জুন ৬, ২০১৮
তৃণমূলের জমানায় ৯০ লক্ষের কর্মসংস্থান

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সাত বছরের আমলে ৯০ লক্ষের বেশি কর্মসংস্থান হয়েছে। নবান্নের রিপোর্ট থেকে এই তথ্য জানা গিয়েছে। ২০১৬ সালে বিধানসভায় অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র যে রিপোর্ট পেশ করেছিলেন, তাতে তিনি বলেছিলেন ৮১ লক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছে। সাত বছর শেষে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯০ লক্ষ ১৭ হাজার।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পর থেকেই কর্মসংস্থানকে পাখির চোখ করেছিলেন। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে শূণ্য স্থান পূরণ করার জন্য প্রতি মন্ত্রিসভার বৈঠকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, স্বরাষ্ট্র, প্রাণীসম্পদ বিকাশ- প্রতিটি দপ্তরেই নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। বিভিন্ন দপ্তরের গ্রুপ ডি-তে ৬০ হাজার নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হাজার হাজার শিক্ষক নিযুক্ত হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে।
বেকার সমস্যা মেটাতে সরকারি-বেসরকারি ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, সব থেকে বেশি কর্মসংস্থান হয়েছে ক্ষুদ্র-কুটির শিল্পে। এই শিল্পে পশ্চিমবঙ্গ দেশের মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে। সেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ যাতে আরও বাড়ে, তার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে সরকারি স্তরে। সেই সঙ্গে হলদিয়া পেট্রকেমিক্যালসকেও পুনরুজ্জীবিত করতে সরকারের তরফে সব রকম সাহায্য করা হয়েছে। সেখানে ডাউনস্ট্রিমে পাঁচ লক্ষ লোক কাজ পেয়েছে। মিৎসুবিশি সহ অন্যান্য শিল্পেও যাতে কর্মসংস্থান বাড়ে, তার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে।
শুধু চাকরি করা নয়, উদ্যমী যুবকরা যাতে ব্যবসা করে রোজগার বাড়াতে পারেন, তার জন্য সরকারের তরফে ব্যবসার পথ সহজ করতে ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস (ইওডিবি)’ চালু করা হয়েছে। তাতে ভালোই সাড়া পাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ। দেশে প্রথম স্থান অর্জন করেছে এই রাজ্য। তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতেও নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রখ্যাত তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ইনফোসিস এখানে শাখা খুলতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কগনিজ্যান্টও ব্যবসা আরও বৃদ্ধি করছে। ফলে মোটের উপর তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ বেড়ে গিয়েছে।
উল্লেখ্য, ইতিমধ্যে গ্রামীণ অঞ্চলে কর্মসংস্থান তৈরীতে ভারতের সেরা রাজ্য হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। এরাজ্যের মতো অন্য কোনও রাজ্য শ্রমদিবস তৈরি থেকে শুরু করে একশো দিনের কাজ ও উন্নয়নের টাকা খরচে অগ্রণী ভূমিকা নিতে পারেনি। ফের একবার প্রমাণিত হয়েছে, গ্রামীণ কর্মসংস্থান তৈরিতে সারা দেশের মধ্যে বাংলাই এক নম্বরে। একশো দিনের কাজে ৩১ মার্চ ২০১৮ পর্যন্ত বাংলা ৩০.৯৮ কোটি শ্রম দিবস তৈরি করেছে। যা সারা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। হিসেব অনুসারে, রাজ্যে এ বছর ৪৯.৯৩ লক্ষ পরিবার কাজ পেয়েছে। কাজ করেছেন ৭৪.৪১ লক্ষ মানুষ। এবছর পরিবার পিছু কাজ দেওয়া হয়েছে ৫২ দিন। সে জন্য খরচ হয়েছে আট হাজার কোটি টাকা। বাংলা সারা দেশের মধ্যে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা সবচেয়ে বেশি খরচ করেছে। এছাড়া বাংলায় প্রতি পরিবার গড়ে ৫৯ দিন কাজ পেয়েছে, যা দেশের বড় রাজ্যগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
তাছাড়া, রাজ্য বিধানসভায় ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষের বাজেট পেশ করতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রও জানিয়েছিলেন, আগামী ১ বছরে রাজ্যে ১৩ লাখ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। ফলে এরাজ্যে যে আরও কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা তৈরি হবে, তা বলাই বাহুল্য।