অক্টোবর ৪, ২০১৮
ভাদু শিল্পীদের পাশে মুখ্যমন্ত্রী

‘ভাদু-ভাদ কলাইয়ের ডাল, ভাদুর বিয়ে হবে কাল।’ ভাদুর বিয়ে আর হয় না। বিয়ের আগে আচমকাই মৃত্যু হয় ভাদুর হবু স্বামীর। সহমরণে যান ভাদু। লোকগবেষক বলেন, সেখানকার পঞ্চকোটরাজ নীলমণি সিংদেওর সেজো মেয়ে ভদ্রাবতী ওরফে ভাদুর বিয়ের আগে হবু বরের অকালমৃত্যু হয়। শোকে সহমরণে যান ভদ্রাবতী। আদরিণী ভদ্রাবতীকে স্মরণে রাখতেই রাজ্যজুড়ে সূচনা হয় ভাদু উৎসবের।
অনেকে বলেন, ভাদু হল হেতমপুরের রাজকন্যা। তার স্মরণেই উৎসব। অনেক জায়গায় ভাদুর হাতে দেওয়া ধানের শীষ। নানারকম ভোগ দেওয়া বা হয়। ভাদুকে সামনে রেখে ঢোল, খঞ্জনি, হারমোনিয়াম নিয়ে চলে ভাদুগান।
বাননাগরার স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ভাদ্র-আশ্বিন হল অবসরের মাস। চাষবাস সারা হয়ে যায়। অবসর বিনাদোনের জন্য একসময় গ্রামে। গ্রামে বসত ভাদু গানের আসর। তারপর ভাদ্র মাসের শেষ থেকে ভাদুর মূর্তি নিয়ে কাছে-দূরের গ্রাম-শহর ঘুরে ঘুরে ভাদুর গান শুনিয়ে গঙ্গায় ভাদু ভাসিয়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতে আশ্বিনের প্রথম সপ্তাহ পেরিয়ে যেত। ভাদুকে কিশোরী কন্যা মানে গাওনার দল। মাটির মূর্তি সামনে রেখে গান। ধরে, ‘ভাদু আমার ছোট ছেলে/ কাপড় পরতে জানে না।’ ভাদুর উৎস মানভুম বলে মনে করা হয়।
সেই ভাদুর স্মৃতিকে বাঁধিয়ে রাখতেই উৎসব। শুরু হয় ভাদ্র মাসে। চলে আশ্বিনের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। কাটোয়া মহকুমার বিভিন্ন প্রান্তে। তবে দিনকে দিন এই লোকগানের জনপ্রিয়তা কমছে। মহকুমার বাননাগরা, কুরচি, সিঙ্গি, মূলগ্রাম-সহ অন্তত গোটা পঞ্চাশ গ্রামে সাড়ম্বরে পালিত হত ভাদু উৎসব। এখন তা গোটা পনেরা গ্রামে ঠেকেছে। তবে এই লোকগানকে মুছে যেতে দিতে চায় না রাজ্য সরকার।
কাটোয়ার বিধায়ক বলেন, “দুঃস্থ ভাদুশিল্পী-সহ বিভিন্ন লোকশিল্পীদের পাশে দাঁড়িয়েছে সরকার। মাসোহারার ব্যবস্থা করেছে। লোকগানের শিকড়ে এভাবেই জলমাটি দিচ্ছে সরকার।”