সাম্প্রতিক খবর

ডিসেম্বর ২১, ২০১৮

শীতে উৎসবের রঙ লেগেছে ধূসর সংশোধনাগারেও

শীতে উৎসবের রঙ লেগেছে ধূসর সংশোধনাগারেও

প্রত্যেকে যাঁর যেটা সেরা সৃষ্টি, সেই পণ্য নিয়ে পসরা সাজাবেন। তাঁদের কাছ থেকে পছন্দের জিনিস কিনতে পারবে আমজনতা। গামছা থেকে বুটিকের কাজ, ছবি-হাতের কাজ থেকে কেক-পেস্ট্রি–সবই থাকবে সেই তালিকায়। থাকবে চপ-কাটলেট, মোগলাই-বিরিয়ানিও। শীতে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে খেলা-মেলার আমেজ থেকে বাদ যাচ্ছেন না গরাদের ও-পারের আবাসিকরাও। দু’দিনের ‘উইন্টার কার্নিভাল’ শুরু হচ্ছে প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের মাঠে। ২২ ও ২৩ ডিসেম্বরের সেই কার্নিভালে বন্দীরা বিকিকিনিতে সামিল হবেন। মেলায় যে ভাবে দেখেশুনে পছন্দের সামগ্রী কিনতে পারেন সাধারণ মানুষ, এখানেও সেই সুযোগ মিলবে।

কারা দপ্তর সূত্রের খবর, বন্দীকল্যাণ তহবিল থেকে কার্নিভালের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। আবার জেলবন্দীরা এখানে জিনিসপত্র বিক্রী করে যে আয় করবেন, সে টাকাও জমা পড়বে ওই কল্যাণ তহবিলেই। কারা দপ্তরের ডিআইজি (প্রেসিডেন্সি), প্রেসিডেন্সির সুপার-সহ অন্য আধিকারিকরা মেলার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখেন।

সংশোধনাগার সূত্রে জানা গিয়েছে, কার্নিভালে শুধু প্রেসিডেন্সির বন্দীরাই নন, আলিপুর, বহরমপুর, দমদম, মেদিনীপুর, আলিপুর মহিলা সংশোধনাগারের আবাসিকরাও সামিল হবেন। সব মিলিয়ে ১২টি স্টল থাকবে। নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ও জেলরক্ষীদের একটি কন্ট্রোলরুম খোলা হবে। প্রতিটি সংশোধনাগার তাদের আবাসিকদের তৈরী সেরা পণ্য হাজির করবে জনতার সামনে। যেমন, প্রেসিডেন্সির আর্ট ফোরামের সদস্যদের তৈরী বুটিকের কাজ, পেন্টিং থাকবে স্টলে। জারদৌসি বা হ্যান্ডপ্রিন্টের কাজ করা পাঞ্জাবি, শাড়ি, কুর্তি, জ্যাকেটও মিলবে।

আলিপুর সংশোধনাগারের বন্দীদের হাতে তৈরী জিনসের প্যান্ট পাওয়া যাবে এখানে। সঙ্গে থাকবে ঘর সাজানোর নানা সামগ্রী। আলিপুর মহিলা সংশোধনাগারের বন্দীরা আবার কুকিজ-কেক-পেস্ট্রি তৈরীতে হাত পাকিয়েছেন গত কয়েক বছরে। দমদমের বন্দীদের তৈরী পাটজাত সামগ্রীর ফাইল, ফোল্ডার, ব্যাগ ইতিমধ্যে সরকারি দপ্তরে ব্যবহার হচ্ছে। এগুলিও সাধারণ মানুষ বন্দীদের স্টল থেকে কিনতে পারবেন। থাকবে বহরমপুরের বন্দীদের তৈরী গামছা, মেদিনীপুর সংশোধনাগারের চাদরও।

সংশোধনাগারের এক আধিকারিক জানান, এর আগেও বন্দীরা নিজেদের সামগ্রী বিক্রীর সুযোগ পেয়েছেন। তবে সে আয়োজন আয়তনে ছিল অনেক ছোট। এ বার কলেবরে বাড়ছে। প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের ক্যান্টিনে তৈরী চপ-পকোড়া-বিরিয়ানি-মালপোয়াও হাতে গরম কিনে খেতে পারবেন ক্রেতারা। এ-সব অবশ্য লাভ রেখে বিক্রী করা হবে না। শুধুমাত্র খাবার তৈরীর দামটুকুই নেবেন বন্দীরা। তাঁদের আঁকা ছবি ও নাটকও থাকবে দর্শকদের মনোরঞ্জনের জন্য। কার্নিভালের জন্য এখন বন্দীদের প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে।
তাঁদের নিজেদের বিনোদনের জন্যও থাকছে আলাদা অনুষ্ঠান। প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারের ভিতরের মাঠে মণ্ডপ তৈরী হয়েছে। হাজার দেড়েক বন্দীর জন্য থাকবে বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পীর গান। হবে নাটকও। কারা আধিকারিকদের কথায়, ‘শীত মানে তো মেলা আর উৎসবের সময়। পরিবার-পরিজন ছেড়ে একঘেয়ে জীবনে বন্দীদেরও একটু স্বাদ বদলের ইচ্ছে হয়। কার্নিভালই সেই মঞ্চ।’

সৌজন্যেঃ এই সময়