ডিসেম্বর ২৮, ২০১৮
বাংলার সঙ্গে কেন্দ্র বিমাতৃসুলভ আচরণ করে: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাগর দ্বীপে সুন্দরবন কাপের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সেই মঞ্চ থেকে তিনি একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করেন। একাধিক সরকারি পরিষেবাও তিনি বিতরণ করেন।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের কিছু অংশ:
- ২০১১ সাল থেকে আমি প্রতি বছর গঙ্গাসাগর মেলা পরিদর্শনে আসি
- কথাতেই আছে ‘সব তীর্থ বারবার, গঙ্গাসাগর একবার’
- কুম্ভ মেলা দর্শন করতে গেলে জল পার করে যেতে হয় না কিন্তু গঙ্গাসাগর আসা অনেক কঠিন, কারণ নৌকা বা লঞ্চে করে সাগর পেরিয়ে মানুষকে এখানে আসতে হয়। ২০-৩০ লক্ষ মানুষ আসে এই মেলা পরিদর্শনে। জোয়ার ভাঁটার সময় পাড়ে ঠাণ্ডায় লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়
- এটা পবিত্র স্থান, পবিত্র ভূমি। এখানে মানুষ আসে পুণ্য অর্জন করতে
- ২০১২ সালে আমরা যখন ক্ষমতায় এসেছিলাম গঙ্গাসাগর তখন নোংরা ভাবে ছিল। কিছু তৈরি করা ছিল না, কিন্তু আজ এখানে কটেজ, হোস্টেল, ঘাট, কপিল মুনির আশ্রম তৈরি হয়েছে। আগে মানুষ এলে থাকার জায়গা ছিল না আর এখন এখানে সারা বছর পর্যটকরা আসেন
- আমরা কেন্দ্রীয় সরকারকে বলেছিলাম এখানে একটা গভীর বন্দর তৈরি কর। সেটাও করল না। তাজপুরের সাগরে তাজপুর বন্দর, যেটা দীঘায় হবে, আর হলদিয়ায়। আমাদের বলল তোমরা আমাদের ৭৪% শেয়ার দাও তাহলে আমরা একটা লোহার ব্রীজ করে দেব ,মুড়িগঙ্গার উপরে। আমি বললাম ঠিক আছে ৭৪% শেয়ার নাও কিন্তু আমাদের একটা লোহার ব্রীজ করে দাও। আমি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ৭৪% শেয়ার তোমাকে দিয়ে দিচ্ছি। ৩-৪ বছর হয়ে গেলো কোন উচ্চ-বাচ্যই নেই। বাংলাটাকে যেন মনে করে—বিমাতৃসুলভ আচরণ করে।
- কেন্দ্র বাংলার উন্নয়নের জন্য এক পয়সাও দেয় না
- দেশের সব জায়গা থেকে মানুষ এই গঙ্গাসাগর মেলায় আসে কারণ এটা আমাদের পবিত্রভূমি। সাগর দ্বীপের জন্য কি করেছে কেন্দ্র?
- আমরা বকখালি উন্নয়ন বোর্ড গঠন করেছি। হাতানিয়া-দোয়ানিয়া ব্রিজ মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। সেই ব্রিজ এর কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পথে
- সুন্দরবন আলাদা জেলা তৈরি হচ্ছে। এরপর আর এখানকার মানুষদের আলিপুর বা ডায়মন্ড হারবারে ছুটে যেতে হয় না
- সুন্দরবনের জন্য আলাদা পুলিশ জেলা তৈরি হয়েছে, সাগরের জন্যও আলাদা পুলিশ স্টেশন তৈরি হয়েছে। এছাড়া কোস্টাল পুলিশ স্টেশন, কিষাণ মাণ্ডি, শিক্ষার জায়গা, মাল্টি সুপার হাসপাতাল তৈরি হয়েছে
- মৎস্যজীবীদের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে
- শস্য ও ফসল বিমার টাকা যেটা আসছে সেটা রাজ্য সরকার দিচ্ছে, কেন্দ্র নয়। কৃষকদের কোন প্রিমিয়াম দিতে হয় না। আমরা প্রিমিয়াম দিই। ব্যাঙ্কটা ওদের তাই প্রকল্পের ব্যাপারে ওরা মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে। ৮০% টাকা রাজ্য সরকার দেয়। কেন্দ্র শুধু দালালি করে। এবার থেকে আমরা সরাসরি কৃষকদের দিয়ে দেব
- অনেক এলাকায় এখনও কোন ব্যাঙ্ক নেই, কারণ কেন্দ্র টাকা দেয়নি। বিভিন্ন গ্রামে কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। অন্যান্য জায়গায় মোবাইল ভ্যানের মাধ্যমে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা করা হয়েছে
- কেন্দ্র শুধু আমাদের থেকে টাকা নিয়ে যায়, আমাদের প্রাপ্যটুকুও দেয় না। ১০০ দিনের কাজের টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে, আড়াই হাজার কোটি টাকা এখনো দেয়নি। সাধারণ মানুষের ইনকাম ট্যাক্সের টাকা, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সেসের টাকা, কাস্টমস ডিউটি সব কেন্দ্র পায়, রাজ্য নয়। আর প্রতি বছর আমাদের থেকে ৪০-৫০ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়ে যায়। আর আমাদের প্রাপ্য ১০ হাজার কোটি টাকাটাও আমাদের দেয় না। শুধু মানুষকে অবহেলা করে
- ভারতে রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকার উভয়ই মানুষের দ্বারা নির্বাচিত। কেন্দ্রীয় সরকারের কাজ রাজ্যকে সাহায্য করা, রাজ্যে গিয়ে আগুন লাগানো, মানুষের টাকা আটকে দেওয়া এগুলো কেন্দ্রীয় সরকারের কাজ নয়। শুধু পর রাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা দপ্তর ওদের হাতে, বাকি স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্য, আইন-শৃঙ্খলা, কর্মসংস্থান সব রাজ্য করবে
- নোটবন্দীর নামে সব নোট কেড়ে নিল, আর ইলেকশন এলে বলবে নোটের বদলে ভোট চাই
- আমি সব ধর্মকে সম্মান করি। আমি নিজের ধর্মকে সম্মান করি তাই বলে অন্যের ধর্মকে আমি অসম্মান করি না
- কপিল মুনি আশ্রমের মহন্ত জি বলেছেন আমাদের ভাঙা চলবে না, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ
- এক একজন মানুষের এক একটা খাবার পছন্দ। মানুষ নিজেদের পছন্দমত পোশাক পরবে। কে কি খাবে, কি পরবে, তা ওরা ঠিক করে দেওয়ার কে? ওরা মনে করে ওরাই একমাত্র হিন্দু ধর্মের রক্ষক! এই ধর্ম বিজেপির জন্মের অনেক আগে থেকে তৈরি হয়েছে।
- হিন্দু ধর্ম প্রাচীন ও বিশ্বজনীন। বিজেপির জন্মের অনেক আগে রামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দর জন্ম হয়েছে। আর এরা সব আজকের যোগী – যোগী না ভোগী? আমি কোন ঠাকুর পুজো করব তা ওরা বলে দেওয়ার কে? আমরা সব দেবতাকে সমানভাবে শ্রদ্ধা করি। সব ধর্মকে ভালবাসি।
- জগন্নাথ দেবের রথ যাত্রা আর শ্রীকৃষ্ণের রথযাত্রা হয়, কিন্তু তা মানুষ মারার রথযাত্রা নয়। ওরা দাঙ্গা যাত্রা করছে।
- যারা আজ সুন্দরবন কাপে পুরস্কার পেল, তারা সবাই সিভিক ভলেন্টিয়ারের চাকরি পাবে। আমরা ছেলেমেয়েদের উৎসাহ দিই যাতে তারা নিজের পায়ে দাঁড়ায়। আমরা চাই ওরা ভবিষ্যত আরও ভালো হোক।