সাম্প্রতিক খবর

মে ১৫, ২০১৯

জন্ম থেকে কলকাতায় আছি, কোনও রাজনৈতিক দলের এরকম দাঙ্গা দেখিনি: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

জন্ম থেকে কলকাতায় আছি, কোনও রাজনৈতিক দলের এরকম দাঙ্গা দেখিনি: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ সন্ধ্যেবেলা বিজেপি সভাপতি আমিত শাহের রোডশো থেকে বিদ্যাসাগর কলেজে ভাঙচুর করা হয় এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা হয়। বেহালা চৌরাস্তার সভা থেকে তৃণমূল নেত্রী এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং তিনি তোপ দাগেন বিজেপির এই নক্কারজনক কাজের বিরুদ্ধে।

এরপর ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, যা ঘটেছে যা খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। পুরো কলেজটা ভেঙে তছনছ করা হয়েছে। এবছর বিদ্যাসাগর মহাশয়ের ২০০ বছর। সরকার থেকে এই অনুষ্ঠান পালনের জন্য কমিটি করা হয়েছে। বিদ্যাসাগরের মূর্তিকে এমন ভাবে ভাঙা হয়েছে, আগুন লাগানো হয়েছে। আমি কোনও রকম ভাবে টুকরোগুলোকে তুলে যেখানে ওনার মূর্তি ছিল, সেখানে রেখে এসেছি। কলেজকে জানিয়ে গেলাম। আমি এবারে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাব। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের আক্রমণ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এতদিন জন্ম থেকে কলকাতায় আছি, কোনও রাজনৈতিক দলের এরকম দাঙ্গা দেখিনি। এটা লজ্জাজনক ঘটনা। বাইরে থেকে গুন্ডা আমদানি করে, এমনকি বিহার, রাজস্থান থেকেও বিজেপির কিছু গুন্ডা এসেছে। নির্বাচন কমিশন একটা ফটো লাগাতে দেয়না, রাস্তায় দেখবেন বিজেপি কোটি কোটি টাকা খরচ করে কাটআউট লাগিয়েছে। বিজেপি এক্সসেপশানাল কিকরে হচ্ছে? ওনার সভায় এসে একটি ছেলে মারাও গেছে। ছেলেটির বাড়ি দুবরাজপুরে। এর মানে কলকাতার লোক এরা নয়, বাইরে থেকে নিয়ে এসেছে। ত্রেনে করে, গাড়িতে করে ভাড়া করা সমস্ত গুন্ডা নিয়ে এসেছে।

আমিত শাহের উদ্দেশ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, অমিত শাহের ধারনা আছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সম্বন্ধে? তিনি জানেন এখানে কারা পড়েছে? কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় গর্বের জায়গা। স্বাধীনতা আন্দোলনের জাগরণের জায়গা। আজ বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছে, স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তি ভেঙেছে। গণতান্ত্রিক অধিকার প্রত্যেকের আছে। অমিত শাহ কি ভগবান যে ওনার কেউ প্রতিবাদ করতে পারবে না? আমাকেও তো অনেক সময় অনেকে বলে এটা কেন হচ্ছে? আমি তো কিছু মনে করি না। ছাত্রছাত্রীদের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে।

পুলিশ এটা চেপে দিয়েছিল। মিছিলের পর কেন বিজেপির গুন্ডারা এসে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর চড়াও হয়? বিদ্যাসাগর কলেজের ওপর চড়াও হয়? এবং ছাত্রছাত্রীদের ওপর কেন অত্যাচার করে? পুলিশ এখন পর্যন্ত কোনও বিবৃতি দেয়নি।

নেত্রী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল কংগ্রেস এখানে তৈরী হয়েছে। আমরা এখান থেকে অনেক মিছিল করি। কোনও ঘটনা ঘটেনা। কেন আজ এই ঘটনা ঘটল? উস্কানি দিয়ে বাইরের গুন্ডা নিয়ে নেতা পালিয়ে গেছে। গুন্ডাদের দাঙ্গা লাগাতে শিখিয়ে গেছে। বাংলার মানুষ এসব সহ্য করবে না। আমরা এর জন্য ধিক্কার জানাই। আগামী কাল আমার মিছিল আছে বলেই আজ পরিকল্পিত ভাবে ওরা এটা করেছে। কাল প্রতিবাদ মিছিলে সবাই শান্তিপূর্ণ ভাবে যোগদান করুন। আমি যেখানেই মিছিল করছি, সেখানেই বিজেপির নেতারা আমার পাল্টা একটা সভার অনুমতি নিয়ে নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন থেকে বেআইনি ভাবে। এই ঘটনার পুরো তদন্ত আমরা করব উচ্চাধিকারিক দিয়ে। এই ঘটনার নিন্দা করার ভাষা নেই।

তিনি আরও বলেন, এদের জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী যে বাংলার মানুষ হয়ে বিদ্যাসাগরকে সম্মান দিতে পারিনা বিজেপির নেতাদের জন্য। যারা মনিষীদের সম্মান করেনা, তারা দেশের নেতা হবে? বিবেকানন্দের মূর্তিও ভাঙা হয়েছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কেও আঘাত করা হয়েছে। সাহস থাকা ভালো দুঃসাহস থাকা ভালো না। বিজেপি হারবে বলে যা ইচ্ছে তাই করে যাচ্ছে। বিজেপির টাকার খুব অহঙ্কার হয়েছে। নোটবাতিল করার সব টাকা পেয়েছে। সেই টাকা দিয়ে হাওলা করছে, বদনাম করছে, বাইরে থেকে গুন্ডা এনে কলকাতা ও তার চারপাশে বসিয়ে রেখেছে। হাওড়া, বিধাননগর, কলকাতা, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় গেস্ট হাউস, ছোট হোটেল গুলোতে লোক এনে রেখেছে। সুইসোটেল, তাজ বেঙ্গলেও টাকার বান্ডিল ও লোক বসিয়ে রেখেছে, যা কখনও হয়নি। নির্বাচন কমিশনের কোড অফ কন্ডাক্ট মেনেই টাকার সীমা থাকা উচিৎ।