জুন ৬, ২০১৮
কেন্দ্রে সরকার বদল চাইছে মানুষ: অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

রান্নার গ্যাস ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে আজ আবারও পথে নামলেন তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি তথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই মিছিল শুরু হয় বেলা সাড়ে ২টোয় যাদবপুর থেকে। শেষ হয় হাজরা মোড়ে।
লক্ষ লক্ষ দলীয় কর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষ অভিষেকের সাথে পা মেলান আজকের এই মহামিছিলে। কেন্দ্রীয় সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে নানা ফেস্টুন, ব্যানার নিয়ে উপস্থিত ছিলেন তারা। স্লোগানও দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে।
মিছিল শেষ হয়ে যাওয়ার পর হাজরা মোড়ে বক্তব্য রাখেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রের নানা জনবিরোধী নীতির সমালোচনা করেন তিনি। অভিষেক বলেন যে বিজেপি বিদায়ের সময় আসন্ন, মানুষ কেন্দ্রেও পরিবর্তন চাইছেন।
অভিষেকের বক্তব্যের কিছু অংশ:
- আজকের এই মিছিল ঐতিহাসিক। এই অল্প সময়ে যেসব তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা আজ আমার সাথে পা মিলিয়েছেন সকলকে আমার ধন্যবাদ।
- আজকের মিছিলে যারা অংশগ্রহণ করেছেন, যারা রোদের তীব্র দাবদাহ ও গরমকে উপেক্ষা করে দীর্ঘ সাড়ে ৬ কিমি আমার সাথে পা মিলিয়েছেন তারা শুধু ‘তৃণমূল কংগ্রেস জিন্দাবাদ’ বলতে আসেন না, তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে আসেন যে আগামীদিন দিল্লীর জনবিরোধী সরকারকে উৎখাত করে আমরা ভারতবর্ষ থেকে বিদায় দেব। আজকের মিছিলটা দ্বিতীয় ২১ শে জুলাইয়ের সমাবেশের থেকে কিছু কম নয়। এই স্বতঃস্ফূর্ততা, উদ্দিপনা প্রমান করছে আগামিদিন এই আন্দোলন চলবে।
- ১৯৯২ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ব্রিগেডের মাটিতে সিপিএমের মৃত্যু ঘণ্টা বাজিয়েছিলেন। ফলস্বরূপ সিপিএম জীবাশ্ম হয়ে বাংলা থেকে অস্তিত্বহীন হয়ে গেছিল। আজ এই সিলিন্ডারকে সামনে রেখে শপথ নিচ্ছি আগামী এক বছরের মধ্যে এই জনবিরোধী সরকারকে দিল্লির বুক থেকে উৎখাত করে ধর্মনিরপেক্ষ এক সরকারকে আগামিদিন বসাবো।
- শুধু কলকাতায় নয়, সব জেলায় গত এক সপ্তাহে আমরা একের পর এক কর্মসূচী করেছি। কয়েকদিন আগে সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে পার্ক স্ট্রিট পর্যন্ত মিছিল করেছিলাম, আর তার ২ দিন পরেই গান্ধী মূর্তির পাদদেশে আমরা অবস্থান বিক্ষোভ করেছিলাম। এই জনবিরোধী সরকার যদি অবিলম্বে বর্ধিত দাম প্রত্যাহার না করে, আমরা কিন্তু আন্দোলনের মুখ থেকে পিছপা হব না। যত দূর যেতে হয় আমরা যাব।
- একধাপে রান্নার গ্যাসের দাম ৪৮ টাকা বারিয়ে দিয়েছে। এক দিকে ‘উজ্জ্বলা যোজনা’য় একটা করে গ্যাসের লাইন দিচ্ছে, অন্যদিকে জ্বালানীর দাম বারিয়ে দিচ্ছে। রান্নার গ্যাস ৪০০ টাকা থেকে ১১০০ টাকায় পৌঁছে গেছে। পেট্রোল ডিজেল, রেলের টিকিটের দাম বারিয়ে দিয়েছে।
- একদিকে নীরব মোদী ভারতবর্ষকে সর্বশান্ত করে আমেরিকাতে গিয়ে ফুর্তি করছে, ডালমিয়া গ্রুপের হাতে লালকেল্লা বিক্রি করে দিচ্ছে, বিজয় মালিয়া লডনে গিয়ে ফুর্তি করছে, আর আমার আপনার কপালে জুটছে ৮২ টাকার পেট্রোল, ৭৩ টাকার ডিজেল আর জিএসটির দমবন্ধকর পরিস্থিতি।
- মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই আন্দোলন চলবে। আগামী ৮ জুন আমরা সব জেলায় একটা করে মহামিছিল করব। আগামী পরশু দিন দুপুর ২টো থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত তৃণমূল যুব কংগ্রেস পথে নামবে।
- আমাদের হাতিয়ার মাইক, কণ্ঠস্বর। আমাদের হাতিয়ার নিয়ে রাস্তায় মিছিল করতে হয় না। আমরা মানুষের দল। আমরা সিপিএমের মত নাস্তিক নই, আর বিজেপির মত ধর্ম বিক্রি করে রাজনীতি করতে হয়না। আমরা উন্নয়ন নিয়ে মানুষের কাছে গেছি।
- কর্ণাটকে খুঁটি পুজো হয়ে গেছিল। মহেশতলার ভোটে মহালয়া হয়েছিল। বিজেপির বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে। এদের ক্ষমতা চ্যুত করা শুধু সময়ের অপেক্ষা – এই নিয়ে কোন সংশয় নেই। এবার ২০১৯ শে দশমীর বিসর্জনও হয়ে যাবে। আগামী দিন দিল্লিতে এক ধর্মনিরপেক্ষ সরকার বসবে।
- উপনির্বাচনে বিজেপিকে হলুদ কার্ড দেখিয়েছেন মানুষ। ২০১৯ শে তারা বিজেপিকে লাল কার্ড দেখাবেন।
- যারা বিরোধিতা করেছে, কুতসা করেছে তাদের রাস্তায় দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। কংগ্রেস আর সিপিএমের অবস্থা হয়েছে ১ টাকার কয়েনের মত। কারন, সরকার অবৈধ ঘোষণা না করলেও মানুষ আর তাদের গ্রহন করছে না। কেন ওরা মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আজ পথে নামছে না? যতদিন যাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি মানুষের জনসমর্থন আরও বাড়বে।
- ওরা বলছে আমার বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা করবে, আমি ওদের স্বাগত জানাই। কোর্ট কেসের পরিণতি কি হয়েছে, সবার জানা।
- আমি বলেছিলাম পুরুলিয়া ‘বিরোধীশূন্য’ হবে, ‘বিরোধীমুক্ত’ নয়। ‘বিরোধীশূন্য’ করা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। তারপর পুরুলিয়ায় ২ জনের মৃত্যু হয়েছে যা খুবই দুঃখজনক। কিন্তু বিজেপি এই মৃত্যুর জন্য আমাকে দায়ী করছে। আমার প্রশ্ন, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রের শীর্ষনেতারা অনেক দিন ধরেই বলে আসছেন কংগ্রেসমুক্ত ভারতের কথা।একথা বলার পর একের পর এক কংগ্রেস কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন, তাহলে এই হাজার হাজার মানুষের প্রাণের দায় কি প্রধানমন্ত্রী নেবেন, নাকি সর্বভারতীয় সভাপতি ও বিজেপির নেতারা নেবেন?
- বিজেপির প্রশ্ন উন্নয়ন নিয়ে নয়, ধর্ম নিয়ে। যেখানে উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন কোর্টে পারছে না সেখানে রাম রহিমের মধ্যে বিভাজন তৈরি করছে। এই মাটি আন্দোলন-শান্তি-সংহতি ও ধর্মনিরপেক্ষতার মাটি। এখানে আমরা দাঙ্গা বরদাস্ত করব না। আগামীদিনে আমাদের বৃহত্তর আন্দোলনের জন্য তৈরি থাকতে হবে।
- হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে যে ব্যাঙ্কে সাধারণ মানুষ টাকা রাখতে পারবে না। মানুষ অমানবিক পরিশ্রম করে ব্যাঙ্কে রাখলে যে কোনও দিন বিজেপি সরকার আত্মসাৎ করে নেবে। বাড়িতে টাকা রাখলে কালো আর ব্যাঙ্কে রাখলে গেলো, এটাই বিজেপির গরিব-দরদী সরকারের উদাহরণ। এই কথা গুলো সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়বদ্ধতা আছে বলে আমি মনে করি।
- আমাদের দলের একজনই নেত্রী – মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাকি আমরা সবাই দলের কর্মী। সাংসদ, বিধায়ক এবং অন্যান্য জনপ্রতিনিধি যারা আছেন, তাদের মানুষের জন্য কাজ করে যেতে হবে।
- যেভাবে ভারতকে সর্বস্বান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে, তার বিরুদ্ধে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে আগামিদিন আন্দোলনে নামতে হবে। হঠাৎকরে ওরা নিদান দিচ্ছে কে কি খাবে, কি পরবে। ভারতের অন্যন্য রাজ্যগুলো গেরুয়া হতে পারে কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থাকতে অর্থের বিনিময়ে কখনো বাংলাকে গেরুয়া করা যাবে না।
- সব কিছুতে আধার বাধ্যতামূলক করে দিচ্ছে। একদিকে বলছে গরীবের সরকার অথচ ব্যাঙ্কে ৫০০০ টাকা যদি ব্যালেন্স না থাকে তাহলে পেনাল্টি দিতে হবে আর এক দিকে কোটি কোটি টাকা নিয়ে যারা ভারতকে সর্বস্বান্ত করে দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ভারতে থাকতে গেলে আধার নাও, আর ভারত থেকে পালাতে গেলে ধার নাও এই হল বিজেপির সরকারের মুল মন্ত্র ও নৈতিকতা।
- এই সরকার বলেছিল আচ্ছে দিন আনবে, ২ কোটি বেকার যুবককে চাকরি দেবে, কিন্তু দুর্নীতি মেটেনি, মানুষের কোন বিকাশ হয়নি। তাই আগামী দিন বিজেপিও থাকবে না, আগামিদিন দিল্লির বুক থেকে নরেন্দ্র মোদীর সরকার মুছে যাবে।