ডিসেম্বর ১৫, ২০১৮
মোদী ঝড় শেষঃ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ পানিহাটিতে এক জনসভায় বক্তব্য রাখেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
তাঁর বক্তব্যের কিছু অংশঃ-
- সকলকে ধন্যবান যারা নিরলস পরিশ্রম, জনসংযোগ ও প্রচার করে আজকের এই জনসভাকে সফল করেছেন।আমাদের দলে কোনও দু নম্বর বলে কোনও জায়গা নেই। একমাত্র আছেন নেত্রী, বাকি যারা আছেন, সবাই কর্মী।আপনাদের ইচ্ছেতেই আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে এবং আজ বাংলা এগিয়ে চলেছে।আপনারা না থাকলে তৃণমূল কংগ্রেস দলটিও থাকবে না।আমি সকল কর্মীকে তাদের নিরলস পরিশ্রমের জন্য প্রণাম জানাচ্ছি। দলের কর্মীদের যে অধিকার আছে দলে, কোনও নেতার সেই অধিকার নেই।
- নেতা মন্ত্রী সাংসদরা একদিন প্রাক্তন হয়ে যায়। কিন্তু, একজন কর্মী কখনও প্রাক্তন হয় না।
নেত্রী বলেন, নতুন পুরনোর সংমিশ্রণেই একটা দল শক্তিশালী হয়।নতুনরা যোগ্য হলে তাদেরকে নিয়ে আমরা কাজ করব। কিন্তু, পুরনো কর্মীদের যোগ্য সম্মান দিতেই হবে। - উত্তর ২৪ পরগনা জেলার মানুষের প্রতি আমি আজীবন কৃতজ্ঞ এবং ঋণী থাকব। আমি যেকোনও বড় কর্মসূচী শুরু করার আগে এই মাটিকে সম্মান জানিয়েই কাজ শুরু করি। ১৯শে জানুয়ারি ২০১৯-এ বিজেপিকে উৎখাত করার জন্য ব্রিগেড চলো ডাকটা এই মাটি থেকেই শুরু করলাম। তৃণমূল কংগ্রেসের যেকোনও কর্মসুচীতে এই জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক ভূমিকা থাকে। প্রতি বছর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ নিতে ২১শে জুলাই বিপুল পরিমাণ মানুষ এই জেলা থেকে যান। আজ যে পরিমাণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ততা উপলব্ধি করেছি, তাতে মনে হয় শুধু এই জেলা থেকে আগামীদিন ১০ লক্ষ মানুষ ব্রিগেড যাবেন।
- আগের বার আমরা ব্রিগেড সমাবেশ করেছিলাম ২০১৪সালের ৩০শে জানুয়ারি। সেখানে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি ধর্মনিরপেক্ষ সরকার ও রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নকে আরও প্রগতিশীল করার লক্ষ্যে আপনাদের সকলের সমর্থনকে পাথেয় করে লোকসভার প্রচার করেছিলেন।
- আগামী ব্রিগেড সমাবেশ ও অন্যান্য ব্রিগেড সমাবেশের মধ্যে পার্থক্য আছে এটা মনে রাখবেন। এই সমাবেশে শুধু তৃণমূলের সর্বস্তরের নেতা নন, ভারতবর্ষের অন্যান্য অনেক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অনেক রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব এসে ব্রিগেডে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্ত করবেন। সে সমাজবাদী দল হোক, বিহারের আরজেডি দল হোক, ডিএমকে হোক, আপ হোক চন্দ্রবাবু নাইডু হোক, অনেকেই ইতিমধ্যেই আসবেন বলে কথা দিয়েছেন। সেদিন ওই মঞ্চ থেকেই বিজেপি ভারত ছাড়ো ডাক দেওয়া হবে।
- যেভাবে ৩৪ বছরের জগদ্দল পাথরকে আমরা বাংলা ছাড়া করেছি, সেভাবে সাম্প্রদায়িক বিজেপিকে ভারত ছাড়া করব। সেই জন্য আমরা ব্রিগেড যাব এবং নেত্রীর থেকে আগামী দিনের নির্দেশ নেব।
- যারা বলেছিল, রথের চাকায় গুঁড়িয়ে দেব, মেরে দেব, কেটে দেব, সরিয়ে দেব, হাটিয়ে দেব, তাদের কি করুন পরিনতি হয়েছে, ভারতবর্ষের মানুষ চাক্ষুষ করেছে। সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচন ছত্তিসগড়, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ এই রাজ্যগুলিতে মোদী ঝড় শেষ। বিজেপি যা রাজনীতি করেছে, গরুর নামে রাজনীতি, মন্দিরের নামে রাজনীতি, ধর্মের নামে রাজনীতি, বিভাজনের রাজনীতি, এমন পরিস্থিতি ভারতবর্ষে তৈরী করেছে।
- আগে সিপিএম বলত, ইঙ্কলাব জিন্দাবাদ, আমরা খাবো তোমরা বাদ। এখন বিজেপি বলে, জয় শ্রী রাম, মানুষের মাথার নাই কোনও দাম, জয় শ্রী রাম, দাঙ্গা করাই একমাত্র কাম, জয় শ্রী রাম, বাড়ির সিলিন্ডারের ১,০০০ টাকা দাম, জয় শ্রী রাম, তেলের ১০০টাকা দাম, জয় শ্রী রাম, ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওাই আমাদের একমাত্র কাম। কিন্তু, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থাকতে, আমরা কোনওভাবে এদের মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে দেব না। ক্ষমতা থাকলে গণতান্ত্রিক ভাবে লড়ুক, কার কত ক্ষমতা, কার কত লড়াইয়ের মানসিকতা, আমরা মাঠে ঘাটে প্রমাণ করতে রাজি আছি।
- সদ্য সমাপ্ত জেলা পরিষদ নির্বাচনে বা নোয়াপাড়া বিধানসভা নির্বাচনে কি করুন পরিনতি ভারতীয় জনতা পার্টির হয়েছে তা আমরা দেখেছি। বিভিন্ন দলের আবর্জনাগুলোকে নিয়ে এরা দল তৈরী করেছে।উন্নয়নের নিরিখে লড়তে এস, কত ধানে কত চাল, তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা মাঠে ঘাটে প্রমাণ করে দেবে।যে গোরু ২০১৪সালে দুধ দিয়েছিল, সেই গরু এখন গোবর দিয়ে মুখে কালি মাখিয়ে দিয়েছে। ওদের কাজ হিন্দু মুসলমানের একতাকে নষ্ট করা, বিভাজনের রাজনীতি, বড় বড় কথা বলা।
- ভারতবর্ষের ৮০ শতাংশ মানুষ বিপিএল তালিকার নিচে আছে। আজকে তাদের দিকে না তাকিয়ে কিভাবে একটা রাজনৈতিক দল ৩০০০ কোটি টাকার মুর্তি তৈরি করেছ। সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল যদি জীবিত থাকতেন তিনিও আজ লজ্জা পেতেন। তিনি আমাদের সকলের অনুপ্রেরণা আমাদের সকলের দিশারি।
- আমার ধর্ম আমাকে শিখিয়েছে নিজের ধর্মের প্রতি আস্থাশীল এবং অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে। আমার ধর্ম কোনওদিন ‘ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’-এর প্রথা শেখায়নি। আমি সকালে উঠে সূর্য্য নমস্কারও করি, আর স্নান করার পর গায়েত্রী জপও করি। আমি স্বামী বিবেকানন্দের ধর্মে বিশ্বাস করি—আমি যোগী আদিত্যনাথ, মোদি , অমিত শাহের ধর্মে বিশ্বাস করি না।
- মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা রেখেছেন আর ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী কী বলেছেন? ‘আচ্ছে দিন আনে ওয়ালে হ্যায়।” কাজের বেলায় লবডঙ্কা। আমাদের নেত্রী বলেছিল ‘আমরা ক্ষমতায় আসার পর সিঙ্গুরের জমি ফিরিয়ে দেব’-আমরা দিয়েছি। আমরা বলেছিলাম জঙ্গলমহলে শান্তি ফিরিয়ে দেব তা দিয়েছি। দার্জিলিঙে পর্যটন, গ্রামে গ্রামে নিরবিচ্ছিন্ন পরিষেবা, ঝকঝকে তকতকে রাস্তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার করেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির পার্থক্য কী?— আমাদের নেত্রী গরীব কৃষকদের জন্য খাজনা মুকুব করেছে, আর নরেন্দ্র মোদি সরকার গণপুঁজিপতি এবং কোটিপতিদের ৩ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ মুকুব করেছে।
- আমি কোনওদিন সিপিএম-এর বা কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী এভাবে গ্রামে গ্রামে অঞ্চলে অঞ্চলে ঘুরে বেড়িয়ে এসডিও, বিডিও, আইসি, ওসিকে দিয়ে বাংলার উন্নয়নের ধারাকে পরিচালনা করাতে দেখিনি। একমাত্র যদি কেউ করে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নেত্রীর সঙ্গে মোদির পার্থক্য কী? দেখবেন ৩৬ নম্বর তোপ্সিয়া রোডে আমাদের একটি পার্টি অফিস আছে। ২০১০ এর আগে যে পরিস্থিতি ছিল সেই পার্টি অফিসের আজও তার কোনও পরিবর্তন হয়নি। আমরা গরীবদের দল, আমরা মানুষের দল, মা-মাটি-মানুষের দল। আর ভারতীয় জনতা পার্টির কী অবস্থা? ‘জয় শ্রী রাম’ এর নামে সেভেন স্টার পার্টি অফিস দিল্লির বুকে তারা তৈরি করেছে মানুষকে বোকা বানিয়ে। আমরা কিন্তু কোনওদিন নরেন্দ্র মোদিকে চায়ের কেটলি নিয়ে চা বিক্রি করতে দেখিনি। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে টালীর চালে বাস করে মানুষের কাছে উন্নয়ন পৌঁছে দিতে দেখেছি। আমরা বলি সাজিয়ে দেব গুছিয়ে দেব আর ওরা বলে ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও।
- একটা বাস নিয়ে এসেছে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কোথা থেকে ইউপি না দিল্লি থেকে ভাড়া করে, সেটা নাকি রথ মানে এর থেকে হাস্যকর কিছু হয়না। ‘আচ্ছেদিনের’ মত। ওটা দেখিয়ে বলছে ওটা রথ। আমার প্রশ্ন দিলীপ বাবুর কাছে এটা কোন রথ? আমরা সাধারণত জগন্নাথ দেব , শুভদ্রা , বলরাম শ্রী কৃষ্ণ-এর রথ সম্পর্কে জানি। শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস দেব, শ্রী চৈতন্য দেবের রথ যাত্রা দেখেছি। একোন রথ যেখানে মানুষ রূপী কুলাঙ্গার ওঠে। যারা সাম্প্রদায়িকতার নীরীখে বাংলাকে ভাগ করতে চায়। এটা হাস্যকর। সেখানে ফূর্তি করা যাবে, স্নান করা যাবে, মল মূত্র সব ত্যাগ করা যাবে। আমি প্রশ্ন করতে চাই তাদের। এখন রথ পালটে দিয়ে বলছে ‘গণতন্ত্র বাঁচাও’ । যখন গণতন্ত্র বিপন্ন ছিল তখন কোথায় ছিল এরা ধানতলা, বানতলা, সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, নেতাইয়ের সময় কোথায় ছিল, স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় কোথায় ছিল। গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা না করে বিজেপি বাঁচাও যাত্রা করলে কাজে লাগবে
- নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস বলেছিলেন তুমি আমাকে রক্ত দাও আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব। আর দিলীপ বাবুরা বলেন তুমি আমাকে রক্ত দাও আমি তোমাকে রক্ত স্নাত বাঙলা দেব আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন ‘হে বাংলার মানুষ তুমি আগামী লোকসভায় ৪২এ ৪২ দাও আমি তোমাকে আগামী দিন নতুন ভারতবর্ষ দেব।”
- আমাদের লক্ষ্য অবিচল থাকতে হবে। আগামী দিন নতুন ভারত, ধর্ম নিরপেক্ষ ভারত, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ভারত এবং বিশাল দৌলতের ভারত মমতা বন্দ্য্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৈরি হোক। মানুষকে লক্ষ্যে অবিচল থাকতে হবে।
- গতকাল সংসদে তাদের তথ্য সংস্কৃতি মন্ত্রী তথ্য দিয়ে বলেছেন, তাদের সরকার গত পাঁচ বছরে শুধু বিজ্ঞাপনে ৫৩০০কোটি টাকা খরচ করেছে। এদের লজ্জা হওয়া উচিত।
- আমাদের রক্ত দিয়ে বাংলার সম্প্রীতিকে রক্ষা করব কিন্তু তবু তোমাদের কাছে বাংলার মানুষ মাথা নত করবে না। বাংলার মানুষ কোনওদিন মাথা নত করতে জানে না। দেশত্মাবোধ আন্দোলনে, স্বাধীনতা সংগ্রামের আন্দোলনে বাংলা কি ভূমিকা নিয়েছে তা ভারতবর্ষকে আর নতুন করে বলার আর কোনও দরকার নেই।
- আমরা ভারতীয় জনতা পার্টি নই আমরা কংগ্রেস পার্টি নই। আমরা ভালোবাসার মাধ্যমে মানুষকে নিয়ে যাই। এবং আগামীদিন সেই ঐতিহাসিক মূহুর্ত যখন আমরা সাক্ষী থাকতে পারি সেই ঐতিহাসিক মূহুর্তকে সামনে রেখে নতুন ভারতবর্ষ গড়ার শপথ আমরা ১৯শে জানুয়ারি ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখে নেব। এটাই আপনাদের সকলকে বুথে বুথে প্রচার করে মানুষকে সংবদ্ধ করে সর্বস্তরের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে আপনাদের সুনিশ্চিত করতে হবে।
- আমি ডুমুরজোলার প্রার্থীকে বলেছিলাম ফেব্রুয়ারি মাসে ছাত্র যুবর সম্মেলন ছিল, ২০১৯ বিজেপি ফিনিশ। এখন দেখছি ২০১৮তে ভোকাট্টা হয়ে গেছে। মানুষ তত দুহাত তুলে তৃণমূল কংগ্রেসকে সমর্থন করবে।আগামী দিন এই লড়াইটা চালিয়ে যেতে হবে। সকলে প্রণাম নেবেন।