ডিসেম্বর ৭, ২০১৮
ডায়মন্ড হারবারে নদীর পাড় সৌন্দর্যায়নের শিলান্যাস করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

শীতের গোড়াতেই পর্যটক ও পিকনিক পার্টিদের জন্য সুখবর। একেবারে বিদেশী বিনোদন পার্কের আদলে এবার ডায়মন্ড হারবারে গঙ্গার ধার ও সংলগ্ন এলাকাকে একেবারে আধুনিক ছাঁচে ঢেলে সাজানো হবে। এই প্রকল্পের শিলান্যাস করলেন সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
ডায়মন্ড হারবার জেটিঘাট থেকে নদীর ধার ধরে সৌন্দর্যায়নের কাজ শুরু হবে। তা শেষ হবে কেল্লার মাঠে গিয়ে।
তাঁর বক্তব্যের কিছু অংশঃ
আমরা আজকের যে ডায়মন্ড হারবার রিভারফ্রন্ট বিউটিফিকেশন প্রোজেক্টের শিলান্যাস করেছি তা আপনারা সকলে মিলে উপলব্ধি করেছেন বা চাক্ষুষ করেছেন। আমি এক বছর আগে এখানে এসেছিলাম; মাননীয় পর্যটন প্রতিমন্ত্রী আমার সাথে ছিলেন এবং সেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরের একাধিক আধিকারিকরা আমাদের সাথে ছিলেন। আমরা এক বছর আগে এই প্রোজেক্টের কাজ আমরা শুরু করেছিলাম। জেটিঘাট থেকে শুরু করে কেল্লার মাঠ পর্যন্ত সেচ দপ্তর, রাজ্য সরকার ছাড়াও কেন্দ্রীয় সরকারের রেলের কিছুটা জমি রয়েছে এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কিছুটা জমি রয়েছে। আমাদের ইচ্ছে ছিল মানুষকে একটা নতুন ডায়মন্ড হারবার উপহার দেওয়ার। আমরা পুরো কাজটা এই জমির ওপর করব। কিন্তু আপনারা জানেন কেন্দ্রীয় সরকার কোনওরকম সহযোগিতা করে না; তারা চায় না উন্নয়নের স্বাদ বাংলার মানুষ বা ডায়মন্ড হারবার এর মানুষ পান।
আমরা বলেছি আমরা থেমে থাকবো না। আমাদের রাজ্য সরকারের অধীনে সেচ দপ্তরে যে জায়গাটা রয়েছে এই দীর্ঘ দেড় কিলোমিটারের উপর আমাদের কাজ হবে। প্রথম পর্যায়ে জেটিঘাট থেকে কেল্লার মাঠ হবে আর বাকি জায়গা আমাদের সরকারের তরফ থেকে চিঠি দেওয়া হবে। কিন্তু তাদের ইচ্ছা অনুসারে কোন কাজ বাংলায় থেমে থাকবে না। বাংলার মানুষ চাইলে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাইলে ডায়মন্ড হারবার-এর মানুষ চাইলে উন্নয়নের কাজ বাংলায় চলছে এবং চলবে; কেউ আটকাতে পারবে না। আমরা কারোর কাছে মাথানত করতে রাজি নই।
আমাদের মানুষ দুহাত তুলে সমর্থন দিয়েছেন। আস্থা ভালবাসা দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাংলার প্রশাসনিক প্রধানের পদে বসিয়েছেন। আমরা বদ্ধপরিকর মানুষের জন্য কাজ করার লক্ষ্যে। আমরা সেই লক্ষ্যে অবিচল থেকে এগিয়ে যাব।
আমি যখন ২০১৪ সালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে রাস্তায় নেমেছিলাম তখন আমি প্রত্যেক জায়গায় গিয়ে মানুষকে কথা দিয়েছিলাম যে আমার সীমাবদ্ধতা অনুযায়ী, ক্ষমতা অনুযায়ী আমি উন্নয়ন করে দেখাবো। আপনারা শুনলে খুশি হবেন রাজ্য সরকার নয় কেন্দ্রীয় সরকার বলেছে বাংলার মধ্যে ডায়মন্ড হারবার এক নম্বর এবং সেটা কি করে করতে হয় তা আমরা করে দেখিয়েছি। তার পরের বছর ৬ জুন ২০১৬ সালে নিঃশব্দ বিপ্লব নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে আমার এক বছরের উন্নয়নের খতিয়ান বাংলার মানুষকে ডায়মন্ড হারবার এর মানুষকে দিয়েছি এবং তার পরের বছরও করেছি – ২০১৭ এ করেছি, ২০১৮য় করেছি, এবং ২০১৯এও হবে। আমরা পাঁচ বছরে একটা বই প্রকাশ করিনি। আমরা সাংসদ হিসেবে বছরে যে পাঁচ কোটি টাকা পাই এবং জেলা পরিষদের সহযোগিতায় যে কাজগুলো করেছি তার প্রত্যেক পয়সার হিসাব একটা পুস্তিকায় সাধারণ মানুষের কাছে হিসাব দিতে আমরা বদ্ধপরিকর এবং আমরা তো দিয়েছি।
৩৪ বছর যারা সরকার চালিয়েছে তারা রাজনীতির রাজ-টা মুখের নিচে দিয়ে শুধু নীতিটা চালিয়েছে। দুঃশাসনের রাজ, সন্ত্রাসের রাজ অনুন্নয়নেতে অনন্য ব্যর্থতার রাজ। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর রাজ-টা মুছে দিয়ে নীতিতে বিশ্বাস করেছেন। অর্থনীতি প্রবর্তন নীতি, উন্নয়নের নীতি আদর্শের নীতি, সততার নীতি, শান্তির নীতি, সম্প্রতির নীতি ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি। আমাদের নেত্রী আমাদের শিখিয়েছে মানুষের জন্য কাজ করে যেতে হবে আমাদের লক্ষ্যে অবিচল থেকে।
ডায়মন্ড হারবারের উন্নয়নের জন্য ১২ কোটি, ১৫ কোটি যা লাগবে তা আমরা দেব। আমি এলাকার মানুষকে অনুরোধ করবো আপনাদের পূর্ণ সহযোগীতা একান্ত প্রয়োজন, আমাদের প্রথম দিকে সংকল্প ছিল যে ক’টা দোকান ছিল তা পুননির্মাণ করবো, যে ক’টা গাছ ছিল সেগুলো সংরক্ষণ করব, যে ক’টা মন্দির ছিল সেগুলোকে কি করে সুন্দর করে রং করে পুনঃনির্মাণ করব।
কালীঘাট মন্দিরের গর্ভগৃহ থেকে এস পি মুখার্জী রোড পর্যন্ত স্কাইওয়াক হচ্ছে। বাংলা বৈচিত্রের মধ্যে একতার নীতি ও আদর্শে বিশ্বাস করে। ওরা ভারতবর্ষের মধ্যে এমন একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে দেখবেন – আমরা খাব তোমরা বাদ। বাংলায় আমরা কোন বিভাজনের রাজনীতিকে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দেব না। উন্নয়নের নিরিখে আগামী দিনে জবাব পাবে। আমি বার বার বলেছি আগুন নিয়ে ছেলেখেলা করবেন না।
আমরা ধর্ম বিক্রী করে রাজনীতি করি না। যে স্বামী বিবেকানন্দকে সামনে রেখে সারা ভারতবর্ষে প্রচার চালিয়ে ২০১৪ সালে ব্যবহার করেছে, সেই স্বামীজিকে সম্মান জানিয়ে বেলুড় মঠকে স্বীকৃতি পর্যন্ত দেয়নি। এটা লজ্জার। আপনারা নেতাজির আদর্শে সত্যি যদি বিশ্বাসী হয়ে থাকেন, তাহলে ওনার জন্মদিনে ছুটি পর্যন্ত দেন না, কেন? যাদের সর্বভারতীয় সভাপতি স্বস্তিকার ওপর দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিয়ে যান, তার নাকি হিন্দু ধর্মের ধারক বাহক।
আমি পরিবহন দপ্তরের সাথে কথা বলেছি; আগামী দিনে কপাটহাট থেকে সুন্দর তালুক এর ফুটপাথ এবং সৌন্দর্যায়ন করব। এর জন্য প্রায় ১০ কোটি টাকা খরচা হবে। আমরা পিছপা হব না। আমরা রাজনীতির জন্য উন্নয়ন করি না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কন্যাশ্রী দিয়েছেন, সবুজ সাথী দিয়েছেন, মমতা বন্দোপাধ্যায় রূপশ্রী দিয়েছেন, গতিধারা দিয়েছেন, ছোট্ট ছোট্ট পড়ুয়াদের স্কুলব্যাগ, জুতো জামাকাপড় দিয়েছেন। যাদের দিয়েছেন তারা কিন্তু কেউ ভোটার নয়। কেউ ক্লাস ৩ তে পড়ে, কেউ ১০-এ পড়ে, কেউ ১২-এ পড়ে। অর্থাৎ, মমতা বন্দোপাধ্যায় এর সরকার রাজনীতির জন্য উন্নয়ন করে না; উন্নয়নের জন্য উন্নয়ন করে। এটা আমরা প্রমাণ করেছি।