অক্টোবর ৪, ২০১৮
রেফার নয়, উন্নতি করেছে জেলার বহু সিসিইউ

মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ছাড়া জেলার অন্যান্য সরকারি হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটগুলিও রোগী পরিষেবা দেওয়ার নিরিখে চনমনে হয়ে উঠুক, এমনটা ক্ষমতায় আসা ইস্তক চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বাস্থ্য দপ্তরের সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, ওই সব সরকারি হাসপাতালের সিসিইউয়ের পারফরম্যান্স রীতিমতো ভালো।
স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রের খবর, গত পাঁচ বছরে গোটা রাজ্যে ৬৫টি (আরও দু’টির সদ্য উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী) সিসিইউ ও এইচডিইউ (হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিট) মিলিয়ে মোট ৬৮৬ ক্রিটিক্যাল কেয়ার বেড চালু হয়েছে। দপ্তরের হিসেবে, শুধু ২০১৫ থেকে মোট এক লক্ষ ৩১ হাজারের বেশি রোগী ভর্তি হয়েছেন এই সব ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে। শুধু তাই নয়, এই সময়ের মধ্যে জেলার ওই হাসপাতালগুলির সিসিইউ-তে ভেন্টিলেশন দেওয়ার হার প্রতি বছর প্রায় ১০ শতাংশ হারে বেড়েছে।
আর এ বার কর্পোরেটের ধাঁচে পুরোদস্তুর পেপারলেস প্রযুক্তিতে রাজ্যের ৬৭ ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট জুড়তে চলেছে বলে স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রের খবর।
সম্প্রতি ২০১৭-র জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত বিস্তৃত সময়সীমায় সিসিইউ-এইচডিইউয়ের পারফরম্যান্সের সঙ্গে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাসে ওই পারফরম্যান্সের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেছে স্বাস্থ্যদপ্তর। তাতে উঠে এসেছে, সব ক্ষেত্রেই পারফরম্যান্স বেড়েছে জেলার এই হাসপাতালগুলির।
আগে মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন নিয়ে রোগী ভর্তি হলেও পাঠিয়ে দেওয়া হত কোনও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এখন বছরে প্রায় ৭০ হাজারের কাছাকাছি মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন বা হার্ট অ্যাটাকের রোগীর চিকিৎসা করা হয়েছে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটগুলিতে।
পারফরম্যান্স ভাল হওয়ার পিছনে অবশ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তা থেকে চিকিৎসক ও হাসপাতাল কতৃর্পক্ষের যৌথ উদ্যম ও উদ্যোগকেই চিহ্নিত করা হচ্ছে। প্রতিটি সিসিইউয়ের চিকিৎসকেরা কেন্দ্রীয় ভাবে স্বাস্থ্য দপ্তরের সঙ্গে হোয়াটস্যাপ গ্রুপে যুক্ত। কোথাও কোনও সমস্যা হলে অন্য জায়গার চিকিৎসকদের পরামর্শ ওই গ্রুপেই মেলে। শুধু তাই নয়, কোনও রোগীকে অন্য কোথাও পাঠাতে বা রেফার করতে হলে স্বাস্থ্য দপ্তরকে জানাতে হয়। কেন রেফার করতে হচ্ছে, তার পক্ষে জোরালো যুক্তিও পেশ করতে হয়।
প্রত্যেক সপ্তাহে জেলার সিসিইউ, এইচডিইউ এবং মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলির মধ্যে পরিষেবা দেওয়ার নিরিখে কারা এক থেকে পাঁচে, তাঁদের তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে। দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার জেলা হাসপাতাল এম আর বাঙুর, ক্যানিং মহকুমা হাসপাতাল ও বোলপুর মহকুমা হাসপাতালের সিসিইউয়ের পারফরম্যান্স ভাল। তালিকায় এক থেকে পাঁচের মধ্যে তারা নিয়মিত জায়গা পাচ্ছে। এইচডিইউয়ের মধ্যে রানাঘাট, দিনহাটা, আরামবাগ হাসপাতাল এগিয়ে।
রেফার করে দেওয়ার রোগ কাটানোর কথা মাথায় রেখে তৃণমূল স্তরের সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবায় ক্রিটিক্যাল কেয়ারের পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য বিষয়ক মাল্টি ডিসিপ্লিনারি এক্সপার্ট গ্রুপের তৎকালীন প্রধান, প্রয়াত চিকিৎসক সুব্রত মৈত্র। তাঁর পরামর্শ মেনেই ২০১৩ সাল থেকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলির গণ্ডি ছাড়িয়ে একে একে জেলা, মহকুমা ও গ্রামীণ হাসপাতালে চালু হতে শুরু করে সিসিইউ ও এইচডিইউ।