অক্টোবর ২, ২০১৮
গান্ধীজি মানে সর্বধর্ম সমন্বয়: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ বেলেঘাটার গান্ধী ভবনে জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর ১৪৯তম জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই অনুস্থানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন এক বছর ধরে গান্ধীজির সার্ধশতবর্ষ উদযাপনের জন্য নানা অনুষ্ঠান চলবে। গান্ধী ভবনের সংস্কারের কাজের সূচনা করেন তিনি। পাশাপাশি, তমলুকে মহাত্মা গান্ধী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিলান্যাসও করেন।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের কিছু অংশ:
- গান্ধীজি দিনের পর দিন কখনও ধর্না দিয়েছেন, কখনও আমরণ অনশনে বসেছেন, এই বেলেঘাটায় বসে কখনও কখনও দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সাড়া পৃথিবীর কাছে অহিংসার বাণী ছড়িয়েছেন। কখনও দাঙ্গা বন্ধ করার জন্য তিনি একক লড়াই চালিয়েছেন।
- গান্ধীজি বলতেন আমার জীবনী আমার বাণী। তিনি এটা বলেছেন, যাতে তাঁর জীবনযাত্রা সকলে অনুকরণ করতে পারে।
সেই সময়ের রাজনীতি আর আজকের রাজনীতির মধ্যে একটা তফাৎ আছেই। তখন দেশ ছিল পরাধীন আর আজ দেশ স্বাধীন। তবে আজ দেশ স্বাধীন হয়েও অনেক ক্ষেত্রে আমরা পরাধীন হয়ে গেছি। - দেশকে স্বাধীন করতে গিয়ে কত মানুষ প্রাণ দিয়েছেন। এই স্বাধীনতায় সারা দেশের মত বাংলারও অবদান ছিল। স্বাধীনতা আন্দোলনের প্লাবন তৈরী হয়েছিল বাংলার মাটিতে। তখন কলকাতা ভারতের রাজধানী ছিল। বাংলার অনেক গুরুত্ব ছিল সেই সময়।
- জাতীয় আন্দোলনে, সংস্কৃতির আন্দোলনে, সম্প্রীতির আন্দোলনে, শিক্ষার আন্দোলনে, সভ্যতার আন্দোলনে, জাগরণের আন্দোলনে বাংলা ছিল।
- আজকাল কেউ কেউ সোশ্যাল নেটওয়ার্কে ছবি দিয়ে বা ভাষণ দিয়ে এমন দেখায় যেন তারা গান্ধীজির আদর্শ পালন করেন। কিন্তু, যখন গান্ধীজি বেঁচে ছিলেন, সেদিন তারা গান্ধীজির আদর্শ মেনে নিতে পারেননি।
- গান্ধীজি মানে আন্দোলন, গান্ধীজি মানে মাটির কথা, গান্ধীজি মানে সর্বধর্ম সমন্বয়, গান্ধীজি মানে সংহতি, গান্ধীজি মানে সম্প্রীতি, গান্ধীজি মানে কোনও ভেদাভেদ নয়, গান্ধীজি মানে কোনও জাতপাত নয়। সবাইকে একসাথে নিয়ে চলা, সবাইকে একসাথে নিয়ে কাজ করা, এটাই জীবন ছিল গান্ধীজির।
- গান্ধীজি অনেক আন্দোলন করেছেন। সে সত্যাগ্রহ আন্দোলন হোক, লবন আন্দোলন হোক, অসহযোগ আন্দোলন হোক, চম্পারন আন্দোলন হোক, অহিংসা আন্দোলন হোক, ডান্ডি অভিযান হোক, একটার পর একটা আন্দোলন তিনি করেছেন সারা দেশকে সঙ্গে নিয়ে। তিনি ভাবতেন সশস্ত্র বিপ্লব নয়, গণতান্ত্রিক আন্দোলনই একটা দেশের শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
- কলকাতার বেলেঘাটায় গান্ধীজির ইতিহাস সর্ব্বজন বিধিত। ভারতবর্ষ যেদিন স্বাধীন হয়, তখন গান্ধীজি এই বেলেঘাটায় গান্ধী ভবনে ছিলেন। ১৯৪৭ সালে ৬ই অগাস্ট থেকে প্রায় ১৫ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি এখানে বসে ছিলেন। দাঙ্গা বন্ধের আর্জি নিয়ে। দেশ ভাগের পর যেন কোনো সাম্প্রদায়িক অশান্তি না হয়। শুধু বসেছিলেন তাই নয় ওনার কাছে অস্ত্র সমর্পণ করেছিল হিন্দু এবং মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ।
- গান্ধীজিকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন মহাত্মা। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস গান্ধীজীকে বলতেন জাতির পিতা। অর্থাৎ গান্ধীজিকে যে আমরা মহাত্মা আর জাতির জনক বলি তার উদ্ভব এই বাংলা থেকে। গান্ধীজির কোনো বিকল্প নেই।
- গান্ধী ভবন আমরা অধিগ্রহণ করেছি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফ থেকে, যেমন স্বামী বিবেকানন্দ ও নিবেদিতার বাড়ি আমরা অধিগ্রহণ করেছি। কতগুলো জায়গা আছে যেগুলো মনে রাখতে হয় দেশের জন্য জাতির জন্য পৃথিবীর জন্য। পৃথিবীর ইতিহাসের জন্য নবীন প্রজন্মদের জন্য রেখে দিতে হয়। গান্ধী ভবনের সংস্কারের জন্য আমরা ৩.৫০ কোটি টাকা ব্যায় করছি। এখানে নামে সংগ্রহশালা হবে। গান্ধীজির নামে কলকাতা ইউনিভার্সিটি একটা চেয়ার ও তৈরী করবে। গান্ধীজির নামে উচ্চ শিক্ষা দফতর একটা মেধাবী ভাতা চালু করবে।
- স্বাধীনতার আগে তিনটে জায়গায় দেশ স্বাধীন ঘোষণা করা হয়েছিল। মহারাষ্ট্র সাঁতারা, উত্তরপ্রদেশের বালিয়া আর পশ্চিমবাংলার তমলুক যেটা আমরা মহিষাদল বলি। সেই তমলুকে মহাত্মা গান্ধী বিশ্ব বিদ্যালয়ের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করলাম। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে গান্ধীজির নাম লেখা থাকবে।
- আমরা সকলে এক, আমরা সকলকে শান্তির বাণী শোনাই, এটাই বাংলার মাটি। এই মাটিকে কখনো টাকা, উন্মাদনা বা ধর্মান্ধতা দিয়ে কেনা যায় না। বাংলার মাটিকে ধমকে চমকে কেনা যায় না, এই মাটিকে ভালোবাসতে জানতে হয়। এই মাটি কাপুরুষের মাটি নয়। এই মাটি এগিয়ে যাওয়া, জয় করার, স্বপ্ন দেখানোর, ভোরের আলোর মাটি।
- ২০১৯ সালে গান্ধীজির ১৫০ বছর পূর্ণ হবে। এক বছর আগে থেকে আমরা অনুষ্ঠান শুরু করে দিলাম, এই এক বছর ধরে গান্ধীজির প্রচার চলবে।