ডিসেম্বর ১৭, ২০১৮
বিজেপির রথে দেবদেবীর জায়গায় বাংলার সাম্প্রদায়িক অসুররা চড়ছে: গোয়ালতোড়ে অভিষেক

আজ গোয়ালতোড়ে এক জনসভায় বক্তব্য রাখেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
তাঁর বক্তব্যের কিছু অংশ :
আমি পশ্চিম মেদিনীপুরে একাধিকবার জনসভা বা অন্যান্য অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছি এবং আপনাদের সামনে নিজের মতামত পেশ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। আজকের সভা পশ্চিম মেদিনীপুরের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। কাল সারারাত বৃষ্টির পরেও আজ এই জনসভায় যে পরিমাণ মানুষ এসেছেন আমি তাদের নতমস্তকে আমার প্রণাম, কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই।
আমি বারংবার বলি, তৃণমূল কংগ্রেসের যে কর্মী, সমর্থক ও শুভান্যুধায়ীরা আছেন, তৃণমূল কংগ্রেসের প্রকৃত সম্পদ তারাই। আমাদের দলে কোনও দু’নম্বর বলে কোনও জায়গা নেই। এক নম্বরে আছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বাকি যারা আছেন, সবাই সৈনিক ও কর্মী। কর্মীদের অবদান, নির্ভীকতার কারণেই মা মাটি মানুষের সরকার দ্বিতীয়বার বাংলার বুকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
আপনাদের লড়াকু মানসিকতা, মুষ্টিবদ্ধ হাত, আবেগ, স্বতঃস্ফূর্ততা নিয়ে গ্রামেগঞ্জে কাঁধে তৃণমূলের পতাকা বহন করে ‘তৃণমূল কংগ্রেস জিন্দাবাদ’, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিন্দাবাদের’ হুঙ্কার দিয়ে যারা গ্রামে গঞ্জে এই জেলায় প্রতিষ্ঠা করেছেন, তারাই দলের প্রকৃত সম্পদ।
পুরনো কর্মীদের দলের প্রতি অধিকার অনেক বেশী। নেত্রী বলেন, নতুন পুরনোর সংমিশ্রণেই একটা দল শক্তিশালী হয়। নতুনরা যোগ্য হলে তাদেরকে নিয়ে আমরা কাজ করব। নতুনদের তৃণমূল কংগ্রেসের ইতিহাস জানতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দীর্ঘ আন্দোলন সম্বন্ধে জানতে হবে। কেউ যদি মন্ডা মিঠাইয়ের লোভে তৃণমূল কংগ্রেস করতে আসার কথা ভাবে, তাদের জন্য তৃণমূল কংগ্রেসের দরজা বন্ধ। তাদের কোনও জায়গা দলে নেই।
নেতা মন্ত্রী সাংসদরা একদিন প্রাক্তন হয়ে যায়। কিন্তু, একজন কর্মী কখনও প্রাক্তন হয় না। কর্মীরাই বর্তমান ও ভবিষ্যৎ।
আজ আমরা সমবেত হয়েছি ব্রিগেড চলো সমাবেশকে সামনে রেখে। আগেরবার আমাদের নেত্রী ব্রিগেড সমাবেশ করেছিলেন ২০১৪ সালের ৩০শে জানুয়ারি। সাম্প্রদায়িক বিজেপিকে উৎখাত করার জন্য আগামী ১৯শে জানুয়ারি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ব্রিগেড চলোর ডাক দিয়েছেন। আজ এই সভাকে কেন্দ্র করে বহু দূর থেকে মানুষ এসেছেন।
আমরা ২০১৪ সালেও ব্রিগেড সমাবেশ করেছিলাম, ২০১২ সালেও করেছিলাম। কিন্তু, আগামী ব্রিগেডের প্রাসঙ্গিকতা অনেক বেশী। এই সমাবেশে শুধু তৃণমূলের সর্বস্তরের নেতা নন, ভারতবর্ষের অন্যান্য অনেক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অনেক রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব এসে ব্রিগেডে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্ত করার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হবেন। সমাজবাদী দল হোক, বিহারের আরজেডি দল হোক, ডিএমকে হোক, আপ হোক, চন্দ্রবাবু নাইডু হোক, অনেকেই ইতিমধ্যেই আসবেন বলে কথা দিয়েছেন। সেদিন ওই মঞ্চ থেকেই ‘সাম্প্রদায়িক বিজেপি ভারত ছাড়ো’ ডাক দেওয়া হবে।
যেভাবে ৩৪ বছরের জগদ্দল পাথরকে আমরা বাংলা ছাড়া করেছি, সেভাবে সাম্প্রদায়িক বিজেপিকে ভারত ছাড়া করব।
অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার এই মাটির আলাদা ঐতিহ্য রয়েছে। হাজার চেষ্টা করেও বিজেপি এই মাটিকে কলুষিত করতে পারেনি। এই মাটি মাতঙ্গিনী হাজরার মাটি, এই মাটি ক্ষুদিরাম বসুর মাটি, এই মাটি পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মাটি, এই মাটি সতীশ সামন্তর মাটি, এই মাটি কোনওদিনও মাথানত করতে জানে না।
রক্ত দিতে আমরা রাজি, প্রাণ দিতে আমরা রাজি। কিন্তু, বাংলাকে অশান্ত করতে দেব না। এই গোয়ালতোড়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনে কিছু বিজেপির আবর্জনা ঢুকে আমাদের এলাকা অশান্ত করতে চাইছে।
সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে কি ফল হয়েছে, আপনারা উপলব্ধি করেছেন। রাজস্থানে ভোকাট্টা হয়েছে বিজেপি, মধ্যপ্রদেশে মুখ থুবড়ে পড়েছে, ছত্তিশগড়ে মুছে গেছে। এই হয়েছে তাদের করুন পরিণতি।
এই বিজেপিরা হিন্দু ধর্মের ধারক ও বাহক বলে নিজেদের প্রচার করে। ছত্তিশগড়ে যেখানে ৯২ শতাংশ ভোটার হিন্দু, রাজস্থানে যেখানে ৯৪ শতাংশ ভোটার হিন্দু, মধ্যপ্রদেশে যেখানে ৯১.৭ শতাংশ ভোটার হিন্দু কিন্তু তারাও বিজেপিকে ভোট দেয়নি। তারা উপলব্ধি করেছে বিজেপিকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনা আর খাল কেটে কুমীর আনা দুটোই এক। তাই বিজেপির থেকে হাত আর মুখ দুইই এরা ফিরিয়ে নিয়েছে। বিজেপি গদিচ্যুত হয়েছে।
আজকে বিজেপির কী পরিস্থিতি? কী পরিণতি? বলছে রথ বার করব। একটি বিলাশবহুল বাস দিল্লি থেকে নিয়ে এসেছে, গাঁধা কে দেখিয়ে ঘোড়া বলছে আর সেভেন স্টার বাস দেখিয়ে রথ বলছে। এই হয়ে গেছে দিলিপ ঘোষেদের দলের অবস্থা এবং নগ্ন রূপ। একটা বাস যার মধ্যে আছে খাবার জায়গা, ফূর্তি করার জায়গা। আমরা তো রথ মানে দেবদেবীর রথ শুনেছি, প্রভু জগন্নাথের রথ শুনেছি, বলরামের রথ শুনেছি, শুভদ্রার রথ শুনেছি, মদনমোহনের রথ শুনেছি, আমরা শুনেছি চৈতন্যদেবের রথ, আমরা শুনেছি রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের রথ, আমরা শুনেছি শ্রী কৃষ্ণের রথ। কিন্তু এ কোন রথ? সেভেন স্টার গাড়ি। যে রথে দেবদেবীর জায়গায় বাংলার সাম্প্রদায়িক অসুররা চড়ছে। এ রথ কোন রথ? বাংলার মানুষ জানতে চাইছে।
আমরা তো কোনও দিন রথে ভগবান ছাড়া কাউকে দেখিনি। আর যারা আজ রথে উঠে বাংলার মানুষকে অশান্ত করতে চাইছে আমি বলব বাংলার মানুষকে আপনাদের সংযত থাকতে হবে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। এরা উন্নয়নের নিরিখে তৃণমূল কংগ্রেসের বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মোকাবিলা করতে পারেনি, আর আগামী দিনেও পারবে না।
আমি চ্যালেঞ্জ করে যাচ্ছি তাদের ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী আর আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে তথ্য পরিসংখ্যানকে সামনে রেখে আসুন লড়াই হোক। কত ধানে কত চাল আপনারা প্রমাণ করুন। আমাদের মমতা বন্দ্যোয়াপাধ্যায় যা কথা দিয়েছে তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে। আমরা বলেছি ক্ষমতায় আসার পর জঙ্গলমহলে আমরা শান্তি প্রতিষ্ঠা করব, আমাদের সরকার করেছে। আমরা বলেছি ক্ষমতায় আসার পর আমরা সিঙ্গুরে জমি ফিরিয়ে দেব, আমাদের সরকার দিয়েছে। আমরা বলেছি ক্ষমতায় আসার পর গ্রামেগঞ্জে আমরা ঝকঝকে তকতকে রাস্তা তৈরী করে দেব, আমরা দিয়েছি। আমরা বলেছি ক্ষমতায় আসার পর গ্রামেগঞ্জে বাড়িতে বাড়িতে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পরিষেবা আমরা দেব, আমরা দিয়েছি।
আর তারা কী বলেছিল? ‘আচ্ছে দিন আনে ওয়ালে হ্যায়’-বলে ভারতবর্ষকে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে। চা বিক্রী করার কথা বলে নরেন্দ্র মোদিকে প্রধানমন্ত্রী করেছে। আমরা সম্মান জানাই যারা চা বিক্রী করে তাদের। কিন্তু আজকে আমি মনে করি ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী যারা চা বিক্রী করে তাদেরকেও কলুষিত করেছে, কালিমালিপ্ত করেছে, অপমানিত করেছে। আমরা কোনওদিন ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রীকে হাতে কেটলি নিয়ে চা বিক্রি করতে দেখিনি কিন্তু আমরা বাংলার শ্রদ্ধেয়া মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে টালির চালে বসবাস করেন। ৫০০ টাকার শাড়ি, পায়ে ৩০০ টাকার চপ্পল পরে বাংলার সার্বিক উন্নয়ন পরিচালনা করতে দেখেছি।
দীর্ঘ ৩৪ বছরে আমি কোনও মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রামেগঞ্জে ঘুরে ঘুরে এসডিও, বিডিও, আইসি, এসপির কাছে গিয়ে উন্নয়ন পরিচালনা করতে দেখিনি। কোনও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যের মত উন্নয়ন করতে পারেননি। বাংলা ছাড়া আরও ২৮টি রাজ্য রয়েছে। কোথাও এক শতাংশের উন্নয়নের হিসাব এরা দিতে পারবে না।
এরা খালি সাম্প্রদায়িকতার কথা বলে বাংলাকে বিভক্ত করে আগুন জ্বালাতে চায়। এরা চায় না উন্নয়ন হোক। সিপিএম যে কায়দায় বাংলাকে পিছিয়ে রেখেছিল একই ভাবে বিজেপি সেই কালো দিনগুলো বাংলায় ফিরিয়ে আনতে চাইছে। আমরা রুখে দাঁড়াব আমরা এ হতে দেব না।
সিপিএম কী বলত? এলোমেলো করে দে মা, লুটেপুটে খাই, গরীব করে রেখে দে মা, ভোটটা যেন পাই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজকে একাধিক উন্নয়ন করে গরীব মানুষের অগ্রগতি ঘটিয়েছে। লাঞ্ছিত, অত্যাচারিত, নিপীড়িত, শোষিত মানুষকে আজকে উন্নয়নের আলোয় আলোকিত করেছে। আমরা কন্যাশ্রী করেছি, আমরা যুবশ্রী করেছি, আমরা গতিধারা করেছি, আমরা রূপশ্রী করেছ, আমরা গীতাঞ্জলি করেছি, আমরা নিজ ভূমি নিজ গৃহ করেছি, আমরা শিশুসাথী করেছি। একটা বাচ্চা যদি জন্মায় সবুজশ্রী দিয়ে শুরু হচ্ছে আর কেউ যখন মারা যাচ্ছে তাহলে বৈতরণী দিয়ে শেষ হচ্ছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উন্নয়নের জন্য রাজনীতি করেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তোষণের ও ভোটব্যাঙ্কের জন্য রাজনীতি করেননি। আমি প্রমাণ করতে পারি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কন্যাশ্রী দিয়েছেন, সাইকেল দিয়েছেন,মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছোট ছোট বাচ্চাদের পায়ে জুতো তুলে দিয়েছেন, ব্যাগ তুলে দিয়েছেন, বিনামূল্যে চিকিৎসা করার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
মাথায় রাখবেন সবুজ সাথির সাইকেল যারা পেয়েছে, কেউ ইলেভেনে পরে, কেউ দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়ে, কেউ নবম শ্রেণীতে পড়ে, কেউ দশম শ্রেণীতে পড়ে। অর্থাৎ,ভোটাধিকার প্রয়োগ করার পর্যাপ্ত বয়সেও সে পেরোয়নি। তাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার বাড়িতে উন্নয়ন পৌঁছে দিয়েছেন।
আগামীদিন তুমি তোমার মা-বাবা, তোমার পরিবার, গুরুজনদের গৌরবান্বিত করবে। নিজে সমাজ গড়, আগামীদিন ভবিষ্যৎ গড়। ভোট তোমায় দিতে হবে না, নিজেকে শক্তিশালী করো। এই হচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অন্যদের মধ্যে পার্থক্য।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বলেছিলেন, “তোমরা আমাকে রক্ত দাও ,আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব।” দিলীপ বাবু, মোদী বাবু, অমিত বাবুরা কি বলেন? “তুমি আমাকে ভোট দাও, আমি তোমাকে রক্তস্নাত দেব।” অন্যদিকে আমাদের দিদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “হে বাংলার বীর ,বাংলার মা-মাটি-মানুষ, তুমি আমাকে বাংলায় ৪২-এ ৪২ দাও, আমি আগামীদিন তোমাকে আমি ধর্মনিরপেক্ষ,ঐক্যবদ্ধ ,শান্তিপ্রিয়, শক্তিশালী ভারতবর্ষ দেব।” এই হচ্ছে আমাদের নেত্রী।
আমাদের নেত্রী এগিয়ে গেছে ,আমাদের নেত্রীকে কেউ দমাতে পারেনি। বিজেপি হাজার চেষ্টা করেছে – পিছনে সিবিআই লেলিয়ে দিয়ে, ইডিকে লাগিয়ে দিয়ে, ইনকাম ট্যাক্সকে লাগিয়ে দিয়ে, ধমকে -চমকে, চোখ রাঙিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসকে দমানোর চেষ্টা করেছে, কিন্তু তারা করতে পারেনি, কারণ আমাদের নেত্রীর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আমাদের নেত্রী আমাদের আন্দোলন, ত্যাগ, লড়াই, সংগ্রাম, তিতিক্ষার কথা শিখিয়েছেন। আর যারা ভাবে দু’চারটা হুঙ্কার দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হওয়া যায়, তাদের বলি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার আবেগ, অহংকার। খেটে খাওয়া মানুষের আত্মত্যাগের নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বস্তরের বুথকর্মী, শুভানুধ্যায়ীদের বলে যাবো আপনারা আপনাদের বুথে পড়ে থাকুন। আপনারা ৪২শে ৪২ দিন; মোদীকে উৎখাত করার দায়িত্ব আমাদের। বাংলার মানুষকে ৪২শে ৪২ দিতে হবে।
আজকেও আমাদের সাংসদরা সংসদে ধর্ণায় বসেছে। কি বলেছেন? প্রতিবাদ জানিয়েছেন যে ভারতবর্ষের কৃষকদের ঋণ মুকুব করতে হবে। আমরা এমন একজনকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে পেয়েছি যে পুজিঁপতি,কোটিপতিদের ৩ লক্ষ টাকার ঋণ মুকুব করেছে। কিন্তু কৃষকদের মুখে দিকে ফিরে তাকায়নি। আর সেখানে আমাদের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কৃষকদের জমির খাজনা মকুব করেছেন, মিউটেশন ফি মকুব করেছেন, একাধিক উন্নয়নমূলক পরিষেবা বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন।
যারা হিন্দু ধর্মের বাহক বলে নিজেদেরকে দাবি করে, আমি জিজ্ঞেস করতে চাই হিন্দু ধর্মের জন্য কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদির সরকার গত পাঁচ বছরে কোন কাজটি করেছে? একটি কাজ করেছে। কি জানেন? সেই কাজের নাম হচ্ছে নমামি গঙ্গে – গঙ্গা পরিষ্কার করার অভিযান। তার দুর্নীতির পরিমান কত? ৩ হাজার কোটি টাকা। গঙ্গা পরিষ্কার করার নাম করে ৩ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করেছে এই ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার।
আমরা সিপিএমের মতো নাস্তিক নই, আর বিজেপির মতো ধর্ম বিক্রী করে রাজনীতি করতে হয় না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হিন্দু ধর্মের জন্য আজ যা করেছেন ভারতবর্ষের অন্য্ ২৮টা মুখ্যমন্ত্রী করেননি। দক্ষিণেশ্বরের স্কাইওয়াক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করেছেন। অন্যদিকে গঙ্গাসাগর – হিন্দুদের বাৎসরিক মিলনক্ষেত্রের – আমূল পরিবর্তন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে হয়েছে। ভগিনী নিবেদিতার বাড়ি হেরিটেজ ঘোষণা করার কাজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করেছেন। কালীঘাটে এসপি মুখার্জী রোড থেকে শুরু করে কালীমন্দির গর্ভগৃহ পর্যন্ত ১২৫ কোটি টাকা ব্যয় করে নতুন স্কাইওয়াক আগামীদিন নির্মাণ হতে চলেছে। এছাড়া বেলুড় মঠে বাস সার্ভিস থেকে শুরু করে একাধিক উন্নয়নমূলক কাজ, তারাপীঠের উন্নয়ন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করেছেন।
আমরা হিন্দু ধর্মের জন্য কাজ করবো, আমরা সংখ্যালঘুদের জন্য কাজ করবো। আমরা শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, খ্রীষ্টান – সবার জন্য কাজ করতে বদ্ধপরিকর। আমাদের স্বামীজি শিখিয়েছেন যে ধর্ম আমাদের কোনওদিন বিভাজনের রাজনীতি শেখায়না। আমাদের ধর্ম শিখিয়েছে নিজের ধর্মের প্রতি আস্থাশীল আর পরের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে।
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে স্বামীজি বার বার বলেছেন, “আমাদের ধর্ম আমাদের সমাজকে যদি শক্তিশালী করতে হয় সর্বক্ষেত্রে স্বাধীনতার প্রয়োজন। আমাদের শিক্ষায় স্বাধীনতার প্রয়োজন, আমাদের বস্ত্রে স্বাধীনতায় প্রয়োজন,আমাদের বিবাহে স্বাধীনতায় প্রয়োজন। আমাদের খাদ্যে স্বাধীনতার প্রয়োজন।”
সেই স্বামীজির মূর্তিকে সামনে রেখে নরেন্দ্রমোদী প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। আজকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সেই স্বামী বিবেকানন্দ – যিনি আমাদের কাছে আবেগ – কে সামান্য সম্মানটুকু নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি সরকার দেয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই বেলুড় মঠকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এটাই হচ্ছে তাদের সঙ্গে আমাদের নেত্রীর পার্থক্য।
এই জঙ্গলমহল, এই গোয়ালতোড়, এই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কি অবস্থায় ছিল। গত সাত বছরে একটা দূর্নীতি, একটা দুঃশাসন, একটা অপশাসন, একটা ব্যার্থতার ঘটনা সরকারকে কেন্দ্র করে কেউ দেখাতে পারবে? গত সাত বছরে একটা কৃষক আত্মহত্যা হয়নি, শিশুমৃত্যুর হার কমেছে। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে উন্নয়ন করেছেন, আগামীদিন আমাদের নেত্রীর হাতকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।
তাই আসুন, আগামীদিন ১৯শে জানুয়ারি ব্রিগেড চলো-র ডাক দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই ব্রিগেডে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার প্রত্যন্ত প্রান্ত থেকে যে স্বতস্ফুর্ততা, যে ধৈর্য এবং যে আবেগের পরিচয় আজকে আপনারা এই সভা ঘিরে দিয়েছেন আমি সুনিশ্চিত হয়ে নেত্রীর কাছে আশ্বস্ত করতে পারব যে আগামীদিন শুধুমাত্র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাই ব্রিগেড ভরিয়ে দেবে, অন্য জেলার দরকার পড়বে না।
আপনারা যেভাবে আমাদের পাশে রয়েছেন এবং যে ভালবাসা কৃতজ্ঞতার মধ্যে আমাদের আবদ্ধ করেছেন আমি কথা দিয়ে যাচ্ছি আপনারা উন্নয়নের পাশে থাকুন, আপনারা শান্তির পাশে থাকুন, আপনারা তৃণমূলের পাশে থাকুন। মা-মাটি-মানুষের কান্ডারী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত আগামীদিনে শক্তিশালী করে তুলুন।
আমি বলেছিলাম ২০১৯ বিজেপি ফিনিশ। তার আগেই ১৮’তে ভোকাট্টা হয়ে গেছে। এদের কোনও ভবিষ্যৎ নেই। আগামীদিন দেখবেন দলটাই উঠে যায়। যেভাবে ১৩০ কোটি মানুষকে নোটবন্দির নামে লাইনে দাঁড় করিয়েছে মাথায় রাখবেন ১৫২ জনের প্রাণ গিয়েছে লাইনে আর রাস্তায় দাঁড়িয়ে রোজ যে প্রাণ দিয়েছেন তাদের মধ্যে ১৫২ জনই হিন্দু। এরা হিন্দু ধর্মের কথা বলে।
গোরক্ষপুরে ১৮০ জন শিশু অক্সিজেনের অভাবে মারা গেল। এদের প্রত্যেকেই হিন্দু, আজকে ৮ জন কৃষককে মধ্যপ্রদেশে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের থেকেও নৃশংস্বভাবে মারা হয়েছে নিজেদের দাবী দাওয়া নিয়ে কথা বলতে গিয়েছিল বলে। এদের সকলে হিন্দু।
যারা ভাবছেন হিন্দু-মুসলমান করে নিজেদের লালসা স্বার্থ চরিতার্থ করতে পারবেন, তারা মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন। আমাদের সদা সচেতন এবং সতর্ক থাকতে হবে। এই সাম্প্রদায়িক অসুরগুলোকে আগামিদিন ঝেঁটিয়ে বিদায় দিয়ে আমাদের বাংলাকে এবং গোয়ালতোড়কে আবর্জনামুক্ত করতে হবে।
আপনাদের মানসিকতা ঠিক রাখুন, লড়াইয়ের, আন্দলনের মানসিকতা, আবেগ সঞ্চারিত করুন। আগামীদিন জোগদার লড়াই হবে। জীবন গেলে যাবে, প্রাণ গেলে যাবে, বাংলা মায়ের জন্য যাবে, কিন্তু বিজেপির মাথাচাড়া দেওয়া গনতান্ত্রিক ভাবে আমরা রুখে বাংলাকে দ্বিখন্ডিত করতে দেব না।
যত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধীতা করবে তত মুখ থুবড়ে পড়বে।
২০০৯ সালে আমরা ১৯ টা লোকসভা আসনে জিতেছিলাম। ২০১৪ সালে আমরা ৩৪টি আসনে জয়যুক্ত হয়েছি। আপনারা আরও কুৎসা করুন, আমাদের কর্মীদের রাস্তায় নেমে লড়াইয়ের মানসিকতাটা আরও তীব্র হবে এবং তৃণমূল কংগ্রেস ৪২-এ ৪২ হবে।
২০১৯ বিজেপি ফিনিশ। বিজেপি হটাও দেশ বাঁচাও। আরএসএস হটাও দেশ বাঁচাও। দড়ি ধরে মারো টান, বিজেপি হবে খান খান।