ডিসেম্বর ৩, ২০১৮
আগামীদিনে বিজেপিকে বিদায় দেব: কেশিয়াড়িতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশিয়াড়িতে একটি সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঞ্চ থেকে তিনি বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করেন। নতুন জেলার মানুষদের মুখ্যমন্ত্রী বলেন এই জেলার উন্নয়নে সরকার বদ্ধপরিকর।
মুখ্যমন্ত্রী বক্তব্যের কিছু অংশ:
- এখানকার মানুষের দীর্ধদিনের দাবি ছিল নয়াগ্রামের সাথে কেশিয়াড়ি যুক্ত করার জন্য একটা ব্রিজ। ক্ষমতায় আসার পর আমরা এই ব্রিজ (জঙ্গলকন্যা) তৈরী করে দিয়েছি। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সঙ্গে ঝাড়গ্রাম যুক্ত হয়েছে। এখন মেদিনীপুর থেকে মাত্র দেড় ঘন্টায় দীঘা পৌঁছানো যায়।
- এই জেলায় ২০টি কর্মতীর্থ, কিষান মান্ডি, ৯টি কলেজ, ১০টি বেডের প্রাইমারি হাসপাতাল, আইটিআই, পলিটেকনিক কলেজ, ব্রিজ, নতুন রাস্তা, তৈরী করে দেওয়া হয়েছে।
- কেন্দু পাতা সংগ্রহকারীরা আগে ৩৭ টাকা পেতেন, এখন তা দ্বিগুন হয়েছে। ৬০ বছর বয়সের পর ২ লক্ষ টাকা পেনশন পান।
- লোকপ্রসার প্রকল্পের আওতায় ২ লক্ষ শিল্পীকে মাসিক ভাতা দেওয়া হয়। সরকারি অনুষ্ঠান বা বিজ্ঞাপনে কাজ করেন তারান
- এখন মানুষ ২ টাকা কিলো চাল পান। এখন মানুষ দু’বেলা খেতে পাচ্ছেনv একটা শিশু জন্মালে গাছ পাচ্ছে সবুজশ্ৰী প্রকল্পে।
- কন্যাশ্রী মেয়েরা স্কলারশিপ পায়; স্কলারশিপের টাকা ৭০০ থেকে বেড়ে ১০০০ টাকা করা হয়েছে। ১৮ বছর বয়সের পর পড়াশোনা চালিয়ে গেলে আরো ২৫০০০ টাকা পাচ্ছে। কলেজের জন্য কে-২ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কে-৩ শুরু করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা বিভাগের জন্য পাবে ২০০০ টাকা, বিজ্ঞান বিভাগে পাবে ২৫০০ টাকা। এখন সরকারি স্কুল-কলেজের সব মেয়েরাই কন্যাশ্রী পাবে; কোন সীমারেখা নেই।
- সরকার নতুন প্রকল্প করেছে রূপশ্রী – যাদের বার্ষিক আয় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা তাদের মেয়ের বিয়ের জন্য ২৫,০০০ টাকা আর্থিক সাহায্য দিচ্ছে সরকার।
- শশ্মান ঘাট বাঁধানো হয়েছে, কবরস্থান নির্মাণ করা হয়েছে, আদিবাসীদের জন্য ৩০০ জহরথান করে দেওয়া হয়েছে।
- হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে। সবুজ সাথীর সাইকেল দিচ্ছে সরকার, গতিধারায় গাড়ি দেওয়া হচ্ছে, কৃষকদের পাম্প সেট দেওয়া হচ্ছে।
- আগে বন্যায় ভাসতো মেদিনীপুর জেলা। ৬০০ কোটি টাকা খরচ করেছে আমাদের সরকার যাতে এখানে বন্যায় মানুষের অসুবিধে না হয়। রাজ্য সরকারের দীর্ঘ দিনের দাবি ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান। কিন্তু ওটা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে, কাজ না করে রাজনীতি বেশি করছে।
- একটা পার্টিকে আপনারা এখানকার কিছু কিছু গ্রাম সভায় জিতিয়েছেন; তারা কতটা বিপজ্জনক আপনারা জানেন না। আপনাদের ভিটেমাটি বিক্রি করে দেবে, কোন কাজ করবে না।
- ওরা সব ঐতিহাসিক স্থানগুলির নাম বদল করে দিচ্ছে।
- আরবিআই হেকে সিবিআই – সব ইনস্টিটিউশনগুলির পরম্পরা নষ্ট করে সেখানে বিজেপির সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যা আগে কখনো হয়নি।
- ওরা পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে হিন্দু-মুসলমনের মধ্যে ভাগাভাগি করছে। আমরা বাংলায় যেমন কনকদুর্গার মন্দির, দক্ষিনেশ্বর মন্দির, কালীঘাট মন্দির, তারাপীঠ এর উন্নয়ন যেমন করি, তেমন কবরস্থান, মাদার মিউজিয়াম সব কিছু করে দিই।
- আমরা সব ধর্মের সব ঐতিহ্য পালন করি। আমরা সব ধর্মের মানুষের জন্য কাজ করি।
- ওরা করার থেকে বেশি ভাঙবে, হিন্দু-মুসলমান-আদিবাসীদের মধ্যে ভাগাভাগি করবে। ওরা ক্ষমতায় আসার পর এক গরিব মানুষ যে পান বিক্রি করতো তাকে খুন করে দিলো। আমাদের সরকার তার ছেলেকে চাকরি দিয়েছে, পরিবারকে সাহায্য করেছে।
- আজ আমাদের সভায় আসার পথে আমাদের এক কর্মীকে মারধোর করেছে, সে হাসপাতালে ভর্তি।আমি শুধু বলবো সাহস থাকা ভালো কিন্তু দুঃসাহস নয়।
- আমি শুধু বলবো সাহস থাকা ভালো কিন্তু দুঃসাহস নয়। তৃণমূল কংগ্রেসের গায়ে হাত দিয়ে তোমার ভুল করেছো, তোমাদের জ্বালিয়ে দেওয়ার, পুড়িয়ে দেওয়ার রাজনীতিতে আমরা বিশ্বাস করি না। আইন আইনের পথে চলবে।
- দিল্লির চোখ রাঙানি আমাদের দেখাবে না। দুদিন পর দিল্লি শূন্য হয়ে যাবে ভারতবর্ষের রাজনীতি থেকে।
- সিপিএমকে আমরা বিদায় দিয়েছি, আগামীদিনে বিজেপিকেও বিদায় দেব – এটা আমাদের প্রতিজ্ঞা, এটাই আমাদের শপথ, এটাই আমাদের অঙ্গীকার।
- দিল্লি থেকে নেতারা আসে, আগুন লাগিয়ে দিয়ে চলে যায়। আর সেটা আমাদের নেভাতে হয়। সব সুবিধা, সব প্রকল্প রাজ্য দেয় আর কেন্দ্রীয় সরকারের ওই গেরুয়াগুলো দালালি করে।
- রামকৃষ্ণ মিশন, গঙ্গাসাগরের সাধুদের আমরা সম্মান করি, কিন্তু বিজেপিকে আমরা সম্মান করি না কারণ ওদের পুরোটাই নাটক, রাবণযাত্রা।
- রাবণবধের জন্য রামচন্দ্র লড়াই করেছিল, তাই রাজনীতির মধ্যে দিয়ে রাবণকে তো বোধ করতেই হবে। আগামীদিন সেজন্য আমরা প্রস্তুত।
- আমাদের সরকার অলচিকি স্কুলে স্কুলে চালু করেছে। প্যারাটিচার্সদের দিয়ে অলচিকি পড়া চালু করেছে মা-মাটি-মানুষের সরকার। অলচিকি অভিধান প্রকাশ করেছে আমাদের সরকার। এই ভাষায় সিলেবাস আমাদের সরকার তৈরী করেছে। এর আগে কেউ তা করেনি। দিল্লী থেকে যারা আসে তাদের জিজ্ঞেস করুন, ঝাড়খন্ডে ওরা করতে পেড়েছে কিনা। ওখানে তো একটাই নীতি, আদিবাসীদের জমি কেড়ে নাও। আর এই রাজ্যে আমরা যাতে আদিবাসীদের জমি কেউ কেড়ে নিতে না পারে, তার জন্য আইন করা হয়েছে।
- আমাকে একটা রাজ্য দেখান যারা খাজনা মকুব করেছে কৃষিজমিতে। একমাত্র আমরা করেছি। মিউটেশন ফি মকুব করে দেওয়া হয়েছে। কৃষিভাইদের শস্যবীমার টাকাও সরকার দেয়। বিজেপির কেন্দ্রীয় সরকার দেয় না।
- আজকে ভারতবর্ষের সমস্ত বড় বড় প্রতিষ্ঠান এরা ভেঙ্গে দিতে চাইছে। বাবাসাহেব আম্বেদকারের করা ভারতের সংবিধান ওরা ধ্বংস করে দিতে চাইছে।
- আজও হাজার, হাজার মানুষ নোটবন্দীর কারণে অসহায়, সহায়সম্বলহীন হয়ে আছে। আমরা চেষ্টা করেছি তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে।
এখন ওরা হুঙ্কার দিচ্ছে, সবাইকে তাড়িয়ে দেবে। সবাইকে তাড়িয়ে দিয়ে উনি একা ঢাকঢোল বাজাবেন? এরা জানে না মানুষের গায়ে হাত দিলে মানুষ প্রতিবাদ করে। এটা অসম নয়, এটা বাংলা। অসমে যারা নথিভুক্ত ভোটার, তাদের পাশে আমরা আছি। এবং বাংলাতেও মনে রাখবেন, আমরা থাকাকালীন কারুর গায়ে হাত দেওয়া যাবে না, কারণ বাংলা সবার, বাংলা সাধারণ মানুষের।
- আপনাদের ঘরের ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে ভালো পড়াশুনো করবে। তাই জন্যে আমরা উচ্চশিক্ষার ট্রেনিং দিই। আদাবাসী ভাই-বোনেরা উচ্চশিক্ষার জন্য সফট লোন ১০ লক্ষ টাকা অবধি পায় আর বিদেশে গেলে সরকার তাদের ২০ লক্ষ টাকা অবধি দেয়।
আমাদের ঘরের মেয়েরা টাকার অভাবে পড়াশুনো করতে পারবে না, সেটা আমি চাই না। তারা আমাদের গর্ব।তাইতো কন্যাশ্রী আমাদের বিশ্বশ্রী, আর এরা মায়ের বোঝা নয়। আমি বলব সবুজসাথী, কন্যাশ্রী যারা পেয়েছ, তোমরা বড় হবে, মা-বাবাকে ভালোবাসবে, তাদের দেখবে, নিজেদের পায়ে দাঁড়াবে, কারুর কাছে ভিক্ষা চাওয়ার প্রয়োজন তোমাদের নেই। মাথা নিচু করে চলবার প্রয়োজন নেই, আমি চাই তোমরা সারা বিশ্বে নাম করবে।
মেদীনিপুর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ক্ষুদিরাম, প্রফুল্ল চাকি, মাতঙ্গিনী হাজরার জন্মভূমি। সুতরাং মনে রাখবেন এখানকার লোকেরাই স্বাধীনতা এনেছিল আর আগামীদিনে কেন্দ্রে বিজেপি-কে তাড়াতে মুখ্য ভুমিকা পালন করবে।
এরা গান্ধীজীকে মানে না, নেতাজীকে সম্মান দেয়নি, রবীন্দ্র-নজরুল কে মানে না। নির্বাচনের সময়ে রাবণ-যাত্রার নামে পার্টি-র প্রতীকের নিচে রবীন্দ্র-নজরুল-নেতাজীর নাম দিয়ে তাঁদের অসম্মান করছে এই দল।
- স্বামী বিবেকানন্দ বলতেন তিনি মেথর, চামার, কৃষক, গরিব, সবার ঘর থেকে ভারতবর্ষ বেরবে, কোনও ভাগাভাগি করা যাবে না। কোনও ধর্মে ভাগাভাগিতে তিনি বিশ্বাস করেননি। আজকে এরা এদের নাম ভাঙ্গাচ্ছে।
আমি তাই বলব, আপনারা সরকারের যা যা পরিষেবা, সব পাবেন, এই জেলা নয়, সারা বাংলা তা পাবে। প্রত্যেকটা গরিব লোক তাদের প্রাপ্য পাবে। যাতে তারা অবহেলিত, বঞ্চিত না হয়।
- ছাত্র-যৌবনকে আমি বলব, অনেক কর্মসংস্থান হয়েছে আগামীদিনে আরও হবে, মাথা নিচু করার কোনও কারণ নেই।
- দয়া করে ভুল বুঝবেন না, আমার ওপর আপনাদের সমর্থন, আপনদের ভালোবাসা রাখবেন, কেউ বাইরে থেকে উলটো-পাল্টা বোঝালে কানে নেবেন না।