সাম্প্রতিক খবর

অক্টোবর ৩০, ২০১৮

কোচবিহারে একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী

কোচবিহারে একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী

আজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোচবিহারের রাসমেলা মাঠ প্রাঙ্গণে একটি জনসভা করেন। সেখান থেকে তিনি একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করলেন। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য সরকারের অনেক মন্ত্রী ও বিধায়ক ও সাংসদরা। তিনি এই মঞ্চ থেকে সরকারি পরিষেবাও প্রদান করেন।

এই নিয়ে এবছর মুখ্যমন্ত্রীর দ্বিতীয় কোচবিহার সফর এটি। গতকাল তিনি নবনির্মিত ‘উৎসব’ অডিটোরিয়ামের উদ্বোধন করেন। সেখানে তিনি প্রশাসনিক বৈঠকও করেন। আজ ছিল তার সফরের দ্বিতীয় দিন।

তিনি যে সকল প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন, সেগুলি হলঃ ব্লাড ব্যাঙ্ক, ৩৩/১১ কেভি সাব স্টেশন, সেতু, কর্মতীর্থ, ৫৬টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র, নলবাহিত জল সরবরাহ প্রকল্প, রাস্তার সম্প্রসারণ ও মানোন্নয়ন, পরিবার কল্যাণ বিপণন কেন্দ্র ও এলইডি পথবাতি ইত্যাদি।

তিনি যে সকল প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন, সেগুলি হলঃ রায়ডাক নদীতে সেতু নির্মাণ, কোচবিহার কলেজে নতুন শ্রেণীকক্ষ নির্মাণ, অগ্নি নির্বাপণ কেন্দ্র, ধরলা নদী বরাবর বাঁধ নির্মাণ, নতুন রাস্তা নির্মাণ, রাস্তার সংস্কার, পথবাতি স্থাপন, ইত্যাদি।

তাঁর বক্তব্যের কিছু অংশ:

ছাত্র রাজনীতি জীবন থেকেই আমি বাংলার সব অঞ্চলে ঘুরে বেড়াই। কোচবিহার জেলা আমার দীর্ঘ দিনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আমি কোচবিহারের সব জায়গায় গিয়েছি, মানুষের কাছে। রেল মন্ত্রী থাকাকালীন আমি অনেক সাজিয়ে দিয়েছি কোচবিহারকে। অনেক লাইন নতুন করে করে দিয়েছিলাম।

১০০ দিনের কাজে সেরার পুরস্কার পেয়েছে কোচবিহার, আমার অনেক অভিনন্দন।
হলদিয়া থেকে মেখলিগঞ্জ যুক্ত করার জন্য সেতুর কাজ শুরু হয়ে গেছে। রায়ডাক নদীর ওপর নতুন সেতু তৈরী হবে আজ এর শিলান্যাস করা হল।

গত ৭ বছরে কোচবিহারে পলিটেকনিক কলেজ, আইটিআই, পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, মাদার ও চাইল্ড হাব তৈরী করেছে আমাদের সরকার।

আগের ৭০ বছর কোচবিহার কিছু পায়নি। এমনকি আমাদের সরকারের আমলেই ছিটমহল সমস্যার সমাধান হয়েছে যা এতদিন হয়নি। দীর্ঘদিন মানুষ এই পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

আই সি ডি এস, সিভিক ভলেন্টিয়ার, আশার কর্মীদের, প্যারা টিচারদের মাইনে বাড়ানো হয়েছে।

এখন সব মেয়েরাই কন্যাশ্রী পাবে। সব মেয়েদের পড়াশোনার খরচ যোগাবে রাজ্য সরকার। কারণ তারাই সমাজ গড়বে, রাজ্য গড়বে, দেশ গড়বে, বিশ্ব গড়বে। তাই তাদের জন্যই এই কর্মসূচি।

আগে কৃষক পেনশন ছিল ৭৫০ টাকা এখন তা বাড়িয়ে ১০০০ টাকা করা হয়েছে।

মেয়েরা আজ আর বোঝা নয়, তারা কারো ওপর নির্ভরশীল নয়. মেয়েরা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে ছেলেদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সমান তালে এগিয়ে যাবে এটাই আমাদের লক্ষ্য।

তপশিলি ভাই বোনেদের জন্য আমরা শিক্ষাশ্রী প্রকল্প চালু করেছি, উচ্চ শিক্ষার জন্য ১০ লক্ষ টাকা সফট লোন দিচ্ছে, বিদেশে পড়াশোনার জন্য ২০ লক্ষ টাকা সফট লোন দিচ্ছে।

কন্যাশ্রী প্রকল্পে ইতিমধ্যেই বাংলা ৬০০০ কোটি টাকা খরচ করে ফেলেছে।

আমরা রাজবংশী আকাদেমি, কামতাপুরি আকাদেমি তৈরী করেছি, হিন্দি, উর্দু, অল চিকি, সাঁওতালি, কুরুক সহ আরও অনেক ভাষাকে আমরা স্বীকৃতি দিয়েছি।

বাংলার ছাত্রছাত্রীরা যেমন কন্যাশ্রী -শিক্ষাশ্রী পায়, তেমনই নবম-দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীরা সবুজ সাথী প্রকল্পে বিনামূল্যে সাইকেল পায় যাতে তারা ভালোভাবে স্কুলে যেতে পারে।

ছোটবেলায় অনেক মানুষকে না খেতে পেয়ে মারা যেতে দেখেছি। আজ আমাদের সরকার ২ টাকা কিলো চাল, গম দেয়, খাদ্য সাথী প্রকল্পের আওতায়। প্রায় ৯ কোটি লোক এই সুবিধা পায়।

ঝড়, বন্যা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারদের অর্থিক সাহায্য করে রাজ্য সরকার।

৩৪ বছর বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় ছিল, কেন কোনো কাজ করেননি? আমাদের বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকা শোধ করতে হয়, তবুও আমাদের সরকার জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রকল্প চালু করে দিয়েছে।

কোনও গরীব মানুষ মারা গেলে সৎকারের জন্য সরকার ২০০০ টাকা করে টাকা দেয়।

গরীব লোকশিল্পীদের মাসে ১০০০ টাকা করে দেওয়া হয়। সরকারি বিজ্ঞাপনে কাজ করলে, আরও টাকা দেওয়া হয়। শিল্পীদের সরকার বাদ্যযন্ত্রও দেয় স্বনির্ভর হতে।

স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মেয়েরা যদি ১০০ টাকা ঋণ নেয়, তার ৩০ শতাংশ রাজ্য সরকার ভর্তুকি দেয়।

নির্মাণ কর্মী, গৃহস্থালির যারা কাজ করে, রিক্সাচালক, ট্যাক্সিচালক, অটোচালক, দোকানে কাজ করে তাদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প আনা হয়েছে। ৬০ বছর বয়স হলে ২ লক্ষ টাকা পাবে ও মাসিক পেনশন পাবে। মেয়ের বিয়ে, চিকিৎসা, দুর্ঘটনায় টাকা পাবে।

আদিবাসীদের পেনশন দেওয়া হয়, ২টাকা কিলো চাল দেওয়া হয়। কৃষকদের ট্র্যাক্টর দেওয়া হচ্ছে। তাঁতিদের তাঁতযন্ত্র দেওয়া হয়।

মদনমোহন মন্দির সংস্কার করা হয়েছে। পর্যটন দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছি পর্যটকদের জন্য আরও একটি থাকার জায়গা করে দিতে।

কোচবিহার জেলাকে হেরিটেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে কেউ এটা ভাবেওনি। এখানে পর্যটনের জন্য অনেক কিছু তৈরী করে দেওয়া হয়েছে।

এখানে সবাইকে ছোট ছোট করে শিল্প তৈরী করতে বলব সবাইকে স্বনির্ভর হওয়ার জন্য।

বাংলায় আমরা সবাই সবাইকে ভালোবাসি। সকলের আত্মমর্যাদার অধিকার, অর্থনৈতিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, সামাজিক অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, সভ্যতার অধিকার, সংস্কৃতির অধিকার আছে। বাংলায় সকল মানুষের সব অধিকার আছে, বাংলা মাথা উঁচু করে চলে।

আগে হাসপাতালে মানুষ চিকিৎসা করাতে পারত না, এখন ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসাতেও কোনও টাকা নেওয়া হয় না। এমনকি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে, মাভৈ প্রকল্পে (সাংবাদিকদের জন্য) ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সরকার দেয়। কোথাও এই সুযোগ নেই। এই সরকার জনগণের সরকার।

একটি পরিবারে সকলকে মিলেমিশে থাকতে হয়। পৃথিবী একটাই দেশ। ভাষা আলাদা হতে পারে, বর্ণ আলাদা হতে পারে কিন্তু, সকলের রক্ত এক। সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে থাকতে হবে, সবাইকে নিয়ে ভালো করে কাজ করতে হবে।

ছিটমহলের সমস্যার সমাধান আমরা করে দিয়েছি। এখানে মেডিক্যাল কলেজ করছি। ছিটমহলের জমির অধিকার তাড়াতাড়ি দেওয়ার জন্য কালকেই আমি নির্দেশ দিয়েছি।

এখানে অনেক এসএনসিইউ করেছি, ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান করেছি, ন্যায্য মূল্যের ডায়াগোনিস্টিক সেন্টার করেছি, মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাব করেছি, মাতৃযান প্রকল্প করেছি।

আমরা বিনা পয়সায় মুর্গী, ছাগল, হাঁস দিই। অনেকগুলি কিষাণ মান্ডি করে দিয়েছি, ১৯টা কর্মতীর্থ আছে কোচবিহারে। এখানে ডিমের ওপর পোল্ট্রি করুন, সরকার ভর্তুকি দেবে।

কন্যাশ্রী যেমন পাচ্ছেন তেমন পাবেন, তার পরে এখন রূপশ্রীও পাবেন। ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত কন্যাশ্রী পাবে, তার পরে সে যদি বিয়ে করতে চায় আর তার পরিবারের আয় যদি বছরে দেড় লাখ টাকা অবধি হয়, সে আরো ২৫,০০০ টাকা তখন পাবে। এটাই হচ্ছে রূপশ্রী।

যারা সামাজিক সুরক্ষায় আওতায় আছেন, লেবার দপ্তরের থেকে তারাও কিন্তু মেয়েদের বিয়ের সময় ২৫,০০০ টাকা করে পাবেন।

কোচবিহার জেলা ‘নির্মল জেলা’ হয়েছে। শুধু এই জেলাতেই প্রায় ৪ লক্ষ ২০ হাজার শৌচালয় তৈরী হয়েছে।

এখানে দুটো ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ সেন্টার তৈরী করা হচ্ছে। তুফানগঞ্জ ব্লকে সেতু গড়ার শিলান্যাস আজকে করা হল।

আমাদের সরকার ভুটান, বাংলাদেশ ও নেপালের সাথে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করছে। এই রাস্তাগুলোর কাজ কিছুদিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।এই কাজ শেষ হয়ে গেলে উত্তরবঙ্গের মানুষ, ভুটান, নেপাল ও বাংলাদেশ রাস্তায় যাতায়ত করতে পারবেন। এর ফলে ব্যবসা বাড়বে, পণ্য পরিবহণ বাড়বে, এক দেশের সাথে আরেক দেশের যোগাযোগ বাড়বে এবং নানারকমের কাজের সুবিধা হবে। আগামীদিনে অনেক সুযোগ আপনাদের কাছে আসছে ও আরো অনেক সুযোগ আপনাদের কাছে আসবে।

শীতলকুচি থেকে বাংলার বিধানসভার ও লোকসভার আসনের কাউন্টিং শুরু হয়। অথচ এর আগে কোচবিহারের দিকে কেউ ফিরে তাকায়নি। আমরা চাই কোচবিহার জেলার মানুষ মাথা তুলে দাঁড়াক।

আমার নামে ‘উত্তরবঙ্গ সংবাদ’ নামে একটা কাগজ মিথ্যে খবর করেছিল। আমি সত্যি খবরের কোন সমলোচনা হলে কিছু মনে করি না, কিন্তু দয়া করে আমার নামে কোনও মিথ্যে খবর করবেন না। আমি যদি কাউকে কোনও কিছু বলি তা কিন্তু জীবন দিয়ে সেই কথা রাখার চেষ্টা করি, আমার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে এই বাংলায় কোনও কথা হবে না।

আমি কোনও কাজ অর্ধেক করে ছেড়ে দিই না। আমি এরকম কাজ করি না যে একটা শিলান্যাস করে চলে এলাম তারপর ওখানে শ্যাওলা জমে যাবে। সেটা সিপিএম করত, ৩৪ বছর ধরে একটা করে শিলান্যাস করত।

এই সরকার মা-মাটি-মানুষকে বঞ্চিত করে কোন কাজ করবে না। আগামীদিনে দেখবেন এই কন্যাশ্রীর মেয়েরা সারা পৃথিবীতে নাম করবে। এটা আমি বিশ্বাস করি।

আর বাংলায় আমাদের সরকার আসার পর ৪০% বেকারের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছি কাজের মাধ্যমে। আরও কমিয়ে দেব- এটা আমাদের চ্যালেঞ্জ।

শুধু ইচ্ছা থাকা চাই, মনের জোর রাখুন কেউ আপনাদের কিচ্ছু করতে পারবে না। জয়ী আমরা হবই। বাংলাই হোক বিশ্ব সেরা।