সাম্প্রতিক খবর

জুন ৩০, ২০১৮

ফেসবুক লাইভ । জিএসটির এক বছর - অমিত মিত্র

ফেসবুক লাইভ । জিএসটির এক বছর - অমিত মিত্র

অর্থনৈতিক অবস্থা: আপনারা শুনলে অবাক হবেন, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যেখানে ২০১৩-১৪ তে ভারতবর্ষ ৭.৭% হারে ভারত এগিয়ে যাচ্ছিল, তা কমে হয়েছে ৬.৪%। অর্থাৎ, ১ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি টাকা চিরকালের জন্য চলে গেলো।
কৃষির ক্ষেত্রে: ২০১৩-১৪ সালে কৃষির ক্ষেত্রে ১৫% হারে ভারতবর্ষ এগিয়ে যাচ্ছিলো, আর এখন তা কমে হয়েছে ৪.৫%. তাই আজ সারা ভারতের কৃষকদের মধ্যে হাহাকার, তাদের মুখে আত্মহত্যার কথা শোনা যাচ্ছে।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প: ২০১৪ সালে ছোট ব্যবসায়ীদের মধ্যে ৯% মানুষ ব্যবসার জন্য ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছিলো, আর ২০১৭ তা কমে হয়েছে ৫%। অর্থাৎ ব্যবসা করার প্রবণতা ক্রমশ কমে গেছে। আর দিল্লি থেকে শোনা যাচ্ছে নাকি ব্যবসা বাণিজ্য বেড়েছে, কেউ ডেটা দেখছে না।

কর্মসংস্থান: কেন্দ্রীয় সরকারের লেবার বিউরো বলছে ১ লা এপ্রিল,২০১৭ থেকে ১লা জুলাই,২০১৭-র মধ্যে ৮৭ হাজার চাকুরিজীবীকে ছেঁটে দেওয়া হয়েছে।

দুর্নীতি: সকলে বলছে দুর্নীতিমুক্ত ভারত তৈরী হচ্ছে। আমি তার এক উদাহরণ দিই – কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশন বলছে ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে ৬৭% দুর্নীতি বেড়ে গেছে।

ব্যাঙ্কিং: ২০১৩-১৪ সালে ব্যাঙ্কে যারা সুদ এবং আসল জমা দেয়নি তাদের সংখ্যা ছিল ২ লক্ষ ৯ হাজার কোটি, ২০১৭-১৮ তে এই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯ লক্ষ ১ হাজার কোটি। অথচ সাধারণ মানুষ সামান্য টাকা ধার নিলে ব্যাঙ্ক তাদের পেছনে পরে থাকে। গতকালই দেখলাম ভারতবর্ষের মানুষ চুপচাপ করে সুইস ব্যাঙ্কে টাকা পার্ক করেছে, এক বছরে ৫০% হরে বেড়েছে। শুনেছিলাম ১৫ লক্ষ টাকা সকলের ব্যাঙ্কে চলে যাবে, বিদেশ থেকে কালো টাকা আসবে। আর এখন দেখা গেলো কালো টাকা সাধারণ মানুষের কাছে ফেরত আসার বদলে সুইস ব্যাঙ্কে চলে গেছে।

জন ধন যোজনা: বিশাল ব্যাপার, শুনে অবাক হয়ে যাবেন, জন ধন যোজনার ৪৮ শতাংশ অ্যাকাউন্ট ইনঅ্যাক্টিভ। তার মানে ব্যাঙ্করা খুলে দিল, খাতায় এসে গেল, নরেন্দ্র মোদীর লিমিটে খুশী হয়ে গেল, ফ্যাক্ট ইস প্রায় ৫০ শতাংশ অ্যাকাউন্ট ননঅ্যাক্টিভ। যেখানে বিশ্বের অ্যাভারেজ হচ্ছে ২৫ পারসেন্ট ইনঅ্যাক্টিভ। ব্লাফ, অসত, প্রপাগ্যান্ডা।

সেহেতু, আপনাদের এইটুকুই বলতে চাই, বাংলা এগিয়ে যাচ্ছে। যে কোনও প্যারামিটার দেখবেন, বাংলা ভারতবর্ষের থেকে ৩ থেকে ৪ শতাংশ ওপরে আছে। জিডিপি হোক, ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ হোক, যেখানে হাত দেবেন, রাস্তাঘাট, ব্রিজ, আপনার বিভিন্ন ধরনের ক্যাপিটাল এক্সপেন্ডিচার সাড়ে ৮ গুন বেড়েছে পশ্চিমবঙ্গে। প্ল্যান্ড এক্সপেন্ডিচার প্রায় ৪ গুন বেড়েছে। প্রান্তিক মানুষ, সাধারন মানুষের জন্যে রাস্তা, জল। আজকে আপনারা সব তো জানেনই যে কত কোটি মানুষ ২টাকা কেজি চাল পাচ্ছে। প্রায় ৯৫% মানুষ পশ্চিমবঙ্গে ২ টাকা কেজি চাল পাচ্ছে। ইতিহাস হয়ে গেছে।

ট্যাক্সেশন: আমাদের যে রাজস্ব ডবলের বেশী হয়ে গেছে, ভারতবর্ষে রেকর্ড করে ফেলেছে। আর সবচেয়ে মজার হচ্ছে, শুনে খুশী হবেন, ভারত সরকার কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গকে অন্তত পাঁচটা বড় অ্যাওয়ার্ডে নাম্বার ওয়ান গোল্ডেন পিকক অ্যাওয়ার্ড দিচ্ছে। কেন? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সবচেয়ে বড় হয়েছে ডিজিটাইজেশন, ই-টেন্ডারিং, ইন্টিগ্রেটেড ফিনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম। ই-আবগারি, প্রত্যেকটার জন্য ভারত সরকার বাধ্য হয়েছে বাংলাকে অ্যাওয়ার্ড দিতে।
মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর ফেসবুকটা পরশুদিনের দেখুন, দেখবেন ৩১টি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে বাংলা ফ্রম দা ন্যাশানাল কম্পিটিশন স্কচ অ্যাওয়ার্ডসে। তার মানে বাংলা আজ সেই রেনেসাঁর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যেখানে হাত দেবেন, দেখবেন তৃণমূল পার্টির সরকার সাধারন মানুষের জন্যে কৃষকের জন্যে শ্রমিকদের জন্যে, নিম্ন-মধ্যবিত্তের জন্যে মধ্যবিত্তের জন্যে এবং যারা ভালো আছে, তাদেরও জন্যে নতুন বাংলা আজকে চারিদিকে আমরা দেখতে পাচ্ছি। সাড়া ভারতবর্ষ নয়, পৃথিবীতে ইউনাটেড নেশনস মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কন্যাশ্রীর জন্যে দা হেগ শহরে নেদারল্যান্ডসে গিয়ে তারা অ্যাওয়ার্ড দিয়েছেন। গর্বে আমার চোখে জল এসে গিয়েছিল। আনন্দের চোখের জল যে আজ বাংলা থেকে একটি মানুষ সমগ্র সেই স্টেজে দাঁড়িয়ে আছে ইউনাইটেড নেশানস থেকে বাংলার মানুষের মুখ উজ্জ্বল করে তার হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে, তার নেতৃত্বে যেটি হয়েছে, সেটির নাম কন্যাশ্রী।
তাই, আজকে বলব, একদিকে কেন্দ্রীয় সরকার ভারতবর্ষের অর্থনীতিকে তছনছ করে দিয়েছে, অন্যদিকে বাংলার অর্থনীতি বাংলার পরিকাঠামো বাংলার শিক্ষা চারিদিক থেকে এগিয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় দেখুন, যেখানে হাত দেবেন, দেখবেন চারিদিকে একটি জোয়ার এসে গেছে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলা। সেই রেনেসাঁর দিকে আমরা ফিরে যাব।

ধন্যবাদ নমস্কার আপনারা যে সময় দিয়েছেন। অনেক কিছু বলতে পারতাম, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী অনেক কিছু বলেছেন, সেগুলোর সঙ্গে অল্প একটু আপনাদের জুড়ে দিলাম।

জিএসটির ক্ষেত্রে বলেছিলাম আমরা ১লা জুলাই লঞ্চ করবেন না, শোনে নি। আপনার তো দাম পড়ে নি জিএসটির দরুন, তার কারন, সিস্টেম ফেল হয়ে গেছে। কত লড়াই করেছি, আমাদের তৃণমূল কংগ্রেসের ২০০৯এর ম্যানিফেস্টোতে ছিল যে আমরা জিএসটি কে ইন প্রিন্সিপিল মানি, কিন্তু, ইমপ্লিমেন্টেশনের ওপর নজর দিতে হবে। মোদী সরকার জিএসটির ইমপ্লিমেন্টেশন কুলিয়ে উঠতে পারছে না, দুঃখের বিষয়। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফিস্কাল রিফর্ম, দে হ্যাভ মেসড ইট। তাই, আপনাদের নমস্কার করি, বড়দের প্রণাম, ছোটদের ভালোবাসা তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফ থেকে। ধন্যবাদ।