভাবে অপব্যবহার করেছে, সেটা দেশের পক্ষে ভালো নয়। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর পদত্যাগ করছে, এতে তো অর্থনৈতিক জরুরী অবস্থা শুরু হয়ে গেছে।
মানুষের টাকা থাকে ব্যাঙ্কের মাধ্যমে রিজার্ভ ব্যাঙ্কে। সেই ব্যবস্থায় যদি স্বচ্ছতা না থাকে, যে কোনও সময় সেই ব্যাঙ্কের টাকা যদি লুঠ হয়ে যায়, তাহলে মানুষের জীবনই তো লুঠ হয়ে যাবে। মানুষের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা কোথায়? গণতন্ত্রের যে সব বড় ভিত – যেমন, সংসবাদমাধ্যম – সকলকে ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সাহস করে একটা কথা বললে সাংবাদিকের চাকরিও কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।
আমি মনে করি ছত্তিশগড়ের পরাজয় বিজেপির বড় ধাক্কা। মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানেও একই ব্যাপার। এগুলি হিন্দী বলয়। দক্ষিণ ভারতে বিজেপির তেমন কিছু নেই। উত্তর পূর্ব খুব ছোট জায়গা, যে যখন ক্ষমতায় আসে, ওরা তাদের সঙ্গে থাকে, এটাই ওখানকার রীতি। পূর্বেও বিজেপি নেই, না আছে বাংলায়, না আছে উড়িষ্যায়। বিহারে নীতিশ কুমারের যে সরকার চলছে, সেটা তো লালু প্রসাদের সঙ্গে জোট করে জেতা সরকার। বিহারে ভোট হলে লালু প্রসাদের সঙ্গে যে জোট করবে, সে জিতবে। পশ্চিমও চলে যাচ্ছে। কাল মহারাষ্ট্রে নির্বাচন হলে, পরাস্ত হবে বিজেপি। গোয়াতে যে কোনোও সময় সরকার পড়ে যেতে পারে।
আজ বিজেপির যে পরাজয়, যে পতন, তার কারণ, তাদের অহঙ্কার, তাদের ঔধত্য, মানুষ তাদের বিরুদ্ধে চলে গেছে। কৃষকরা বিরুদ্ধে গেছেন, তপশিলিরা গেছেন, আদিবাসীরা গেছেন, সংখ্যালঘু গেছেন, জেনারেল কাস্ট গেছেন, যুব সম্প্রদায় গেছেন, শিক্ষিত মানুষ গেছেন, সমাজের সর্বস্তরের মানুষ – শিল্প থেকে কৃষিজীবী মানুষ – তাদের বিরুদ্ধে গেছেন। গৃহলক্ষ্মী থেকে নবযুবক সকলে আজ তাদের বিরুদ্ধে।
স্বর্ণ ব্যাবসায়ীদের প্রচুর দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে প্রায় ১.৫ লক্ষ লোক কাজ হারিয়েছেন। কর্মসংস্থান চলে গেছে, তারা খুব অসহায়। আমায় তারা আজ স্মারকলিপি দিয়েছেন; আমি সেটা দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছি। দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রীও আশ্বাস দিয়েছেন। এখান থেকে বাংলাদেশী বলে বিহারী হঠাও হচ্ছে, বাঙালী হঠাও চলছে, উত্তরপ্রদেশের মানুষ হঠাও চলছে। একই জিনিস চলছে গুজরাটে, অসমে।
যে দল যে রাজ্যে শক্তিশালী, তারা সেখানে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করেছে এবং সেখানে ফল পেয়েছে। আমরা লড়িনি কিন্তু, পূর্ণ সমর্থন করেছি। আমি প্রথম থেকেই বলেছি, যে যেখানে শক্তিশালী সে সেখানে লড়াই করুক। ফেডেরাল ফ্রন্ট শক্তিশালী হলে ভারতবর্ষ শক্তিশালী হবে। রাজ্যগুলি দেশের সব থেকে বড় ভিত। সকলে একসঙ্গে কাজ করে দেশে একটি ভালো সরকার আসুক।
খেলা একদম পরিষ্কার, এখন শুধু নির্বাচনের অপেক্ষা। মানুষ রায়দানের অপেক্ষায় আছে। আমি চিরকাল তৃণমূল স্তরের রাজনীতি করি, আমি যদি এত বছরে মানুষকে একটুও চিনে থাকি তাহলে বলব, বিজেপির শেষের শুরু হয়ে গেছে।
কিছু দল এই মুহূর্তে বিরোধীদের সঙ্গে নেই, তাদের এর পর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিছু প্রাদেশিক দলের কিছু বাধ্যবাধকতাও আছে। জাতীয় স্তরে আমরা একজোট, রাজ্যস্তরে অনেকে জোট করে, অনেকে একা লড়ে। এটা যে যে দলের সিদ্ধান্ত।
এই জয় সবার জয়, মানুষের জয়।