সাম্প্রতিক খবর

অক্টোবর ৩০, ২০১৮

বিজেপির বিভেদের রাজনীতিকে তুলোধনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী

বিজেপির বিভেদের রাজনীতিকে তুলোধনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী

কোচবিহারে আজ এক জনসভায় বক্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির বিভেদমূলক রাজনীতি এবং বিরোধী দল শাসিত রাজ্যগুলোর প্রতি কেন্দ্রের বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে সরব হন তিনি। নোটবাতিল, জিএসটির মত হঠকারী সিদ্ধান্তর ফলে দেশের অর্থনীতির সর্বনাশ সহ কেন্দ্রের জনবিরোধী নীতিগুলির বিরুদ্ধেও সোচ্চার হন তিনি।

মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, যারা হিন্দু মুসলমান নিয়ে রাজনীতি করে, তপশিলি-আদিবাসীদের ধ্বংস করে রাজনীতি করে তাদের বলবো, মানুষকে মানুষের মতো বাঁচার সুযোগ দিতে হবে, ভাগাভাগি করে মানুষকে অযথা বিরক্ত করবেন না। ইতিহাসকে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। যারা বাংলাকে সহ্য করতে পারে না, তাদের বলে রাখি শুনে রাখুন, দিল্লীর সরকার আসার পর আপনাদের বেকারত্ব কত বেড়ে গেছে।

‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ নিয়ে শুধু বিজ্ঞাপন হচ্ছে, বেটি বাঁচবে কোথা থেকে আর পড়বেই বা কোথা থেকে? বাজেট কোথায়? এই প্রকল্পে সারা ভারতে কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেট মাত্র ১০০ কোটি টাকা। তার মধ্যে সব টাকা চলে যায় বিজ্ঞাপন করতে। মেয়েরা ৩ পয়সাও পায় না। শুধু বিজ্ঞাপনে জোর, চোরের মায়ের বড় গলা। পাশাপাশি তিনি বাংলার বিষয়ে বলেন, কন্যাশ্রী প্রকল্পে ইতিমধ্যেই বাংলা ৬০০০ কোটি টাকা খরচ করে ফেলেছে।

তিনি আরও বলেন, আগে করে দেখাতে হয়, পরে হিংসা করতে হয়। যারা বাংলাকে হিংসে করে তাদের বলি, আগে বাংলাকে দেখে শেখ। ভালো জিনিস অনুসরণ কর, তারপর বাংলাকে জ্ঞান দিও। বাংলা কারও পরোয়া করে না, কারো কাছে মাথা নত করে না।

বৈষম্যের বিষয়ে তিনি বলেন, ঝড়, বন্যা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারদের অর্থিক সাহায্য করে রাজ্য সরকার। কিন্তু, এই টাকা কেন্দ্রের দেওয়ার কথা। তারা এটা দয়া করে দিচ্ছে না। তারা আয়কর বাবদ, সেস বাবদ এই টাকা রাজ্য থেকে নিয়ে যায়। কিন্তু রাজ্যকে নিজের অধিকারের টাকা দেয় না। করবাবদ ওই টাকাটা না নিয়ে গেলে আমরা আরো অনেক কাজ করতে পারতাম।

বিভিন্ন রাজ্যে সাম্প্রতিক কিছু হিংসার ঘটনার কথা তুলে তিনি বলেন, আজকাল আশেপাশের রাজ্যে যাওয়া নিরাপদ নয়। সেখানে ভিন রাজ্যের লোকদের পিটিয়ে মারা হচ্ছে।

আসামের নাগরিকপঞ্জী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আসামে ৪০ লক্ষ বাঙালীকে তাড়ানোর চেষ্টা করছে। তারা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছে। বাংলায় এটা হয়না। বাংলায় আমরা সবাই সবাইকে ভালোবাসি। গুজরাতে বিহারী খেঁদাও উত্তর প্রদেশ খেঁদাও চলছে। সকলের আত্মমর্যাদার অধিকার, অর্থনৈতিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, সামাজিক অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, সভ্যতার অধিকার, সংস্কৃতির অধিকার আছে। বাংলায় সকল মানুষের সব অধিকার আছে, বাংলা মাথা উঁচু করে চলে। কারোর ওপর অত্যাচার হলে, বাংলা তাঁকে নিজের মত করে আশ্রয় দেবে।

তিনি আরও বলেন, মানুষে মানুষে ভাগাভাগি করে কখনও রাজনীতি হয়না। একটি পরিবারে সকলকে মিলেমিশে থাকতে হয়। কেন্দ্রীয় সরকারকে অনেক বার বলেছি, বাংলার মানুষকে, বাংলার ছাত্র-যুবদের হতাশ করবেন না। এত টাকা কোথা থেকে শোধ দেব? এত টাকা শোধ দিলে মাইনে দেব কোথা থেকে? দু-টাকা কিলো চাল দেব কোথা থেকে? বিনা পয়সার চিকিৎসা দেব কোথা থেকে? সবুজশ্রী সাইকেল দেব কোথা থেকে? কন্যাশীর টাকা দেব কোথা থেকে? সবকিছু মাথায় রাখতে হবে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা অনেক কষ্ট করে চালাই। আর সেক্ষেত্রে কেউ যদি মনে করেন রাজনীতি করার জন্যে আমি একটা মিথ্যে সংবাদ লিখে দিয়ে লোককে উস্কানি দিলাম তাকে কিন্তু জবাব দিতে হবে। কারণ, মিথ্যে সংবাদ লেখাটাও অন্যায়। ওটা প্ররোচনা।মাথায় রাখবেন বিশ্বাসযোগ্যতা আমাদের আছে, সংবাদ প্রচার করা আপনাদের কাজ, সত্য সংবাদ প্রচার করুন। সবাই জানে ভারতে কোন কোন টিভি চ্যানেলগুলো বিক্রি হয়ে গেছে। সারাক্ষণ বিজেপির দালালি করে বেড়াচ্ছে। আজকাল সোশ্যাল নেটওয়ার্ক দেখলে বুঝতে পারবেন যে বিজেপি সব সময় ফেক নিউজ প্রচার করছে। বাংলাদেশের ঘটনাকে বাংলার বলে চালায়।

সংবাদ মাধ্যমের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমি আপনাদের দয়া করে অনুরোধ করব যে প্রেস মিডিয়ার সাথে আমার সম্পর্ক খারাপ নেই, আর থাকবেও না। তাদের বলব পজিটিভ যদি কিছু থাকে সেটা দয়া করে বলবেন, সেটা আমরা শুনব। কিন্তু আমার নামে মিথ্যে খবর ছাপিয়ে, কারোর কাছ থেকে কিছু পাওয়ার জন্য, আমার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে দয়া করে কিছু মিথ্যে খবর করবেন না। আর আমি প্রশাসনকেও বলব এগুলো দেখতে, এটা ঠিক নয়।