সাম্প্রতিক খবর

ডিসেম্বর ২৬, ২০১৮

বাংলায় কোনও ভেদাভেদ করা হয় না: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

বাংলায় কোনও ভেদাভেদ করা হয় না: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার মন্দিরবাজার এলাকায় একটি সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঞ্চ থেকে তিনি একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করেন।

মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের কিছু অংশ:

এই সময় পিঠে পুলির উত্সব, বিজ্ঞান মেলা, কৃষি মেলা হয়। ১২ই জানুয়ারি বিবেকানন্দের জন্মদিন উপলক্ষে বিবেক মেলা হয়, ২৩শে জানুয়ারি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন উপলক্ষে সুভাষ মেলা হয়। এছাড়াও খেলাধুলো ও বিভিন্ন কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামও হয়।

আমাদের উৎসব দুর্গা পুজো দিয়ে শুরু হয়, তারপর কালী পুজো, ছট পুজো, বড়দিন। সামনেই ইংরেজি নববর্ষ। সকলকে আগে থেকেই নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাই।

লোক সমাগমের দিক থেকে কুম্ভ মেলার পর সবচেয়ে বড় মেলা হল গঙ্গাসাগর মেলা। আগামী ১৪ ও ১৫ই জানুয়ারী মকর সংক্রান্তিতে গঙ্গাসাগর মেলা হবে। প্রায় ২০-৩০ লক্ষ লোক নদী পেরিয়ে এই মেলায় যান – এটাই এই মেলার বিশেষত্ব।

কয়েক দিন আগে এখানে একটি ঘটনা ঘটেছে, যা দুঃখজনক। আমি কখনোই খুনোখুনি পছন্দ করি না, আমরা শান্তিপ্রিয় মানুষ, যারা এই কাজ করেছে তাদের আমি তীব্র ভাষায় ধিক্কার জানাই।

ওই ৩ পরিবারের ৩ জন সদস্যকে রাজ্য সরকারের চাকরির অ্যাপয়েনমেন্ট লেটার তুলে দিয়ে এসেছি। এটা আমি সব সময়ই করি, যদি কেউ বিপদে পরে, কেউ খুন হয়, এমনকি দুর্ঘটনায় মারা গেলেও আমরা তাদের আর্থিক সাহায্য করি। আমাদের সরকার মানবিক সরকার।

৫০ লক্ষ মেয়ে কন্যাশ্রী স্কলারশিপ পেয়েছে। আমি শিক্ষকদের অনুরোধ করব, কন্যাশ্রী মেয়েদের কেসগুলো আগে সমাধান করুন, ভুলে যান নিজেরা কোন কোন দলের সমর্থক কারণ ছাত্রছাত্রীরা মেয়েরা আমাদের সহযোগিতা আশা করে। পরিবারের মেয়ে না কংগ্রেস পরিবারের মেয়ে নাকি তৃণমূল, আমরা তা না দেখেই কন্যাশ্রী দিই। এটা একমাত্র আমাদের সরকারই পারে।

আগে যাদের বার্ষিক আয় ১.২০ লক্ষ টাকা ছিল তাদের মেয়েরা কন্যাশ্রী পেতেন, এখন এই নিয়ম তুলে দেওয়া হয়েছে, সব সরকারি স্কুলের মেয়েদের এখন কন্যাশ্রী স্কলারশিপ দেওয়া হয়।

কৃষকদের ফসল বীমা – কেন্দ্রীয় সরকার কত টাকা দেয়? ১০০ টাকায় ২০ টাকা দেয় কেন্দ্র। আমরা ৮০ টাকা দিই। আমরা। আমরা বলে দিয়েছি ২০ টাকার দরকার নেই। আমরা যদি ৮০ টাকা দিতে পারি, ২০ টাকাও দিয়ে দেব। ওদের দয়ার দরকার নেই। আমরা টাকাটা জমা দিয়েছি ব্যাঙ্কে। কেন্দ্র দেয়নি। আর টাকা দেওয়ার সময় বলছে কেন্দ্রীয় সরকার দিয়েছে। মিথ্যে কথা। যদি ক্ষমতা থাকে তাহলে আমার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করবেন।

গরিব মানুষ, সাধারণ মানুষ, কৃষিজীবি, শ্রমজীবি, ছাত্র-যৌবন আজকে অনেক সুখে আছে। আমাদের ছোটবেলায় কেউ একটা বই কিনে দেয় নি। আমরা ছোটবেলায় দেখেছি, কেউ আমাদের বিনা পয়সায় চিকিৎসা করে দেয় নি। আমরা ছোটবেলায় দেখেছি, রেশন দোকানে গেলে পয়সা দিয়ে চালটাও কিনতে হত বাজারের দামে। সুতরাং আজকে যে সুযোগ-সুবিধাগুলো আপনারা পাচ্ছেন, তা আপনাদেরই অবদান এবং সরকারের পক্ষ থেকে আমরা চেষ্টা করি যা পাই, মানুষের মধ্যে ভাগ করে দেওয়ার।

আমি ইদানিং লক্ষ করছি কিছু কিছু বিজেপির নেতারা অনেক উলটো পালটা মানুষকে বোঝাচ্ছে। হিন্দু-মুসলমান ভাগ করে দেওয়ার চেষ্টা করছে। দলিতদের উপর অত্যাচার করছে। আদিবাসীদের উপর অত্যাচার করছে। সংখ্যালঘুদের মেরে ফেলছে। বিজেপি তো সেদিন এসেছে এখানে। কালীমন্দির তৈরী হয়েছিল কবে? তখন বিজেপি জন্মেছিল? দক্ষিনেশ্বর মন্দির যখন তৈরী হয়েছিল তখন তারা জন্মেছিল? আমরা দূর্গাপুজো কবে থেকে করি? আমরা রাস মেলা কবে থেকে করি? আমরা নবান্ন কবে থেকে করি? আমরা পৌষমেলা কবে থেকে করি? আমরা রমজান পালন কবে থেকে করি? আমরা বড়দিন কবে থেকে করি? মানুষে-মানুষে লাগিয়ে দেওয়া আর খুন খারাপি করা – বাংলায় এসব হয় না।

বাংলা রবীন্দ্রনাথের জায়গা, বাংলা নজরুল ইসলামের জায়গা, বাংলা রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের জায়গা, বাংলা বিবেকানন্দের জায়গা, বাংলা মা-দুর্গার জায়গা, বাংলা মা-কালীর জায়গা, বাংলা শিবের জায়গা, বাংলা ঈদ মোবারকের জায়গা, বাংলা বড়দিনের জায়গা, বাংলা গুরুদ্বারের জায়গা, বাংলা আদিবাসীদের জায়গা, বাংলা তফসিলীদের জায়গা, বাংলা জেনারাল কাস্টদের জায়গা, বাংলা সংখ্যালঘুদের জায়গা, বাংলা ওবিসিদের জায়গা, বাংলা ছাত্র-যৌবনের জায়গা, বাংলা মা-বোনের জায়গা, বাংলায় মনে রাখবেন কোনো ভেদাভেদ হয় না।

আজকে ২০ হাজার মানুষকে পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে। আগামীকাল কাকদ্বিপ-নামখানার আমাদের প্রশাসনিক বৈঠক আছে। সেখানে আমরা জনপ্রতিনিধিরা, নবান্নের আধিকারিকরা সবাই মিলে বৈঠক করব।

আজই আমি গঙ্গাসাগর যাব মেলার প্রস্তুতি পরিদর্শন করতে। তার পরের দিন সাগরে আমি একটা মিটিং করব। সুন্দরবন স্পোর্টস হয়েছে তার প্রাইজ দেওয়া হবে এবং পরিষেবা দেওয়া হবে।

দক্ষিণ ২৪-পরগণায় পানীয় জল, ট্যুরিজম, রাস্তাঘাট, হাসপাতাল, স্থানীয় উন্নয়ন এরকম অনেক ব্যাপারে ভালো কাজ হচ্ছে; আগামীদিনে আরও কাজ হবে।

আমাদের ওপর বিশ্বাস, ভরসা, আস্থা রাখুন। মনে রাখবেন মানুষকে বাঁচানোর একমাত্র রাস্তা তৃণমূল কংগ্রেসের মা-মাটি-মানুষের সরকার। মানুষের বিপদে আপদে সবসময় আমরা ছিলাম, আছি এবং থাকব।

গঙ্গাসাগর মেলায় যারাই যাবে তাদের জন্যে কোনও রকম দুর্ঘটনা যদি ঘটে আমরা তার জন্যে ৫ লক্ষ টাকা অবধি বীমা করিয়ে রেখেছে রাজ্য সরকার। আশা করি কারো কোন বিপদ হবে না।

নোটবন্দীর জন্যে সারা দেশে ৪০% বেকার বেড়েছে, কিন্তু বাংলায় আমরা কর্মসংস্থান তৈরী করে দিয়ে ওই সংখ্যা কমিয়েছি। স্কিল ট্রেনিং দিয়ে চাকরির ব্যবস্থা করছি, আগামীদিনে আরও করব, আরও শিল্প বাড়বে।

কোনও ভেদাভেদের রাজনীতি নয়, হিংসার রাজনীতি নয়, কুৎসার রাজনীতি নয়, মানুষকে প্রতারণা করার রাজনীতি নয়, মানুষকে ভালোবেসেই তৃণমূলের সরকার, মা-মাটি-মানুষের সরকার মানুষের কাজ করে। মানুষের কাছে ঐক্যের বার্তা, শান্তির বার্তা, স্বস্তির বার্তা পৌছে দিন যাতে মানুষ কাজ পায়, মানুষ যাতে ভালো থাকে।

আপনারা ভালো থাকুন, সুস্থ থাকবেন, জয় হিন্দ, বন্দে মাতরম। সকলে ভালো থাকবেন, অনেক অনেক ধন্যবাদ, নমস্কার।